#চশমখোর চশমা#অমৃতা গুহ দে
তখন আমার বয়স (না না গান করছিনা বাপু , গপ্পো লিখছি) ১৩/১৪ । এই বয়সে হঠাৎ বড়ো হলাম না ছোট আছি ঠিক বুঝতে পারেনা মেয়েরা। আমরা কয়েকজন মেয়েক্লাস IX এ বাবা মায়ের কাছে পড়বো না বলে আন্দোলন করে, এক স্যারের…
#চশমখোর চশমা
#অমৃতা গুহ দে
তখন আমার বয়স (না না গান করছিনা বাপু , গপ্পো লিখছি) ১৩/১৪ । এই বয়সে হঠাৎ বড়ো হলাম না ছোট আছি ঠিক বুঝতে পারেনা মেয়েরা। আমরা কয়েকজন মেয়েক্লাস IX এ বাবা মায়ের কাছে পড়বো না বলে আন্দোলন করে, এক স্যারের কাছে কোচিং সেন্টার এ ভর্তি হলাম ইংলিশ পড়ার জন্য। কেউ কেউ অংক স্যারের কাছে যেত। কিন্তু চিরকাল অংক প্রিয় বন্ধু বলে আমরা কেউ যাইনি।
স্যার খুব ভালো পড়াতো কিন্তু সামনে কপি চেক করতে গেলে চশমাটাকে নাকের নীচে নামিয়ে অদ্ভুত ভাবে দেখতো । আর সেই দেখাটা কেমন যেন অসোয়াস্তি লাগতো আমাদের। যখন স্যার বাড়ির ভেতরে যেতেন তখন টেবিলের ওপর চশমাটা রেখে যেতেন।
এর মধ্যে একদিন আমি আগে পৌঁছে গেছি স্যারের বাড়িতে কোচিং এ। আর তক্ষুনি ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হলো। কেউ এলোনা বন্ধুরা। ওইদিন স্যারের চশমার ওপর দিয়ে তাকানো আর পিঠে হাত বুলিয়ে ইংলিশ বোঝানোর কায়দায় আমার খুব কান্না পাচ্ছিল। কাকে বলি?? মাকে যমরাজের ছোট বোন বলে মনে হতো । আমার মেসো যে জন্মের সময় থেকে ভালোবাসে একদম বন্ধুর মতো তাকে সব বলি। পরের দিন মেসো একটা ইয়ার বাডস প্লাস্টিকে মুড়িয়ে বললো খুব সাবধানে রাখ এটা। স্যার যখন ভেতরে যাবে সাবধানে চশমার নাকের ভেতরের দিকে তুলোর দিকটা লাগিয়ে বাডসটা ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে দিবি। আমি জিগ্গেস করলাম কি আছে? মেসো গালে টোকা দিয়ে বললো "ম্যাজিক"।
আমরা ৫/৬ জন মিলে পড়ছি স্যারের কাছে। স্যার প্যারাগ্রাফ লিখতে দিয়ে ভেতরে যেতেই আমি বন্ধুদের দরজার দিকে নজর রাখতে বলে চশমার নাকের ভেতরের দিকে তুলোটা ভালো করে লাগিয়ে ওটা ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলাম। সবাই চুপচাপ লিখে যাচ্ছি। এরমধ্যে লাইট চলে যায়। বৌদি মোমবাতি জ্বালিয়ে এনে বললো চুপচাপ বসে থাক। লাইট এলে লিখিস। বলতে বলতেই স্যার এসে অন্ধকারে চেয়ারে বসে চশমাটা পড়ে নিলেন। কি হবে বা আদৌ কিছু হবে কিনা কেউই জানিনা আমরা।
স্যার বললেন কখন লাইট আসবে তার ঠিক নেই তোমরা মুখে বলতে থাকো। আমরা ২/৩ জন বলেছি এর মধ্যে লাইট এসে গেল। ৮০ র দশকে যখন লোডশেডিং এর পর লাইট আসতো, সব পাড়ায় একটা হোওওওও করে আওয়াজ হতো বাচ্চাদের। স্যার বললেন কপি জমা দিতে। আমরা জমা দিচ্ছি কিন্তু স্যারের চশমা নাকে কিছুতেই নামে না। কিছুক্ষণ পর দেখি স্যার চশমাটা খোলার চেষ্টা করছেন কিন্তু কিছুতেই খুলতে পারছেন না।
স্যার আমাদের ছুটি দিয়ে দিলেন। আমরা ব্যাপারটা কি হলো এই নিয়ে আলোচনা করছি, দেখলাম দূরে মেসো দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেখে হাতের ইশারায় ডাকেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলো কিরে ওটা লাগিয়েছিলি?? ধরা পড়িস নিতো ? আমি বললাম না না। কিন্তু কি ছিলো গো ওই ম্যাজিক এ??? মেসো কানে কানে বললো ফেভিকল।
পরের দিন কোচিং এ যেতেই বৌদি বলেন অনেক ধস্তাধস্তি করে চশমা খুলতে গিয়ে ওটা দু টুকরো হয়ে গেছে আর নাকের ছাল চামড়া উঠে সারারাত জ্বলেছে তাই একদম ঘুমোতে পারেননি স্যার। আমরা একদম শুকনো মুখে যেই জিজ্ঞেস করলাম "কি করে হলো" তখন বৌদি দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় আমাদের। বলেন এটা তোদের কারো কাজ ।
আমরা আড়ালে খুব হাসাহাসি করে বাড়িতে কিছু না জানিয়ে অন্য এক ম্যামের ব্যাচে ভর্তি হয়ে যাই। এবং অবশ্যই গার্জিয়ান হিসেবে মেসো ভর্তি করায়।