Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#বিষয়_ছোটগল্প#শিরোনাম_সবটাই_দুর্ঘটনা#কলমে_সুদেষ্ণা_রায়
রান্না করতে গিয়ে মাথাটা টলে উঠলো রিয়ার। শরীরে কেমন একটা অস্বস্তি। বমি বমি ভাব। লক্ষণ গুলো অচেনা নয় রিয়ার। গত কয়েক বছরে বড় বেশী মূল‌্য দিয়ে এই লক্ষণ গুলো চিনেছে সে। আসতে চলেছে …

 


#বিষয়_ছোটগল্প

#শিরোনাম_সবটাই_দুর্ঘটনা

#কলমে_সুদেষ্ণা_রায়


রান্না করতে গিয়ে মাথাটা টলে উঠলো রিয়ার। শরীরে কেমন একটা অস্বস্তি। বমি বমি ভাব। লক্ষণ গুলো অচেনা নয় রিয়ার। গত কয়েক বছরে বড় বেশী মূল‌্য দিয়ে এই লক্ষণ গুলো চিনেছে সে। আসতে চলেছে নতুন এক প্রাণ। কিন্তু, এতো সুখের কথা। আনন্দের কথা। রিয়া তবে ওরকম শিউরে উঠলো কেন? মুখটাই বা অমন ফ‍্যাকাশে হয়ে গেলো কেন? শরীরের কষ্টে কি? তা অস্বাভাবিক নয়। এই শারীরিক অবস্থায় এতক্ষণ আগুন তাঁতে আছে। হতেই পারে। কিন্তু রিয়া কি যেন বলছে বিড়বিড় করে! কি বলছে? আসুন, একটু কান পেতে শুনি ঃঃ


" না ঠাকুর, আর না। আর না। আর সইতে পারবো না আমি। দয়া করো...."

একি কথা!! রিয়া কি তবে মা হতে চায় না? অতি আধুনিকা দের মতো ভয় পায় ফিগার নষ্ট হয়ে যাবে বলে??

না, জীবনের পার্টিগণিত এতটাও সহজ সরল নয়। সবসময় এখানে দুই আর দুই এ চার হয় না। ভগবান রিয়াকে সব কিছু দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন। অসাধারণ শ্বশুরবাড়ি, শুভর মতো প্রেমিক স্বামী, একটা সুখী, নির্ঝঞ্ঝাট দাম্পত্য, ঈশ্বরের অবিরত দানে উপচে পড়ছে রিয়ার প্রাপ্তির ঝুলি। তবুও সবটাই অর্থহীন রিয়ার কাছে। গত কয়েক বছরে দু দুবার সন্তানসম্ভবা হয়েছে সে। আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠেছে দুবআল্ট্রাাা্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছে সব বাধানিষেধ, নিয়ম কানুন। স্বামী শুভ ভালোবাসা দিয়ে, যত্ন দিয়ে ঘিরে থেকেছে তাকে। শুভর এক বন্ধু ডাক্তার। সে যথেষ্ট যত্ন নিয়ে ট্রিটমেন্ট করেছে রিয়ার। কিন্তু এত সেবা, এত যত্ন, এত ভালোবাসা সত্বেও দুবারই নিজের সন্তানদের রক্ষা করতে পারে নি রিয়া। মিসক‍্যারেজ হয়ে গেছে তার। দ্বিতীয় বার মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছিলো সে। কিছুতেই বুঝতে পারছিলো না, ঠিক কোন অনিয়ম সে করলো, যার জন্য ঘটে গেল এমন দুর্ঘটনা! সেই সময়, সর্বক্ষণ পাশে থেকেছে শুভ। নিজের মনের কষ্ট চেপে, হাসিমুখে বুঝিয়েছে রিয়াকে, " অ্যাকসিডেণ্ট ইজ অ্যাকসিডেণ্ট রিয়া। তার জন্য নিজেকে দোষ দিচ্ছ কেন? তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো। কারো যদি আসার থাকে, সে নিশ্চয়ই একদিন আসবে।" এমন কেয়ারিং স্বামী কটা মেয়ে পায়! গর্বে ভরে উঠেছিল রিয়ার বুক। সেইসঙ্গে আরো বেশী আক্রান্ত হয়েছিল অপরাধ বোধে। কত সুখী হয়েছিল শুভ আসন্ন পিতৃত্বের সংবাদে। স্বামীর স্বপ্ন কেন পূরণ করতে পারছে না সে? 

আজ আবার ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন। আনন্দের আগে তাই আশঙ্কা ঘিরে ধরেছে রিয়াকে। কি হবে এবার? ও কি পারবে ওর অনাগত সন্তান কে সুস্থ ভাবে পৃথিবীতে আনতে? নাকি আবার ঘটবে কোনো অ্যাকসিডেণ্ট? ছিনিয়ে নিয়ে যাবে রিয়ার যাবতীয় আশা, আকাঙ্ক্ষা, মা হওয়ার স্বপ্ন? জানে না রিয়া। আর জানে না বলেই আকুল প্রার্থনা তার, " না ঠাকুর, আর না। আর সইতে পারবো না..."


তিনমাস কেটে গেছে। শুভ সবসময় চোখে চোখে রেখেছে রিয়াকে। নিয়মিত চেক আপ চলছে শুভর বন্ধু ডাক্তার সুজিত গুহর তত্বাবধানে। কিছুদিন আগেই আল্ট্রসোনোগ্রাফি করে এসেছে রিয়া সুজিতের নার্সিং হোমে। আজ রিপোর্ট নিয়ে সুজিতের আসার কথা। মনটা চঞ্চল হয়ে রয়েছে রিয়ার। কেমন একটা অজানা ভয়...। আল্ট্রসোনোগ্রাফি করার সময় সুজিতের মুখটা একটু গম্ভীর হয়ে গেছিলো কি ?? তবে কি আবার ঘটতে চলেছে কোনো দুর্ঘটনা ?? দোতলায় নিজের ঘরে মন টেকে না রিয়ার। শুভ আজ অফিস যায় নি। নীচে ড্রয়িং রুমে বসে সেও অপেক্ষা করছে সুজিতের। ওর সাথে একটু কথা বললেই মনটা ভালো হয়ে যাবে রিয়ার। পায়ে পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে সে। সিঁড়ির মাঝামাঝি এসে শুনতে পায় গাড়ির হর্ন। ঐ বুঝি সুজিত এলো। কি রিপোর্ট এনেছে সে!! তাড়াতাড়ি নামতে গিয়েও নিজেকে সামলালো রিয়া। না, কোনো অনিয়ম সে করবে না। আপ্রাণ চেষ্ঠা করবে, সব দুর্ঘটনাকে প্রতিহত করতে। সাবধানে ধীরে ধীরে যতক্ষণে নীচে নামলো রিয়া, ততক্ষণে সুজিত ঢুকে গেছে ড্রয়িং রুমে।


ভেজানো দরজা খুলে ঘ‍রে ঢুকতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো রিয়া। ঘরের ভিতর থেকে ভেসে আসছে সুজিত আর শুভর কথাবার্তার আওয়াজ ঃঃ 


" নারে ভাই, এবারও তোকে সুখবর দিতে পারলাম না। আমি বারবার সোনোগ্রাফি প্লেট দেখেছি। এবারও..... মেয়েই। "


" তবে আর কি? ঝামেলা চুকিয়ে ফেলবো। তোর গতবারের দেওয়া ওষুধ টা আছে তো।"


"না, শুভ, এবার সেটা সম্ভব নয়। দুবার ওষুধ দিয়ে রিয়ার মিসক‍্যারেজ করিয়েছি গ‍র্ভে মেয়ে আছে বলে। এবার আর তা করা যাবে না। রিয়ার প্রাণসংশয় হবে রে।"


হিসহিস করে উঠলো রিয়ার কেয়ারিং, লাভিং স্বামী শুভর গলা; " মরুক ও। যে মেয়েমানুষ একটা ছেলের জন্ম দিতে পারে না, তাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে যাবো কেন আমি..."


শুভর কথা শেষ হলো না। দুজনে চমকে উঠলো একটা হাততালির শব্দে। ভেজানো দরজা খুলে কখন ভেতরে চলে এসেছে রিয়া। পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে হাততালি দিতে দিতে। চোখে তার উদ্ভ্রান্তের দৃষ্টি।


" চমৎকার শুভ। প্রিয় স্বামী আমার, অতি চমৎকার। এই তাহলে আমার দু দুবার অ্যাকসিডেণ্ট এর রহস‍্য? তুমি খুন করেছ আমার সন্তান কে?? তুমি না তার জীবনদাতা!! আবার তুমিই তার হন্তা!! হা হা হা হা, এর চেয়ে বড় দুর্ঘটনা, এর থেকে বড় প্রহসন আর কি হতে পারে? আমি পুলিশে যাবো। সবাই কে বলবো। মুখোস খুলে দেব তোমার। অ্যাকসিডেণ্ট না?? এবার তুমি দেখ, অ্যাকসিডেণ্ট কাকে বলে!!..."


এগিয়ে আসছে রিয়া। ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে এক সন্তানহারা জননী। প্রলয় ঘটবে বুঝি এবার। শুভর হাত ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল পাশে টেবিলে রাখা বাঁকুড়ার কাঠের ঘোড়াটার দিকে। আরো আরো এগিয়ে আসছে রিয়া। একেবারে কাছে এসে গেছে। এবার.....একটা আর্তচিৎকার..... আরো কয়েকটা বাড়ি....একটু ধড়ফড়ানি....তারপর সব শান্ত....।


ভোরবেলা ফোন বেজে উঠলো রিয়ার বাপের বাড়িতে। আবারো ঘটেছে দুর্ঘটনা। সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছে রিয়া। এবার আর সামলে উঠতে পারে নি। শুভকে ছেড়ে চলে গেছে সে। অশ্রুরুদ্ধ গলায় শ্বশুর মশাই কে স্বান্তনা দিলো " প্রেমিক স্বামী" শুভ; " কি আর করবেন বাবা!! সবই ভবিতব‍্য। আফটার অল্ অ্যাকসিডেণ্ট ইজ অ্যাকসিডেণ্ট। "


               সমাপ্ত