গল্প: #আত্মজর_সঙ্গেকলমে: #অমৃতা_ব্যানার্জী
---- " হ্যারি একজন ভালো মেইড জোগাড় কর। মম একা কত দিক সামলাবে।"---- " নতুন জায়গা, এখানকার ভাষা বুঝি না, তাই একটু সময় লাগছে।"---- " আই আন্ডারস্ট্যান্ড। কিন্তু তু…
গল্প: #আত্মজর_সঙ্গে
কলমে: #অমৃতা_ব্যানার্জী
---- " হ্যারি একজন ভালো মেইড জোগাড় কর। মম একা কত দিক সামলাবে।"
---- " নতুন জায়গা, এখানকার ভাষা বুঝি না, তাই একটু সময় লাগছে।"
---- " আই আন্ডারস্ট্যান্ড। কিন্তু তুমিও ভাব মমের তো বয়স বাড়ছে। আগে আমি হেল্প করতে পারতাম। কিন্তু এখন আমার শরীরের জন্য মম কোন কাজ করতে দেয় না।"
---- " জায়গাটি শহরের বাইরে হওয়ায় আরও সমস্যা হয়েছে। সব জরুরী জিনিসও পাওয়া যায় না। আমি অফিসে থাকলে মমের পক্ষে অতদূর গিয়ে জিনিস আনা সমস্যা। এমন একজনকে কাজে রাখতে হবে যে ঘরের সঙ্গে দরকার হলে বাইরের কাজেও সাহায্য করতে পারবে।"
---- " তোরা আবার সকালবেলা আমায় নিয়ে চিন্তা করছিস কেন। ঘরের কিছু কাজ করার ক্ষমতা আজও আমার আছে।"
---- " সেইটা বললে তো হবে না মম। হ্যারির কাছে শুনলাম তোমার লাস্ট রিপোর্ট অনুযায়ী আর্থারাইটিস বেড়েছে।"
হ্যারি একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত। নতুন প্রোজেক্টের জন্য তাকে হায়দ্রাবাদে বদলী করা হয়েছে। কাছাকাছি থাকার জায়গা একমাত্র সিঙ্গাপুর টাউনশিপ। সিঙ্গাপুর টাউনশিপ হায়দ্রাবাদের মানচিত্রের মধ্যে স্থান পেলেও আদপে এই জায়গাটি মূল শহর থেকে বহু ক্রোশ দূরে জনবিরল অঞ্চল। দু-একটি বহুজাতিক সংস্থার দপ্তর এইখানে থাকায় কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট গড়ে উঠেছে এবং শহরের বাইরে থেকে আসা কর্মীরা সেইগুলি তে থাকেন। হ্যারি এইখানে মা পরমা ও স্ত্রী জেসিকা কে নিয়ে এক সপ্তাহ হল এসেছে।
তিন জনের সংসারে কোন অশান্তি নেই। আগে পরমা দেবী ও জেসিকা মিলে সকালে রান্না করত। তারপর হ্যারি ও জেসিকা অফিস চলে যেত। পরমা দেবী তারপর ঘরের বাকি কাজ সেরে নিতেন। পরিচারিকা রাখার প্রয়োজনীয়তা কোনদিন হয়নি, পরমা দেবী নিজে সব কাজ করতে পছন্দ করেন। কিন্তু জেসিকা এখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং তার কিছু সমস্যাও রয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জেসিকা এখন বেড রেস্টে আছে। তাই নতুন পরিচারিকার সন্ধান শুরু হয়েছে। ছেলে, বৌমা দুজনেই পরমা দেবীর উপর একটি আঁচড়ও সহ্য করতে পারে না। জেসিকা তো এখন হ্যারির থেকে বেশী আপন হয়ে উঠেছে। সারাদিন মম কি খাবে, মমের শরীর ঠিক আছে কিনা এই চিন্তায় পাগল।
---- " বুঝলি বৌ খাসির মাংস এনেছি। বেশ কষিয়ে রাঁধিস।"
---- " আজ হঠাৎ মাংস!"
---- " গত সপ্তাহের ওভারটাইমের টাকা পেয়েছি। মালিক বলেছে সামনের মাস থেকে বেতন বাড়াবে।"
---- " সামনের মাসে তো আমাদের বাচ্চা আসবে। ওই বাচ্চা আমাদের ভাগ্য হয়ে আসছে গো।"
---- " হ্যাঁ রে, আমাদের বাচ্চা খুব শুভ। দেখবি ওকে আমি রাজার মত বড় করব। ছেলে হলে নাম রাখব রাজা আর মেয়ে হলে রানী।"
ষোড়শী ফুলির চোখে হাজারও স্বপ্ন। অভাবের সংসারে জন্ম তার, বাবার পান দোকান আছে আর মা লোকের বাড়ী টিকে ঝি এর কাজ করে। বাড়ীতে আট ভাইবোন। পাড়ার এক জনদরদী মাস্টারমশাইয়ের কাছে অক্ষর জ্ঞান শুরু হয়েছিল ফুলির। কাগজ পেন্সিল হাতে নিয়ে আঁকিবুকি কাটতে কাটতে স্বপ্ন বুনতে বেশ ভালো লাগতো ফুলির। কিন্তু কবির ভাষায় " ঘরেতে অভাব; পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া", অভাবের সংসারে স্বপ্ন দেখা মানা। মা সঙ্গে করে নিয়ে গেল ঠিকে ঝি এর কাজে। পেন্সিলের জায়গায় হাতে উঠল ঝাঁটা আর এঁটো বাসন। লোকের বাড়ী কাজ করতে গিয়ে ফুলি দেখত তার সমবয়সী বাচ্চারা রংবেরঙের ছবি আঁকা বই আর টিভিতে পুতুলের মত কথা বলা কার্টুন নিয়ে ব্যস্ত। ফুলির হাতে তখন ওইসব বাচ্চাদের ছোট ভাই বোনেদের নোংরা কাঁথা। এই বৈষম্যের কারণ বুঝতে পারেনি ফুলির শিশুমন। মা বলেছিল ভবিতব্য মেনে নিতে হয়। ভবিতব্য মেনে পথ চলতে চলতে কয়েক বছর কেটে গেল। শৈশব ছেড়ে ফুলি পদার্পণ করে কৈশোরে। তার শরীরে লাগে নারীত্বের ছোঁয়া। মামার বাড়ী বেড়াতে গিয়ে আলাপ হয় বয়সে বছর পাঁচেকের বড় রতনের সঙ্গে। নতুন নারীত্বের ছোঁয়া লাগা মন পুরুষ সঙ্গ উপভোগ করে। পরিবারের লোকও ঘাড় থেকে বোঝা নামানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায়। চতুর্দশী ফুলি হয়ে যায় রতনের গৃহিণী। বিয়ের পরে ফুলির জীবন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। রতন একটি কাঠের কারখানায় কাজ করে। উপার্জন আহামরি না হলেও ফুলির বাপের বাড়ীর থেকে বেশী। রতন পছন্দ করে না ফুলি লোকের বাড়ীতে ঝি বৃত্তি করুক। তাই এখন সসম্মানে ফুলি করে শুধু নিজের সংসারের কাজ। জন্ম ইস্তক সে দেখে এসেছে নেশাগ্রস্ত বাবা রোজ রাতে মা এর উপর অত্যাচার করে। কিন্তু রতন ফুলির সঙ্গে কোনদিন জোরে কথাও বলে না। ফুলি অন্তঃসত্ত্বা জানার পর থেকে রতন রীতিমত ফুলির সেবা করে। মাত্র আর এক মাসের অপেক্ষা, তাদের সন্তান আসবে। নিজের সব অদেখা স্বপ্ন ভরে দেবে ফুলি নিজের সন্তানের চোখে।
তিন মাসে হায়দ্রাবাদে মন বসে গেছে পরমা দেবী ও তার পরিবারের। হ্যারি বেশীরভাগ সময় অফিসের কাজে ব্যস্ত। জেসিকার শরীর আগের থেকে অনেকটা ভালো। হ্যারি অফিসে বেরিয়ে গেলে শাশুড়ী বৌমা মিলে প্রাণ খুলে গল্প করে আর সিনেমা দেখে। লক্ষী নামের এক পরিচারিকা নিয়োগ করেছে হ্যারি। এখন আর বেশী কাজ করতে হয় না পরমা দেবীকে।
---- " মম জেসিকার কয়েকদিন ধরে গলৌটি কাবাব খেতে ইচ্ছে করছে। নেকলেস রোডের তানসেন রেস্টুরেন্টে দারুণ গলৌটি কাবাব পাওয়া যায়। পরশু টুয়েন্টি ফিফথ, খুব ভীড় হবে। তাই ভাবছি কাল সবাই মিলে তানসেন ঘুরে আসি।"
---- " জেসিকা কে নিয়ে এইসময় ভীড়ে যাবি?"
---- " দুপুরে যাব, তখন ভীড় থাকে না। ক্যাব বুক করে নেব।"
---- " ঠিক আছে তোরা যা। সব জায়গায় এই বুড়ীকে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। নিজেরা মজা কর।"
---- " নো ওয়ে মম। তোমাকে ছাড়া আমরা মজা ভাবতেই পারি না। জেসিকার জন্য গলৌটি কাবাব আর তোমার জন্য বিরিয়ানি প্যাক করে নিয়ে আসব।"
---- " আমি ব্রাউনি বানাব তোদের জন্য।"
---- " গ্রেট, সবাই বাড়ীতে বসে মজা করে খাব।"
প্রাকৃতিক নিয়মে নির্দিষ্ট দিনে ফুলি এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। সন্তানের জন্মের সময় রতন ফুলির কাছে থাকতে পারেনি। কিছুদিন ধরে কারখানায় কিছু ঝামেলা চলছে। জ্ঞান ফেরার পর থেকে ফুলির চোখ শুধু খুঁজছে রতন কে। একদিন পরে রতন ফেরে। বিধ্বস্ত চেহারা, আঘাতের কারণে মাথায় ব্যান্ডেজ। কারখানার মালিক অসাধু কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় গ্রেফতার হয়েছে। কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, রতন এখন বেকার।
ক্রিসমাসের সকালে পরমা দেবী কেক তৈরী করছেন। মমের হাতের তৈরী চকোলেট কেকের জন্য হ্যারি পাগল। কিন্তু হঠাৎ বিকট শব্দে পরমা দেবীর হাত থেকে কেক বানানোর সরঞ্জাম পড়ে যায়। স্নান করতে গিয়ে জেসিকা বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গেছে। প্রচণ্ড ব্লিডিং হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি করার পর ডাক্তার বলেছেন অবস্থা আশঙ্কাজনক। হ্যারি মম কে জড়িয়ে ধরে বলছে " মম তুমি, জেসিকা আর আমাদের ভাবি সন্তান আমার জীবন। আজ আমি গডের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম। তার বদলে গড আমার থেকে জেসিকা কে কেড়ে নেবে?"
জীবিকা হারানোর পর থেকে রতনের চরিত্রে আসে অদ্ভূত পরিবর্তন। নিজের সন্তানকে সে মনে করে অশুভ, শত্রু। কিন্তু মায়ের মন সন্তানের সঙ্গে অশুভ শব্দ সহ্য করতে পারে না। নিজের সন্তানের প্রতি রতনের শত্রুসুলভ আচরণে ফুলির মনে শেল বেঁধে। অবসাদগ্রস্ত রতন নতুন কাজের চেষ্টা করার জায়গায় বদ সঙ্গে মিশতে শুরু করে। এদিকে ঘরের ভাঁড়ার তখন শূন্য। সংসারের প্রয়োজনে ফুলি আবার শুরু করে ঠিকে ঝি এর কাজ। পাঁচ বাড়ীতে ঠিকে ঝি এর কাজ করে সংসার চালায় ফুলি। তার সন্তান রাজাও বড় হতে থাকে।
রাজাকে স্কুলে ভর্তি করেছে ফুলি। রতনের অধঃপতন ততদিনে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে। সারাদিন বিভিন্ন ধরণের নেশা করে, ফুলির কষ্টার্জিত উপার্জন ছিনিয়ে নিতে চায়। প্রতিবাদ করলে চলে শারীরিক নির্যাতন। তবুও ফুলি স্বপ্ন দেখে, রাজা কে সে দশ জনের এক জন বানাবে। পাশের বাড়ীর কমলার কাছে শোনে এক ধনী ব্যক্তি তাঁর শিশু পুত্রের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন পরিচারিকা খুঁজছেন, মোটা অঙ্কের বেতন। ফুলি এই সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ। বেশী উপার্জন হলে রাজার শিক্ষায় কোন বাধা আসবে না। কমলার সাহায্যে ডেনহ্যাম সাহেবের বাড়ীতে কাজ পেয়ে যায় ফুলি।
স্যার ডেনহ্যাম ও তাঁর স্ত্রী ক্যাথরিন দিনে নিজ নিজ কর্মজীবনে ব্যস্ত, রাত কাটে ওনাদের পার্টি, ক্লাব নিয়ে। মধ্যরাতে মদ্যপ অবস্থায় বাড়ী ফেরেন। পাঁচ বছরের শিশু পুত্র অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে বাবা মা এর জন্য। কিন্তু কোনদিন সেই স্পর্শ পাওয়ার সৌভাগ্য হয় না। সন্তানের প্রতি এহেন বিরূপ আচরণ দেখে জীবিকাহীন রতন ও ধনী ডেনহ্যামের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে না ফুলি। স্নেহের কাঙাল শিশু ফুলির মমতাময়ী স্পর্শে তাকে খুব শীঘ্র আপন করে নেয়।
উপার্জনের জন্য ফুলি কে বেশীরভাগ সময় ডেনহ্যামের বাড়ীতে থাকতে হয়, মাঝেমধ্যে রাতেও বাড়ী ফিরতে পারে না। সেই সুযোগে ফুলির অজান্তে রতনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজাও মিশতে শুরু করে বদসঙ্গে। ফুলি যখন জানতে পারে তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। দশ বছরের রাজা স্কুলের কিছু বড় ছাত্রের সঙ্গে মিলে শিক্ষকের মাথায় পাথর মেরে নিরুদ্দেশ। অনেক চেষ্টা করেও ফুলি জানতে পারেনি তার তার নাড়ী ছেঁড়া ধনের ঠিকানা। সর্বস্ব ত্যাগ করে আত্মহত্যা করার কথা ভাবে ফুলি। কিন্তু চোখের সামনে ভেসে ওঠে ডেনহ্যাম সাহেবের লাঞ্ছিত সন্তানের করুণ মুখ, যে ঘুমের মধ্যে ফুলির আঁচল কে নিজের মায়ের স্পর্শ ভেবে মম বলে জড়িয়ে ধরে। আত্মাহুতি দিতে পারে না ফুলি, ফিরে যায় শিশুটির কাছে।
ইতিমধ্যে ডেনহ্যাম সাহেব ও ক্যাথরিনের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে। ক্যাথরিন খুঁজে পেয়েছে তার নতুন সঙ্গী। নতুন জীবনে সে পুরোনো জীবনের কোন ছায়া চায় না। তাই সে সন্তানের দায়ভার প্রত্যাখ্যান করেছে। ডেনহ্যাম সাহেব হয়ে উঠেছেন চরম উচ্ছৃঙ্খল। একদিন বাবার কাছে শিশুসুলভ কিছু জেদ করায় মদ্যপ অবস্থায় নিজের সন্তানকে চরম মারধর করে ডেনহ্যাম। তারপর নেশার ঘোরে গাড়ী চালাতে গিয়ে অ্যাকসিডেন্ট ঘটায়। তখন বাবার অত্যাচারের ফলে ছোট্ট হ্যারির ধুম জ্বর। ফুলি জানত হ্যারির কোন দাবিদার নেই। ক্যাথরিন নতুন সঙ্গী নিয়ে বিদেশে, এই দেশে সে আর ফিরবে না। পিতা মাতা দ্বারা পরিত্যক্ত সন্তানের ভার কোন আত্মীয় নেয় না। ফুলি জানার চেষ্টা করেনি সেই দুর্ঘটনার পরে ডেনহ্যাম জীবিত না মৃত। জ্বরে আচ্ছন্ন হ্যারি কে কোলে নিয়ে রাতের আঁধারে সে বেরিয়ে যায়। দিকভ্রান্তের মত পথ চলতে চলতে পৌঁছে যায় রেলওয়ে স্টেশনে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে উঠে পড়ে। ভাগ্যগুণে সেই কামরাতে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবিকা রিমা রায়। ফুলি কে দেখে ওনার অভিজ্ঞ দৃষ্টি কিছু সন্দেহ করে।
পরিত্যক্ত মহিলা ও শিশুদের নিয়ে একটি আশ্রম চালান রিমা রায়। সেই আশ্রমে ঠাঁই পায় ফুলি ও হ্যারি। ফুলি কিছু লেখাপড়া ও হাতের কাজ শেখে। রিমা রায় তার নতুন নামকরণ করেন পরমা। পরমা হাতে বানানো জিনিস বিক্রি করে নিজের ও হ্যারির জন্য উপার্জন শুরু করে।হ্যারিও লেখাপড়া শিখতে থাকে। পরমা ওরফে ফুলি হয়ে ওঠে হ্যারির মম, তার সবচেয়ে আপনজন, নিজের বাবা মা ছেড়ে যাওয়ার পর যে মমতার শীতল ছায়ায় হ্যারি কে আগলে রেখেছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করে হ্যারি একটি বহুজাতিক সংস্থায় চাকরী পায়। সেইখানে আলাপ জেসিকার সঙ্গে। মাত্র একমাস বিয়ের পরে জেসিকার স্বামী মারা গিয়েছিল। দাদা বৌদির সংসারে সে তখন বাড়তি। ভারী মিষ্টি মেয়ে জেসিকা। অল্পদিনের মধ্যেই হ্যারি ও জেসিকার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জেসিকাও চায় একটি ভালোবাসা জড়ানো সংসার। পরমা দেবী ও হ্যারির সব কথা শুনে জেসিকা বোঝে এই মা ছেলের পরিবারের থেকে আপন কেউ হতে পারে না। জেসিকা হয়ে ওঠে পরমা দেবীর পরিবারের নতুন সদস্য।মম কে চোখে হারায় হ্যারি ও জেসিকা। সংসারের জোয়াল টানার জন্য একদিন হ্যারির পরিচারিকার কাজ করেছিল ফুলি। আজ তার আরামের জন্য পরিচারিকা নিয়োগ করেছে হ্যারি।
"অভিনন্দন মিঃ হ্যারি। আপনি এক সুস্থ পুত্র সন্তানের পিতা হয়েছেন। আপনার স্ত্রীও এখন সুস্থ।" ডাক্তারের বলা সুখবরটি শুনে মম কে আলিঙ্গন করে হ্যারি। মা ছেলে দুজনের চোখেই আনন্দাশ্রু।
আত্মার সঙ্গে যার সম্পর্ক সেই আত্মজ। পরমা দেবী ওরফে ফুলির আপন গর্ভজাত রাজা স্মৃতির পাতায় বিস্মৃত। মায়ের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক তার ছিল না। কিন্তু হ্যারির সঙ্গে পরমা দেবীর সম্পর্ক আত্মিক। হ্যারির জন্য উনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন, বেপরোয়া হয়ে ঘর ছেড়েছেন, শহর এমনকি নিজের নাম পরিবর্তন করেছেন। হ্যারির জন্য ঠিকে ঝি ফুলি আজ কর্পোরেট জগতের মিঃ হ্যারির রেসপেক্টেড মাদার। হ্যারির সঙ্গে নিজের জীবনের অনেকটা পথ চলেছেন পরমা দেবী, পেয়েছেন অভাবনীয় অনেক উপহার। আজ বড়দিনে প্রভু যীশুর কৃপায় আত্মজর আত্মজ কে বুকে নিয়ে নতুন যাত্রা শুরু।
(Copyright protected)