কবিতা : ঘাঁটাতে যেও না নয়ন !কলমে : শক্তিপদ ঘোষতারিখ : ২৬ , ১০ , ২০২০
সামনেই মহাপুজো--এইসময়টাতে উঠোনেভাত কিছু ছড়াতেই হয় । কারণ , এইসময়ঝাড়ুদার পাখিদেরই বেশি প্রয়োজন ; নয়তো ,পথের ময়লা সাফ করবে কে ? তাতে ,মাস না ঘ…
কবিতা : ঘাঁটাতে যেও না নয়ন !
কলমে : শক্তিপদ ঘোষ
তারিখ : ২৬ , ১০ , ২০২০
সামনেই মহাপুজো--এইসময়টাতে উঠোনে
ভাত কিছু ছড়াতেই হয় । কারণ , এইসময়
ঝাড়ুদার পাখিদেরই বেশি প্রয়োজন ; নয়তো ,
পথের ময়লা সাফ করবে কে ? তাতে ,
মাস না ঘুরতেই খড়ের গাদা লোপাট হচ্ছে--হোক ,
তবু গোয়াল শূন্য রাখা যাবে না ;
শূন্য গোয়ালের থেকে দুষ্টু গরু অনেক ভালো ।
পা থাকবে--চাঁট ছুঁড়বে না ,
শিঙ থাকবে--মাথা নাড়বে না ,
চারাপোনার পুকুর থাকবে--রাঘববোয়াল দু'চারটে
ঘাই মারবে না , সেটা আবার হয় নাকি?
এ নিয়ে তুমি কিছু বলতে যেও না নয়ন ; কিছু
বলতে গেছো তো , ওদের ডাইনোসোরিক চোয়ালে
গুঁড়িয়ে যাবে । তার চেয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে
একবেলা একসন্ধ্যে যেমনটা ফুটিয়ে খাচ্ছো--খাও।
দেখেছো না , ওদের ধর্মের ষাঁড়গুলো কেমন
ছাড়া আছে বাজারে ? ওরা রাজকীয় ভঙ্গীতে
অঙ্গ দুলিয়ে দোকানে দোকানে মুখ বাড়াবে ,
স্বেচ্ছায় পুজো দেবে দাও তো ভালো ; নচেত , কারও দেওয়ার অপেক্ষা ওরা করবে না , এবং
তখন তোমার আমার করারও থাকবে না কিচ্ছুটি ।
আমরা এইভাবে ফণা নামিয়ে , বিষদাঁত ঝরিয়ে ,
বাঁক বুঝে সর্পিল ভঙ্গীতে চলছি বলেই পথটা আর পথ থাকছে না । অমনিতেই , বানশকুনে প্রতিবছর
হাড়মাস খুবলে খেয়ে--পথের পাঁজর
বার করে দেয় । তার ওপর মাধব মণ্ডলেরা--পথের
কিছুটা দখল করে গরুর স্থায়ী খোঁয়াড় বানিয়েছে ;
মধু মুখুজ্যের চাকরেরা পথের ওপর কাঠের
গুঁড়ি ফাটাচ্ছে , বাঁশ ছুলছে--পরিষ্কার করছে না ।
জব্বরের ভাইটা পথ দখল করে চা ও পান-বিড়ির
গুমটি বানিয়েছে , পানের পিকে পথ লাল থাকছে
সবসময় , পিঠ বাঁচাতে কেউ কিচ্ছুটি বলছি না ; তাই সহজ পথ সর্বত্র দুরূহ হয়ে যাচ্ছে সহজে ।
সর্বত্র চলছে বাম হাতের ভেলকি ; সে ভেলকিও
পথ আটকাচ্ছে সর্বত্র ।
বলার মতো কব্জির জোর যাদের আছে , তারাও
আশ্চর্যরকম নিঃশ্চুপ । কারণ , তাঁরা নিজেরাই
রাস্তায় বিদ্যুতের তারে হুক লাগিয়ে নিঙড়ে নিচ্ছে
বিনিপয়সার বিদ্যুৎ । ওদের ঘরে দেড়হাজারী
হিটার কয়েকটা গনগনিয়ে আঁচ দিচ্ছে সর্বক্ষণ ,
গ্রীষ্মে গরুর গোয়াল অবধি একাধিক--বৈদ্যুতিক পাখা ঘুরছে বনবনিয়ে , বাইরের দেড়শতকী
বাল্বগুলো সকাল আটটার আগে নেভে না ; অথচ মিটারের কাঁটা মাথা নিচু করে সেলাম ঠুকছে সবসময় । আশ্চর্য , রিডিং মাস্টারও দেখি ,
পালা করে সেই তাঁদেরই বাড়ি মিষ্টি-জল খেয়ে , দুপুরে আহার পর্ব সেরে , পাখার নিচে বিশ্রাম নেন ।
গ্রামে পুলিশ ঢুকলেও আগে ওঠেন গিয়ে সেই
তাঁদেরই বৈঠকখানায় । নির্দিষ্ট থাকে পুলিশের
মাসোহারা ; তাই থানার অনতিদূরেই দু'চারটে ভাটিখানা চলে রমরমিয়ে । তাই , বলি কী ,
চলছে যেমন চলুক ; ভুলেও ঘাঁটাতে যেও না নয়ন ; ওদের হাত অনেক লম্বা ।
আসলে , ভোট বড় বালাই । দু'চারটে ভোটের জন্যে
পৃথিবী যেখানে উল্টে যেতে পারে , সেখানে সেই
দু'চারটে ভোটই বা আসবে কোথা থেকে ?
-------------------------------------------------------------------