জয়দীপ পন্ডাবেলুড় মঠের কুমারী পূজার ইতিহাস বেলুড়মঠে শারদীয়া দুর্গাপূজা ঐতিহ্যগত তাৎপর্য হলো ১৯০১ সালে স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দের দ্বারাই এই পূজা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় এবং পরম আরাধ্য শ্রী শ্রী মা সারদা দেবী পূজার সময় বেলুড়মঠে উপ…
জয়দীপ পন্ডা
বেলুড় মঠের কুমারী পূজার ইতিহাস
বেলুড়মঠে শারদীয়া দুর্গাপূজা ঐতিহ্যগত তাৎপর্য হলো ১৯০১ সালে স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দের দ্বারাই এই পূজা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় এবং পরম আরাধ্য শ্রী শ্রী মা সারদা দেবী পূজার সময় বেলুড়মঠে উপস্থিত ছিলেন স্বামীজীর ইচ্ছা অনুসারে।
স্বয়ং শ্রীশ্রী মাও এই সব কুমারীদের ঐদিন "এয়োরানী" পুজো করেন। স্বামীজি কুমারী পূজা বিষয়ে কিছু আশ্চর্য কাহিনী ও জানা যায় কাশ্মীর ভ্রমণকালে স্বামীজি এক মুসলমান মাঝির শিশুকন্যাকে ও কুমারী পূজা করেন বর্তমানে বেলুড়মঠে অষ্টমী পুজোর দিন 5 থেকে 7 বছরের একটি কুমারীকে প্রতিমার পাশে বসিয়ে দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়। সালংকারা বেনারসি শাড়ি পরিহিতা একটি জলজ্যান্ত কুমারীকে সাক্ষাৎ মা দূর্গা পুজা করে সকলের মধ্যে ভাব সঞ্চার করা হয়। সে সময় পূজা দেখতে ওই দিন বেলুড়মঠে খুব ভীড় হয়।
শ্রীশ্রী মায়ের নামেই এই পূজার সংকল্প করা হয় এবং আজও সেই ধারায় চলে আসছে। আসলে সন্ন্যাসী গণ সংকল্প করে কোন পূজা বা বৈদিক ক্রিয়া কান্ড করার অধিকারী নন বলেই আদর্শ গৃহস্থাশ্রমী শ্রীশ্রীমার( যদিও ত্যাগ তপস্যায় তিনি সন্ন্যাসীর ও শিরোমনি।) নামেই বেলুন মঠে দূর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি খুবই অভিনব এই কারণে যে শ্রী শ্রী মায়ের দেহত্যাগের এত বছর পরেও সেই একই ধারায় বেলুড় মঠে পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে অথবা স্বামীজি যে কল্পনা করতেন শ্রী শ্রী মাকে জ্যান্ত দুর্গা রূপে প্রতি বছর মৃন্ময়ী মূর্তিতে কি চিন্ময়ী অধিষ্ঠান হয়? আমরা এও জানি স্বামীজি আগমনী গান বড়ই ভালোবাসতে এবং নিজেও গাইতেন স্বয়ং শ্রীশ্রী রাম কৃষ্ণ দেব স্বামীজীর কন্ঠে আগমনী গান শুনে সমাধিস্থ হয়েছিলেন। বেলুড় মঠের স্বামীজি প্রায় একটি আগমনী গান গাইতেন তার প্রিয় বিল্ববৃক্ষ তলে বসে। গানটি হোল-
গিরি গণেশ আমার শুভকারি
পূজা গণপতি পেলাম হৈমবতী
চাঁদের মালা যেন চাঁদ সারি সারি ।
বিল্ববৃক্ষ মূলে পাতিয়া বোধন
গণেশের কল্যাণে গৌরীর আগমন
ঘরে আনবো চন্ডী কর্ণে শুনবো চন্ডী
আসবে কত দন্ডী জটাজুটধারী।
বেলুন মঠে বয়স অনুসারে কুমারীদের নামকরণ করা হয়। এবারে পূজিতা কুমারীদের নামকরণ করা হয় "উমা"। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে তিন শক্তির বলে ক্রমাগত সৃষ্টি ,স্থিতি ও লয় হচ্ছে সেই তিন শক্তি আদতে আকারে কুমারীর মধ্যে থাকে। এই কারণে কুমারীতে দেবী ভাব কল্পনা করে তাকে পূজো করা হয়। কুমারী তিনি হন তাকে দেবী দুর্গার প্রতিভূ বলা হয়।
তন্ত্র শাস্ত্র অনুসারে কুমারী পূজা হলো সাত বছরের মেয়ে যে অবিবাহিতা তার পুজো করা বেলুড়মঠে কুমারী পুজো। ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ চালু করেন ওই বছর স্বামীজি সারদা মায়ের উপস্থিতিতে 9 জন বালিকা কে কুমারী রূপে পুজো করে ছিলেন ।স্বামীজি নিজে কুমারীদের পায় পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন এবং পূজা শেষে তাদের প্রণামী ও দেন আজও বেলুড়মঠে কুমারী পূজা চলে আসছে সেই অতীত ঐতিহ্য ও রীতি মেনে।
প্রতিবারের মত এবারে কুমারী পুজো হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সমগ্র বিশ্বে মারণ করোনাভাইরাস ভয়ঙ্কর রূপ নেয়ওয়ায় বেলুড়মঠে সাধারণ দর্শনার্থী ও ভক্তদের প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর বিধি-নিষেধ লাগু রয়েছে । ফলে এবারের কুমারী পুজো এক প্রকার ভক্ত শূন্য অবস্থায় সম্পন্ন হচ্ছে শাস্ত্রীয় নিয়ম নিষ্ঠা মেনে।