নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুক: দুর্গাপুজোর মরসুমে দীর্ঘ লকডাউন এর ছায়া। আর তাতেই দুশ্চিন্তা নেমে এসেছিল লোকশিল্পীদের পরিবারে। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের পথশ্রী প্রকল্পের প্রচারকে ঘিরে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার লোক…
নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুক: দুর্গাপুজোর মরসুমে দীর্ঘ লকডাউন এর ছায়া। আর তাতেই দুশ্চিন্তা নেমে এসেছিল লোকশিল্পীদের পরিবারে। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের পথশ্রী প্রকল্পের প্রচারকে ঘিরে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার লোকশিল্পীরা।
স্থানীয় ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেও এদিন ঘটা করে পথশ্রী প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করা হয়। যার মাধ্যমে সারা জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেহাল রাস্তা সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের আওতায় আনা হয়েছে এই প্রকল্পে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় প্রায় ৬০০ টি বেহাল রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।বৃহস্পতিবার বিকেলে নন্দকুমার এ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসক পার্থ ঘোষ, জেলা পুলিশ সুপার সুনীল কুমার যাদব, এলাকার বিধায়ক সুকুমার দে সহ অন্যান্যরা।এদিকে এগ্রা থেকে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবব্রত দাস। স্বভাবতই দীর্ঘ লকডাউন এর মাঝে এই প্রকল্পের প্রচার ঘিরে অনেকটাই উৎসাহিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার লোক ও শিল্পীরা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন এই প্রকল্পের প্রচারে বেশ কিছুটা জোর দিয়েছে প্রশাসন। মূলত জেলার লোক শিল্পীদের নিয়ে গঠিত ছোট ছোট এর মাধ্যমে নতুন নতুন ছড়া ও গানের মাধ্যমে এই লাগাতার প্রচার অভিযান চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এর পক্ষ থেকে এর জন্য প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়েছে। চলতি অক্টোবর মাসের ১ তারিখ থেকে আগামী ১৫ দিনব্যাপী জেলার ২২টি ব্লক ও একটি পৌরসভা এলাকায় লাগাতার এই প্রচার অভিযান চলবে বলে জানা গিয়েছে। লোকশিল্পীদের এক একটি দলে ৫জন করে সদস্য নিয়ে একটি টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। যাদের নিয়ে আবার এই প্রকল্প সম্পর্কিত নতুন নতুন গান বাধা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিদিনই মোট পাঁচজন নিয়ে এক একটি দল জেলার ২৩ টি জায়গাতে প্রচার কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। যাদের প্রত্যেক সদস্য মাথাপিছু ১০০০ টাকা করে পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এই প্রথশ্রী প্রকল্পের প্রচারের জন্য দুটি ভ্রাম্যমাণ টেবলো এবং জেলাব্যাপী প্রায় ১৫টি বড় আকারের হোডিং লাগানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সরকারি অন্তর্ভুক্ত প্রায় ১১ হাজার ২১০ জন লোকশিল্পী রয়েছেন। যারা ইতিমধ্যেই তাদের মাসিক বহাল ভাতা ও পেনশন পেয়ে আসছেন। এরপর সারা বছরের পাশাপাশি প্রতিবছরই পুজোর মৌসুমে তাদের বিভিন্ন পূজা অনুষ্ঠান ঘিরে উপরই উপার্জনের সুযোগ থাকত। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় সাত মাসের লকডাউন এর জেরে এই সকল লোকশিল্পীদের পরিবার প্রায় অসহায়। সামান্য সহকারী ভাতা ও পেনশনের ওপর ভিত্তি করে তাদের সংসার চালাতে গিয়ে হাঁসফাঁস অবস্থা। এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তে রাজ্য সরকারের এই প্রথশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেদের নতুন করে কাজের সুযোগ পেয়ে অনেকটাই উচ্ছসিত এই সমস্ত লোকশিল্পীদের পরিবার। এ বিষয়ে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এর আধিকারিক গিরিধারী সাহা বলেন, দীর্ঘ লকডাউন এর জেরে পুজোর মরসুমেও জেলার শিল্পীদের অসহায় অবস্থা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যের এই নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন করে এই সকল লোকশিল্পীদের কাজের সন্ধান দিতে পেরে আমাদেরও ভীষণ ভালো লাগছে। জেলাশাসক পার্থ ঘোষ জানান, রাজ্যের পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুরে ও নতুন এই পথশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে ৬০০টি রাস্তা সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেগুলির দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এর তত্ত্বাবধানে জেলার লোক শিল্পীদের নিয়ে পথশ্রী প্রকল্প নিয়ে জেলাব্যাপী লাগাতার প্রচার অভিযান চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।