পুজো এলেই মনে পড়ে যায় পদ্মফুলের কথা।একশো আটটি নীল পদ্ম দিয়ে রামচন্দ্র অকাল বোধন পুজো করেছিল।সে কাহিনী সকলের জানা।এখন অবশ্য নীল পদ্ম সেভাবে চোখে পড়ে না।তাই লাল পদ্ম দিয়ে ই চলে সন্ধিপুজা।অষ্টমীর শেষ আর নবমী শুরু ।আর ঠিক এই সময় সন্ধ…
![]() |
তরুণ চট্টোপাধ্যায় |
এই পদ্মের বাজার দুর্গা পুজো কে কেন্দ্র করেই।তাই পদ্ম চাষীরা তাকিয়ে থাকেন এই পুজোর দিকেই।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্হানে পদ্মের চাষ হলেও আজও এগিয়ে সেই পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কিছু জায়গা।কোলাঘাট ও সন্নিহিত অঞ্চলে চলে এই চাষ।বিশেষ করে রেল লাইনের ধারের জলাশয় গুলি।শিশির পড়লে পদ্মের কুড়ি নষ্ট হয়ে যায় ।তাই শীতের আগে সব পদ্ম কে তুলে নিতে হয়।
এই পদ্ম বিক্রি করেই এদের দিন গুজরান।পুজোর নতূন জামা জুতো সব কেনা হয় এই পদ্ম ফুল বিক্রি করেই।তাই পদ্ম চাষীরা তাকিয়ে থাকেন দুর্গা পুজোর দিকেই।আর যেহেতু একশো আটটি ফুল ছাড়া এই পুজো হবে না তাই এই সময় পদ্মের দামও হয় বেশি।
এবারের করোনা আবহে পুজোর কাট ছাঁট হলেও পদ্ম ফুল কিন্তু চাই একশো আটটিই।উড়িষ্যা থেকেও কিছু পদ্ম আসে।তবে বাংলার ফুলের থেকে সে ফুলের রুপ ও লাবন্য কম থাকে।বর্তমানে বীরভূম সহ বেশ কিছু জেলাতে এখন বড় পুকুরেও পদ্ম ফুলের চাষ শুরু হয়েছে।
পুজোর অন্য কথা লিখতে বসে যে কথাটি বার বার দাগ কাটে তা হলো লাল পদ্ম তুলতে গিয়ে নীল হতেও রাজি।
আসলে ছোট ছোট ডিঙি করে পদ্ম বনে জল সরিয়ে পদ্ম তোলাই রীতি।পদ্মের মধুর লোভে গাছের আশে পাশে সাপেদের ও আনাগোনা ।বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে রাই এই পদ্ম তোলার কাজ করে।আর পদ্ম গোগরোর ছোবল আসে এদের ওপরেই।বর্তমানে অবশ্য সাপের প্রকোপ আগের থেকে কম।কিন্তু একেবারেই নেই একথা বলা যায় না।
এক সময় এই পদ্ম বনে ঢুকে সাপের কামড় আখছার ঘটতো।পদ্ম গোগরোর বিষে ঢলে পড়তো পদ্ম চাষীর বাড়ির ছেলে মেয়েরা ।তবুও পদ্ম তোলা চাই।পদ্ম ফুল বেচেই যে এদের দিন গুজরান ।
লাল পদ্ম তুলতে গিয়ে এরা যে নীল হতেও রাজি।বিষে নীল হওয়া নিথর দেহ পড়ে থাকে।আবার পরের পুজোয় সেই পদ্ম তুলতে পদ্ম বনে যাওয়া ।সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে।
কীটনাশকের ফলে গ্রামে গঞ্জে এই সব বিষধর কমলেও তা কিন্তু আজও আছে।
পুজোর অন্য কথা লিখতে গিয়ে মনে পড়ে যায় সেই সব মুখ।যে মুখগুলি আজও অমলিন।পেট যে বড় দায় ।তাই লাল পদ্ম তুলতে গিয়ে এরা যে নীল হতেও রাজি।
পুজোর সঙ্গে পদ্ম ফুল অঙ্গাঙ্গীভাবে ভাবে জড়িত ।তাই পুজোর অন্য কথা তেও সেই গরলের নীল ছায়া এসে পড়লো।
আবার পুজো আসে।কিন্তু বিষে নীল হওয়া সেই সব শিশুরা আর ফিরে আসে না।এটাই নিয়ম ।