Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সুনীল আকাশে স্বাতী নক্ষত্র

সুনীল আকাশে স্বাতী নক্ষত্র✍সোমনাথ মুখোপাধ্যায় 
তিনি চলে গিয়েছেন আট বছর আগে। তবু আজও আছেন প্রবলভাবে। আছেন তাঁর কবিতার আকুলতায়। আছেন তাঁর উপন্যাসের পাতায় পাতায়। তিনি প্রথিতযশা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।"ভালোবাসা, প্রেম নয়&q…



 সুনীল আকাশে স্বাতী নক্ষত্র

✍সোমনাথ মুখোপাধ্যায় 


তিনি চলে গিয়েছেন আট বছর আগে। তবু আজও আছেন প্রবলভাবে। আছেন তাঁর কবিতার আকুলতায়। আছেন তাঁর উপন্যাসের পাতায় পাতায়। তিনি প্রথিতযশা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।

"ভালোবাসা, প্রেম নয়" কি আলাদা? এই প্রশ্ন তুলে দিয়ে হঠাৎ করেই চলে গিয়েছেন আজীবন ভালোবাসার পূজারী সুনীল। আক্ষরিক অর্থেই। বুঝিবা সাহিত্য ও জীবন একাকার করবেন বলেই, "হঠাৎ নীরার জন্য"-র স্রষ্টা একদিন প্রেমে পড়েছিলেন! আরো পাঁচজনের মতোই। হঠাৎ করেই। প্রেমে পড়েছিলেন স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। 


বাংলা সাহিত্যের কল্লোল পরবর্তী যুগে কৃত্তিবাস পর্বের চলা শুরু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরেই। কৃত্তিবাসের সংখ্যা নিতে দমদম যুগীপাড়া কলোনিতে হানা দিয়েছিলেন স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত পরিবারের কন্যা স্বাতী। সুনীলের লেখার ভক্ত। "ভ্রু পল্লবে ডাক দিলে দেখা হবে চন্দনের বনে..." পড়ে উদ্বেল স্বাতী। অন্যদিকে দমদমের উদ্বাস্তু কলোনিতে জীবন সংগ্রামে নিজেকে গড়েপিটে নিচ্ছেন "জনারণ্যে একজন" তরুণ সাহিত্য পথযাত্রী সুনীল। সামাজিক বিভাজন রেখা প্রকট হলেও, একে অপরকে জীবনপথের সহযাত্রী করার পিছনে এই সাহিত্যের অবদান কিছু কম নয়!


১৯৬৬তে বহরমপুরে এক অনুষ্ঠানে দেখা দুজনের। তারপর ভালো লাগা, ভালোবাসা। 'ভালো বাসা'-র স্বপ্নের জাল বোনা। "পূর্ব পশ্চিম"-য়ে বোধহয় তখন প্রগাঢ় প্রেমের "প্রথম আলো" ফুটতে শুরু করেছিল!

১৯৬৭তে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সুনীল-স্বাতী, যা চলবে আজীবন। বোহেমিয়ান সুনীলের জীবনে কিছুটা স্থিতাবস্থা আসে বিবাহের পর। রাতের কলকাতা শাসন করা পাঁচ যুবকের একজন (সুনীল, শক্তি, শরৎ, সন্দীপন ও তারাপদ) হয়তো বোহেমিয়ানিজমে ক্লান্ত!হয়তো বা সুনীল আকাশে স্বাতী নক্ষত্রের জল মুক্তোর জন্ম দিয়ে আদতে আকাশের নবজন্ম ঘটিয়ে ফেলেছে! 


সন্তান শৌভিকের জন্ম স্বাভাবিক নিয়মেই। পরে ১৯৮২তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন সুনীল। গন্তব্য আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাতী সেখানে কিছুদিন ছিলেন। পরে ফিরে আসেন দেশে। চলতে থাকে সুনীলের কলম। বাংলা সাহিত্যের রাজত্ব শাসন করতে এসেছেন তিনি। জন্ম নেয় প্রতিদ্বন্দ্বী, অরণ্যের দিনরাত্রি, বৃত্তের বাইরে, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম প্রভৃতি কালজয়ী উপন্যাস। একা এবং কয়েকজন, নীরা হারিয়ে যেও না, আরো কত মন ছুঁয়ে যাওয়া কবিতা। ভূষিত হবেন সাহিত্য আকাদেমি, আনন্দ পুরস্কারে।


চিরপ্রেমিক সুনীল তাঁর প্রেমপত্রে লিখেছিলেন, প্রেমে পড়লে মন ভালো থাকে। ঠিকই তো। প্রেম করা বা ভালোবাসা অন্যায় না হলে, সেটি স্বীকারোক্তির মধ্যে অন্যায় কোথায়? তেমনি মত স্বাতীদেবীর।


"কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর হয়ে গেল, কেউ কথা রাখেনা"। না সুনীল নিজেও কথা রাখেননি! স্বাতী আছেন তাঁর "মনের মানুষ"-কে নিয়ে। চলে গিয়েছেন সুনীল তাঁর বড় প্রিয় সেই দিকশূণ্যপুরে! নীললোহিত কথা রাখেনি। নীললোহিত কথা রাখে না!