। তরুন চট্টোপাধ্যায় ।কলকাতা ।গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল বিজেপির যুব মোর্চার নবান্ন অভিযান ।হাওড়া ও কলকাতার চারটি জায়গা থেকে বিজেপির মিছিল নবান্ন ঢুকতে যাওয়ার আগেই পুলিশের ব্যারিকেটে আটকে পড়ে।শুরু হয় পুলিশ বনাম বিজেপি কর্মী দের ধুন্ধুম…
। তরুন চট্টোপাধ্যায় ।কলকাতা ।
গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল বিজেপির যুব মোর্চার নবান্ন অভিযান ।হাওড়া ও কলকাতার চারটি জায়গা থেকে বিজেপির মিছিল নবান্ন ঢুকতে যাওয়ার আগেই পুলিশের ব্যারিকেটে আটকে পড়ে।শুরু হয় পুলিশ বনাম বিজেপি কর্মী দের ধুন্ধুমার লড়াই।জলকামান কাঁদুনে গ্যাসের শেল ঘন ঘন বর্ষিত হয়।মুকুল রায় ছিলেন হেস্টিংস এ।সেখানে ও খন্ডযুদ্ধ হয় পুলিশের সঙ্গে ।
সাঁতরাগাছি তে পুলিশের ছোঁড়া বেগুনি জলে আহত হয়ে পড়েন বিজেপি নেতা রাজু বন্দোপাধ্যায় ।তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।অরবিন্দ মেনন ও পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে ।বেগুনী জল কে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দোপাধ্যায় হোলির রঙ বললেও বিজেপির অভিযোগ এটি রাসায়নিক ।আর তা নিয়ে তদন্ত চাইছেন বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতি ।
এদিন বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা ও রাজ্য নেতারা গলা ফাটালেও দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় সে ভাবে কিছুই বলেন নি।টিভির ক্যামেরায় দেখা যায় নি মুকুল রায়ের ছবিও।এমনকি প্রেস মিটেও সন্ধ্যা পর্যন্ত মুকুল রায় কে দেখা যায় নি।অভিযান সফল কি ব্যর্থ সে নিয়ে তর্ক থাকতেই পারে।তবে বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয় পুলিশ গুন্ডামি করেছে।বিজেপি কর্মী দের নির্মম ভাবে লাঠি পেটা করেছে।পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে বিজেপিই আইন ভেঙেছে।বোমা ও ইঁট ছুড়েছে।এমনকি হাওড়া ময়দানে এক বিজেপি কর্মী কে আগ্নেয়াস্ত্র সহ পুলিশ গ্রেপ্তার ও করেছে।
সকলে রক্তাক্ত হলেও এদিন মুকুল স্পীকটি নট।অথচ এই মুকুল রায়ের ওপর বড় ভরসা করছেন বিজয় বর্গীয় সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ।
তবে কি বর্তমান বিজেপি দলের মুকুল রায় ছিলেন এক সময় তৃনমূল দলের সেকেন্ড ম্যান ।সেই মুকুল রায় কে দলে ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে সর্বভারতীয় সহ সভাপতি করলেন।যদিও আজও মুকুল কে এ বঙ্গের কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
যাঁরা মুকুল রায় কে চেনেন তাঁরা জানেন তিনি বঙ্গ রাজনীতির চানক্য ।মেঘের আড়াল থেকে যুদ্ধ করা মেঘনাদের মতোই তিনি আড়াল থেকেই যুদ্ধ করতে অভ্যস্ত ।তৃনমূল দলে থাকার সময় ও তিনি পিছন থেকেই দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।বিজেপি দলেও তিনি সেই ভূমিকা ই নিচ্ছেন।নবান্ন অভিযানে ও মুকুল রায়ের সেই স্টাজেডিই ছিল।
কিছুদিন আগে অমিত শাহ বলেছিলেন এক ঝাঁক তৃনমূল নেতা কর্মী বিজেপি দলে আসতে চলেছে।পাঁচিলে বসে থাকা সেই সব নেতা কর্মী দের উদ্দেশ্যে বিজেপির বক্তব্য দলে চলে আসুন।যোগ্য সন্মান পাবেন।কারন বিজেপি দল উপলব্ধি করেছে এরা না এলে বঙ্গের ভোটে বৈতরনী পার হওয়ার সম্ভাবনা নেই।তাই মুকুল সহ ভিন দল থেকে আসা নেতাদের ভালো ভালো পদ দিয়েছে বিজেপি।আর বিজেপির বিশ্বাস এতে করে যাঁরা পা বাড়িয়ে আছেন তাঁরা খুশি হবেন।
বঙ্গ ভোটের নিরিখে দিলীপ ঘোষেরা যতই হম্বিতম্বি করুক ভোট মেসিনারি সচল রাখতে মুকুল রায় দের প্রয়োজন ।যদিও মুকুল রায় হাই কমান্ডের নির্দেশ না পেলে বঙ্গ ভোটে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারছেন না।
দিলীপ ঘোষেরা পুরানো বিজেপি।তাই নব বিজেপির সঙ্গে একটা দূরত্ব থাকছেই।আর এস এস করা দিলীপেরা তাই সহ্য করতে পারছেন না মুকুল রায় দের।
নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহদের ভরসা কিন্তু মুকুল রায় দের ওপরেই।কারন এই রাজ্যের উনিশের ভোটে দিলীপ ঘোষেদের থেকেও মুকুল বাহিনীকে এগিয়ে রেখেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ।
মুকুল রায় অবশ্য এখনো চুপচাপ ।জল মাপছেন তিনি।সংগঠনের দিকেই নজর মুকুলের।কারন তিনি জানেন একটা নবান্ন অভিযান ও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে বঙ্গের ভোটে জেতা যাবে না।বঙ্গের ভোটে জিততে গেলে ভোট বাক্সে সেই প্রতিফলন কে ধরে রাখতে হবে।শুধু বক্তব্য দিয়ে এ রাজ্যে জয় অসম্ভব ।
বৃহস্পতিবার এর নবান্ন অভিযান পুলিশের সঙ্গে বিজেপির খন্ডযুদ্ধের ছবি কদিনেই ফিকে হয়ে যাবে।তাই মেঘের আড়ালে থেকেই দিলীপ ঘোষেদের অজান্তে মুকুল রায় ফন্দি আঁটছেন।ফাঁক ফোকর খুঁজছেন শক্তিশালী তৃনমূল দলের।
আর সেই ফাঁক দিয়ে ই মুকুল চাইছেন এ রাজ্যের ভোট যুদ্ধে জয়ী হতে।
সামনেই বিহারের বিধানসভা ভোট।বাংলার ভোট হতে এখনো মাস ছয়েক দেরি।তাই মুকুল রায় এখনো অপেক্ষায় ।তড়িঘড়ি কিছু করে যে এ রাজ্যে হালে পানি পাওয়া যাবে না তা বিলক্ষন বোঝেন মুকুল ।তাই তিনি মেপে মেপে পা ফেলছেন।
রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ যাই বলুক না কেন তিনিও জানেন মুকুলেই ভরসা কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতাদের ।আর সেই মুকুল এখনো মেঘের আড়ালে।
মেঘের আড়ালে যুদ্ধ করেছিলেন মেঘনাদ।মুকুল রায় ও সেই পন্থাতেই এ রাজ্যের ভোট যুদ্ধে নামতে চাইছেন।তাই নবান্ন অভিযান নিয়ে তিনি একটি কথাও বলতে চাইছেন না।
মুকুলেই ভরসা রাখছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।