Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#বিভাগ_গল্প#আনন্দ আশ্রম#অপর্না রায়২০/১০/২০২০
                   " আনন্দ আশ্রম "
অরিত্র : মা, মা, ওমা কোথায় গেলে তুমি। সুজাতা : কি হলো রে খোকা, এমন চেঁচামেচি করছিস কেন? অরিত্র : তোমাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না তাই। সুজাতা : …

 


#বিভাগ_গল্প

#আনন্দ আশ্রম

#অপর্না রায়

২০/১০/২০২০


                   " আনন্দ আশ্রম "


অরিত্র : মা, মা, ওমা কোথায় গেলে তুমি। 

সুজাতা : কি হলো রে খোকা, এমন চেঁচামেচি করছিস কেন? 

অরিত্র : তোমাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না তাই। 

সুজাতা : কি আর করি একা একা, শুয়ে ছিলাম। 

অরিত্র : সত্যি মা কখনও ভেবে দেখিনি, তুমি একা একা সারাদিন কাটাও কি করে? তবুও আগে মৌপ্রিয়া যখন ছোট ছিল তখন তাও তোমার সময় কেটে যেত। এখন তো মৌপ্রিয়া ( অরিত্রর বারো বছরের মেয়ে) বড়ো হয়েছে, পড়াশুনার চাপে তোমার সাথে থাকতে পারে না। 

সুজাতা : কি আর করবি খোকা, তুই আর বৌমা দুজনেই এতো বড়ো চাকরি করিস, কতো দায়িত্ব তোদের কাঁধে। আর দিদি ভাইও তো বড়ো হচ্ছে, ওকেও তো ওর ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। এই বুড়ির কাছে পড়ে থাকলে চলবে কি করে? তুই ওতো ভাবিস না খোকা আমি ঠিক আছি। 

অরিত্র: সত্যি আমি এতোদিন ভাবিনি, তোমার বৌমা আমার চোখ খুলে দিয়েছে। মলি বলছিল, "আমরা সবাই বেড়িয়ে যাই, একবারও ভেবে দেখেছো মা সারাদিন ঘরে একা একা থাকে কি করে"।আর কিছু দিন কষ্ট করে থাকো মা। আমি আর তোমার বৌমা ঠিক করেছি, তোমাকে এমন একটা জায়গায় রাখার চেষ্টা করবো, যেখানে তোমার বয়সী অনেকেই থাকবে। তাদের সাথে গল্প করে, হাসি মজা করে তোমার সময় দিব্যি কেটে যাবে। 

সুজাতা : আমি ভালো আছি খোকা, তোদের নিয়ে আমি ভালো আছি। বলতে বলতে এক অজানা অভিমানে গলা তার বুজে আসে, ধীরে ধীরে নিজের ঘরে চলে যান তিনি। ঘরে গিয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে ভাবতে থাকে অতীতের কথা,,,,,,,,, 


               সুজাতা দেবী আর অসীম বাবু, দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে থাকত পাহাড় ঘেরা ছোট্ট এক শহরে। অসীম বাবু সরকারি অফিসে কেরানির চাকরি করতেন। 

বাহুল্য না থাকলেও সুখী পরিবার ছিল তাদের। হঠাৎ একদিন অসীম বাবুর বদলি হয়ে যায় কলকাতা শহরে। কেরানির চাকরি করে বাড়ি ভাড়া দিয়ে, পাঁচজনের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। তবুও দুজন মিলে বুদ্ধি করে সংসার চালাতো। ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছিল। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ায় ভালোই ছিল। ছোট ছেলে সুজয় একটু চঞ্চল প্রকৃতির ছিল। বন্ধুবান্ধব নিয়ে থাকতে ভালোবাসতো। এই বন্ধুই তার জীবনের কাল হলো। 


           কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক করতে গিয়ে ফেরার সময় পথ দুর্ঘটনায় সুজয় ঘটনাস্থলেই মারা যায়। খবরটা শোনার পর, অসীম বাবু পুত্রশোকে মারা যান। জোড়া মৃত্যুতে পুরো পরিবার স্তব্ধ হয়ে যায়। 


           সুজাতা দেবী অনেক কষ্টে ছেলে মেয়ের মুখ চেয়ে নিজেকে সামলান। তারপর থেকে তার জীবনে শুরু হয় অন্য এক সংগ্রাম! যে করেই হোক ছেলে মেয়েকে মানুষ করতেই হবে, তারজন্য তাকে যা করতে হয় তাই করবেন তিনি পণ করেছিলেন, করেও ছিলেন নানান ধরনের কাজ। বড়ো ছেলে মেধাবী ছিল। ভালো রেজাল্ট করে লেখাপড়া শেষ করে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত হয়। সেখানেই মলির সঙ্গে পরিচয়, তারপর বিয়ে। 


             সুজাতা দেবী স্বামীর মৃত্যুর পর যা টাকাকড়ি পেয়েছিলেন, তাই দিয়ে মেয়ের ভালো ঘরে বিয়ে দেন। 

         তারপর থেকেই ছেলে-বৌমার সংসারে নাতনীকে নিয়ে ভালোই ছিলেন তিনি। হঠাৎ ছেলের মুখে এমন কথা শুনে স্বজন হারানোর ব্যথাটা চারা দিয়ে উঠেছে আবার। 


           কয়েকদিন পর মৌপ্রিয়া এসে বলছে, "ঠাম্মা বাবা-মা বলছিল এবার পুজোয় ষষ্ঠীর দিন তোমাকে নাকি কোথায় রেখে আসবে, আমি তোমাকে ছেড়ে কেমন করে থাকবো? "

       এই কথা শুনে সুজাতা দেবীর দুচোখ জলে ভরে উঠলেও অভিমানে কোনো কথা বলেনি সে। 


              ষষ্ঠীরদিন সকালে অরিত্ররা সকলে মিলে সুজাতাকে নিয়ে গাড়ি করে রওনা হলো। রওনা হওয়ার আগে সুজাতা দেবী ছেলেকে শুধু বললেন,"আমি তো চলে যাচ্ছি, তোরা ভালো থাকিস খোকা।" 


             সারা রাস্তা সবাই চুপচাপ ছিল। নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে গাড়ি পৌঁছাতে সুজাতা দেবী দেখে জায়গাটা কেমন চেনাচেনা লাগছে! মনে পড়ে গেল এখানেই কোথাও অসীম বাবু একটা জমি কিনেছিলেন বাড়ি করবে বলে, কিন্তু বাড়ি করা আর হয়ে ওঠেনি। 

নিদিষ্ট সময় পরে গাড়ি থামে একটা সুন্দর দোতলা বাড়ির সামনে।বাড়ির ভেতর থেকে ঢাকের আওয়াজ আসছে।সুজাতা দেবী একটু অবাকই হচ্ছিল তবুও মুখে কিছু বলেননি।গাড়ি থেকে নেমে সুজাতা দেখে বাড়িটা কি সুন্দর! ফলকে বাড়ির নাম লেখা "আনন্দ আশ্রম"। একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পায়, সুজাতার মেয়ে জামাই আর তার বয়সী কয়েক জন ভদ্রমহিলা মিলে ফুল মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 

           সামনে যেতেই মেয়ে মাকে মালা পরিয়ে দিয়ে বললো, " মা 'আনন্দ আশ্রমে' তোমার স্বাগত।" মা বললো, "তোরা এখানে কি করছিস, আর এসব কি? " মেয়ে হেসে বললো, "মা জায়গাটা মনে পড়ে, বাবা যে জায়গাটা কিনেছিলেন, দাদা সেই জায়গায় তোমার জন্য " আনন্দ আশ্রম"বানিয়েছে। আর এনাদের থাকার ব্যবস্থা করেছে, তোমার একাকিত্ব দূর করার জন্য। এনারা নিচের তলায় থাকবে আর আমরা উপরে। প্রতি বছর এখানে দূর্গাপূজা হবে। আমরাও আসবো পুজোর সময়। 


          সুজাতা ছেলের দিকে ঘুরে তাকাতে অরিত্র মাকে জড়িয়ে ধরে বলে " মা এই আমার স্বপ্নের বাড়ি "আনন্দ আশ্রম" তোমার নামে উৎসর্গ করলাম। আজ থেকে আমরা এখানেই থাকবো। আর ঐ যে ওনাদের দেখছো, ওনাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে থাকে। ওনারাও একাকিত্বে ভুগছেন, তাই আমি ওনাদের এই "আনন্দ আশ্রমে" এনেছি। ওনারাও আজ থেকে আমাদের সাথে থাকবেন। তোমরা সবাই মিলে গল্প হাসি মজা করে সময় কাটাবে।" ছেলের কথা শুনে সুজাতা কান্নায় ভেঙে পড়ে। বলে "খোকা তুই আমার জন্য এতো কিছু ভেবেছিস আর আমি কি সব ভুলভাল ভাবছিলাম, আমাকে ক্ষমা করে দে খোকা। "

অরিত্র সুজাতাকে বলে, "মা বাবা অকালে চলে যাওয়ার পর তুমি আমাদের জন্য কি কি করেছো কিছুই ভুলিনি আমি। তুমি যাতে ভালো থাকো সেটা দেখার কর্তব্য আমার। এটা আমাকে করতেই হতো।"


           মহা খুশিতে সবাই মিলে কাটায় পুজোর দিনগুলো। তারপর মেয়ে-জামাই ফিরে যায়, ছেলে-বৌমা কাজে যোগ দেয়। নাতনীও স্কুল যাতায়াত করে। 

          

     কিন্তু এখন আর সুজাতার একা একা লাগে না, আনন্দ আশ্রমের বাসিন্দাদের সাথেই সময় কেটে যায় তার।। 


"সময় বয়ে চলে তার নিজের নিয়মে, 

পরিস্থিতি পাল্টে যায় কালের নিয়মে"।। 


                                                       ..... অপু