Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

আমার স্বাস্থ্যচর্চাঅনির্বাণ মুখোপাধ্যায়------------------------- সেটা ১৯৯২ সাল। হোস্টেলে থাকি। তখন আমার একুশ বছর বোধহয়। কোনো অষ্টাদশী এবং কিঞ্চিৎ ছোট বড় কাউকে দেখলে সবে চিত্ত চঞ্চল হতে শুরু করেছে। আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকা উচিত নয় …

 


আমার স্বাস্থ্যচর্চা

অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়

-------------------------

 সেটা ১৯৯২ সাল। হোস্টেলে থাকি। তখন আমার একুশ বছর বোধহয়। কোনো অষ্টাদশী এবং কিঞ্চিৎ ছোট বড় কাউকে দেখলে সবে চিত্ত চঞ্চল হতে শুরু করেছে। আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকা উচিত নয় -- ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, সাহিত্যের উপলব্ধি আছে, সত্যজিৎ- মৃনাল নিয়ে বকবক করতে পারি, রাজনীতি চর্চা করি, আবৃত্তি-বিতর্কতে অংশগ্রহণ করি। মোটের ওপর বোকা-গাধা নই। কিন্তু সমস্ত আত্মবিশ্বাস এসে ধাক্কা খাচ্ছিল স্বাস্থ্যে। প্রায় ৬ ফুট উচ্চতা , অথচ ওজন ৪২ কেজি। যদিও মাপিনি কোনদিন, তবুও মনে হয় বুকের মাপ ২২ ইঞ্চির বেশি হবে না। কোনো নির্জন এলাকায় ওজন যন্ত্র না থাকলে ওজন নেওয়ার সাহসও হত না। তবুও আশা ছিল --- শ্যামল মিত্র,সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়,বিকাশ রায় আমার মতো স্বাস্থ্য নিয়ে অত অনুরাগী পেলে আমার কপালেও ঠিক কারুর অনুরাগ জুটবে। সব কিছুতে হঠাৎ বাধ সাধলো সলমন খান। খালি গায়ে কাঠ কেটে যেই সলমন নায়িকা এবং তার বাবাকে পটিয়ে ফেললো, অমনি সমস্ত বাঙালি ললনা দেহ দেখে স্নেহ করতে শুরু করলো। ফলে আমার দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘতর হতে থাকলো। ঘটনাচক্রে আমার রুমমেট ছিল ধূর্জটিপ্রসাদ। তার নামেও যেমন ঝংকার, চেহারাও সেরকম। তখন আমরা সিক্স প্যাক জানতাম না। না জেনেও ওকে আমরা গ্রিক ভাস্কর্যর সঙ্গে তুলনা করতাম। এক বিছানায় শুয়ে আমি যখন হেমন্তর ‘বনতল ফুলে ফুলে ঢাকা ‘ শুনতাম, তখন অন্য বিছানায় ও হোঁশ হোঁশ করে ডন দিত। আমার দীর্ঘশ্বাস আর ওর হোঁশ হোঁশ ঘরে এক অদ্ভুত যুগলবন্দীর সৃষ্টি করত। হঠাৎ একদিন ধূর্জটিপ্রসাদ মধ্যাহ্নভোজনের পর আমার প্যাকাটি সুলভ বাহুতে হাত রেখে অভয় দিল - "তৈরী হয়ে যাবে, তবে লোহা নিতে হবে ।" লোহার কথা বলতেই আমার পেশায় কামার দুকড়ি মামার কথা মনে হলো। সে তো সারা জীবন লোহা নিয়ে থেকেও আমার মতো ক্ষীন স্বাস্থ্যেরই ছিল ! আমার ভরসা হচ্ছে না দেখে ধূর্জটিপ্রসাদ বললো - "শুভস্য শীঘ্রম, এখনই জিম এ চল ।" আমিও বোধহয় কাঠফাটা দুপুরে কেউ কোথাও নেই দেখে ধূর্জটিপ্রসাদকে অনুসরণ করে পশ্চিমে চললাম স্বাস্থ্য ফেরাতে -- ওই দিকেই ছিল আমাদের জিম অর্থাৎ জিমন্যাসিয়াম। জিম এ গিয়ে বারবেল-ডাম্বেল নিয়ে ধূর্জটিপ্রসাদ কত কেরামতিই না দেখালো। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো একজায়গায় থেবড়ে বসে সব দেখলাম। সময় কোথা দিয়ে কেটে গেল টের পেলাম জিম থেকে বেরিয়েই। পাশেই হোস্টেল ক্যান্টিন। বিকেলের মুখে ভালই ভিড়। হঠাৎ আমাকে জিম থেকে বেরোতে দেখে মুহূর্তের মধ্যে আমার চারপাশে ভিড় জমে গেল। প্রায় একঘন্টা পরে যখন আমি সিনিয়র,জুনিয়র এবং সমবর্ষীয়দের অনুরাগ থেকে মুক্তি পেলাম, তখন আর আমার অনুরাগ নিয়ে কোনো মোহ নেই। শুধু উৎসাহের প্রাচুর্যে সেদিনই আমার স্বাস্থ্যচর্চার ইতি হলো।

"দাদা গো দাদা,এমন খাসা কন্ঠ কোথায় পেলে? --

 এই খেলে যা ! গান শোনাতে আমার কাছেই এলে ? "