বছর বারো বাদে
মৃত্যুঞ্জয় সরকার
২৬/১১/২০২০
বছর বারো বাদে হঠাৎ চমকে উঠি তোকে দেখে রাসের মেলায় বড়িশায়।
ভিড়ের মাঝে, ফুচকা খাওয়ার আছিলায় তুই অবাক হয়ে আমায় দেখিস চোখ পড়তেই ছোট্টো মেয়ের হাতটি ধরে এদিক ওদিক চাস।
তুই কি এখনো আমার কথা ভাবিস…
বছর বারো বাদে
মৃত্যুঞ্জয় সরকার
২৬/১১/২০২০
বছর বারো বাদে
হঠাৎ চমকে উঠি তোকে দেখে
রাসের মেলায় বড়িশায়।
ভিড়ের মাঝে, ফুচকা খাওয়ার আছিলায়
তুই অবাক হয়ে আমায় দেখিস
চোখ পড়তেই ছোট্টো মেয়ের হাতটি ধরে
এদিক ওদিক চাস।
তুই কি এখনো আমার কথা ভাবিস?
আমার মনে ঝড় উঠেছে আবার
উতাল পাতাল প্রেমের জলোচ্ছ্বাস
তোকে দেখি আর ভাবি,
এই কি আমার সেই মেঘ বালিকা
অতর্কিতে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হয়ে
আমায় ভিজিয়ে দিতো,
ঝাপটে নিয়ে দু হাত ধরে
ঠোঁটে ঠোঁটে উষ্ণতায় ভরিয়ে দিতো।
তোর কি মনে আছে
সেই সে দিনের কথা,
সকাল থেকে মেঘের ঘনঘটা
জেদ করে তুই বসেছিলি মেলায় যেতে হবে
মায়ের বারন, বাপের বারন
তবু যেতেই হবে তোকে,
গেলি অবশেষে
কি দৌরাত্ব তোর,
ছুটোছুটি, দাপাদাপি, হুল্লোড়
ফুচকা, জিলিপি, পাঁপড়ভাজা
খাওয়ার কতো পরিপাটি
সাজের জিনিস কেনার বাহার
নাগরদোলায় চাপা
ঘুরার ফাঁকে কানে কানে কানে ফিসফিসিয়ে কথা,
বলেছিলি, আমার আকাশ জুড়ে একটি তারা
তোর সাথে সবই অমিল
দুই মেরুতে দুই ভাবনা,
তবু তোর কথাই ভাবি
তুইই হবি জীবন খেলার সাথী।
বাচ্চাটা কি তোর?
কিসে পড়ে, নাম কি ওর?
তোর লোকটা বুঝি তোরই মতো?
ভালোবাসে আমার মতো?
কবিতা বলে, গল্প শোনায়?
তোর মতো কি অল্পভাষী?
ছবি আঁকে
তোকে নিয়ে নদীর বাঁকে ঘুরতে যায়
আমার মতো?
রাগ দেখাস
কোমর বেঁধে ঝগড়া করিস
হাতের কাছে যা পাস,বই পত্তর, দোয়াত পেন
ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারিস?
আমার মতো ওর সাথে রাগ করে সন্ধ্যে বেলায়
ছাদে গিয়ে বসিস, কান্না চোখে
আকাশ পানে চেয়ে
নতুন লোকের কথা ভাবিস?
গুমরে গুমরে কাঁদিস?
আমার কথা মনে পড়ে? একটি বারো? মনে পড়ে?
আমি এখন অন্ধকারে
হাতড়ে খুঁজি হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি
বকুলতলা, কলেজ রুম,খেলারমাঠ,
আরও কতো কি.....
তুই কি আগের মতোই বায়না করিস
অভিমানে দরজা বন্ধ করে
অঝোর ধারায় কাঁদিস?
মনে পড়ে তোর সেই চৈত্র মাসের কথা
কতোই বা বয়স হবে তোর
উনিশ, আমি একুশ।
সন্ধ্যে তখন হবে হবে
অনেক কষ্টে খুঁজে খুঁজে তোর প্রিয় ফুল কদম
যোগার করে এনে ছিলাম,
তুই আমায় আদর করেছিলি
আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে
অক্টপাসেৱ মতো,
কেমন যেন এক রোমাঞ্চ এসেছিলো
আমার মধ্যেই আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম
সম্বিত ফেরে তোর মায়ের আর্ত চীৎকারে :
বেরো বেয়াদপ এখান থেকে
ছি ছি ছি গরিবের ছেলের এই ভীমরতি।
আমি নির্বাক, কয়েক ফোঁটা জল পড়েছিল
চোখ থেকে..
তুই প্রতিবাদ করতে গিয়ে পারিস নি
এক ধমকে চুপ,
তোর ব্যাথা ছল ছল চোখে অনুভব করেছি।
কি ধুন্ধুমার কান্ড
চড় থাপ্পড় তোর বাবার
আমাকে টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বার করে দিলো।
পরের দিন
আমার বৃদ্ধ বাবার কাজটা চলে গেলো
তোদের বাড়ীর থেকে,
সে দিন রাতে বাবা আমার প্রচুর নেশা করেছিলো
দেশী চুল্লুতে
শুধু বলেছিলো আমাকে
করুণ চাহনিতে
মানুষ হলি না তুই,
বলেছিলো, আমাদের স্বপ্ন দেখতে নেই খোকা
নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের আবার জীবন কি
ক দিনের জ্বরে বাবা মারা গেলো
প্রলাপ বকতে বকতে, আমিই অপরাধী..
সেই যে মা বিছানা নিলো আর উঠলো না
একদিন সব শেষ, আমি একা...
স্যাঁতসেঁতে মাটিতে শুয়ে
ফুটো ঘরের চাল ভেদ করে
কখনো সূর্য, কখনো চাঁদের আলোর ঝলকানি
আমার সঙ্গী তখন ক একটি ইঁদুর বেড়াল ছানা চামচিকে, ঝিঁঝি পোকার সুরের কনসার্ট
মুহূর্তে সত্য হয়ে উঠে আমাদের জীবনের ফারাক..
তারপর
তোরা গ্রাম ছেড়ে চলে গেলি
কতো পূর্ণিমা অমাবস্যা কেটে গেছে
আমিও লিপ্ত হয়ে গেছি অন্য জগতে
মিটিং মিছিল, মিছিলের লম্বা সারির সামনে আমি
আবারও স্বপ্ন দেখা শুরু..
জীবন প্রতিষ্টার জন্যে
জীবনের মূল্যবোধের জন্যে
অধিকার কায়েমের জন্যে..
বার কয় জেলে গেছি
যখন থামলাম আবারও স্বপ্ন ভঙ্গ
আমি হয়ে গেছি ব্রাত্য
ছন্নছাড়া এ জীবন
আবারও সেই শূন্যতা, এবড়ো খেবড়ো স্মৃতি
একাকীত্ব আমাকে বারবার অসহায় করে তুলে।
আমার কথা মনে পড়ে?
ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যাবি আবার
খুঁজে কি আর পাবো তোকে?
থাক যেখানেই থাক সুখেই থাক।
শুনেছি তোর নাকি বুকে ব্যাথা
হৃদপিন্ডে একটা ফুটো
হঠাৎ করে হারিয়ে যাবি কোনো না কোনো দিনই
ভাবতে কেমন কষ্ট লাগে আজ..
হারিয়ে যাবার আগে
তাই তো তোকে দিয়ে যাচ্ছি ছোট্টো এক উপহার।
যখন তুই সুস্থ হয়ে পড়বি আমার চিঠি
বিশ্বাস কর আমার কথাই ভাববি শুধু
আমার কথাই।
এই যে আকাশ,
এই মেঘ, বৃষ্টি, রোদ, পাখির গান, উষ্ণতা
সব তোকেই দিলাম
তোরই থাক এক্কেবারে তোরই
সেই সঙ্গে এই হৃদপিন্ডখানি
নাই বা হলি আমার
সুখ দুঃখের সাথি
তবু তো তুই শোলক বেলার স্বপ্ন আমার
আমার কথা আমার ভাষা
ছন্নছাড়া এ জীবনের বউ
আমার বউ
শুধুই আমার বউ...
পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
কপিরাইট @মৃত্যুঞ্জয় সরকার