গল্প - উমাগল্পকার - শিলাবৃষ্টি🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷মানসবাবুর কন্যার যখন সবে একমাস বয়স ,তখনই এক ভয়াবহ ঝড় বৃষ্টির রাতে পুত্রের মৃত্যু হয় বজ্রাঘাতে । মানসবাবুর স্ত্রী প্রায় পাগল হয়ে যায় এই শোকে ,আর মানসবাবু কন্যাকে অপয়া …
গল্প - উমা
গল্পকার - শিলাবৃষ্টি
🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷
🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷
মানসবাবুর কন্যার যখন সবে একমাস বয়স ,তখনই এক ভয়াবহ ঝড় বৃষ্টির রাতে পুত্রের মৃত্যু হয় বজ্রাঘাতে । মানসবাবুর স্ত্রী প্রায় পাগল হয়ে যায় এই শোকে ,আর মানসবাবু কন্যাকে অপয়া ভেবে মুখের দিকেও ফিরে তাকান না। এইভাবেই শোকে দুঃখে দিন অতিবাহিত হচ্ছিল ।সময় এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কমলা মানে তাঁর স্ত্রী ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকলেও মানস বাবু কিন্তু মেয়েকে সহ্য করতে পারেন না । এইভাবেই চলছিল ।
তখন মেয়ের বয়েস পাঁচ । একদিন গভীর রাতে মানস বাবু স্বপ্ন দেখলেন । সে স্বপ্নের কথা কেউ বিশ্বাস করবেনা - এই ভেবে তিনি নিজের স্ত্রীকেও জানালেন না।
এরপর থেকে সবাই লক্ষ্য করলো মানস বাবু কন্যাঅন্ত্য প্রাণ । মেয়ে যেন তাঁর নয়নের মণি হয়ে উঠলো। মেয়ের জন্য তিনি সব করতে পারেন । তার মুখে না দিয়ে তিনি কিছু খাননা । মেয়ের সখ আহ্লাদ সব মেটান সাধ্যমতো। এমন কি মেয়ের চোখের জল মাটিতে পড়তে দেন না । এ হেন মেয়ের নাম রাখলেন উমা ।
দিনে দিনে উমা সাত বছরে পা রাখলো । লক্ষ্মীশ্রী যুক্ত উমাকে যে দেখে ভালোবেসে ফেলে । একান্নবর্তী পরিবারে দাদু ঠাকুমার কোলে পুরাণের গল্প শুনে ,
উমা বড় হতে থাকলো ।
মানস বাবু নিজে নিজে এক মহাযজ্ঞের প্রস্তুতি নিতে থাকলেন । আটবছর বয়সে
আশ্বিন মাসে দুর্গা নবমীর দিন প্রচুর মানুষ নিমন্ত্রিত হয়ে এলেন । আত্মীয় স্বজনও বাদ গেলনা । আর একশ আট জন কুমারী মেয়ে ,যাদের বয়স আট । উমাকে বেনারসী শাড়ী ,হাতে সোনার বালা ,হার দুল ,ফুলের মুকুট পরিয়ে আসনে বসিয়ে মানস ভট্টাচার্য নিজে পূজা শুরু করলে । অপূর্ব সে দৃশ্য । এ যেন এক অন্য দুর্গা ,রক্ত মাংসের দুর্গা ! হল চণ্ডীপাঠ
পূজা শেষে উমাকে দীর্ঘক্ষণ সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন তারপর মেয়ের ছোট্ট পা দু খানি ধরে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন । সে দৃশ্য যারা দেখলেন ,তাদের মধ্যে বন্ধু স্থানীয় কয়েকজন খাওয়া দাওয়ার পরে অপেক্ষায় রইলেন।
কুমারীদের আগে বরণ করে ,মালা পরিয়ে স্বযত্নে বসিয়ে খাওয়ালেন মানস । উপহার দিলেন । সবার মাঝখানে উমা ।
সবশেষে বন্ধুদের কৌতূহল দমন করলেন।
বিস্তারিত জানালেন আবেগ ছলছল চোখে ।
তিন বছর আগে স্বপ্নে তিনি উমাকে এক ছোট্ট দুর্গার রূপে দেখেছিলেন। যে দুর্গা শুধুই চোখের জল ফেলে বলেছিল- "আমাকে একটু ভালোবাসো বাবা ,একটু ভালোবাসো ।"
সেই দিনটা তিনি কিভাবে ভুলবেন ! তারপর থেকেই সেই ছোট্ট মেয়েটার নতুন
করে নাম রাখলেন উমা । উমা হয়ে উঠলো তাঁর চোখের মনি । প্রায়ই যেন তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় সেই বালিকা দুর্গাকে দেখতে পেতেন , পায়ের নূপুরের শব্দ শুনে তন্দ্রা ভেঙে যেত ।
এ সব কথা এ যুগে কেই বা বিশ্বাস করবে তাই তিনি নীরবে নিজের সিদ্ধান্তে এগিয়েছেন । কুমারী উমাকে দুর্গা জ্ঞানে পূজা করেছেন স্বাড়ম্বরে।