Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#পত্রসহিত্য#অভীক_বসু০৬.১১.২০২০
                     শুভ বিজয়া।                     ডাল্টনগঞ্জ,                ১১ই কার্তিক,১৪২৭.
প্রিয় অধরপল্লব,
গতকাল তোর বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানো ফোনটা পাওয়ার পর জীবনটা হঠাৎ করেই পূর্ণশ্রোতা নদীর মত বই…

 


#পত্রসহিত্য

#অভীক_বসু

০৬.১১.২০২০


                     শুভ বিজয়া।

                     ডাল্টনগঞ্জ,

                ১১ই কার্তিক,১৪২৭.


প্রিয় অধরপল্লব,


গতকাল তোর বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানো ফোনটা পাওয়ার পর জীবনটা হঠাৎ করেই পূর্ণশ্রোতা নদীর মত বইতে শুরু করেছে। সব জমা ক্লেদাক্ত অভিমান ও দ্বিধা ভেসে কয়েকশত যোজন দূর মোহনায় পৌঁছে গেছে ভেসে! "ধুপছায়া" আজ তোকে চিঠিটি সম্বোধনে ওইটাই লিখতে ইচ্ছে হল। হয়ত প্রশ্ন করতে পারিস "যে অত্যাধুনিক ফোনের যুগে তুমি চিঠি কেন লিখতে বসলে?" এটা আমার তোর পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দুজনের ভালোবাসার দলিল হিসাবে রেখে যেতে চাই।


১৭৫২০ ঘন্টার অপেক্ষার অবসানে পরিবেশটাই পাল্টে গেছে আমার কুটিরের। জানিস,আমার বাংলোর সামনের জারুল গাছে দুটো বাবুই পাখি থাকে। ওরা রোজ আমায় দেখতো আর নিজেদের মধ্যে বলত "মানুষটা বড় একা!" আজ ওরা আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুতভাবে নাচছে। আমার বাংলোর সামনে চঞ্চলা হরিণীর মত ছুটে চলা "কোয়েলের" সাথে কথা হল কাল রাত্রে। তোর খবর দিতে বলল.."ওকে নিয়ে এসো,আমার বুকে দুজনে অনাবৃত হয়ে স্নান করবে আর আমি চোখ বুজে তোমাদের শরীরের ঘ্রাণ পৌঁছে দেবো অরণ্যের কোনায় কোনায়!"


দুটো ভাল্লুক দম্পতি রোজ আমার বাংলোর সামনের মহুয়া গাছের মহুয়া খেয়ে মাতাল হয়ে টলতে টলতে ফিরে যায়। আজ যেন যাওয়ার আগে আমার দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে নতুন জীবনের শুভেচ্ছা জানিয়ে গেল! সামনের শাল পিয়ালের গাছগুলো বলে উঠলো "আমরা যেমন যুগ যুগ ধরে নিজেদের শিকড়ের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখে চলেছি,তোমাদের সেই বন্ধন যেন অটুট হোক!"


আজ অনেককথা বলতে ইচ্ছে করছে তোকে যা আজও বলে উঠতে পারিনি। প্রথম যখন তোকে দেখি তুই তখন..'বসন্তের ফুলের বাগান','বর্ষার নদী','শরতের মাঠভরা কাশের তুলি'! বাড়ী ফিরছিলাম বিকেলে। তোর বোন "শিলালিপি" আমায় ডেকে বলল তোর পেটে হঠাৎ যন্ত্রনা শুরু হয়েছে। আমার সাইকেলে তোদের বাড়ী পৌঁছে দিতে। সেদিনের যন্ত্রনাক্লিষ্ট 'মোনালিসার' মত মুখটা আজও চোখে ভাসে। তুই ছুটে ঘরে চলে গেলি। কিছুক্ষণ পর মাসিমা এসে বললেন.."বড় উপকার করলে বাবা তুমি!"। পরে বুঝতে পেরেছি নারীদের কত সহনশক্তি।


পরেরটা কিছুটা ইতিহাস। কি এক অমোঘটানে তোদের বাড়ী যাওয়া শুরু। পরেরবছর তুই আমাদের কলেজে ভর্তি হলি। কলকাতার লোকাল গার্জেন করলি আমায়। ভার দিলি কলকাতা চেনাবার। বেশিরভাগ দিন ধর্মতলা থেকে খিদিরপুরের ট্রামে চেপে মাঝপথে নেমে যাওয়া। ময়দানে গাছের তলায় বসে কত সময় অতিবাহিত করেছি দুজনে। তোর মনে পড়ে? আমাদের দেখলেই 'ঘটিগরমের' ছেলেটা এগিয়ে এসে বিনা জিজ্ঞাসায় 'ঘটিগরম' বানিয়ে দিত দুজনকে মিষ্টি হেসে!


কোন কোন দিন নৌকার ছইয়ে হাতে হাত রেখে গঙ্গায় ভেসে সূর্যাস্ত দেখা বা কলেজস্ট্রিটের বইয়ের গাদা থেকে অমূল্যরতন খোঁজা। যেন গোলাপ ছড়ানো জীবন ছিল দুজনের! কিন্তু কেউ কাউকে মনের কোটরে লুকানো কথাটা বলে উঠতে পারিনি।


তারপর তোর পরিচিতি বাড়ল। ইউনিয়নের 'অলোকেশের' হাত ধরে বুকে 'চে গুয়েভারার' ছবির গেঞ্জী পড়ে ধর্মতলার মিছিলে স্লোগান তুলে হেটে যাওয়া আমাকে গর্বিত ও মুগ্ধ করতো কিন্তু দুজনের দূরত্ব বাড়তে থাকলো। তুই তখন কলেজের বড় নেত্রী। দেখা কম হত দুজনের। তুই চলে যাওয়ার পর বাড়ীর জামরুল গাছের কোকিলটাও ডাকা বন্ধ করে দিলো।


মনকে সান্ত্বনা দিলাম শঙ্করাচার্জের শ্লোকে.."কা তব কান্তা কস্তে পুত্র"--'কে তোমার স্ত্রী? কেই বা তোমার সন্তান? সংসার অতি বিচিত্র! তুমি কার? কোথা থেকে এসেছ? এই নিগূঢ় তত্ত্ব চিন্তা করে দেখ!'


সম্পর্ক ভাঙে, মনের মানুষ দূরে চলে যায়। তবুও মানুষ নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে,স্বপ্ন মরতে দেয় না। কিছু অপ্রাপ্তিই জীবনকে সহনীয় করে তোলে। আলো আর আঁধার,দিন আর রাত্রি এরা বিপরীত শব্দ নয়! এরা একে অপরের পরিপূরক। তেমনই ভালোবাসার মত ভালোবাসাহীনতারও প্রয়োজন আছে জীবনে।


মন বড় বিষম বস্তু! যুগে যুগে মানুষ মন নিয়ে কম গবেষণা করেনি। কেউ কি খুঁজে পেয়েছে তাকে? মন কোথায় থাকে? তাকে দেখতে কেমন?। জানি নিতান্তই নিরুপায় না হলে মেয়েরা কাউকে ছেড়ে যায় না!


কাল তোর ফোন আসার পর মনের ভিতরে বাসা বাঁধা অবিবাহিত শব্দ "দ্বিধা" ও "দ্বন্দ্ব" কোথায় পালাল জানিনা তবে "সাহস" নামের শব্দটা সেই জায়গায় ঢুকে পড়েছে। এখন তোর মুখের হাসি দেখার জন্য আস্ত সমাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি।


কাল রাতে স্বপ্ন দেখলাম আমি তোর 'তোয়ালে' হয়ে তোর মাথার কেশরাসির জল নিষ্পেষিত করে আঁখিপল্লবের শ্বেতবিন্দুর আস্বাদ নিয়ে ওষ্ঠের মুক্তোর মত জমা জল শুষে নিয়ে আন্দিজ পর্বতমালা অতিক্রম করে ,তিব্বতের মালভুমিতে বিচরণ করে জঙ্ঘার বারমুডা ট্রাঙ্গেলের রহস্য অনুধাবন করে পদ্মের মত পদপল্লবে নিজেকে সমর্পণ করেছি!


বাংলোয় রাখা তোর ছবি দেখে কাজের মেয়ে বুধিয়া হেসে গড়িয়ে পড়ে বলেছে তোকে বনমুর্গির ঝাল না খাইয়ে ওর মরদের সাথে সোহাগ করবে না।


এ চিঠি যখন তোর কাছে পৌঁছবে তার সাথে সাথে আমিও পৌঁছে যাব তোর কাছে। কোয়েলকে কথা দিয়েছি যে হাজার হাজার জোনাকির আলোয় শুভ দীপাবলী উদযাপন করব ওকে সাক্ষী রেখে!


ভালোবাসার রঙ কি হয় জানিনা। তোর মনের রঙে রাঙিয়ে নিস এ চিঠি! বিজয়া নয় আগমনীর অপেক্ষায়।


     তোর আদরের অমুদা(অমিতজ্যোতি)।