Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

# বিষয়_বন্ধু_ভূত#নিস্তারিণী#সর্বানী 
পারমিতার সাথে  রক্তিমের বিয়ে দেখাশোনা করে হয়।পারমিতা এক ভাই এক বোন উত্তর কলকাতার হাতিবাগানে ওদের পৌত্রিক বাড়ি। বাবার ওষুধের বড় দোকান শ্যমবাজারে, মা গৃহবধূ। রক্তিমদের  উত্তর চব্বিশ পরগনার  টাকিত…

 


# বিষয়_বন্ধু_ভূত

#নিস্তারিণী

#সর্বানী 


পারমিতার সাথে  রক্তিমের বিয়ে দেখাশোনা করে হয়।পারমিতা এক ভাই এক বোন উত্তর কলকাতার হাতিবাগানে ওদের পৌত্রিক বাড়ি। বাবার ওষুধের বড় দোকান শ্যমবাজারে, মা গৃহবধূ। রক্তিমদের  উত্তর চব্বিশ পরগনার  টাকিতে বাড়ি,কয়েক পুরুষ ধরে বাস   ,বেশ বড় বাড়ি,জমি জায়গা আছে।সম্প্রতি রক্তিম দমদমে একটি ফ্লাট কিনেছে,রক্তিম রা দুই ভাই এক বোন, দুজনেই রক্তিমের থেকে বড় এবং বিবাহিত  দুই বাড়ি এবং পাত্র পাত্রীর সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছে।পারমিতা কিছুদিন টাকিতে থেকে তারপর রক্তিমের কাছে চলে যাবে।রক্তিম মিলিটারি তে আছে বর্তমানে পাঞ্জাবে পোস্টিং। 


কাল পারমিতার বৌভাত হয়েছে খুব বড় করে অনুষ্ঠান হয়েছে। আজ ওর শ্বশুর বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী ওকে আজকে পায়েস,পোলাউ, আর পাঁচ রকম ভাজা রান্না করে বাড়ির বড়দের এবং আত্মীয়দের খাওয়াতে হবে, এটা মিত্র বাড়ির দীর্ঘদিনের পরম্পরা।ও কালরাত্রি থেকে এসে শুনছে।বৌভাতের দিন সকাল বেলা বড় জায়ের সাথে সবাইকে ঘিভাত পরিবেশন করেছে সেটা আলাদা ব্যাপার কিন্তু আত্মীয় স্বজন সবাইকে রান্না করে খাওয়াতে হবে এটা শুনে পারমিতা বেশ ভয় পেয়েছে , বড় জা যদিও ভরসা দিয়েছে   সাহায্য করবে কিন্তু ও লজ্জায় বলেছে পারবে।বাড়িতে এখনও বেশ কিছু লোক যাদের অনেককেই ও মাঝে  মাঝে শাশুড়ির দিকের না শ্বশুরের দিকের গুলিয়ে ফেলেছে । সকাল বেলা শাশুড়ির  এবং দিদি শাশুড়ির নির্দেশে স্নান করে নতুন কাপড় পড়ে ও শাশুড়ি আর জায়ের সাথে রান্না ঘরে যায়।বেশ বড় বাড়ি  একতলার কোনে বড় রান্নাঘর, আধুনিক উপকরণ সবই আছে।পাশে আরেকটা  রান্নাঘর সেখানে এখনও বড় বড় দুটো উনুন পাতা,উৎসব  অনুষ্ঠানে এখনও এখানে রান্না হয়। শাশুড়ি সব ঘুরিয়ে  দেখাচ্ছিলেন,পারমিতা প্রথমে বেশ ঘাবড়িয়ে গেছিলো উনুনে রান্না করতে হবে বলে পরে বুঝতে পেরে নিশ্চিন্ত হয়।  শাশুড়ি, আর বড়  জা ও রান্না করতে পারবে কিনা জিজ্ঞেস করাতে ও হ্যাঁ বলে  ওরা  নিশ্চিত হয়ে চলে যায়। সাহায্যকারী হিসাবে শেফালী মাসিকে রেখে যায়

শেফালী মাসি দীর্ঘদিনের পুরানো লোক সব নিয়ম কানুন ভালো জানে আর অসুবিধা হলে মাসি  সাহায্য করবে। 


শেফালী মাসি ভাজার সমস্ত সব্জি কেটে ধুয়ে রাখে, বড়ো হাঁড়িতে পারমিতা দুধ বসিয়ে দেয় পায়েস ও ভালো ভাবেই রাঁধতে পারবে,  পায়েসের চাল ও  রেডি করে রাখে,মোটামুটি পায়েস আর ভাজা ভালো ভাবে উৎরে গেছে, কিন্তু পারমিতা সমস্যায় পড়েছে পোলাউ নিয়ে  কি ভাবে পোলাউ রাঁধবে ও ঠিক জানেনা মাছ  বা মাংস করতে পারত কিন্তু পোলাউ কোনোদিন করেনি তাই রেসিপিও জানেনা, এর মধ্যে শেফালী  মাসি বলে নতুন বৌদি পোলাউ এর চাল ঘি দিয়ে হলুদ দিয়ে মাখা আছে আমি রেখে পান খেতে গেলাম,সব মসলা,কাজু কিসমিস আমি  তোমার সামনে রেখে গেলাম তুমি বসিয়ে দাও  আরেকটু বাদেই সবাই খেতে বসবে। শেফালী মাসি চলে গেলে পারমিতা রান্না ঘরে নার্ভাস হয়ে ঘামতে থাকে তাড়াতাড়িতে ফোনটাও নিয়ে আসা হয়নি যে মাকে পোলাওয়ের রেসিপি জিগ্যেস করবে  আর ফোন আনতে গেলে বিপদ বাড়িভর্তি লোকজন কে কি বলবে, পারমিতা ভাবতে থাকে এখন কি হবে, ভাবতে  ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল হঠাৎ দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে একটি অল্প বয়সী বউ সাধারণ করে কাপড় পড়া গায়ে অল্প কিছু  গয়না  ছিপছিপে   চেহারা,শ্যামলা রঙ দাঁড়িয়ে আছে তাকিয়ে হাসছে   পারমিতা প্ৰথমে একটু চমকে গিয়ে তাকাতেই বউটি নিজে হেসে তাকিয়ে বলে তুমি তো নতুনবউ রান্না হয়ে গেছে ওর বিপন্ন মুখ দেখে বলে পোলাউ রান্না হয়নি না আমি করে দিচ্ছি কেউ জানতে পারবেনা  পারমিতা কে বউটি বলে তোমার নাম কি  পারমিতা নাম বললে বলে আমি তোমাকে মিতা বলে  ডাকবো পারমিতা ওর নাম জিগ্যেস করলে বলে  আমি নিস্তারিণী,ও একটু অবাক হয়ে  বলে বাবা কি পুরানো নাম এরকম নাম এখন হয়  মেয়েটি হাসে   পারমিতা বুঝতে পারেনা ও কিরকম আত্মীয় কিন্তু  রান্নার তারায় আর জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠেনা। বউটি খুব ক্ষিপ্রতার সাথে রান্না চাপিয়ে দেয় এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই পারমিতার মনে হয় অর্ধেক রান্না হয়ে গেছে শেফালী  মাসি আসছে বলে বউটি  দ্রুত রান্না ঘরথেকে চলে যায়। পারমিতা আবার অবাক হয়ে  ভাবে রান্না ঘর থেকে নিস্তারিণী কিভাবে  বুঝলো শেফালী মাসি আসছে। যাইহোক মাসি এসে বলে পোলাউ তো প্রায় হয়ে গেছে তুমি ঘি দিয়ে দাও আমি নামিয়ে নেব।পারমিতা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে আর মনে মনে নিস্তারিণী কে ধন্যবাদ জানায়। সবাই পোলাউ খেয়ে পারমিতার প্রশংসা করে। পারমিতা  নিস্তারিণীকে ধন্যবাদ জানাবে মনে করে।  কিন্তু  কোথায় থাকে সেটা  জানেনা।

  

কয়েকদিন বাদে বাড়ি ফাঁকা রক্তিম ও চলে গেছে এতবড় বাড়িতে কয়েকটি প্রাণী,  বড় জা বাপের বাড়ি গেছে ভাসুর কলকাতায় পারমিতা, ওর শাশুড়ি  , আর দিদি শাশুড়ি বাড়িতে, শ্বশুর মশাই কোনো কাজে বাড়িতে নেই, রাত্রি হয়ে গেছে দোতালার বারান্দায় একা বসে  আছে সামনে বিরাট মাঠ এদিকে এখনও বেশগাছপালা বাড়ির সামনে পিছনে দুদিকেই বাগান পারমিতার খুব ভালো লাগে। হটাৎ দেখে ওর সামনে নিস্তারিণী  ,পারমিতা বলে তুমি  কোথা থেকে আসলে আমি দেখতে পেলাম না,নিস্তারিণী বলে আমি তোমার সামনে দিয়ে এসেছি তুমি খেয়াল করনি পারমিতা  নিস্তারিণীকে কোথায় থাকে জিজ্ঞাসা করলে ও বলে তোমাদের বাড়ির পিছন দিকে,  তারপর বলে আজ    যাই পরে কথা হবে আর আমি তোমার কাছে যে এসেছি কাউকে বলোনা, পারমিতা বলে কেন জানলে কেউ বকবে নিস্তারিণী মাথা নেড়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়। পারমিতা ভাবে মেয়েটি খুব ভালো কিন্তু চালচলন দেখলে মনে আগের কার দিনের লোক। 


    এই ঘটনার কয়েকদিন পর একদিন বিকেলে পারমিতা পিছনের বাগানে কৌতূহলবশত যায় একতলার রান্না ঘরের পাশদিয়ে গিয়ে একটা দরজা খুললে বাগানে  যাওয়া যায়, পারমিতা গিয়ে দেখে একটা ভাঙ্গাচোরা ঘর আর সাথে একটা বারান্দা,খুবই বাজে অবস্থা যেকোনো সময় ঘরটা ভেঙে পড়তে পারে  সেই বারান্দার পাশেই একটা হাসনুহানা ফুলের গাছ।পারমিতা এই গাছটা ভালো করে চেনে ওর মাসির বাড়িতে ছিল দারুন গন্ধ,ও দাঁড়িয়ে পড়ে হঠাৎ একটা শব্দে  পিছনে তাকিয়ে দেখে নিস্তারিণী দাঁড়িয়ে আছে আজ পারমিতার খেয়াল হয়  এক শাড়ি পড়ে সবসময় আসে,  কিন্তু ভদ্রতাবশত জিজ্ঞাসা করতে পারেনা নিস্তারিণী অনেক কথা বলে এবাড়ির পিছনে ও থাকে ওর সবাই  ছিল এখন কেউ নেই ও একা ,কথা বলতে বলতে   প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে এমন সময়ে দেখে ওর শাশুড়ি মা ওকে খুঁজতে  খুঁজতে এখানে চলে এসেছেন  একটু অবাক হয়ে বলে তুমি কার সাথে কথা বলছো কেউ তো নেই  পারমিতা অবাক হয়ে বলে আমি তো নিস্তারিণীর সাথে গল্প করছিলাম তুমি ওকে চেনো বলে ফিরে তাকিয়ে দেখে কোথাও কেউ নেই নিজেই খুব অবাক হয়ে যায় পারমিতার শাশুড়ি একটু অবাক হয়ে বলেন কার  সাথে গল্প করছিলে  পারমিতা আরও অবাক হয়ে বলে নিস্তারিণী আমাদের বাড়ির পিছনে থাকে,শাশুড়ি মা গম্ভীর হয়ে বলে পারমিতা তুমি এক্ষুনি  এই শাড়ি কাপড়  ছেড়ে চানকরে ঠাকুর ঘরে আসবে আমি তোমার   ঠাকুমাকে ঠাকুর ঘরে আসতে বলছি এখুনি আসবে আর যা বলেছি তাই করবে। পারমিতা কিছু না বলে অবাক হয়ে শাশুড়ির পিছন পিছন বাড়িতে ঢোকে। 


শাশুড়ির কথা মতো স্নান করে যখন  ঠাকুর ঘরে ঢোকে তখন দিদি শাশুড়ী ওর গায়ে গঙ্গাজল দিয়ে ওকে বসতে বলে,ঠাকুরের পায়ে ফুল দিয়ে ওর মাথায়ে ফুল  ঠেকিয়ে দেয় ।পারমিতা খুব অবাক হয়ে যায়।  দিদি শাশুড়ি জিজ্ঞাসা করেন কতবার  নিস্তারিণীর সাথে দেখা হয়েছে পারমিতা অবাক হয়ে  প্রথম দিন থেকে সমস্ত কথা বলেন শুনে শাশুড়ি মা বললেন ওকে তাড়াতাড়ি   রক্তিমের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে।  পারমিতা অবাক হয়ে যায়,দিদি  শাশুড়ি বলেন নিস্তারিণী কথা আমি বিয়ে হয়ে এসে আমার  দিদি  শাশুড়ির কাছে শুনেছি।  নিস্তারিণী আমার দিদি শাশুড়ির এক জা ছিলেন বিয়ের দুই  বছরের মাথায়   সামান্য জ্বরে মারা যায়  তারপর থেকে ওকে অনেকেই দেখেছে ।  অবশ্য কারুর  ক্ষতি করেছে বলে শোনা যায়না।পারমিতা শুনে চমকে যায়, 


বুঝতে পারে সাথে সাথে খুব কষ্টও হয়  নিস্তারিণীর জন্য।  পারমিতা ওর শাশুড়ি আর দিদি শাশুড়ি দুই জনকেই  বলে  ওর জন্য একটা পিন্ড দানের ব্যব্স্থা  ও করবে।সবাই রাজি হয়। 


আসতে আসতে পারমিতার পাঞ্জাব যাওয়ার দিন চলে আসে একদিন শুয়ে  আছে পারমিতার হটাৎ মনে হয় 

নিস্তারিণী আবার এসেছে ওকে বিদায় জানাতে ও জানে ও খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পেতে চলেছে।নিস্তারিণী বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে চলে যায় পারমিতার চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে এই বন্ধুর জন্য।