Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#অবৈধ_প্রেম #বড়_গল্প #শম্পাশম্পি_চক্রবর্তী @copyright protected                             ১
__" কী হল ঘুমিয়ে পড়লে পারিজাত? আজ তো কোনো কথা হলনা পারিজাত। আমি কোথায় তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্য রাত এগারোটা থেকে মোবাইল নিয়ে বসে থা…

 


#অবৈধ_প্রেম 

#বড়_গল্প 

#শম্পাশম্পি_চক্রবর্তী 

@copyright protected 

                            ১


__" কী হল ঘুমিয়ে পড়লে পারিজাত? আজ তো কোনো কথা হলনা পারিজাত। আমি কোথায় তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্য রাত এগারোটা থেকে মোবাইল নিয়ে বসে থাকি চ্যাট করে প্রশ্ন করে যাই কতো কী! আর তুমি রাত বারোটা না বাজলে উত্তর দাও না আমার একের পর এক করে যাওয়া চ্যাটিংয়ের। কেন পারিজাত আমাকে কী তোমার আজ ভালো লাগেনি ? তোমার জীবনে কী অন্য কারোকে আশা করো?

যে আরো বেশী সুখ দিয়ে তোমাকে ভরিয়ে তুলবে আমার থেকেও?",,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

 " পারিজাত "আমার নাম। সোস্যাল মিডিয়া বা ফেসবুক বা যাকে মুখপুস্তিকা বলি তাতে অবশ্য আমার বিদিশা পারিজাত মিত্র নামটা দেওয়া আছে। পারিজাত আমার ডাক নাম। সোস্যাল মিডিয়ায় এক সময়ের স্কুল কলেজের বন্ধুরা যাতে আমাকে সহজে খুঁজে নিতে পারে তাতেই মেয়ে তিতিরের বুদ্ধি অনুসারে ডাকনাম পারিজাতটা ব্যবহার করা।আর সেই নামটিই পছন্দ করে ফেলে অর্ক বিদিশা নামটার থেকেও। তাই ওই নামটাই ব্যবহার করে আসছে ও। আমারও ভালো লাগে পারিজাত নামটা শুনতে। কারণ নামটা আমার খুব প্রিয় মানুষ আমার বাবার দেওয়া।

                               ২

 চ্যাটিং গুলো কয়েক দিন আগের। 

তখন কটা হবে আন্দাজ রাত বারোটা । 

আমার ইনবক্সে অর্কের একের পর এক চ্যাটিং। কিন্তু তার একটারও উত্তর আমি দিতে পারিনি সেদিন। কী উত্তর দেবো ? তার কিছু সময় আগে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ঘটনাটা মুহূর্তের জন্য তোলপাড় করে দিয়েছিল আমার পৃথিবীটাকে। ভেঙেচুরে খানখান হয়ে গিয়েছিল মুহূর্তের মধ্যে আমার বুকের ভেতরটা। নিজেকে নিজের কাছে অপরাধী মনে করে আত্মহত্যা করে আমি আমার জীবনের সমাপ্তি টানতে চেয়েছিলাম ক্ষণিকের চিন্তাতে। কিন্তু না পারিনি। আত্মহত্যা করার মতো মনের জোর বা সাহস কোনটাই আমার নেই। কিন্তু এ অপরাধ যে আমার, ক্ষমারও অযোগ্য ছিল। তাই তো প্রতি মুহূর্তে অপরাধ বোধের তীব্র দংশন আমাকে আজও এই প্রশ্নের মুখেই দাঁড় করাতে থাকে ---" আমি কী করলাম ? নিজের হাতে নিজের মেয়ের পছন্দের মানুষটাকে নিজেই নিজের দৈহিক লালসার শিকার করলাম কেবলমাত্র নিজের শারীরিক সুখটুকু পাওয়ার জন্য ? এই মধ্যবয়সে এসে শারীরিক সুখটুকু পাওয়ার জন্য আমার জীবনে একমাত্র অর্কেরই কী আসার কথা ছিল ? আমার জীবনে আর অন্য কোনো পুরুষের আসার কোনো সম্ভাবনা ছিল না ? ধিক্কার জাগল নিজের চরিত্রের প্রতি, ধিক্কার জাগল নিজের যৌন লালসার প্রতি। একজন নারী সর্বোপরি একজন মায়ের প্রতি যে কী না আমি নিজেই। ধিক্কার জানালাম নিজেকে নিজেই বার বার।

                            ৩

অর্কপ্রভ রায়। 

একটি প্রাইভেট কোম্পানির কর্ণধার। আমার তুলনায় বয়সে বছর আটেকের বা তার বেশী মতো ছোট। আলাপ ফেসবুকেই হয়েছিল হঠাত্ একদিন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর মাধ্যমে । সুদর্শন ঝকঝকে চেহারার বছর পঁয়ত্রিশ কী ছত্রিশের পুরুষের ছবি। কেন জানি না কোনো মধ্যবর্তী বন্ধু না থাকা সত্ত্বেও অর্কের বন্ধুত্বটা গ্রহণ করে নিয়েছিলাম। আসলে পুরুষ বিশেষ করে সুদর্শন পুরুষদের প্রতি আমার দুর্বলতা ছিল বরাবরই । তাই আজ থেকে চব্বিশ বছর আগেও যখন আমার প্রাক্তন স্বামী জয়ন্ত আমাকে দেখতে গিয়েছিল আমাদের বাড়িতে তখন সুদর্শন পুরুষ জয়ন্তকে পছন্দ হয়ে গিয়েছিল দেখা মাত্রই । আর জয়ন্তর ও আমাকে। অবশ্য আমার মতো সুন্দরী, লাবণ্যময়ী পাত্রী পাওয়াও তো দুর্লভ ছিল। ফল স্বরূপ জয়ন্তর সঙ্গে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল পাকা দেখার মাস খানেকের মধ্যেই। আর তার বছর খানেক বাদে সোমজা মানে আমার আদরের মেয়ে তিতিরের জন্ম হয়েছিল। 

                                 ৪

তিতির হয়ে যাবার কয়েক বছর পরও আমার আর জয়ন্তর মধ্যের প্রেম ভালোবাসার কোনো অভাব ছিল না কিন্তু হঠাত্ করে একদিন উপলব্ধি করেছিলাম জয়ন্তর আমার প্রতি টান ক্রমশ কমে আসছে। যে জয়ন্ত উন্মাদের মতো আমার শরীরটাকে ভালোবাসতো সর্বোপরি আমাকে ভালোবাসতো তার আমার প্রতি আকর্ষণ ক্রমশ কমতে কমতে এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছিল যে লাঞ্চ বা ডিনারের সময়টুকু ছাড়া আমার সঙ্গে ও কথা পর্যন্ত বলতে চাইত না। প্রথমদিকে মান,অভিমান এমন কী ঝগড়া ও করেছিলাম অনেক। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাইনি। বরং অশান্তি বেড়েছে ক্রমশ। আর তার পরিণতি ঘটেছিল ডিভোর্সে । অগত্যা আমি তিতিরকে নিয়ে চলে এসেছিলাম বাবা মায়ের কাছে।তারপর জীবন যুদ্ধে লড়াই করতে নাবলাম একা। একটি চাকরিও জোগাড় করে নিলাম। আর জয়ন্তর কোন রূপ অর্থনৈতিক সাহায্য ছাড়াই তিতিরকে মানুষ করতে লাগলাম। এরই মধ্যে বাবা ,মা দুজনেই মারা গেলেন। একা আমি আর তিতির। সময় এগিয়ে চলছিল ।বছরও গড়িয়ে চলছিল স্বাভাবিক নিয়মে। কিন্তু পরিবর্তনটা এলো তিতির যেদিন আমার নামে অ্যাকাউন্ট খুলে দিল ফেসবুকে সালটা ২০১৭। কেন জানিনা আমূল পরিবর্তন হতে শুরু করলো আমার নিজের মধ্যে । আমার সাদাসিধে জীবন হয়ে উঠলো চাকচিক্যময়। নিজের অজান্তেই আমি অনেক পুরুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে থাকলাম নিজের একের পর এক নানা ধরনের ছবি পোস্টের মাধ্যমে তাদের লাইক কমেন্টস আমাকে আরো আরো নিজেকে নিয়ে ভাবতে শেখাতে লাগলো আর সে সকল পুরুষের বেশীর ভাগই আমার কলিগ বা অর্ধ পরিচিত। আর এমনি সময় হঠাত্ করেই আমার দীর্ঘ দিনের পিপাসার্ত জীবনে শ্রাবণের বারিধারা হয়ে অর্কের আবির্ভাব ঘটল। কেন জানিনা ওর দীর্ঘ,সুঠাম চেহারার মধ্যে আমি নিজের অজান্তেই জয়ন্তকে খুঁজে পেতে চাইলাম। যদিও তখন আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল জয়ন্তর আমার প্রতি উদাসীনতা বা আমাকে ডিভোর্সের কারণ মৌমিতা। যে আমার মতো অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারিনী না হলেও একটা আলাদা আকর্ষণ ছিল যা জয়ন্তকে ওর দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল । তবু ও আমি মনে প্রাণে জয়ন্তকেই চাইতাম ওর অভাব বোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খেত। আর অর্কের মধ্যেই জয়ন্তকে পাওয়ার তীব্র বাসনা জেগেছিল। তা কেন অবশ্য বলা কঠিন। হয়তো জয়ন্তর সুদর্শন চেহারার সঙ্গে অর্কের চেহারার কিঞ্চিত মিল ছিল।

                                   ৫

ভালোবাসার থেকে অর্কের প্রতি দৈহিক আকর্ষণই বেশী অনুভব করেছিলাম তাই। আর সেটাই তো স্বাভাবিক আমার মতো মধ্যবয়সী কোনো মহিলার জীবনে আট দশ বছরের ছোট একজন পুরুষ কে ভালোবাসা যায় কী ? অন্তত আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল। তাই অর্ককে দেখে শরীরের মধ্যে অনুভব করেছিলাম অদ্ভুত উত্তেজনা সে উত্তেজনা কোনো যুবতী বা কিশোরীর মধ্যে হঠাত্ জাগ্রত উত্তেজনা নয়। এক মধ্যবয়সী রমণীর উত্তেজনা। দীর্ঘ কয়েক বছর উপবাসী, কামার্ত শরীরটা থেকে উৎপন্ন উত্তেজনা। যা কখনোই ভালোবাসা থেকে উৎপন্ন হতে পারে না। শুধু মনে হয়েছিল এত বছর কী পেয়েছি? অপরূপ সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও অফিস কলিগদের অনেকেরই লুকিয়ে লুকিয়ে দেওয়া আমাকে প্রেমের প্রস্তাব আর তাতে সাড়া না দিয়ে তীব্র শারীরিক সুখ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে গলা টিপে হত্যা করা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ছাড়া? না আর নয়। আমার ও তো একটা চাহিদা আছে। জয়ন্ত যদি আমাকে ছেড়ে একটা অন্য মেয়েকে নিয়ে নিজের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করে আমি ও করিনা। আর সেই চাহিদা মেটাতে গেলে যদি পদস্খলন হয় হোক্ না একবার। এগিয়ে যাইনা অর্কের দিকে। আগুনের লেলিহান শিখা হয়ে জ্বলেপুড়ে খাক করে দি ই না অর্কের মতো যুবকের শরীর মন সবকিছু। পতঙ্গের মতো ও ছটফট করুক না আমার রূপের আগুনে। ভালো হয়তো আর এ জীবনে জয়ন্ত ছাড়া অন্য কারোকে বাসতে পারবোনা হয়তো দৈহিক কামনা মেটাতে গিয়ে ও আমার চোখের সামনে ভেসে উঠবে জয়ন্তরই মুখ তবুও মুহূর্ত খানেক আনন্দ নিতে ক্ষতি কী? কলঙ্ক ! আর এই বয়সে ? লাগলে লাগুক। কলঙ্কিনী তো রাধা ও ছিল।

 কিন্তু হে ঈশ্বর তখনো বুঝিনি আমিই জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে শুকনো কালো একটা লাশে পরিণত হব নিজের হাতেই জ্বালানো আগুনে। যে লাশটাকে উদ্দেশ্য করে নিজেরই আত্মজা থুৎকার করে বলে উঠবে হয়তো। 

 ---" ছিঃ মা ছিঃ।"

                                  ৬

 ফেসবুক বা মুখ পুস্তিকাতে আমার প্রোফাইল পিকচার ছিল কলেজে পড়াকালীন প্রায় কুড়ি পঁচিশ বছর আগের একটি ছবি। বলা যায় কিশোরী থেকে সবে তখন যুবতী হতে শুরু করেছি। ফেসবুকে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আসার পর থেকেই অর্ক আমার ছবি নিয়ে রোজই তারিফ করতো। আর আমিও খুশী মনে নতুন পুরনো মিশিয়ে নানা ছবি পোস্ট করতে থাকতাম শুধু ওকে দেখানোর জন্য। আমার প্রোফাইল পিকচারটা ওর খুব পছন্দেরও ছিল নানা শব্দের বিশষণে ও আমার ছবিটার তারিফের পর তারিফ করে যেত ইনবক্সে। মাসখানেক সময় শুধু ইনবক্সে চ্যাটিং আর ছবি পোস্টের মধ্যেই কেটে যাচ্ছিল আমার আর ওর সম্পর্ক।একদিন হঠাত্ করে ও ই প্রথম প্রস্তাব দিল ও আমাকে চাক্ষুষ দেখতে চায় । ঠিক হলো দুজনে বাইপাসের দিকে কোনো একটা হোটেলে কাটাবো সাড়াটা দিন। রাত হলে ফিরে যাবো যে যার আস্তানায়। কথামতো দুজনার দেখা হলো। মনে আছে সেদিন এক গোছা লাল গোলাপ এনেছিল অর্ক হাতে করে। হোটেলের ছোট্ট রুমটাতে প্রথম দিনেই আমার দীর্ঘ পিপাসিত দুটি ঠোঁটে গভীর চুম্বনও এঁকে দিয়েছিল।গাঢ় আবেগ পূর্ণ কন্ঠস্বরে বলে উঠেছিল--" তুমি এতো সুন্দর পারিজাত? এত দিন তোমার শুধু ছবিই দেখেছি। আজ সামনাসামনি দেখে বুঝলাম আমার কল্পিত নারী মূর্তির থেকেও তুমি অনেক অনেক বেশী সুন্দর ।" হারিয়ে ফেললাম নিজেকে ওর কথায় । ওর পঁয়ত্রিশ বছরের শরীরের দুর্বার আকর্ষণ আমাকে হারিয়ে দিল। আমার আগুন ধরানো রূপ ওর যৌবণের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। এরপর সব বাঁধনকে দূরে সরিয়ে দিনের পর দিন অফিস ফেরতা দুজনে মিলিত হতে থাকলাম বাইপাসের ধারে নামী হোটেলটির নির্দিষ্ট ঘরটিতে এক অদ্ভুত টানে।

 আর এমনি একটা দিন ঘটল সম্পূর্ণ অন্যরকম ।

                            ৭

অর্কের সঙ্গে দেখা করে সেদিন বেশ ফুরফুরে মেজাজে বাড়িতে ফিরে সবে মাত্র নিজের ঘরে যেতে যাবো দেখলাম তিতিরকে। বড় বড় চোখ করে দাঁড়িয়ে আছে ঘরের মাঝ বরাবর রাখা সেন্টার টেবিলের কাছটিতে। 

আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখেই বেশ অভিভাবক সুলভ কন্ঠস্বরে বলে উঠলো-----" মা তুমি আজও কোথাও গিয়েছিলে মনে হচ্ছে তা তোমার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে । কেন অফিসের কাজের ধকল তুমি নিজের কাঁধে নাও একা বলতে পারো ? মা তোমার বয়স হচ্ছে এভাবে চললে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে। প্লিজ মা আর সংসারের জন্য তুমি কিছু করোনা। আমি কি করতে আছি তুমি বলো আমি বড় হয়েছি। বড় যখন হয়েছি এবার দায়িত্ব আমাকে দাও। তুমি চাকরিটা এবার ছেড়ে দাও আমি তো একটা চাকরি পেয়েছি তোমার আমার ঠিক চলে যাবে।" তিতিরের বলে যাওয়া কথাগুলো শুনে চমকে উঠেছিলাম সেই মুহূর্তে । কী বলছে তিতির আমাকে চাকরি ছেড়ে দিতে ? তাহলে কেমন করে মিলিত হব আমি আর অর্ক? না জীবন থাকতে এখন আমি চাকরি ছাড়তে পারবোনা। আমার কাছে চাকরির চাইতেও চাকরির অজুহাতে অর্কের সঙ্গে মিলিত হওয়া প্রধান ছিল। তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করে বলে উঠেছিলাম--" তুই চাকরি করবি কর। আমি কেন করবো না? আমার সময় কাটবে কী করে? আর কয়েকটা বছর করি। তারপর তোর বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে ছেড়ে দেবো। " লক্ষ্য করেছিলাম বিয়ের কথা শুনতেই লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠেছিল তিতিরের মুখ। যদিও তিতিরের গায়ের রঙ আমার মতো দুধসাদা নয় ও দেখতে জয়ন্তর মতো রঙটাও জয়ন্তরই ন্যায় উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ । তবুও মুখটা রক্তিম আভাতে ভরে উঠল। সলজ্জ দৃষ্টি মেলে আমার মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছু বলতে চাইল। তারপর কী ভেবে আমার গালে একটা চুমু খেয়ে বলে উঠেছিল ---" এখনো তোমার কী গ্ল্যামার মা। যাই বলো যে কোনো পুরুষ কে ঘায়েল করবার মতো শারীরিক সৌন্দর্য তোমার এখনো আছে। তাই তো ভয় হয় চাকরি করতে গিয়ে যদি তুমি কারো প্রেমিকা হয়ে যাও। তখন আমার কী হবে? তার চাইতে তুমি চাকরি ছেড়ে দাও।" বুকের ভেতরটা কেমন যেন অজানা ভয়ে ধুকপুক ধুকপুক করে উঠলো। তিতির কী সব জেনে গিয়েছে? তাই আমার সঙ্গে মজা করছে? গলাটা কেমন শুকিয়ে আসতে লাগল। প্রত্যুত্তর দেওয়ার মত ক্ষমতা রইলো না শুধু বোকা বোকা দৃষ্টি মেলে তিতিরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ । তিতির পুনরায় আমার গালে একটা চুমু খেয়ে গলাটা দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো --" মা আমি মজা করছিলাম। যাইহোক তোমাকে একটা কথা বলবো বলবো ভাবছি। কিন্তু বলে উঠতে পারছিনা। তুমি যদি রাগ করো সেই ভেবে। যদি কিছু না বলো রাগ না করো বলতে পারি।" আমার কেমন যেন মনে হল তিতির কী বলতে চাইছে শোনা দরকার। এমনিতেই তিতির চাপা স্বভাবের মেয়ে । কোনো কিছু সহজে বলতে চায় না। এখন যখন বলতে চাইছে বলুক শুনি। বলে উঠলাম --" বল। শুনবো। রাগ করবো কেন? আমি রাগ করবো এমন কোনো কাজ তো তুই কোনো দিন করিস নি তিতির। বলে ফেল নির্ভয়ে।" দেখলাম তিতির আমাকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত এগিয়ে গেল সেন্টার টেবিলের দিকে । টেবিল থেকে তুলে নিল ওর মোবাইল ফোনটা। তারপর কিছু মুহূর্ত পার। ও ধীরে ধীরে আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমার মুখের সামনে মোবাইল টা ধরে মিষ্টি হাসির রেখা নিজের ঠোঁটের প্রান্তে এনে বলে উঠলো---" মা এই ভদ্রলোকটিকে কেমন দেখতে? আমি জানি তোমার পছন্দ হবে। কারণ সুন্দর চেহারার পুরুষদের তুমি পছন্দ করো। তা বলো এনাকে তোমার কেমন লাগছে। পরিচয় করিয়ে দি ইনি হলেন আমার অফিসের বস। অর্কপ্রভ রায় । মা এনাকে আমি ভীষণ পছন্দ করি। যদিও উনি আমার চাইতে অনেক বড়। তবু ও আমি এনাকে পছন্দ করি । আর সেই পছন্দ থেকে কখন কবে যে এনাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি তা নিজেই জানি না। মা আমি অর্কপ্রভ রায় কে ছাড়া আমার জীবনে অন্য কারোকে কোনো দিন ভাবতে পারবোনা। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। জানি উনিও আমাকে পছন্দ করেন । তবে কতোটা করেন জানিনা। অবশ্য ওনাকে আমার প্রতি আরো আকৃষ্ট করার কৌশল আমার জানা আছে। শুধু অপেক্ষা এখন তুমি যদি রাজী থাকো তবেই। তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি কোনো কাজ করিনি কোনো দিন ভবিষ্যতেও করবো না।" এক নিঃশ্বাসে কথাগুলি বলে চলে তিতির। জানিনা আরো কতো কথা তিতির বলে গিয়েছিল কী না ? কারণ মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে ওঠা অর্কের ছবিটা দেখে চমকে উঠেছিলাম আমি। আমার মাথাটা অকস্মাত্ ঘুরতে শুরু করেছিল । পায়ের তলার মাটি দোদুল্যমান । নিজেকে আর সামলাতে পারিনি। মাটিতে পড়ে গিয়েছিলাম।

তারপর আর কিছু মনে নেই।

                                       ৮

জ্ঞান কখন এসেছিল জানিনা। শুধু দেখেছিলাম নিষ্পাপ তিতিরের মুখ। যে মুখের টানা টানা দুটি চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যে মুখের পরতে পরতে চিন্তার ভাঁজ । কিছু বলতে গেলাম মাথা নেড়ে শান্ত কন্ঠস্বরে তিতির বলে উঠলো ---" আজ নয় কাল শুনবো । এখন ঘুমোও। ডাক্তার কাকু বলেছেন প্রেসারটা হাই আছে তাই এমন হঠাত্ করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়া । রেস্টের দরকার। " না বলতে পারিনি তিতিরকে। সেদিন কেন পরের দিন তার পরের পরের দিনও নিজে মুখে বলতে পারিনি ---" তিতির তোর আকাঙ্ক্ষিত পুরুষটি যে আমার ও আকাঙ্ক্ষিত। শুধু তুই তাকে ভালোবাসিস হৃদয় থেকে। যেখানে ভালোবাসা মুখ্য শরীর গৌণ্য মাত্র। কিন্তু আমি তাকে ভালোবাসিনা শুধু শারীরিক সুখ টুকু পাওয়ার আনন্দ উপভোগ করি মাত্র ওর সাথে । তুই আমাকে ক্ষমা করিস তিতির। আর পারলে ভুলে যাস অর্কপ্রভ রায় কে। আরো অনেক ভালো পুরুষ তোর জীবনে আসবে যে তোকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবে। অর্ক সত্যিই তোর ভালোবাসার যোগ্য নয়। " মুখে যে কথাগুলি বলতে পারলাম না সম্বল করলাম কাগজ কলমের ওপর। লিখে ফেললাম ছোট্ট এই কটি কথা দিয়ে একটি স্তবক । রেখে দিলাম তিতিরের ঘরের স্টাডি টেবিলের ওপর। বেড়িয়ে পড়লাম অজানা পথে। মেয়ের মুখোমুখি হওয়ার সাহস যে আমার নেই আজ। যদি কোনো দিন সে সাহস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মনে জাগ্রত হয় অবশ্যই তিতিরের মুখোমুখি হব। এখন থাক না দুজনের অন্তরের দূরত্ব। আঘাতটা তো তিতির কিছু কম পেলনা। সময় তো লাগবে ভুলতে।

#সমাপ্ত