Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

কবিতা : নির্জন সৈকতেকলমে : শক্তিপদ ঘোষতারিখ : ০৪ , ১১ , ২০২০
আমার ক্ষেতভরা সোনার ফসল--লক্ষ বাহু তুলেআমাকে ডাকলো , আমার ফুরসত হলো নাসাড়া দেবার ; বর্গীরা সেই ফাঁকে লুটে নিয়ে গেল সব । নেবার ক্ষমতা যাদের আছে--লক্ষহাতে…

 


কবিতা : নির্জন সৈকতে

কলমে : শক্তিপদ ঘোষ

তারিখ : ০৪ , ১১ , ২০২০


আমার ক্ষেতভরা সোনার ফসল--লক্ষ বাহু তুলে

আমাকে ডাকলো , আমার ফুরসত হলো না

সাড়া দেবার ; বর্গীরা সেই ফাঁকে লুটে নিয়ে গেল সব । নেবার ক্ষমতা যাদের আছে--লক্ষহাতে ,

তরী তাদের ভরিয়ে দিয়ে হেমন্ত ফিরে গেলে পর ,

আমার সময় হলো । আমি মাঠে গিয়ে দেখি , আমার কাজ ফুরিয়েছে--শূন্য মাঠ ; 

মাঠের আলপথের এখানে সেখানে পড়ে রয়েছে

ধানের দু'একটা শীষ--অপহৃতা জনকনন্দিনীর 

 অঙ্গচ্যুত স্বর্ণাভরণের মতো ; সূর্যটা তখন 

পশ্চিমের দিগন্তে গাছের মাথায় কেশে কেশে

রক্তবমন করে রক্তমুখ ধুয়ে নিচ্ছে নদীর জলে ।


ঘাটে সোনার তরী ভিড়িয়ে আধো-অন্ধকারে

হাত বাড়িয়ে কে যেন বললো : দাও , যা আছে

দেবার , বেলা গেছে--সময় কম । 

আমার মাথার 'পরে তখন অসীম শূন্যতার 

দুর্বহ এক ভীমপাহাড় , নামাবো যে--ক্ষমতা নাই ।

ঝোলায় হাত ভরে দেখি--ঝোলাটা নিদারুণ শূন্য ;

আমি মহাশূন্যের পানে তাকিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ।

ইত্যবসরে নৌকোটা ঘাট ছেড়ে ভাসতে ভাসতে

দূরের ঘননীল দিগন্ত ছুঁয়ে কোন্ নক্ষত্রলোকে যে ,

হারিয়ে গেল--বুঝলাম না ।


রঙের উৎসবে একদিন আকাশ আমায় ডাকলো ,

আমার বীণার তারে তখন নিঃশব্দ এক সুরের

আলাপ জেগেছে ; সুরে আমি বিভোর ।

হুঁশ যখন হলো , দেখলুম--সব রঙ ঝরে গেছে ;

ঘন মেঘের ভারে আকাশের মুখ গোমড়া ।


একদিন সাঁঝবেলায় অজস্র বাহু তুলে--দূরের অরণ্য আমাকে ডাকলো , বাতাসে তার 

বার্তা এলো ; আমি তখন অন্ধকারে একা একা

জোনাকির ভিড় ঠেলে হাঁটছি , দু'হাতে আকাশে

তারাদের ভিড় ঠেলে হাঁটছি--কীসের সন্ধানে ,

জানি না । ডাক যেদিন কানে উঠলো , 

অরণ্য দেখি--দাবানলে পুড়ে ছাই । 

কবে যেন ভেঙে গেছে কোন রাত্রির উৎসব ; দীপনেভা ,প্রতিমাহীন পরিত্যক্ত মণ্ডপের মতো চারিদিকে এক বিষণ্ণ স্তব্ধতা ; কোত্থাও পাতার সেই বাহার নাই , পাখিদের সেই জলসা নাই , 

ফুলের গন্ধ নাই , ফুলের শয্যা নাই ; ছায়ার তেমন শীতলপাটিও বিছানো নাই কোত্থাও ; 

নাই গা জুড়নো সেই পত্রসমীর । পরিবর্তে , লু-হাওয়ার হলকা এসে ঝলসে দিলো আমার গা , আমার চোখ , আমার মুখ ।


ঢেউয়ের অজস্র দামামা বাজিয়ে সাগরও একদিন

অজস্রবার আমাকে ডাকলো--আমার হাতে তার রত্নড়াঁরের চাবির গোছাটা তুলে দেবে বলে ;

আমি নদী হয়ে বইবো , সাধ্য ছিল না ।

আজ তার নির্জন সৈকতে ধূ ধূ বালির চর ভেঙে

একটা মুক্তোর সন্ধানে ঝিনুক খুঁজে চলেছি একা ,

নিদারুণ একা ।

--------------------------------------------------------------------