স্বর্ণগাভী ছন্দশ্রী দাস ********তোরা যে যা বলিস ভাই আমার স্বর্ণ গাভী চাইনধর নধর শিং বাঁকানো স্বর্ণ গাভী চাই ।.......কি হলো গো ক্ষেপী তোমার হঠাৎ স্বর্ণ গাভী চাই কেন?বেশ ধবলী গাই লাই নদীর পাড়ে চড়াই। সেই গাভীর দুগ্ধ লইয়া শহরের বাজা…
স্বর্ণগাভী
ছন্দশ্রী দাস
********
তোরা যে যা বলিস ভাই আমার স্বর্ণ গাভী চাই
নধর নধর শিং বাঁকানো স্বর্ণ গাভী চাই ।
.......কি হলো গো ক্ষেপী তোমার হঠাৎ স্বর্ণ গাভী চাই কেন?বেশ ধবলী গাই লাই নদীর পাড়ে চড়াই। সেই গাভীর দুগ্ধ লইয়া শহরের বাজারে বিক্রয় করিতে যাই।
........আরে ছোঃ হারাণবাবু আমি আমার স্বর্ণ গাভী থেকে স্বর্ণ নিষ্কাসন করে গহনা গড়াবো। আর দুধ থেকে দই, রাবরি তৈরী করবো না। পাতন ক্রিয়ার সাহায্যে সরাসরি স্বর্ণ নিষ্কাশিত করে বিক্রি করবো।
.......তোমার দেখছি মাথা খারাপ হয়েছে। গরুর দুধ থেকে সোনা!! এরপর কোনদিন বলবে বরের টাক বড়ো হলে সেখানে ধান চাষ করো।
........দ্য গ্রেট আইডিয়া। উমমমমমমমমমম। হারাণবাবু এই জন্যই বলি তুমি একটা জিনিয়াস। শোনো টাকে কি করে ধান গাছের চাষ করা যায় তাই নিয়ে তুমি একটু কালটিভেট করো বুঝলে!! এটা যদি সফল হয় তাহলে ভারতবাসীর আর কোনো কষ্ট থাকবে না।
.........কি রকম শুনি!!
.........আরে গরুর কুঁজ ও দুধ থেকে সোনা আর বরের টাকে ধান। তাহলে কি দাঁড়াল????
........কিইইই???
.......দাঁড়াল এই যে আপামর ভারতবাসী সবার ঘরে স্বর্ণগাভী বাঁধা। আর টেকো বরের মাথায় ধান। তার মানে সবার ঘরে সোনা, ও দুধ ভাতের অভাব থাকবে না। আর ঐ সোনা থেকে গয়না গড়িয়ে নিজেরাও পড়বো। আবার উদ্বৃত্ত সোনা বিদেশে চালান করে বিদেশী মুদ্রা অর্জন করবো।
........হুম। মন্দ নয় ব্যবস্থাটা। তাহলে একটা স্বর্ণ গাভী কিনে আনি কি বলো ক্ষেপী!!
.......হ্যাঁ আনো। তবে দেখে শুনে একটা দেশী গাভীই আনবে।
........তুমি আমাকে কি ভাবো বলোতো ক্ষেপী!! আমি দেশী গাভী চিনি না !!
........কি জানি বাবা দেশি ভেবে আবার যদি বিদেশী গাভী আনো তাহলে বদলাবার সুযোগ থাকবে না। জানো তো আজকাল সবাই সোনার দোকানে আর যাচ্ছে না। সবাই খাটালে গিয়ে দরদাম করে গোমাতা কিনে ঘরে নিয়ে আসছে।
.......আরে দেশী গাভী চিনতে তোমার হারাণবাবুর কখনো ভুল হবে না। এত বছর ধরে দেখছি, তার হাঁকডাক শুনছি ভুল কখনো হয়।
........তার মানে তুমি কি বলতে চাইছ বলোতো!!! ক্ষেপী কোমরে দুহাত দিয়ে রণরঙ্গীনি মূর্তিতে হারাণবাবুর সামনে দাঁড়ায়।
.......তুমি যা বলাতে চাইলে তাই বললাম।
.......আমি আবার কি বললাম!!
.......কিছু না। শুধু টাকে ধান চাষ।
......তার সাথে দেশী গাভীর কি সম্পর্ক?
.......নেইই!! তুমি হলে একটা দেশী গাই। ছোটো অথচ গুঁতোনো স্বভাব। যে লোক দেখ গুঁতিয়ে দিলেই হলো। এত বছর ধরে তোমার গুঁতো খেতে খেতে দেশী গাভী চেনা মোটেই কষ্টের নয়।
গিয়ে দেখবো যে গাভী অকারণে লোককে গুঁতো মারছে বুঝবো সেটাই আসলি দেশি গাভী।
........হারাণবাবু তুমি একথা বলতে পারলে!! আমি সারাজীবন শুধু তোমাকে গুঁতোই মেরেছি!! বুদ্ধিদুগ্ধ কি একদম দিই নি!!
.......হ্যাঁ দিয়েছ। এই যেমন এখন দিলে স্বর্ণগাভী কেনার পরামর্শ। ঐসব আগল পাগল কথায় কান দিও না।
.......তুমি তাহলে গাভী আনবে না!!
......নাআআ। আমি পাগল নয় তোমার মতো যে গরুর কুঁজ আর দুধ থেকে সোনা বেরোবে সত্যি ভাববো।
.......আচ্ছা হাম দেখলেঙ্গে। আমি ও ক্ষেপী মহারানী। এখনি খেল দেখাচ্ছি।
.......হুঁ সব করবে। বলে হারাণবাবু কোর্টে বেরিয়ে যায়। গিয়ে দেখে মোবাইল আনতে ভুলে গেছে। ক্ষেপীর মুন্ডু পাত করতে করতে কাজ শুরু করে। তারপর সব কিছু ভুলে যায়। সন্ধ্যায় নিজের বাড়ির সামনে গাড়ি থামলে হারাণবাবু খুব ধন্ধে পড়ে যান। এটা তার নিজের বাড়ি নাকি কোনো খাটাল। চারিদিক থেকে গরুদের ডাক আর তার মালিকদের ক্যচোর ম্যচোরে জায়গাটা পূর্ণ। আর যত পাড়ার বৌরা আছে সব গরু দেখতে আর দরদাম করতে ব্যস্ত। তাকে দেখে সবাই চিৎকার করে ওঠে। ঐ তো জজ সাহেব এসে গেছেন। এবার শুরু হোক নিলাম।
.......কিসের নিলাম??
.......সবাই একসাথে চেঁচিয়ে ওঠে গরুর। আমরা সবাই স্বর্ণগাভী কিনবো। পাড়ার লোকেরা বলে।
আমরা স্বর্ণগাভী বিক্রি করবো। গরুর মালিকরা বলে।
.......তা আমার বাড়ির সামনে কেন??
.......আপনার বাড়ির সামনেই তো হবে সেই রকম ই তো ম্যাসেজ আপনি আমাদের পাঠিয়েছেন। পাড়ার লোকেরা বলে।
......গোয়ালারা বলে হ্যাঁ বাবু আপনার নামেই তো ম্যাসেজ এসেছে। এই সত্যসুন্দর চ্যাটার্জি।
.......হারাণবাবু নিমেষে বুঝে যান এসব ক্ষেপীর কীর্তি। সকালের ঝগড়ার প্রতিশোধ। তিনি বলেন যা মেসেজ গেছে সব ভুলে চলে গেছে। আপনারা এখন বাড়ি যান। এখানে কোনো গরুর নিলাম হবে না। যদি কখনো হয় তো জরু নিলাম হবে। তখন খবর দেব।
মুহূর্তে জায়গা ফাঁকা। গরু যদিও বা কেনা যায়। জরু কিনে লোকে আর ভুল করতে চায় না। এক জরুতেই কুপোকাত সবলোক।
পাড়ার বৌরা মুখ বাঁকিয়ে বলে যতসব পাগলের কান্ড। এর কথায় নাচাই ভুল।
আর গোয়ালারা হারাণবাবুর কাছ থেকে গরুদের খড় বাবদ টাকা নিয়ে তবে যায়।
......তারা যখন চলে যাবে তখন ক্ষেপী বেরিয়ে এসে বলে ,এই বাছারা তোমাদের গোমাতারা যে মূত্র ও গোবর ত্যাগ করেছে সেগুলো সাথে নিয়ে যাও। আর পাড়া ধুয়ে সাফ করে দাও। এই গন্ধের মধ্যে আমরা থাকতে পারবো না।
ক্ষেপী বলার সাথে সাথে আশপাশের দোকানীরা এসে সব গোবর নিয়ে চলে যায়। কে জানে এর মধ্যে সোনা থাকলেও থাকতে পারে। সোনা যদি নাই থাকে ঘুঁটে করে আগুন তো জ্বালানো যাবে। আর গোয়ালারা সবার বাড়ি থেকে জল এনে পাড়া পরিষ্কার করে।
......বাড়ি ঢুকে ক্ষেপী হারাণবাবু কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে বলে কি হলো হারাণবাবু তুমি যে স্পিকটি নট।
........হারাণবাবু বোমার মতো ফেটে পড়ে বলে তুমি হলে সত্যিকারের দেশী গুঁতনো গাভী। জানি যখনি দেখেছি পকেটে মোবাইল নেই।
.......বাহ বাহ তুমি আমাকে গুঁতনো দেশী গাভী বলবে আর আমি ছেড়ে দেবো। তা স্বর্ণগাভীর কি হলো??
........তুমি ই আমার স্বর্ণগাভী তুমি ই আমার দেশী গাভী। তোমার গুঁতো খেতে খেতেই জীবন যাবে। আর অন্যকোনো স্বর্ণগাভী আমার চাই নাআআআ।
*************8/11/2019************