Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

কবিতা : মুগ্ধ হতামকলমে : শক্তিপদ ঘোষতারিখ : ০৮ , ১১ , ২০২০
চেয়ে না পাওয়ার থেকে--পেয়ে হারানোর বেদনাইরক্তের ভিতরে আগুন জ্বালে , মনের খাণ্ডব জ্বলেঅনিঃশেষ দাবানলে , এবং সেই দগ্ধতার বেদনাগভীরতায় হার মানায় মারিয়ানাক…


 কবিতা : মুগ্ধ হতাম

কলমে : শক্তিপদ ঘোষ

তারিখ : ০৮ , ১১ , ২০২০


চেয়ে না পাওয়ার থেকে--পেয়ে হারানোর বেদনাই

রক্তের ভিতরে আগুন জ্বালে , মনের খাণ্ডব জ্বলে

অনিঃশেষ দাবানলে , এবং সেই দগ্ধতার বেদনা

গভীরতায় হার মানায় মারিয়ানাকেও , জীবনভর

খুঁজলেও যার তল মেলে না ; তখনই বেদনার

উপলক্ষটাই হয়ে ওঠে অসহনীয় । সঙ্গতকারণেই ,

তুমি অসহনীয় একটা অতীত , আমি তোমাকে

চাই না । তুমি আমার চোখের তারায় থাকো ,

স্বপ্নে থাকো--চাই না ; ভাবনায় থাকো , কবিতায়

থাকো , ক্যানভাসে থাকো--চাই না ।


অথচ , এই তুমি ট্রেন মিস করলে অস্থির হতাম , 

যথাস্থানে যথাসময়ে তোমাকে না দেখলে--তুমি

আসবে কি আসবে না--এই ভাবনার ঘূর্ণিতে পড়ে

অস্থির হতাম । সেই আমি আজ আর--তোমাকে

চাইছি না ; কারণ , তোমাকে ডাকলে পাবো না ,

হাঁকলে পাবো না , সুখে-দুখে পাবো না ,

আলোয়-অন্ধকারে পাবো না , কোলাহলে পাবো না , নির্জনতায় পাবো না । মোটকথা , সর্বতোভাবেই তুমি অস্তিত্বহীন ।


অথচ , আকাশ-বাতাস-নদী-সমুদ্র বলছে--তুমি

আছো , আকাশের চাঁদ ও তারারা বলছে , জোনাকিরা বলছে--তুমিআছো ; ফুল-পাখি প্রজাপতি সবাই বলছে--তুমি আছো ; 

শিশিরভেজা সকাল , গোধূলির রাঙা মেঘ , চুপরাত্রির অন্ধকার বলছে--তুমি আছো । 

সেই রাধাচূড়ার নিচে বাঁধানো বেদিটা , 

চাঁপার সেই কলিগুলো , গুচ্ছ গুচ্ছ মল্লিকা , 

সেই কামরাঙা গাছটার নিচে জমা 

আধো-অন্ধকার বলছে--তুমি আছো । 

আমার যে বইটা তোমার কাছে কিছুদিন রেখে ফিরিয়ে দিয়েছিলে , যে বইটা আমাকে উপহার দিয়েছিলে , সেই বইগুলোও বলছে--তুমি আছো ।


এদিকে , ভোরের সানাই , বিকেলের কনেদেখা

রাঙা রোদ বলেছে--তূমি নাই ; ঝিঁ ঝিঁ-র উলুধ্বনি ,

শূন্য ছাতনাতলা , দুয়ারে-উঠোনে আলতা পায়ের

ছাপ , গোলাপ-রজনীগন্ধা ও বেল-জুঁইয়ের সুবাস

বলছে--তুমি নাই ; দীপজ্বলা তুলসীতলা , 

শাঁখ বাজানো সন্ধ্যেবেলা , কিম্বা কৃষ্ণচূড়ার

প্রজ্বলিত শ্মশান বলছে--তুমি নাই ; পথের ধুলোয়

ফেলে যাওয়া পাল্কির গান বলছে--তুমি নাই ।


কত আশা-নিরাশার দু'ধারী তরবারির তীক্ষ্ণ ফলায়

অনেক রক্ত ঝরেছে বুকের ; আমি আর এমন 

নিঃশব্দ রক্তক্ষরণ চাই না । আমি জানি--তুমি 

তারা হয়ে--না জাগলে আকাশে , দু'হাতে তারাদের ভিড় আর ঠেলবো না ; তুমি মুক্তো হয়ে--না জ্বললে 

ঝিনুক খুঁজে সারাটা বেলা আর খোয়াবো না ;

মরীচিকা হয়ে না ছললে , মরুভূমি ভেঙে 

একা একা আর হাঁটবো না , এবং তখন নিশ্চয়ই আগুন-নেভা বরফের সে'রাত্রি আমি--কাবাব করবো একঘুমেই ।


মাঝেমাঝেই মনে হয়--তুমি যদি হঠাৎ কোন ঝড়ে

ঝরা গোলাপের মতো ঝরে যেতে , তোমার ঐশ্বর্যের

সব পাপড়ি বর্ষাধারায় ভেসে গিয়ে নিশ্চিহ্ন হতো ,

অথবা , আগুন লাগতো আমার স্মৃতির সংগ্রহশালায় , যদি দাবানল লাগতো অ্যালবামের

অরণ্যে , আমার বলার কিছু থাকতো না ।

তখন বাতাস বলতো--তুমি নাই ; আকাশের 

সন্ধ্যাতারাটা বলতো--তুমি নাই ; ফুল-পাখি ,

নদী-অরণ্য , ও জোনাকিরা বলতো--তুমি নাই , 

তুমি ছিলেও না কোনদিন ; আমি মেনে নিতাম ।


পরিবর্তে , এই সব ' নাই'কে ' মিথ্যে করে , মাঝেমধ্যে--মধ্যরাতে আমার ঘুম ভাঙিয়ে

তুমি বলো--তুমি ছিলে , তুমি আছো , এবং

থাকবেও চিরদিন । রাতের বাতাস তোমার 

ভেজা হাতের শীতল পরশ দেয়--আমার ললাটে , চাঁপার পাঁচটা কলি--তোমার হাতের--পাঁচটা

আঙুল হয়ে সঞ্চালিত হয় আমার বুকে -মাথায় , আমার চুলের গভীরে । কখনো বা তোমার ছায়ামূর্তি আমার বুকের থেকে--কবিতার 

খোলা ডায়েরিটা তুলে নিয়ে , বাতাসের 

আঙুল চালিয়ে পাতা ওল্টায় , চোখের পলক 

না ফেলে কী যেন খোঁজে ; মনে মনে পড়ে ,

মুখস্থ করে ; আবার , আমার কবিতা আমাকেই

শোনায় আবৃত্তি করে ।


এসব সত্যি হতো যদি , ঘুমভাঙা ভোরে--পাখিদের

কণ্ঠে তোমার আবৃত্তি শুনে মুগ্ধ হতাম ; সকালের

নরম আলোয় গাছের পাতায় , ঘাসের ডগায়

আমার কবিতার পঙক্তিমালাকে--উজ্জ্বল 

 শিশিরমালায় দুলতে দেখে আমি , যার-পর-নাই 

মুগ্ধ হতাম ।

-------------------------------------------------------------------