Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#রাজ্যপাট#পম্পা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে
সুভদ্রা দেবীর ব্যবহারে খুবই আহত হল নতুন বৌ প্রণতি। প্রণতির বিয়ে হয়েছে সবে একমাস, কোলকাতার মেয়ে সে, কলেজের ফাইনাল দিয়েই তার বিয়ে হল সিভিল ইঞ্জিনিয়ার অরিত্রের সাথে। অরিত্র জামশেদপুরে কর্মরত, অরি…

 


#রাজ্যপাট

#পম্পা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে


সুভদ্রা দেবীর ব্যবহারে খুবই আহত হল নতুন বৌ প্রণতি। প্রণতির বিয়ে হয়েছে সবে একমাস, কোলকাতার মেয়ে সে, কলেজের ফাইনাল দিয়েই তার বিয়ে হল সিভিল ইঞ্জিনিয়ার অরিত্রের সাথে। অরিত্র জামশেদপুরে কর্মরত, অরিত্রের বাবা সীতারামবাবু পাটনার দানাপুর স্টেশনের স্টেশন মাস্টার, দানাপুরের রেলের বাংলোতে থাকেন। অরিত্র যেহেতু জামশেদপুরে তখনো কোয়াটার পায়নি, তাই প্রণতিকে রেখে গেছে দানাপুরে মাস তিনেকের জন্যে সীতারামবাবু আর সুভদ্রা দেবীর তত্ত্বাবধানে। সুভদ্রাদেবী স্বল্পশিক্ষিত গ্রামের মেয়ে, তাঁর ছটি সন্তানের মধ্যে অরিত্র বড়ো, অরিত্রের পরে শেফালী, তারপরে সমীর, অঞ্জলি, গোপাল আর সর্বকনিষ্ঠ কৃষ্ণা। শেফালির বিয়ে দিয়েছেন তিনি বছর আটেক আগে, তার দুটি পুত্র, জামাই কস্ট কাম চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। শেফালির শ্বশুরবাড়ি শ্যামনগরে। বাকি পুত্র কন্যারা সকলেই পড়াশোনা করছে।


সুভদ্রাদেবীর প্রথম থেকেই এই বিয়েতে মত ছিল না, একে শহুরে মেয়ে, তায় শিক্ষিত, সুন্দরী এবং সংস্কৃতিবান পরিবারের সদস্যা। তাই তিনি চাননি এখানে বড়ো ছেলের বিয়ে হোক। কিন্তু সীতারামবাবু আর অরিত্রের এতো পছন্দ হল যে সুভদ্রাদেবীর আপত্তি ধোপে টিকলো না। বিয়ে হল, সীতারামবাবুর বাঁকুড়ার বর্ধিষ্ণু গ্রামের জমিদারি নীল রক্ত দেনাপাওনায় কোনো খামতি রাখতে দিল না মেয়ের বাড়িকে, তিরিশ ভরি সোনা, দানের বাসন, নমস্কারির ৩৫টা শাড়ি, খাট বিছানা, আলমারিতে সবই দিতে বাধ্য হলেন মেয়ের বাবা সুবলবাবু। কষ্ট হলেও দিয়ে থুয়েই বিদায় করলেন সুবলবাবু তাঁর আদরের ছোটো মেয়েকে। কিন্তু দানাপুরে এসে প্রণতি পড়ল মহা ফাঁপরে, কারণ তাকে সারাদিন কাটাতে হয় সুভদ্রাদেবীর সঙ্গে যিনি প্রথম দিন থেকে প্রণতিকে তাঁর প্রতিযোগী ঠাউরে নিয়েছেন। সর্বদা খুঁত ধরতে ব্যস্ত তিনি প্রণতির।


এর মধ্যে ছাঁদা বাঁধা পুরুত ঘরের মেয়ে সুভদ্রাদেবীর আছে ঠাকুর দেবতা নিয়ে অসম্ভব আড়ম্বর করে পূজাপাঠ, পাঠ সেখানে গৌণ, ভক্তিও গৌণ, মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় তাঁর আড়ম্বর, আচার বিচারের আড়ম্বরে আর ছলনায় আসল সমর্পণটির সুর যায় কেটে।।সোনার থালা বাটিতে ছাড়া তাঁর ঠাকুরেরা খান না, কারণ তাঁরা জমিদারবাড়ির ঠাকুর। ক্ষীর, সর, ননী মাখন, মন্ডা, মেঠাই ছাড়া তাঁদের সাধারণ কিছু রোচে না, তাই ঠাকুরের নাম করে রোজই বাড়িতে উৎসবের আবহ কিন্তু সেখানে বাড়ির সদস্যরা ছাড়া প্রণতি আর কাজের লোকেরাও ব্রাত্য। তার মধ্যে সুভদ্রা দেবী অসম্ভব শুচিবায়ুগ্রস্ত, ফলে সারাদিন জল দিয়ে অন্তত বার পাঁচেক সারা বাড়ি ধোয়া হয়। প্রণতি বোঝে সুভদ্রা একে অশিক্ষিত, তায় অন্তরের উদারতাটুকুও তাঁর আসেনি, তাই নিজের রাজ্যপাট হারানোর ভয়ে সর্বদা দাবিয়ে রাখতে চাইছেন প্রণতিকে কারণ শ্বশুরের বিশেষ পছন্দ এই বৌটি। বাড়িতে থাকলে কারণে অকারণে বৌমাকে ডেকে নেন আর নানান বিষয় নিয়ে গল্প করেন। বৌমাটিও স্বচ্ছন্দে, সাবলীলভাবে তাতে যোগ দেয়। এই জায়গাটায় সুভদ্রাদেবী বড়ো অসহায় বোধ করেন, কারণ তাঁর জীবন আবদ্ধ 'রাঁধার পরে খাওয়া আর খাওয়ার পরে রাঁধা'র চাকায় আর সন্তান উৎপাদনে। তাঁর মেয়েরাও লেখাপড়া করে, কিন্তু সেটা শুধুমাত্র পাত্রস্থ হতে। লেখাপড়া তারা ভালোবাসে না, প্রণতি লেখাপড়া ভালোবাসে, বইয়ের তার খুব নেশা, শ্বশুর অফিসের লাইব্রেরি থেকে তাই তাকে বই এনে দেন। প্রণতি ভালো গান গায়, গান শোনা তার আরেক নেশা। সুভদ্রা দেবীর মেয়েরাও রীতিমতো ওস্তাদের কাছে তালিম নিয়ে গান শিখেছে, কিন্তু গানও তারা ওই পাত্রস্থ হবার জন্যই শিখেছে। মেয়েমানুষ লেখাপড়া, গানবাজনা ভালোবাসলে সংসার উচ্ছন্নে যায়, এটাই মত সুভদ্রাদেবীর। তাই প্রণতিকে বই নিয়ে বসতে দেখলে বা গান শোনায় মগ্ন দেখলে তিনি চালডাল মিশিয়ে সেটা বাছতে বসিয়ে দেন।


শনিবার করে রাত্রে অরিত্র বাড়িতে আসে, রোববার থেকে সোমবার ফিরে যায় কর্মস্থলে। প্রণতি খুব অবাক হয়ে দেখে বাড়ির বড়ো ছেলে সপ্তাহান্তে বাড়িতে ফিরবে বলে সুভদ্রদেবী কোনো আলাদা অরিত্রর ভালোবাসার প্ৰিয় পদ রাঁধেন না, রাত্রে তার জন্যে বরাদ্দ থাকে রোজের রুটি, তরকারি, গুড়। বরং মেজ ভাই সমীর বা ছোটভাই গোপালের প্ৰিয় পদ মা সুভদ্রা দেবী রাঁধেন, কিন্তু অরিত্রর জন্য কোনো বিশেষ আয়োজন করতে তাঁর প্রবল অনীহা। অথচ অরিত্র মাইনের বেশ অনেকটাই মায়ের হাতে তুলে দেয় প্রতি মাসে।প্রণতি খুব আশ্চর্য হয় শাশুড়ির এমন অদ্ভুত আচরণে।


সেদিন সকালে সে শুনল পরেরদিন সুভদ্রাদেবী মেজছেলে সমীর আর ছোটমেয়ে কৃষ্ণাকে নিয়ে কাশী যাবেন বাবা বিশ্বনাথকে দর্শন করে গঙ্গাজল আনতে। দানাপুর থেকে কাশী ঘন্টা তিনেকের রাস্তা, তায় তাঁদের পাশ আছে রেলের শ্বশুরের রেলের চাকরির দরুণ।সেদিন শনিবার, অরিত্রর বাড়িতে আসার দিন। ভোরবেলায় বেরিয়ে গেলেন সুভদ্রাদেবী ছেলে মেয়েকে নিয়ে, বাড়িতে প্রণতি, শ্বশুর সীতারামবাবু, ছোটদেওর গোপাল আর মেজননদ অঞ্জলি। বিরাট হাঁড়িতে ভাত হবার পরে এতবড়ো হাঁড়ি নামিয়ে ফেন ঝাড়বে কিভাবে সেই চিন্তায় যখন প্রণতি চিন্তিত, শ্বশুরমশাই নিজেই রান্নাঘরে ঢুকে ভাত নামিয়ে দিয়ে গেলেন। মনে মনে খুব কৃতজ্ঞ হল প্রণতি। একে একে শ্বশুরমশাইয়ের নির্দেশে তাঁর বলে দেওয়া পদগুলি রেঁধে ফেলল। গোপালকে বলে একটু মাংস আনিয়ে রাত্রের জন্য মাংস বানালো অরিত্রর জন্য বিশেষ করে। সারাদিন আজ খুবই স্বস্তিতে কাটলো প্রণতির।


আটটা সাড়ে আটটায় সুভদ্রাদেবী ফিরলেন সমীর আর কৃষ্ণাকে নিয়ে, প্রায় তাঁদের পরে পরেই ঢুকল অরিত্র। সুভদ্রাদেবী এসে বাইরের কাপড় ছেড়ে চান করে রান্না ঘরে ঢুকে যেই দেখলেন মাংস করেছে প্রণতি, তুমুল অশান্তি শুরু করলেন। সীতারামবাবু পরিস্থিতি যাতে আরও ঘোরালো না হয় তাই বললেন যে তিনিই নতুন বৌয়ের হাতে খাবেন বলে মাংস এনেছিলেন। সুভদ্রাদেবী সব বুঝলেও কিছু আর বলতে পারলেন না। সীতারামবাবু স্ত্রীকে বললেন বিশ্বনাথের প্রসাদ দিতে সবাইকে। সুভদ্রাদেবী সবাইকে প্রসাদ দিলেন প্রণতিকে বাদে।


রাত্রে খেতে বসার সময় সীতারামবাবু সুভদ্রা দেবীকে জিজ্ঞেস করলেন, "বৌমাকে প্রসাদ দিয়েছো "? "এই দিচ্ছি", বলে সুভদ্রাদেবী সরে গেলেন সীতারামবাবুর সামনে থেকে। খাওয়া দাওয়া মেটার পরে আবার সীতারামবাবু বললেন, "কি গো, বৌমাকে প্রসাদ দিয়েছো "? সুভদ্রাদেবী বললেন, "এই যা, একদম ভুলে গেছি, কাল সকালে দিয়ে দেব"। সীতারাম বাবু বললেন, "ওদের নামে পুজো দিলে, অরিত্রকে প্রসাদ দিলে, আর বৌমাকে দিতে ভুলে গেলে।" সুভদ্রা দেবী ঝংকার দিয়ে উঠলেন, "অত আদিখ্যেতা কোরো না তো, কালকে দিয়ে দেব।" পরেরদিন সকালে জলখাবার করে সকলকে দিল প্রণতি, কাজের লোকদের রুটি তরকারির সঙ্গে প্রসাদ বলে একটা করে প্রসাদী প্যাঁড়া দিলেন সুভদ্রাদেবী। জলখাবারের পাঠ চুকলে দুপুরের রান্না নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সুভদ্রাদেবী, হাতে হাতে প্রণতি আর অঞ্জলীও জোগাড় দিল। খাওয়া হয়ে গেল দুপুরের, বিকেলে বাড়ির ধোপা এল সাপ্তাহিক কাপড় কেচে ইস্ত্রি করে ফেরত দিতে আর এই সপ্তাহের কাপড় নিতে, তাকে সুভদ্রা দেবী প্রসাদী প্যাঁড়া দিলেন।


সন্ধ্যেবেলায় বাইরে বেরোনোর আগে সীতারামবাবু জিজ্ঞেস করলেন সুভদ্রাদেবীকে, "কি গো, বৌমাকে প্রসাদ দিয়েছো তো "? সুভদ্রাদেবী তাড়াতাড়ি করে প্রসাদের চাঙাড়ি আনালেন কৃষ্ণাকে দিয়ে, দেখা গেল সব প্রসাদ শেষ। সীতারামবাবু ভীষণ রেগে বলে উঠলেন, "আমি যদি বলি তুমি ইচ্ছে করে এটা করেছো"? ব্যাস, যেটুকু রাখঢাক ছিল সুভদ্রাদেবীর, সেটা আর রইল না, তিনিও রেগে বললেন, "হ্যাঁ, বেশ করেছি দিইনি, একে তো তোমাকে আর অরিত্রকে ওই মেয়ে তুক করেছে, আবার প্রসাদ দিয়ে ওকে ঠাকুরের আশীর্বাদটাও পাওয়ার ব্যবস্থা করে আমার রাজ্যপাট আমি হারাই আর কি!!! ইচ্ছে করেই ওকে দিইনি যাতে ও আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হয় "। স্তম্ভিত সীতারামবাবু কিছুক্ষন চুপ করে থেকে অরিত্রকে ডেকে নির্দেশ দিলেন পরেরদিন প্রণতিকে নিয়েই যেন সে কর্মস্থলে ফেরত যায় আর বলে দিলেন তিনি না চাইলে অরিত্র যেন আর কোনো অর্থ বাড়িতে না পাঠায় বা মায়ের হাতে দেয় এবং সেটাই হল। পরেরদিন অরিত্রর সঙ্গে প্রণতি চলে এলো তার কর্মস্থলে।


প্রণতির তাতে লাভ বই ক্ষতি হল না, কিন্তু সেই যে বিষাক্ত হল তার সঙ্গে তার শাশুড়ির সম্পর্ক, সেটা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আর ঠিক হল না। সে যে চেষ্টা করেনি তা নয়, কিন্তু গ্রাম্য অশিক্ষিত শাশুড়ির সঙ্গে তার পরিশীলিত শিক্ষিত মন কখনোই মেলাতে পারেনি, তাই বরাবর সে শাশুড়ির প্রতিযোগীই রয়ে গেল আর তাই তাকে চিরকাল শাশুড়ির হিংসার পাত্র হয়েই থেকে যেতে হল শুধুমাত্র শাশুড়ির নিজের অধিকার তথা রাজ্যপাট হারানোর ভয়ে। বৌ থেকে মেয়ে হওয়া আর হয়ে উঠল না এই জীবনে।তাই সুভদ্রাদেবীও শাশুড়ি থেকে মায়ে উন্নীত হলেন না প্রণতিরকাছে আর প্রণতিও বৌ থেকে মেয়ে হতে পারল না সুভদ্রাদেবীর কাছে।


চলবে......

রাজ্যপাট (২)


প্রণতি অরিত্রর সঙ্গে এসেছে অরিত্রর কর্মস্থলে। তখন সদ্য তৈরী হয়েছে শিল্পনগরীটি। প্রথম মাসখানেক মেসে লোকেদের সহায়তায় একটা ঘরে রইল ওরা মেসের মধ্যেই, মেসের চারজনের তিনজন বাইরের ঘরটা নিজেদের ব্যবহারের জন্য রেখে অরিত্র আর প্রণতিকে ভেতরের ঘরটা ছেড়ে দিল। ওপরমহলে একটু ধরাধরি করে শেষে তারা একমাসের মধ্যে বেশ ভালো জায়গায় বড়ো কোয়াটার পেয়ে গেল এবং সেখানে এসে উঠল। এই একমাসের মধ্যে শুধু সীতারামবাবুর চিঠি এসেছে দুটো, অরিত্র যায়নি আর দানাপুরে।


কোয়াটার পেয়ে একটু সব ঠিকঠাক গুছিয়ে নিতে নিতে আরো মাসদুয়েক কেটে গেল। এর মধ্যে বার দুয়েক প্রণতি বাপের বাড়ি কলকাতা থেকে ঘুরে এসেছে। পুজোর ঠিক আগে প্রণতির বাবা বললেন অরিত্রকে পুজোর তত্ত্ব দিতে যাবেন সীতারামবাবুর কাছে দানাপুরে। অরিত্র সেই মতো সীতারামবাবুকে জানাল, প্রণতির বাবা সুবলবাবু গেলেন, অরিত্র প্রণতিকে নিয়ে এলো আবার দানাপুরে। সুভদ্রাদেবী খুব ছাড়া ছাড়া ব্যবহার করলেন সুবলবাবুর সঙ্গে আর তাঁর মেয়ে যে শ্বশুর আর স্বামীকে বশ করেছে তুকতাক করে সেটা সোজাসুজি বলে বসলেন সুবলবাবুকে। সুবলবাবু বুদ্ধিমান মানুষ, বললেন, "একে একে সকলকে বশ করতে পারলেই তো সংসারটা সুখের হবে, আপনিও তো বেয়াইমশাইকে আর ছেলে মেয়েদের বশে রেখেই এতদিন সংসার পরিচালনা করছেন, আমার মেয়ে যে এই অল্পদিনে আপনার কাছ থেকে এই গুণটা রপ্ত করতে পেরেছে, সেটা জেনে আমার আপনার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যাচ্ছে"। সুভদ্রাদেবী নিজের ফাঁদে নিজে পড়ে যাচ্ছেন বুঝতে পেরে তখনকার মত ইতি টানলেন ওই প্রসঙ্গের। পুজোর তত্ত্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাড়িটা আর শার্ট প্যান্টটা তিনি দিলেন প্রণতিকে আর অরিত্রকে। প্রণতি কিছু বলল না।


বাঁকুড়ার কাছে অরিত্রদের দেশের বাড়িতে পুজো হয়, সীতারামবাবুর ইচ্ছেকে সম্মান জানাতে প্রথম বছর ওরা দেশের বাড়িতে গেল পুজোতে। কিন্তু খুঁটিনাটি কারণে সুভদ্রা দেবী সেই অশান্তি শুরু করলেন প্রণতির সঙ্গে। একাদশীর দিন একপ্রকার কাঁদতে কাঁদতে অরিত্রর সঙ্গে প্রণতি ফিরল অরিত্রর কর্মস্থল দুর্গাপুরে। বাড়ির কাছে হবে বলে অরিত্র দুর্গাপুরে চাকরি নিয়ে চলে এসেছে ততোদিনে। অরিত্র মানুষ খারাপ না, কিন্তু বড্ডো কানপাতলা। প্রতিবার মায়ের কাছ থেকে ফিরে সে প্রণতির সঙ্গে অশান্তি করবেই।সে ইন্দ্রিয়ের দাস, তাই তার খাওয়া, ঘুম এবং শারীরিক প্রয়োজনের বাইরে আর কিছু সে মাথাতেই নেয় না, না আছে তার বইয়ের নেশা, না শোনে গান, না আছে বন্ধুবান্ধব সেভাবে, না কোনো শখ। ফলে অফিসের পরে বাজার করার না থাকলে সে পড়ে পড়ে ঘুমোয়। তারও পুজো পাঠ নিয়ে মায়ের মত আড়ম্বর আছে, ভক্তি, প্রেম কতটা আছে সেটা তর্কের বিষয়। প্রণতির মত মেয়ে তবুও চেষ্টা করে চলে মানিয়ে চলার।


দেখতে দেখতে অরিত্র প্রণতির মেয়ে হয়, সুভদ্রাদেবী মেয়ে হয়েছে বলে দেখতেও আসেন না, সীতারামবাবু এসে দেখে যান নাতনিকে। তার বছর দুয়েক পরে সীতারামবাবু অবসর নেন চাকরি থেকে। বিষ্ণুপুরে বাড়ি করে সীতারামবাবু সপরিবারে চলে আসেন সেখানে। মেজমেয়ে অঞ্জলির বিয়ে ঠিক হয় চন্দননগরে, বড়োমেয়ে শেফালীর বাড়ি শ্যামনগর থেকে বিয়ে হচ্ছে,চন্দননগর থেকে কাছে হবে বলে, এদিকে অরিত্র ছুটি পায়নি বলে অফিস করে পৌঁছতে ওদের বেশ রাত্রি হয়ে গেল, প্রণতি অরিত্রর মেয়ে অনি বা অনিন্দিতার বয়স সবে চার, সে ট্রেনে ওঠার থেকে জলের জন্য অনেকবার বলেছে, তাড়াহুড়োতে আর তাকে জল খাওয়ানো হয়নি।এটা যে সময়ের ঘটনা তখনো মিনারেল ওয়াটারের বোতল বিক্রি হয় না, সময়টা 1971-72 সাল।


শ্যামনগরে নেমে অনিকে বলল প্রণতি, "এই তো মা দ্যাখ না, এখুনি পিসিমণির বাড়ি গিয়ে অনেকটা জল খাবি"। অনি তখন রীতিমতো কাঁদছে তেষ্টায়। শেফালীর বাড়িতে পৌঁছতে শাশুড়ি সুভদ্রাদেবী, মেজদেওর সমীর আর শেফালী ওদের দেরিতে আসার অজুহাত দিয়ে ওদের বাড়িতে ঢুকতেই দিল না, সীতারামবাবু কন্যাদানে বসেছেন তখন তিনি কিছু জানতেই পারলেন না আর অঞ্জলি জানলো দাদা বৌদি এসে অশান্তি করে চলে গেছে। ওই অশান্তির মধ্যেও প্রণতি অনিকে জল দেবার কথা বলেছিল, কেউ কর্ণপাতই করল না সেটার। এদিকে প্রণতি অরিত্র ট্রেনে করে শেয়ালদায় ফিরে বালিগঞ্জে প্রণতির বাপের বাড়িও যেতে পারছেনা কারণ সেদিন প্রণতির জ্যাঠতুতো দাদার মেয়েরও বিয়ে, মেজননদের বিয়ে বলে প্রণতি আগেই সেখানে যেতে পারবে না বলে রেখেছে। তাই প্রণতির দিদি-জামাইবাবু যারা মানিকতলাতে থাকে, সেখানে গেল ওরা। প্রণতির দিদি মাধবী আর তার ছেলে মেয়েরা সকলে বালিগঞ্জের বাপের বাড়িতে ভাইঝির বিয়েতে গেছে। জামাইবাবু ভাগ্যিস গিয়ে ফিরে এসেছিলেন, প্রণতিরা রাত এগারোটায় তাঁর কাছে যাওয়ার পরে শুধু দুধ আর পাউরুটি খেল রাত্রে আর অনি সেই তার এতোক্ষনের তেষ্টার জল পেয়ে সেটা খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ল।


এরপরে বেশ কিছুদিন অরিত্রও আর যায়নি বিষ্ণুপুরে মায়ের কাছে, অঞ্জলির বিয়ের মাস ছয়েক পরে অঞ্জলি তার প্রফেসর বরকে নিয়ে হঠাৎ এল দেখা করতে প্রণতি অরিত্রর সাথে। তাদেরকে প্রণতি তার সাধ্যমতো যত্ন আত্তি করল। তারপরে শুনল অঞ্জলির বর কালো বলে সুভদ্রাদেবী নাকি জামাই বরণের সময়ে বলেছেন "বাবা, কি কালো",তাতে সীতারামবাবু ধমকে উঠে বলেছেন, "কালো তো কি হয়েছে, কত শিক্ষিত তা জানো "? তার উত্তরে সুভদ্রা দেবী নাকি মেজজামাইয়ের সামনেই বলেছেন, "হুঁহ, শিক্ষিত না কচু"। এহেন অভ্যর্থনা প্রফেসর ডাবল এম এ বি এড জামাইয়ের স্বাভাবিক ভাবেই ভালো লাগেনি। তাই শ্বশুরবাড়ির ওপরে তার বিরূপ মনোভাব তৈরী হয়েছে। এরপরে অষ্টমঙ্গলার পরে মেজভাই সমীর যায় অঞ্জলির সঙ্গে তার চন্দননগরের বাড়িতে, সেখানে তার হেফাজতে ছিল বোনের গয়নাগুলো একটা ব্যাগে, সেখান থেকে খোয়া যায় অঞ্জলির হাতের বালা। অঞ্জলির উকিল শ্বশুরমশাই চিঠি লেখেন সীতারামবাবুকে, "আপনার মেজপুত্রটি একটা চোর "। সীতারামবাবু সুভদ্রাদেবীর প্ররোচনায় তার উত্তরে লেখেন, "আমার মেজপুত্র চোর হলে আপনার পুত্রটিও চোর "। যার উত্তরে অঞ্জলির শ্বশুর লেখেন, "আমার পুত্র যাই হোক, সে তো আমার বাড়িতেই ছিল, আপনি গলবস্ত্র হয়ে তাকে জামাই করতে গেছিলেন কেন? সেতো আপনার মেয়েকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে আসেনি, আপনি রীতিমতো সম্বন্ধ করে তার হাতে নিজের মেয়েকে সম্প্রদান করেছেন "। সম্পর্ক তিক্ত থেকে তিক্ততর হয়েছে আর সুভদ্রাদেবীর অশিক্ষা আর অল্পবুদ্ধির পরিণামে অঞ্জলির বাপের বাড়িতে যাওয়া বন্ধ হয়েছে। এইসব প্রণতি আর অরিত্র জানলো তাদের বাড়িতে বসে অঞ্জলি আর তার বরের মুখে।


অশিক্ষা আর মনের সংকীর্ণতা মানুষের যে কতবড় শত্রু সেটা আরো প্রকট হচ্ছে দিন দিন।সুভদ্রাদেবীর কিন্তু কোনো ভ্রুক্ষেপ মাত্র নেই তাতে, তিনি নিজের জীবনদর্শন অনুযায়ী তাঁর রাজ্যপাট সামলাচ্ছেন সেই অশিক্ষা আর কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনের অন্ধকার দিয়ে।


#পম্পা বন্দ্যোপাধ্যায়


চলবে....


রাজ্যপাট (৩)


প্রণতি -অরিত্রর মেয়ে অনিন্দিতা খুবই বুদ্ধিমতী আর ছটপটে । প্রণতির বাবা-মা সুবলবাবুর আর উষাদেবীর খুবই প্ৰিয় নাতনি সে, ছোট্ট অনি দাদুর মুখে শুনে শুনে মাত্র তিন বছর বয়সে রামায়ণ মুখস্ত করে ফেলেছে, গল্প শুনতে বড্ডো ভালোবাসে মেয়েটা। আর রেডিওতে বা মাইকে গান শুনলেই তুলে ফেলে গলায়, তাই সুবলবাবুর ইচ্ছেতে আর প্রণতির জোরাজুরিতে অনিকে কনভেন্টে ভর্তি করল অরিত্র আর গানের শিক্ষক নিয়োগ করল অনির গান শেখার জন্য। এদিকে প্রণতি শিক্ষকতার জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছিল দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর স্কুলে, শিক্ষা দপ্তরের থেকে তার মৌখিক পরীক্ষার পরে তার নিয়োগপত্র এসে গেছে । অরিত্র বিষ্ণুপুরে গেল মেয়ের কনভেন্টে ভর্তি আর বৌয়ের চাকরি পাওয়ার খবর জানাতে ।


সীতারামবাবু ভীষণ খুশি হলেন দুটো খবরেই, কিন্তু সুভদ্রাদেবী অরিত্রকে বোঝালেন বৌ চাকরি করলে অরিত্রর হাতের বাইরে চলে যাবে, তাকে মানবে না আর বলা যায় না পরপুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করে কি করতে কি করে বসে, তাই অরিত্রর একদম উচিৎ নয় তার বৌকে চাকরি করতে পাঠানো । আর মেয়ের স্কুলে ব্যাপারে বললেন, "কেন মেয়েকে ইঞ্জিরি ইস্কুলে দিতে হবে, মেয়ে কি জজ ব্যারিস্টর হবে "? অরিত্র গেছিল যখন ভালো মানুষ গেছিল কিন্তু ফিরল যখন তখন অন্য মানুষ, এসেই প্রণতির চাকরিতে যোগ দেওয়া নিয়ে জিনিসপত্র ভাঙচুর করল, ফালা ফালা করে ছিঁড়ল প্রণতির ভালো শাড়ি, তারপরে নিজে আত্মহত্যা করতে গেল হিটারের ওপর উঠে, শেষে প্রণতি নিজের নিয়োগপত্রটি ছিঁড়ে ফেলতে শান্ত হল অরিত্র। কিন্তু মেয়েকে কনভেন্টে পড়ানোর ব্যাপারে প্রণতি অনড় রইল, তাই সেখানে কিছু করতে পারল না অরিত্র ।


কিছুদিনের মধ্যে সীতারামবাবুর হার্টের সমস্যা দেখা দিল, প্রণতি অরিত্রকে পরামর্শ দিল যে অরিত্র যেন সীতারামবাবুকে দুর্গাপুরে এসে ডাক্তার দেখান সেখানকার হাসপাতালে । সীতারামবাবু এলেন, ডাক্তার দেখিয়ে বেশ ভালো ছিলেন এমন সময় চৈত্র মাসের গাজনের জন্য রাধানগরে অরিত্রদের গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে চলে গেলেন, অরিত্র গিয়ে বাবাকে রেখে এল গ্রামের বাড়িতে । গ্রামের বাড়ি থেকে বিষ্ণুপুরের বাড়ি ছয় মাইল দূরে । একমাস কোনো খবর নেই, একমাস পরে একদিন বেলা তিনটে নাগাদ অনিকে নিয়ে পড়াচ্ছে প্রণতি বারান্দায় বসে , দেখে বাড়ির সামনে একটা রিক্সা দাঁড়াল, তাতে সীতারামবাবু বসে আছেন । প্রণতি দেখেই উঠে দাঁড়িয়েছে, দেখে রিক্সাওয়ালা ধরে ধরে নামাচ্ছে সীতারামবাবুকে ।


তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখে সীতারামবাবুর ডান দিকটা প্যারালিসিস হয়েছে, উনি নিজে নিজে নামতেই পারছেন না । প্রণতি আর রিক্সাওয়ালা মিলে দুজনে দুদিক থেকে ধরে তাঁকে ওপরে নিয়ে আসা হল কোনোরকমে , রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে সীতারামবাবুকে চা জলখাবার দিতে গিয়ে দেখে প্রণতি তিনি কাঁদছেন । প্রণতিকে দেখে বললেন "জানো বৌমা, আমার একুশ দিন আগে স্ট্রোক হয়েছে একটা, তারপরে ডান দিকটা পড়ে গেছে, সেই নিয়েও গাজনের সব তত্ত্বাবধান করেছি । ওরা ডাক্তার ডাকেনি । মেজছেলে সমীর বলেছিল আমি যেন গিয়ে অরিত্রর নাম করে ডাক্তার দেখিয়ে চলে আসি, অরিত্রকে জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই, কিন্তু আমি তো ডাক্তার দেখাবো 'ফাদার অফ অরিত্র' হয়ে, ওকে জানাবোনা কেন বলতো?গাজনের মেলা বসেছে আমাদের জমিতে, তার ভাড়ার টাকাগুলো আমার পকেটে আছে। আজ দুপুরে আমাকে বাসের মাথায় বসিয়ে দিয়ে বাসের কন্ডাকটরকে বলে সমীর চলে গেল। আমার খুব কষ্ট হয়েছে ঐভাবে আসতে, নামার সময় মনে হচ্ছিল আমি পড়ে গিয়েই মরে যাব । তোমার শাশুড়ি শুধু বলে গেছে আমার নাকি কিচ্ছু হয়নি, সব নাকি ঢং আমার "। বলতে বলতে অতো বড়ো মানুষটা হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন প্রণতির হাতদুটো ধরে ।


বিকেলে অরিত্র এসে সব শুনে বাবাকে নিয়ে গেল হেলথ সেন্টারে । ডাক্তারের ওষুধের সঙ্গে শুরু হল প্রণতির আরেক সংগ্রাম, একটা দিক অসাড় হয়ে যাবার জন্য উনি খাবার খেতে পারেন না, জামা কাপড় পড়তে পারেন না, সব কিছু প্রণতি করিয়ে দেয় বহু যত্নে।উনি দেখেন আর বলেন, "তোমার শাশুড়ির খুব দুর্ভাগা এমন রত্ন চিনল না "। ক্রমে মাসখানেকের অক্লান্ত সেবা, পরিচর্যা আর ওষুধে উনি বেশ একটু সারলেন, পনেরো দিন পরে পরে ডাক্তার দেখিয়ে । দেখতে দেখতে তিন মাস হয়ে গেল, বাড়ি থেকে না সুভদ্রাদেবী না অন্য ছেলে মেয়েরা কেউ কোনো খোঁজও নেয়নি এই সময়ে ।


তিন মাসের মাথায় সেদিন নাতনি আর ছেলের সঙ্গে গেলেন ডাক্তার দেখাতে, প্রেসার বেশী থাকায় ই সি জি করার জন্য ডাক্তার বললেন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যেতে ।ওঁকে ভর্তি করে অরিত্র অনিকে নিয়ে বাড়িতে এসে আবার গেল ওঁর লুঙ্গি, গেঞ্জি ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দিতে, ফিরতে ফিরতে রাত দশটা। পরেরদিন সকালে ফ্লাস্কে চা নিয়ে আগের রাতের ছাড়া জামাকাপড় আনল অরিত্র, তারপরে ডিউটি গেল । বিকেলে চারটের থেকে ভিসিটিং আওয়ার্স হাসপাতালে, অরিত্র অফিস থেকে এসে প্রণতি আর অনিকে নিয়ে পৌঁছতে আধঘন্টা দেরী হল,সাড়ে চারটেয় পৌঁছে দেখে সীতারামবাবুর বেডটা খালি ।আশে পাশের লোককে জিজ্ঞেস করতে তাঁরা খালি অরিত্রকে বলছেন,"আপনি একটু বসুন, আপনি একটু বসুন"। সকলে মিলে সিস্টার্স রুমে গেলে মেট্রন অরিত্রকে নিয়ে গেল একটা ঘিরে রাখা জায়গায়, সেখানে সীতারাম lবাবু শায়িত যেন ঘুমোচ্ছেন।


সীতারামবাবু 4.10এ মারা গেছেন, তার আগে পাশের বেডের লোকেদের কাছে নাতনির গল্প করেছেন, বৌমার সুখ্যাতি করেছেন, বড়ো ছেলের দায়িত্বজ্ঞানের প্রশংসা করেছেন ।অরিত্র বাচ্ছা ছেলের মত ওখানে বসেই কেঁদে ফেলল । প্রণতি অরিত্রকে সামলে অনিকে নিয়ে চলে এলো, অরিত্র বাবার দেহ নিয়ে মা, ভাইবোনদের আনতে পাঠালো ট্যাক্সি ভাড়া করে। ভোরবেলায় সবাই এলো, অরিত্রও ফিরল দাহ করে কাছা নিয়ে। সুভদ্রাদেবী ঢুকেই বললেন অরিত্র আর প্রণতিকে, "তোমরা তোমার শ্বশুরকে খুন করেছো "এবং এই কথাটা বলেই চললেন সমানে ।নিজের বুকে দুম দুম করে কিল মেরে চিৎকার করে বলে যেতে লাগলেন খুন করার কথা । এরমধ্যে সুভদ্রাদেবী আসার পরেই সীতারামবাবুর যাবতীয় জিনিস, চশমা, ঘড়ি, টাকার ব্যাগ সব প্রণতি সুভদ্রাদেবীর হাতে তুলে দিয়েছে ।


কাজের সময় সুবলবাবু গেলেন কলকাতা থেকে ঘাটে ওঠার জামাকাপড় দিতে মেয়ে জামাইকে, তাঁর সামনেও একই কথা বলতে লাগলেন। প্রণতি আর ধৈর্য্য রাখতে পারল না, বলল,"বাবাকে অসুস্থ অবস্থায় বাসের মাথায় তুলে দিয়ে আপনারা খুব শুশ্রূষা করেছিলেন, আর আমরাই তো তাঁকে মেরে ফেলেছি, উনি কোটি কোটি টাকা দিয়েছেন তো আমাদের "। যেই বলা, সুভদ্রাদেবী "ওগো,তুমি আমায় কোথায় রেখে গেলে গো "বলে ইনিয়ে বিনিয়ে বিলাপ করলেন কিছুক্ষন,কিন্তু আর কখনো খুন করার কথা মুখে আনেননি ।বাবার কাজে মেজমেয়ে অঞ্জলি আর তার বর এলো তাদের এক বছরের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে । কাজের পরে সাকসেশন সার্টিফিকেট বের করার জন্য সুভদ্রাদেবী অরিত্রকে ডেকে পাঠালেন ।ওই সার্টিফিকেট না বেরোলে সীতারামবাবুর ব্যাংক একাউন্ট, লকার কিচ্ছু খোলা যাবে না, এবারে সীতারামবাবুর সব ছেলে মেয়েরা আর স্ত্রী তাঁর বৈধ উত্তরাধিকার, সেখানে সকলেরই সই আবশ্যিক, অঞ্জলিকেও সই করতে হবে । সুভদ্রাদেবীর চারশো ভরি গহনা রয়েছে লকারে, সেই গহনা সবাই পাবে এই অঙ্গীকার করতে অঞ্জলি সই করল অরিত্রর কথায় । কিন্তু সার্টিফিকেট বেরোনোর পরে টাকাপয়সা আর গয়না ভাগ হল সুভদ্রাদেবী, তার ছোট দুই ছেলে, বড়মেয়ে আর ছোটমেয়ের মধ্যে। অরিত্র, অঞ্জলি 

জানতেও পারল না, জানতে পারল পাঁচ বছর পরে অরিত্রর উপস্থিতিতে যেদিন সমীর, গোপাল আর সুভদ্রাদেবীর মধ্যে ঝগড়া লাগল ।


চলবে....


#পম্পা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে

11/11/20