Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

গল্প:- ইচ্ছেকলমে:-মিতালী চক্রবর্তী(অনেক দিন পর আবার লিখলাম, মাঝে বেশ কিছুদিন বিরত ছিলাম লেখা থেকে... আশা করি মনোগ্রাহী হবে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দেবেন🙏🙂)
আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিল আঁচল। আঁচল চক্রবর্তী। চক্রবর্তী পরিবারের একম…

 


গল্প:- ইচ্ছে

কলমে:-মিতালী চক্রবর্তী

(অনেক দিন পর আবার লিখলাম, মাঝে বেশ কিছুদিন বিরত ছিলাম লেখা থেকে... আশা করি মনোগ্রাহী হবে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দেবেন🙏🙂)


আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিল আঁচল। আঁচল চক্রবর্তী। চক্রবর্তী পরিবারের একমাত্র সন্তান। কয়েক মাস হলো চাকরি পেয়েছে এক হায়ারসেকেন্ডারি স্কুলে। চক্রবর্তী বাড়ির কর্তা সেই কবে থেকেই তো ভাবছিলেন আঁচলের বিয়ের জন্য। কিন্তু এই মেয়ের যে বিয়েতে সম্মতি ছিল না। সে যে দুই চোখে স্বপ্ন মেখে রেখেছিল। আঁচলের বাবা মেয়ের আবদার ফেলতে পারেন নি তখন,মেনে নিয়েছিলেন মেয়ের উচ্চশিক্ষা তথা স্বনির্ভর হওয়ার আকাঙ্খা। তবে আঁচলের মায়ের ভূমিকাই ছিলো বেশি আঁচলকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর জন্য। কি না করেছেন তিনি মেয়ের স্বপ্নগুলো সাজানোর তরে। স্বল্প আয়ের মধ্যেও চেষ্টা করতেন আঁচলের পড়ালেখায় যেনো কোনো বাধা না আসে। আঁচলও ছিল মায়ের বাধ্য। বলা যেতে পারে তার মা কুন্তলাদেবী অধিক উৎসাহী ছিলেন যে আঁচল পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাঁড়াক। মায়ের ইচ্ছে পূর্ণতা পেয়েছে, কুন্তলাদেবীর কন্যা আজ নিজে প্রতিষ্ঠিত। আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসে আঁচল। শাড়ির পাড়টা ঠিক করে নেয়। ওই পাশ থেকে শুনতে পায় কুন্তলাদেবী বলছেন, "কই রে তোর হলো?"

চুলটা ঠিক করতে করতে আঁচল উত্তর দেয়,"হ্যাঁ মা। এই তো..."


***********************

বাড়ির গেটে তালা লাগিয়ে চাবিটা আচঁলের হাতে দিলেন কুন্তলাদেবী।

"এই নে, চাবিটা রেখে দে মনা তোর ব্যাগে..."

"হ্যাঁ"

কথা বলতে বলতে বড় রাস্তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন  তারা। সামনেই অটোস্ট্যান্ড। খালি অটো দেখে মা মেয়ে উঠে পরে একটি অটোতে। মৃদুমন্দ বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে কুন্তলাদেবীকে। আড়চোখে একবার মায়ের দিকে তাকায় আঁচল। মনে মনে ভাবে কত বসন্ত পার করে দিলো মা সংসারের তরে। সেই ছোট থেকেই তো আঁচল দেখছে কুন্তলাদেবী মুখ ফুটে কখনও কিছু চাইতেন না নিজের জন্য। শুধু একটাই ইচ্ছে ছিল ওনার, আঁচল যেনো সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। মেয়েটার যেনো একটা নিজের পরিচয় গড়ে উঠে। আঁচল অবাক হয়ে ভাবত মহিলাদের কতো সখ থাকে গয়নাগাঁটি নিয়ে। কিন্তু কুন্তলদেবীকে সে গয়নার আতিশয্যে কখনো দেখেনি। বিয়ের যা কিছু গয়না ছিলো সব তো পরবর্তী সময়ে চক্রবর্তীবাবুর চিকিৎসাতেই খরচ হয়ে গেছিলো। আর্থিক টানাটানির পরিবারে এই দুচারটে গয়নাই তো সম্বল ছিলো কুন্তলাদেবীর। কিন্তু স্বামীর চিকিৎসার জন্য বিনা বাক্যব্যয়ে সেসব গয়না বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ জুগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হলো কই? কুন্তলাদেবীর সিঁথির সিঁদুর যে মলিনতায় ঢেকে গেছিলো।


*****************

অটো এসে নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়াতেই অটো থেকে নামলেন তারা। পায়ে পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা শপিং কমপ্লেক্সের দিকে। কুন্তলাদেবী বলছেন, "আচ্ছা মনা,এই বুড়িটাকে কেন নিয়ে এলি তোর সঙ্গে? তুই কেনাকাটি করবি তো তোর বন্ধুদেরকেও তো বলতে পারতিস! সকলে একজোট হয়ে পছন্দ মতন কেনাকাটা করতি।"

আঁচল একটু হেসে বলে,"না মা আজকে যে আমার তোমাকেই দরকার.." কথা বলতে বলতে মা মেয়ে এসে দাঁড়ালেন কালিকা জুয়েলারি হাউসের সামনে। কুন্তলাদেবী একটু বিস্মিত হয়ে আঁচলের দিকে তাকাতেই সে বলে,"চলো না মা।"

জুয়েলারি শপে বসে আংটি দেখতে চাইলো আঁচল। দোকানি সেইমত নজরকাড়া নকশার আংটি পেশ করলো আঁচলের সামনে। আঁচল কুন্তলাদেবীর হাতটায় আলতো ভাবে চাপ দিয়ে ওনার একটা আঙ্গুলে একটা আংটি পরিয়ে দিতে লাগলো। হতবাক হয়ে কুন্তলাদেবী বললেন,"ও মা এ কি ! আমায় পরাচ্ছিস কেনো রে? তুই তোর আঙ্গুলে পর..."

আঁচল আরেকটা আংটি নিয়ে মায়ের হাতে পরাতে পরাতে বলে,"আমার জন্য না মা। তোমার জন্য।"

"সে কি কথা! আমার বুঝি বয়স আছে এখন এসব পরার?"

"গয়না পরতে আবার বয়স কিসের গো? আর ছোটবেলা থেকে দেখেছি তুমি কখনোই নিজের জন্য কিছু কিনতে না। বাবার কাছে মুখ ফুটে কোনোদিন সোনাদানার দাবি করতে না। না করো না মা, তোমার জন্য আজকে আমি আংটি কিনবই। আপাতত এই যৎসামান্য টাকাই সঞ্চয় করেছি মা, তাই আংটি কিনে দিচ্ছি তোমায়। আগামীতে তোমায় একটা গলার হার গড়িয়ে দেবো, তুমি দেখে নিও।" 

কুন্তলাদেবী জল ছলছল চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,"কবে এত বড় হয়ে গেলি রে মা?"

         _____*_____