Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পত্রিকা সাপ্তাহিক সেরা লেখনী সম্মাননা

ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পত্রিকা সাপ্তাহিক সেরা লেখনী প্রতিযোগিতা--#পর্ব(২৬) বিষয়-গল্প --উন্মুক্তশিরোনাম--পঞ্চ অলঙ্কার গৌতমী ভট্টাচার্য********************
সীতাদেবী নিজের গয়নার বাক্স খুলে আটভরি ওজনের লম্বা মফচেন দিয়ে বরণের সময় ছোট…

 


ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পত্রিকা সাপ্তাহিক সেরা লেখনী প্রতিযোগিতা--

#পর্ব(২৬) 

বিষয়-গল্প --উন্মুক্ত

শিরোনাম--পঞ্চ অলঙ্কার

 গৌতমী ভট্টাচার্য

********************


সীতাদেবী নিজের গয়নার বাক্স খুলে আটভরি ওজনের লম্বা মফচেন দিয়ে বরণের সময় ছোট পুত্রবধূ অপরূপা কে আশীর্বাদ  করলেন তখন আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শী বিশেষত আর চার বৌমার চোখ কপালে উঠল। সব বৌমাকেই তিনি এমনই ভারি গয়না দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। কিন্তু নিজের গায়ে নামমাত্র গয়না---ক্ষয়ে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া সরু হার গলায়, দুহাতে শাঁখার সাথে অনুজ্জ্বল দুগাছা বালা। বৃহৎ পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে করতে জীবনের শেষবেলায় পরিণত গৃহিণী  রূপবতী মহিলা সীতাদেবীর প্রয়োজনই হয়নি কোনো দামি আভরণের। কাঁচাপাকা চুলে সিন্দুর, পরিচ্ছন্ন চওড়া লালপাড় শাড়িতেই আভিজাত্য আর ব্যক্তিত্ব মাখামাখি হয়ে এক অপূর্ব মাধুর্যময়

রূপের আভা ওনার চেহারায় ফুটে উঠত। 


শৈশবে পিতৃমাতৃহীন সীতাদেবী অঢেল সম্পত্তির অধিকারী হলে ও মামাবাড়িতে মানুষ। মামারাই বিয়ের ব্যবস্থা করেন  সাধারণ চাকুরীজীবি শিক্ষিত পরিবারে। কাকারা বিয়েতে কিছু গয়না দিয়ে দায় সেরে ওনার প্রভূত সম্পত্তি আত্মস্মাৎ করেন। সীতাদেবী মায়ের গয়না ভর্তি বাক্সটি সাথে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি এলেন --মধ্যবিত্ত পরিবারে অর্থের প্রাচুর্য  বৈভব না থাকলেও ছিল ভালোবাসার নিবিড় বন্ধন। 


পারিবারিক অভাব অনটন চাপা দিতে কখনো ননদের বিয়ে অথবা মেয়ের বিয়েতে বা বৌমাদের  ও নাতি নাতনী দিয়ে থুয়ে সুদৃশ্য গয়নার বাক্সটি প্রায় খালি করতে দ্বিধা করেননি। 


সীতাদেবী কিন্তু এই পৃথিবীরই  আশা আকাঙ্ক্ষা  মোহ দিয়ে রক্তমাংসে গড়া মানুষ। পিত্রালয়ের না দেখা সিন্দুক ভরা ঐশ্বর্য এবং গয়নার গল্প বলে বলে হয়তো বা নিজের সুপ্ত বাসনার আস্বাদন সঙ্গে সঙ্গে বৌমাদের গয়নার প্রতি আকাঙ্ক্ষা  ও কৌতূহল কে ক্ষীণভাবে হলেও  জাগিয়ে তুলতেন। 


সীতাদেবী আলমারিতে থাকা সুদৃশ্য গয়নার বাক্সটি ঘরবন্ধ করে প্রায়ই নাড়াচাড়া করতে ভালোবাসতেন। উনি কখনো ই কাউকে বাক্সটি খুলে দেখাতেন না। পরিবার বিশেষত বৌমাদের ভীষণ কৌতূহল ছিল বাক্সটি ঘিরে। বিশেষ করে ছোটবৌমা কে দেওয়া উপহারের পর এই কৌতূহল আরো হয়েছিল। হয়তো আরো অনেক ভারি  ভারি গয়না ওই বাক্সে আছে বলে মনে করত। সীতাদেবী কে জিজ্ঞাসা করলে বলতেন--পাঁচটি ভারি গয়না ওই বাক্সে আছে। কিন্তু এখন নয়, ওনার মৃত্যুর পর যেন বাক্সটি খোলা হয়। 


সীতাদেবীর মৃত্যুর পর  ওনার ইচ্ছে অনুসারে বাক্সটি খোলা হলে বৌমারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে  গয়না  দেখার জন্য। কিছু না পেয়ে খুঁজতে শুরু করেন আতি-পাতি করে। শুধু পান সুদৃশ্য রঙীন কাগজে একটি চিঠি বৌমাদের উদ্দেশ্যে লেখা-- " আমার পাঁচ পুত্রই আমার পাঁচটি স্বর্ণালঙ্কার।  আমার অহঙ্কার। এদের যত্নসহকারে আমি রেখেছি। এদের দায়িত্ব এবার তোমাদের।"  গয়না বিহীন খালি বাক্সটির ডালায় পেস্ট করা আয়নায় মুহূর্তের জন্য  যেন ভেসে উঠল সীতাদেবীর হাসি মুখটা। বৌমারা অশ্রু সজল নয়নে লজ্জায় মাথা নত করল।।