Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#ছোট_গল্প_কৃষ্ণচূড়া#পিউ_হালদার_‌আশ
            সোমা আর রজত সেই ছোট্ট বেলা থেকেই বন্ধু। ওদের বাবার সূত্রেই বন্ধুত্ব।ওদের বাবা অসীম আর আকাশ কলেজ থেকে বন্ধু। একসাথে পাস করে এক‌ই কলেজে অধ্যাপক। সেই কারণেই বন্ধুত্ব টা আজ ও রয়ে গেছে। ওদ…

 


#ছোট_গল্প_কৃষ্ণচূড়া

#পিউ_হালদার_‌আশ


            সোমা আর রজত সেই ছোট্ট বেলা থেকেই বন্ধু। ওদের বাবার সূত্রেই বন্ধুত্ব।ওদের বাবা অসীম আর আকাশ কলেজ থেকে বন্ধু। একসাথে পাস করে এক‌ই কলেজে অধ্যাপক। সেই কারণেই বন্ধুত্ব টা আজ ও রয়ে গেছে। ওদের বৌদের মধ্যে ও খুব ভাব। একসাথে ঘুরতে যাওয়া, শপিং করা, মুভি দেখা আর উইকেন্ডে একে অপরের বাড়িতে আড্ডা আর ডিনার। 

             সেই সোমা আর রজত একে অপরের হাত ধরে বড় হয়ে উঠছে। দুজনের এক‌ই স্কুল। কিন্তু রজত দুই ক্লাস উঁচুতে পড়ে। ওরা দুজনেই ছোট থেকেই গাছ খুব ভালোবাসে। একদিন রবিবার ছুটির দিনে সকাল সকাল রজত ওর বাবা মায়ের সঙ্গে সোমাদের বাড়ি এলো। ঐদিন সোমার জন্মদিন ছিল। সোমা দশ বছর পূর্ণ করবে। তাই রজত ওর জন্য একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ এনেছিল উপহার দেওয়ার জন্য। গাছ পেয়ে তো সোমা খুব খুশি। ও গাছ খুব ভালোবাসে। তার ওপর লাল কৃষ্ণচূড়া। ও আনন্দে রজতকে জড়িয়ে ধরে। আচমকা এই ঘটনায় রজত ও অবাক হয়ে যায় প্রথমে তারপর ও ও সোমাকে জড়িয়ে ধরে। আর ওই কৃষ্ণচূড়ার সামনে দাঁড়িয়ে দুজন দুজনের হাত ধরে প্রতিজ্ঞা করে যে কেউ কাউকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। এই গাছটা যত বড় হবে ওদের বন্ধুত্ব তত গাঢ় হবে। এই বলে রজত গাছের গোড়া থেকে একটু মাটি নিয়ে সোমার কপালে লাগিয়ে দেয়। তখন ঐটুকু বয়সে এসবের অর্থ‌ই হয়তো জানতো না, তবে বন্ধুত্ব টা ওরা ভালোই বুঝেছিল। 

           সারাদিন ওরা নিজেরা হৈ হৈ করে কাটালো। সন্ধ্যেবেলায় লোকজন আসবে তাই সোমা একটা লাল রঙের গাউন পরে সুন্দর করে সেজেছে। সব লোকজন এসেছে। অনেক খাবার দাবারের আয়োজন ও করা হয়েছে। একটা বড় কেক এনেছে সোমার বাবা। কেক কাটার পর্ব মিটে গেলে ডিনার করে সবাই যে যার চলে গেলো। রজত যাবার সময় সবাইকে টাটা করে যায়। মিষ্টি স্বভাবের জন্য রজতকে সোমার বাবা মা খুব ভালোবাসে। 

          দেখতে দেখতে ওরা দুজনেই বড় হতে থাকে। উচ্চমাধ্যমিকের পর রজত হায়ার স্টাডির জন্য বিদেশ চলে যায়। তখন সোমার মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়ে এগারো ক্লাসে ভর্তি হয়েছে।রজত চলে যাবার পর সোমা খুব একা হয়ে যায়। গাছটার দিকে তাকিয়ে কথা বলে। জল দেয় দুইবেলা। খুব যত্ন করে। গাছটা যেই একটু বড় হোলো বাবাকে বলে কঞ্চি দিয়ে গোল করে ঘিরে দেয়। ওই গাছটার মধ্যেই ও রজত কে খুঁজে পায়। রজত ও বিদেশে গিয়ে সোমাকে খুব মিস করতো। প্রথম প্রথম বেশ খোঁজ খবর করতো। কিন্তু বছর খানেক যেতে না যেতেই রজত পাল্টে যেতে থাকে। সেরকম আর যোগাযোগ রাখে না। দেশে এসেও সোমার সঙ্গে দেখা করে না। এমনকি সোমাকে জানায় ও না। রজতের বাবা মা সোমাদের বাড়ি আসার জন্য বললেও আসে না। ওনাদের কাছেই সোমা জানতে পারে রজতের আসার কথা। 

           সোমা এগারো ক্লাসে সায়েন্স নিয়ে ভর্তি হয়। আসতে আসতে সেও রজতকে ভুলতে শুরু করে। কিন্তু কৃষ্ণচূড়া গাছ টাকে আজও সে যত্ন করে। রজতের ভালোবাসা খুঁজে পায় ওই গাছটার মধ্যেই। আর ও অনেক গাছ বসায় ওদের বাগানে। বাড়ির বারান্দায় ছোট ছোট অনেক গাছের চারা নিয়ে এসে বসে। ওর প্রিয় বন্ধু এখন গাছ। গাছেদের সাথেই সখ্যতা ওর এখন। পড়াশুনার ফাঁকে অবসর সময়ে ওই গাছগুলোর সাথেই ও কথা বলে। উচ্চমাধ্যমিকের পর ও বোটানীতে অনার্স নিয়ে পড়াশুনা শুরু করে। গাছপালাই ওর জীবনে সব। 

             সোমা এখন কলেজের প্রফেসর। সবাই সোমা ম্যাম বলতে অজ্ঞান। একদিন কলেজে সাজো সাজো রব। ব্যাপারটা ওর ঠিক বোধগম্য হয় না। প্রিন্সিপালের ঘরে গিয়ে জানতে পারে আজ ওদের কলেজে নতুন একজন প্রফেসর আসছেন। বোটানীতে পি এইচ ডি করা। আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসের দিন উনি প্রথম কলেজে আসছেন তাই গাছ লাগিয়ে ওনাকে স্বাগতম জানানো হবে। অনেক চারাগাছ আনা হয়েছে। আর ওনার পছন্দের একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের চারা আনা হয়েছে যেটা সোমা আর নতুন স্যার দুজনে মিলে পুঁতবে। কারণ সোমার ও প্রিয় গাছ কৃষ্ণচূড়া। 

          সোমা রাজী হয় না। ওর জীবনে কৃষ্ণচূড়া গাছ একটাই। যেটা ও আর রজত রোপণ করেছিল। ও আর কারোর সাথেই এই কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগাতে পারবে না। অবশেষে প্রিন্সিপাল ম্যামের অনুরোধে ও রাজী হয়। ঠিক এগারোটার সময় কলেজে হৈ হৈ শুরু হয়ে যায়। নতুন স্যার এসেছে বলে। গেটের সামনে একটা বড় গাড়ি এসে দাঁড়ায়। সবাই এগিয়ে যায় ওনাকে অভ্যর্থনা জানাতে। সোমা ও যায় ওর সহকর্মীদের সাথে। হঠাৎ করে গাড়ি থেকে নেমে আসা নতুন স্যার কে দেখে ও চমকে ওঠে। নতুন স্যার আর কেউ ই নয় সোমার ছোট্ট বেলার বন্ধু রজত স্বয়ং। 

           রজত আগে থেকেই জানতো সোমা এই কলেজের প্রফেসর। তাই ও এই কলেজেই চাকরীর আবেদন করে। আর ওর হায়ার স্টাডি তে রেজাল্ট ভালো থাকায় ও চাকরী টা পেয়ে যায়। আর সোমা যাতে ওর দিকে মন দিতে নিজের পড়াশুনার ক্ষতি করে তাই রজত ওর সাথে এতবছর যোগাযোগ রাখেনি। কিন্তু ভালোবাসার উদাহরণ স্বরূপ কৃষ্ণচূড়া গাছ টা ওকে দিয়ে গেছিল।

       আজ আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে চেয়েছে রজত। তাই ওর নতুন কলেজে আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসের দিন কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগিয়েই দিনটা শুরু করতে চেয়েছিল। রজত সবার অলক্ষ্যে সোমার কাছে সাময়িক ক্ষমা চেয়ে নিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করার জন্য অনুরোধ করে।সবাই মিলে কলেজ প্রাঙ্গণে এসে গাছ লাগায়। সব শেষে রজত আর সোমা কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করে রবি ঠাকুরের একটি গান দিয়ে

    "মাটির বুকের মাঝে বন্দী যে জল মিলিয়ে থাকে। 

          মাটি পায় না, পায়না, মাটি পায়না তাকে"।

    সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের মাধ্যমেই আবার ওদের বন্ধুত্ব ফিরে আসে। আবার ওদের বন্ধুত্বের পথ চলা শুরু হয়।