23--12--2020
(11)----পর্ব লেখিকা ----শিপ্রা মুখার্জি। উপন্যাস----ডরোথী। ধারাবাহিক---
রংপুর থেকে যখন সুছন্দার বাবা পরিমল বাবু চাকরিতে অপশন নিয়ে এপারে চলে আসেন। তখন দাঙ্গার সময়। মাঝ রাতে পরিমল মুখোপাধ্যায়কে সাহায্য করেছিলেন একজন …
23--12--2020
(11)----পর্ব
লেখিকা ----শিপ্রা মুখার্জি।
উপন্যাস----ডরোথী।
ধারাবাহিক---
রংপুর থেকে যখন সুছন্দার বাবা পরিমল বাবু চাকরিতে অপশন নিয়ে এপারে চলে আসেন। তখন দাঙ্গার সময়। মাঝ রাতে পরিমল মুখোপাধ্যায়কে সাহায্য করেছিলেন একজন মুসলিম। বাবার কাছে ই শুনেছে সুছন্দা যে মুসলমান হয়ে ও ফজলুল চাচা আর আবদুল চাচার ভালোবাসার কথা। বামুনের ঘরে মুরগি ঢোকা বারণ। বাবার কাছে শুনে সুছন্দার একটা ধারণা হয়েছে। গ্রামের করিম চাচা,হারাণ জ্যাঠা সবাই ওদের ভালো বাসতেন । আবার অন্যায় করলে এই চাচাদের সমান অধিকার ছিল পরিমলদের শাসন করার। ওরা ও বড়োদের ভয় পেতো। আবার সম্মান ও করত।
সুছন্দার বাবার ছোট বেলা থেকেই নানা রকম যন্ত্রপাতির দিকে নজর ছিল। মনে নানা প্রশ্ন আসত আবার উত্তর ও পেয়ে যেতেন। ইচ্ছে ছিল একটা ডিপ্লোমা পাবার নিজের একটা মটোর রিপেয়ারিং গ্যারেজ খুলে ওয়র্কশপ করবেন ।
সূর্য নারায়ন মুখার্জির ছেলে কালিঝুলি মেখে কাজ করবে সেটা সূর্য নারায়ণ মুখার্জির পছন্দ নয় ।
কারণ তাঁর বড়ো বড়ো জজমানদের কাছে মাথা
হেঁট হয়ে যাবে। পরিমল বাবু, বাবা সূর্য নারায়ণের উপর একরকম রাগ করেই যোগ দিলেন 'রেল কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে ।
বাড়ি ছেড়ে এসে মন খারাপ লাগত। তখন তাঁর সঙ্গী ছিল বংশ দন্ড মানে বাঁশী। তিনি খুব ভালো বাঁশী বাজাতেন। ঐ বাঁশীই তাঁর মন ভালো করে দিত । রংপুরের পার্বতী পুরে পরিমলের কর্ম স্থল। ব্রিটিশ আমলের কেতাদুরস্ত সাহেবরা কিন্তু পরিমলের ওপরে অতি খুশি ছিলেন। বিশেষ করে ফার্গুসন, মরিসন,ডেভিড সাহেব মাঝে মাঝেই পরিমলকে দুদিনের ছুটি দিয়ে দিতেন । অবশ্য এই পুরস্কারটা তখনই পেতেন যখন অন্য উপরওয়ালা অফিসারেরা কোনো একটা মেসিন অকেজো বলে রিটার্ন করে দিতেন। তখনই যুবক পরিমলের ডাক পড়েছে ঐ মেসিন সাড়াবার জন্য। পরিমল অক্লান্ত পরিশ্রমে যতক্ষণ মেসিন চালু না হতো ছাড়ত না মেসিন টা। ব্রিটিশ সাহেবদের বড়ো অফিসারদের থেকে ও পরিমল এর উপরে গভীর আস্থা ছিল। পরিমলের মেসিন চালু করার চেষ্টার সময় দেখা যেত
একে একে সব সাহেবরা পরিমলের সাথে কাজ
করতে লেগে গেছেন। হঠাৎ ই মেসিনটা ধোঁয়া তুলে
চালু হবার শব্দে সবাই আনন্দে পরিমলের কর মর্দন
করতেন। তখনই পুরস্কার দেওয়া হতো দুদিনের ছুটি।
সাহেবরা বলতেন----গো ,এনজয় ।
অনেক বড় পুরস্কার মনে হতো পরিমলের কাছে ঐ কেতা-দুরস্ত সাহেবদের কর মর্দন। ওটাই কাজের স্বীকৃতি ।
আশ্চর্য হতো পরিমল একটা বিষয়ে বাবা যে কাজ
হীন বলে ভাবতেন সেই কাজে সাহেব রাও হাত
লাগিয়েছে।
ঐ দুদিনের ছুটি তে রংপুরের একটা জায়গায় চলে যেতেন। সঙ্গে যেত তাঁর বাঁশি। ঘাঘট নদীর তীরে ছিল একটা সুন্দর জায়গা। এটা নাকি কামরূপ রাজার প্রমোদের জায়গা । আরও সুন্দর একটা জায়গা ছিল। রংপুরের পায়রাবাঁধ নামে একটা পরগনা আছে । ওখানে রাজা ভগদত্তের কন্যার সম্পত্তি বলে কিংবদন্তি আছে। ইংরেজ আমলে রংপুর জেলা বহু অশান্তির কেন্দ্র ছিল।
পরিমলবাবু ,মানে সুছন্দার বাবা ও দেশের কথা
শুরু হলে থামতে চাইতেন না।
সুছন্দা মাঝখানে থামিয়ে দিত বাবাকে।
---------ওহো বাবা। ঐতিহাসিক তথ্য জানতে চাইনা। শুধু তোমার দেশের কথা জানতে চাইছি ।
সুছন্দার বাবা বললেন-------ইতিহাস জানতে
চাস না?তবে যা ভাগ। আর কিছু নেই ।
সুছন্দার মনে পড়ে যায় সেই রেলওয়ে ইনস্টিটিউট এর ফাংশনের কথা। মনিদির থেকে নাচ টা শিখেছিল সুছন্দা ।
রেলওয়ে ইনস্টিটিউট এ ফাংশন জাজ্ এসেছেন
অভয়পুর থেকে বিশেষ অতিথি হয়ে এক মহিলা জাজ্ ।এই নাচটা শিখিয়েছে মনিদি। কলকাতায়
থাকে মনি দি। এটা একটা বিশেষ ঢংয়ের নাচ।
ফাংশন শেষ হয়ে যাবার পর একজন এসে বললেন। ------তোমাকে ডাকছেন ।
-------কে ডাকছে?------
--আজকের বিশেষ অতিথি যিনি জাজ্ ।
তাঁরই সঙ্গে গেল সুছন্দা ।
সুন্দর এক মহিলা বসে আছেন। তাঁর পরনে সাদা আসাম সিল্কের সাদা শাড়ি। আভিজাত্যের ছোঁওয়া সারা শরীরে ।
সুছন্দা দাঁড়াতে তিনি প্রশ্ন করলেন-----কোথায় শিখেছ এই নাচ?খুব সুন্দর নেচেছো।
সেটা বঙ্গাইগাঁও রেলওয়ে ইনস্টিটিউট এর কথা ।
------চলবে----