Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

কর্পোরেট দুনিয়ায় একটু ঘুরে আসি...
#ইস্পাতনারীসুদীপ্তা চক্রবর্ত্তী।
কর্পোরেট দুনিয়ায় কাজ করতে হলে কি কি করতে হয়  নিশ্চয়ই জানা আছে আপনার? 
কি কি কাজ বলতে? আমার জন্য যে যে কাজ অ্যালটেড থাকবে সেগুলোই করব আমি। আর কলিগরা খুব প্রয়োজন পড়লে …

 


কর্পোরেট দুনিয়ায় একটু ঘুরে আসি...


#ইস্পাতনারী

সুদীপ্তা চক্রবর্ত্তী।


কর্পোরেট দুনিয়ায় কাজ করতে হলে কি কি করতে হয়  নিশ্চয়ই জানা আছে আপনার? 


কি কি কাজ বলতে? আমার জন্য যে যে কাজ অ্যালটেড থাকবে সেগুলোই করব আমি। আর কলিগরা খুব প্রয়োজন পড়লে যদি কিছু করে দিতে বলে সেটা তখন অবশ্যই করে দেব। বলে ওঠে বাসবদত্তা মিত্র।


আপনার বস যখন কিছু করতে বলবেন, আর সেটা যদি আপনার হিসেব অনুযায়ী অ্যালটেড কাজের মধ্যে না পড়ে তখন কি করবেন? বাই দ্য ওয়ে, প্রেসিডেন্টের পি এর কি কি কাজ অ্যালট করা আছে বলে আপনার মনে হয়?


দেখুন স্যার এটা আমার প্রথম ইন্টারভিউ, আমি হিউম্যান রিসোর্সে মাস্টার ডিগ্রি করেছি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি। আপনাকে আমার রিসিউমে টা তো দেখালাম স্যার, মৃদুস্বরে বলে বাসবদত্তা।


কাজটা আপনি করবেন না আপনার ডিগ্রি করবে? দেখুন ছ'মাস আপনার ট্রেনিং পিরিয়ড। এর মধ্যে আপনার নিজের উপস্থিত বুদ্ধি আর পারিপাশ্বির্কতা থেকে বুঝে নিতে হবে আপনার অ্যালটেড কাজগুলো। এই ছ'মাসে যদি আপনি হায়ার অথরিটি কে স্যাটিসফাই করতে পারেন তবেই আপনি পার্মানেন্ট পে রোল স্টাফ হবেন। কাজেই বুঝতে পারছেন এই ছ'টা মাসের ওপর আপনার ভবিষ্যত নির্ভর করছে! যাক ইন্টারভিউ শেষ, এখন আপনি আসুন! কাগজপত্র গোছাতে গোছাতেই বাসবদত্তা দেখে ভদ্রলোক পা দিয়ে বেলটা বাজালেন, আর সঙ্গে সঙ্গেই একটি ক্লাস ফোর্থ স্টাফ মেয়ে অনুমতি নিয়ে ঘরে ঢোকে। আমার লাঞ্চটা দিয়ে যাও, আর মিসেস পাকড়াশী কে বলে দাও উনি যেন বাকি ইন্টারভিউয়ার দের আগামিকাল আসতে বলে দেন।


প্রায় প্রৌঢ়ত্বের সীমায় দাঁড়িয়ে বাসবদত্তা মিত্র বোসের মাঝে মাঝেই ঝলক দিয়ে যায় চাকরী জীবনের শুরুর দিনটা। ইনফ্রাস্ট্রাকচার জগতের ইস্পাতনারী আজ ডাউন মেমোরি লেন বেয়ে হাঁটতে শুরু করেছেন। এমন নয় যে তার হাতে অঢেল সময়, কারণ যৌবন বিদায় নিলেও কর্মজীবনে এতটুকু শিথিলতা আসতে দেন নি তিনি। আসলে আজ তার ছেলে.....


নিয়মিত যোগব্যায়াম আর পরিমিত আহারে এই সত্তরেও তিনি এক টগবগে তরুণী। কোম্পানির অর্ধেক মালিক এবং এম ডি হওয়া সত্বেও আজও ছোট বড়ো যে কোন টেন্ডার পাঠানোর আগে একবার চোখ বুলিয়ে নেন। কথাও বলে নেন অপর প্রান্তের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। আসলে লিয়াঁজ মেইনটেন করাটা তার এক বিশেষ স্কিল। তেমনি কাজের কোয়ালিটির সঙ্গেও কোন আপোস করেন না। আসলে সেটা তাকে করতে হয় না, কারন যে কটা সাইটে তার কাজ চলে তিনি আগাম জানান না দিয়েই হাজির হয়ে যান যে কোন জায়গায় যে কোন সময়। তিনি জানেন সাইটে সাধারণত ওয়ার্কাররা কাজে ফাঁকি দেয়, সাইট ইনচার্জ খারাপ মেটেরিয়াল দিয়ে একটা লাভ রাখার চেষ্টা করে, জে সি বি জাতীয় মেশিনগুলো একটু খারাপ হলেই কাজ থামিয়ে দেয়, ফলে এক দীর্ঘসূত্রতা গ্রাস করে ফেলে কাজকে। বেশিরভাগ কোম্পানির লোকরা জানে দেখাশোনা করা, আর টাকা দেওয়ার লোক সাধারণত একসঙ্গে সাইটে আসবে না। বামুন যখন ঘরেই বসে থাকবে, তখন আর লাঙল নামানোর দরকার নেই। তারপর শেষ মুহূর্তে জোড়াতালি দিয়ে কাজ শেষ করে নেবে, কে আর খোঁজ রাখছে! ফলস্বরূপ কাজটা 'আপ টু দ্য মার্ক' হয় না। তবে অনেকদিন আগে থেকেই এটা প্রচলিত প্রবাদ হয়ে গেছে যে বাসবদত্তা মিত্র বোস যে কাজ করবে সেই কাজের মান প্রশ্নাতীত এবং সেটা নিদ্দির্ষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ হবে। সেইজন্য কাজের পরিধিও বেড়েই চলেছে দিন দিন। বাসবদত্তা যে সব টেন্ডার পান, সে ওভারব্রীজ হোক বা বড়ো হোটেল, মালটিস্টোরিড, এমনকি পাহাড়ী অঞ্চলে পাহাড় কেটে দীর্ঘ পথ তৈরী সব ক্ষেত্রেই তার স্কিলের পরিচয় রাখেন। স্টাফদের ঠিকমতো স্যালারী যেমন দেন, তেমনি কাজটাও আদায় করে নেন। স্টাফরা ফাঁকি মারতে ভয় পায় এই বুঝি ম্যাডাম চলে এলেন! এভাবেই তিলে তিলে এই বিরাট সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন, ইস্পাতনারী হিসেবে পরিচিত হয়েছেন কর্পোরেট জগতে! কারণ অন্যের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীলতা তিনি একেবারেই পছন্দ করেন না।


ছেলের সঙ্গে মায়ের প্রথম দেখা বড়ো অদ্ভুতভাবে- শিকার আর শিকারী হিসেবে। ইন্টারভিউ দিয়ে কাজে জয়েন করে প্রথম মাসের মাইনেটা পাওয়ার পরদিন! বস সদ্য ফিরেছেন ফরেন থেকে, ফিরেই ডেলিগেটসদের সঙ্গে মিটিং আছে একটা নামী হোটেলে। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা করতে যেতে হবে তার সদ্যনিযুক্ত পি এ বাসবদত্তা মিত্র কে। সদ্য চাকরি পাওয়া বাচ্চা মেয়েটাকে বশ করতে যে এত সমস্যায় পড়তে হবে সেটা স্বপ্নেও ভাবেননি বস! প্রচুর ধস্তাধস্তির পর জামাটা ছিঁড়ে দিলেও, সেই ছেঁড়া জামা পরা অবস্থাতেই কোনওমতে দরজা খুলে বেরিয়ে, হোটেলের লবি ধরে ছুটতে শুরু করেছিলেন বাসবদত্তা, এবং ধাক্কা খেয়ে পড়েছিলেন যার গায়ে, তিনি আর কেউ না, "বোস'স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড" কোম্পানির একচ্ছত্র মালিক, জে সি বোস! ছেলেকে বাবা ভালোই চিনতেন, কি হয়েছে মেয়েটার সঙ্গে বুঝতে সময় লাগেনি! কারণ এর আগেও এরকম ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে! ছেলেকে শোধরানোর সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে তার। মায়ের কুশিক্ষা তো ছিলই, মা মারা যেতে ছেলে আরও বেপরোয়া হয়ে গেছে! সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে নিজের বাড়িতে যান জে সি বোস। বুঝিয়ে সুঝিয়ে পুলিশের কাছে যেতে বারণ করেন, কারণ তাতে মেয়েটার অনেক ক্ষতি হবে, কোম্পানির সুনাম নষ্ট হবে! ওপেন অফার দিয়েছিলেন, যে কোন মূল্যে তিনি কোম্পানির সুনাম কিনতে রাজী! জানতে চেয়েছিলেন কত টাকা চায় মেয়েটি! চিবিয়ে চিবিয়ে বাসবদত্তা মিত্র জিগেস করেছিলেন,


যদি টাকা ছাড়া অন্য কিছু চাই, দেবেন?


কোম্পানির সম্মানের জন্য আমি সব কিছু করতে রাজী আছি, চাইলে আমার ছেলের সঙ্গে বিয়েও দিতে পারি, কিন্তু তুমি কি সেটা চাও? যা মনে হয় নির্দ্বিধায় বলো, আর তুমি এটাও জেনে রাখ আমার কথার কোন নড়চড় হয় না।


না, একটা লম্পটকে বিয়ে করার প্রবৃত্তি আমার হয়নি আর কোনদিন হবেও না। যদি আপনি যদি কথা দেন আমি যা চাই তাই দেবেন তবেই বলব, আগুনঝরা চোখে জে সি বোসের দিকে তাকিয়ে থাকে বাসবদত্তা!


এইটুকু মেয়ে কি এমন চাইতে পারে ভেবে রাজী হয়ে যান জে সি বোস।


আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই, এবং সেটা আজই! আপনি কথা দিয়েছিলেন আমি যা চাইব তাই দেবেন, তাই বললাম, এবার বাকিটা আপনার হাতে! ঠান্ডা গলায় বলে ওঠে বাসবদত্তা।


স্বয়ং নারায়ণ যদি তার সামনে নেমে আসতেন তাহলেও বোধহয় এতটা অবাক হতেন না জে সি বোস। এতটুকু একটা মেয়ে, নিজের থেকেও অনেক বড়ো একটা ছেলের বাবাকে শুধুমাত্র প্রতিশোধ নিতে একদম বিয়ে করে নিতে চাইবে এটা যেন শুনেও বিশ্বাস হয় না তার। কয়েক মুহূর্ত চুপ করে যান, ঘরে পিন পতনের নীরবতা! তারপর বলেন,


কথা যখন দিয়েছি, রাখতে আমাকে হবেই, কিন্তু তুমি সব কিছু ভেবে বলছ তো? প্রতিশোধ নিতে গিয়ে একটা বিপত্নীক বুড়োকে বিয়ে করলে টাকা ছাড়া আর কিছুই তুমি পারে না। আর টাকা কিন্তু সব কিছু দিতে পারে না। আমি আমার স্ত্রীর কোনোরকম উশৃঙ্খলতা কিন্তু সহ্য করব না। বিয়েটা যেমন আমি একদিনে করতে পারি, ডিভোর্সও কিন্তু আমি এক দিনেই করতে পারব। আমাকে না চিনলেও আশা করি আমার ক্ষমতা সম্বন্ধে তোমার একটা ধারণা তৈরি হয়েছে এ'কদিনে।


জে সি বোস মৃত্যুকালে বলে গেছিলেন বড়ো শান্তিতে কাটালাম জীবনের শেষ কটা বছর। ভগবান যে আমার জন্য এত সুখ লিখেছিলেন আমার জানা ছিল না। নতুন করে মানুষ চিনলাম, দেখলাম ভালোবাসার এক স্নিগ্ধ রূপ। তবে আমার ছেলেকে তুমি নিজের ছেলে ভাবলেও সে তোমাকে কোনদিন মায়ের মর্যাদা দেবে না, সেকথা আমি জানি। আমি চলে গেলে সে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে নানাভাবে। আসলে ওর মা তো ভাল ছিল না তাই তার ছেলে ভালো হবে এটা কিকরে হয়? মায়ের থেকেই তো ছেলের প্রাথমিক সুশিক্ষা, মেরুদণ্ড গঠন হয়। মা তো জন্ম থেকেই ছেলেকে বুঝিয়েছে সব টাকা তার, তাই সে যা খুশী থাই করতে পারে। ওর মাও টাকা ছাড়া কিছু চিনত না, ছেলেও তাই। 


শোনো, ব্যবসা আমি দুভাগে ভাগ করেই রেখেছি, আইনগত কোনো অসুবিধা তোমার হবে না। ইচ্ছে হলে চালাবে না হলে বিক্রি করে দেবে। আর আমার ছেলে তোমার কোন ক্ষতি করতে সাহস পাবে না, কারণ তোমার কোন দুর্ঘটনা ঘটলে আমার তাকে দেওয়া সম্পত্তি ভারত সেবাশ্রম সংঘে চলে যাবে। তোমার ভালমন্দ কিছু হলে তোমাকে দেওয়া সম্পত্তির মালিক হবে তোমার পিত্রালয়ের কোন একজন, কারণ ভারতীয় আইন সে কথাই বলে। আর আমি বলেই গেলাম যে আমার মৃত্যুর পর তুমি তোমার ইচ্ছানুযায়ী জীবন কাটাতে পার!


কত বছর অপেক্ষার পর আজ সেই ছেলে এসেছিল, অনেক ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে সে এতবছরে, কিন্তু পারেনি। বাসবদত্তা তো কারো কোন ক্ষতি চাননি শুধু সেই সময়কার বসের লালসা থেকে বাঁচতে চেয়েছিলেন, আর বুঝেছিলেন একমাত্র মায়ের স্থান ছাড়া সেটা সম্ভব ছিল না। কারণ মামার কাছে মানুষ বাসবদত্তা কোথাও আশ্রয় পেতেন না! তাই ওই প্রৌঢ় মানুষটিকেই আশ্রয় করতে চেয়েছিলেন সেদিন। যদিও পরে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলেন মানুষটাকে। ভালোবাসার কাঙাল ছিল অতো বড়ো মাপের মানুষটা! আজ সেই ছেলে প্রথম মা বলে ডাকল বাসবদত্তা কে। ইস্পাতনারীর চোখে তাই আজ জল, মানস অতীত ভ্রমণ! এখনও বাসবদত্তা মিত্র বোস জানেন না ছেলে কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে তার কাছে এসেছিল, তবে জেনে যাবেন ঠিকই। কিন্তু যতক্ষণ না জানেন সেই সময়টুকুর জন্য মাতৃত্বের অনুভূতি নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলেনই না হয়, আর কিছু ক্ষতি বোধহয় হওয়ার নেই তার!