Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপনগরিমা মৃন্ময় সমাদ্দারতারিখ ২০/১২/২০২০
রাজ অগাধ সম্পত্তির মালিক। ওর বাবা কলকাতার বিখ্যাত শিল্পপতি। রাজ কলকাতাতেই মানুষ। ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনায় খুব একটা ভালো না হলেও বাবার অর্থের জোরে রেজাল্টটা মোটামুটি করে উত্…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন

গরিমা 

মৃন্ময় সমাদ্দার

তারিখ ২০/১২/২০২০


রাজ অগাধ সম্পত্তির মালিক। ওর বাবা কলকাতার বিখ্যাত শিল্পপতি। রাজ কলকাতাতেই মানুষ। ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনায় খুব একটা ভালো না হলেও বাবার অর্থের জোরে রেজাল্টটা মোটামুটি করে উত্তীর্ণ হয়ে যেত। এবং প্রতি ক্লাসেই ওর বাবা এককাড়ি টাকা ডোনেশন দিয়ে ভর্তি করা তো। সেই কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষও রাজকে ঘাটাতো না। মানে ও কোন রকম অন্যায় করলেও মাস্টারমশাইরা ক্ষমাই করে দিতেন। এরকম ভাবেই চলছিল রাজের জীবন। মাস্টারমশাইদের আশকারা পেয়ে রাজ স্কুলে নিত্য নতুন অন্যায় করে বেড়াতো আর ওনারা সেইসব অন্যায় কে প্রশ্রয় দিতো । রাজ অষ্টম শ্রেণীতে এবার উঠলো। আর জয়শ্রী বলে একজন ম্যাডাম এলেন নতুন। উনি রাজের ব্যাপারে সেরকম কিছুই শোনেননি নতুন বলে। প্রথম দিন অংক ক্লাস করাতে এলেন। রাজ তখন ম্যাডামের সাথে দুষ্টুমি করতে শুরু করলো। একটা গার্ডার আঙ্গুলের মধ্যে পেচিয়ে খাতা থেকে কাগজ ছিড়ে ম্যাডামকে লক্ষ করে ছুড়ল। ম্যাডামের কপালে গিয়ে লাগলো কাগজটা। এর আগে রাজ কাউকে শারীরিক ভাবে আঘাত করেনি কিন্তু এবার করল। তৎক্ষণাৎ ম্যাডাম ওকে হাতেনাতে ধরে বেঞ্চের ওপর কান ধরে দাঁড় করিয়ে দিল। এতে রাজ মনোক্ষুন্ন হলো। ক্লাসের সবার সামনে বেঞ্চের উপর দাঁড়াতে ওর সম্মানে বাধছিল। কিন্তু ম্যাডামের নির্দেশ অমান্য করতে পারছিল না। ক্লাসের সবাই অবশ্য এতে খুসিই হলো। কারণ এর আগে রাজের সম্পর্কে বলে বলেও কিছু হয়নি। রাজ প্রতিদিনই দুর্বিনীত হয়ে উঠছিল। ওর বাবার অর্থের কাছে সবাই নতজানু হয়ে থাকতো। ক্লাস শেষ হতেই রাজ প্রিন্সিপালের কাছে গেল এবং ম্যাডামের নামে বলে এল। প্রিন্সিপাল ম্যাডামকে ডাকলেন এবং সাবধান করে দিলেন। কিন্তু জয়শ্রী ম্যাডাম বললেন যে উনি রাজের এইরকম ব্যবহারে অসন্তুষ্ট এবং বিরক্ত। উনি কোনরকম ক্ষমা চাইবেন না। প্রিন্সিপাল বললেন যে ওর বাবা বিরাট অংকের ডোনেশন দেয় এবং ওই টাকাতেই স্কুলের এই চাকচিক্য। তখন জয়শ্রী ম্যাডাম বললেন আপনি কমিটির সভা ডাকুন ওখানেই আমি সব কথা বলব। যথারীতি প্রিন্সিপাল সভা ডাকলেন এবং রাজের বাবাকেও আসতে অনুরোধ করলেন। নির্দিষ্ট দিনে কমিটির সভার হাজির হবার আগেই রাজের বাবা উপস্থিত হয়ে গেলেন। একে একে কমিটির সবাই হাজির হলেন। প্রিন্সিপাল সবাইকে সভার কারণ ব্যাখ্যা করলেন। জয়শ্রী ম্যাডাম উপস্থিত ছিলেন সভায়। প্রিন্সিপাল ব্যক্তিগতভাবে জয়শ্রী ম্যাডামের এই আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলেন। প্রিন্সিপালকে তো করতেই হতো কারণ ওনার পয়সাতেই তো মোটামুটি স্কুল চলে। যাইহোক রাজের বাবা জয়শ্রী ম্যাডামের মুখ থেকে শুনতে চাইলেন পুরো ব্যাপারটা। তখন জয়শ্রী ম্যাডাম বললেন আমি খুব গরীব ঘরের মেয়ে, নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা করেছি। টিউশন করে টাকা দিয়ে সংসার চালিয়েছি এবং নিজের পড়ার খরচ চালিয়েছি। আমি কোনদিনই কোন অন্যায়ের সাথে আপোষ করিনি এবং আজ যে ঘটনার জন্য সভা ডাকা হয়েছে সেখানেও আপস করব না। আপনারা আমাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দিলেও নয়। অন্যায়ের কাছে আমি মাথা নোওয়াবোনা। কমিটির লোকজন জয়শ্রী ম্যাডামের বিরুদ্ধেই কথা বলতে শুরু করল। কিন্তু রাজের বাবা হঠাৎ বলে উঠলেন আমি ম্যাডামের এই ব্যবহারে অত্যন্ত আনন্দ পেয়েছি। তখন উনি বলতে লাগলেন আসলে রাজ খুব কম বয়সেই ওর মাকে হারিয়েছে এবং উনিও ব্যক্তিগতভাবে রাজকে খুব একটা সময় দিতে পারেন না। যদিও রাজকে দেখাশুনা করার জন্য অনেক লোকজন রয়েছে কিন্তু মায়ের মমতা থেকে বঞ্চিত হবার ফলে রাজ একগুঁয়ে ও দুষ্টু হয়ে গেছে। স্কুলের কেউ ওনাকে এতদিন কোনো কথা জানান নি । যার ফলে উনি এতদিন অন্ধকারেই ছিলেন। কিন্তু উনি চেয়েছিলেন রাজ মানুষের মত মানুষ হোক। সেই পথটা দেখাবার মতো উনি কাউকেই পাননি। কমিটির সবাইকে উনি ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করলেন যেন ম্যাডামকে চাকরি থেকে বরখাস্ত না করা হয়।ব্যক্তিগতভাবে উনি ম্যাডামকে অনুরোধ করলেন যে রাজের অভিভাবক হিসেবে রাজকে গ্রহণ করতে এবং মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। আর স্কুলের উন্নয়নের জন্য উনি যা করতেন তার চেয়েও আরো বেশি করবেন কিন্তু তার ছেলেকে মানুষের মত মানুষ তৈরি করে দিতে হবে। এই কথা বলে সবার কাছে অনুমতি নিয়ে উনি সভা থেকে বেরিয়ে গেলেন।