Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
মুক্তিযুদ্ধে ভারতকলমে- ডোনা সরকার সমাদ্দার
১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়। একখন্ড ভারত ও অপর খন্ড পাকিস্তান নামে আত্মপ্রকাশ করে। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে শুরু থেকেই একটা চাপান উতোর ছ…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন


মুক্তিযুদ্ধে ভারত

কলমে- ডোনা সরকার সমাদ্দার


১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়। একখন্ড ভারত ও অপর খন্ড পাকিস্তান নামে আত্মপ্রকাশ করে। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে শুরু থেকেই একটা চাপান উতোর ছিল। মূল কারণ ভাষা। এছাড়া সমাজ সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ভৌগলিক অবস্থানের যথেষ্ট পার্থক্য ছিল। ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দুটো জাতি নিয়ে কখনোই একটা রাষ্ট্র গঠন হতে পারে না,তা পরবর্তী সময়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।

মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাভাষীদের অস্তিত্বের লড়াই। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ। শেষ হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে ১৬৯ টি আসনের ১৬৭ টি আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেন। নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের একক প্রতিনিধি। পাকিস্তানীরা মুজিবরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।৭ই মার্চ মুজিবর তাঁর বক্তব্যে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেন।এরপর তিনি অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন।সমস্যা সমাধানের জন্য শেখ মুজিবুর ও ইয়াইয়া খানের মধ্যে আলোচনা হয় এবং তা সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হয়।ঐ বছর ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাদের দক্ষযজ্ঞ শুরু হয়। শুরু হল বাঙলা ভাষীদের উপর নির্মম অত্যাচার। নাম দেওয়া হল " অপারেশন সার্চলাইট"।এর দুটি সদরদপ্তর খোলা হল। একটা দপ্তরের দায়িত্ব পড়ল ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার,অপর দপ্তরের দায়িত্ব অবশিষ্টাংশের। অপারেশনের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন টিক্কা খান।

ছাত্ররা এবং জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক কর্মীরা ক্যান্টনমেন্ট অঞ্চলের বাইরে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।ঐ রাতে পাকিস্তানি সেনারা ওয়ালেস বসানো জিপ ও ট্রাকে করে ঢাকার রাস্তায় নেমে পড়েন। রাস্তার দুধারে বিশালাকৃতির গাছের গুঁড়ি, অকেজো পুরোনো গাড়ি,অচল স্টিম রোলার ব্যারিকেডের কাজ করে। কয়েকশো মানুষ প্রায় ১৫ মিনিট ধরে শ্লোগান দেন, যদিও সৈন্য বাহিনীর গুলি তাঁদের স্তব্ধ করে দেয়।

পাকিস্তানি সেনারা রাস্তায় যাকে পারে হত্যা করে, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক,চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিক, বিজ্ঞানী, শিল্পী, সংস্কৃতিমনা কেউই বাদ যান নি। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়, মহিলাদের গনধর্ষন করে।

সারাবিশ্বের সংবাদমাধ্যম প্রতিবাদে গর্জে ওঠে। ঐদিন রাতে মুজিবুর রহমান কে বন্দী করা হয়।

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ২৭ শে মার্চ বাঙালি মুক্তিসংগ্রামের প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বি এস এফ)অত্যাচারিত ও ভীতসন্ত্রস্ত বাঙালি জাতির নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেন। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার,আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যে শরণার্থী শিবির স্হাপন করা হয়।

নাগাল্যান্ডের দিমাপুরে ২৮ শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠিত হয়।সংগঠক ছিলেন এ কে খন্দকার।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এটা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে পাকিস্তান কে সমর্থন করে। পক্ষান্তরে ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, জাপান ও পশ্চিমের দেশগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থন করেন।৯ই আগষ্ট একদিকে ভারত-সোভিয়েত অপরদিকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান একটা চুক্তি স্বাক্ষর করে।এই চুক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে এক নতুন পালক যুক্ত করে।

১৯৭১ সালে নভেম্বর মাসে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ড গঠিত হয়।৩রা ডিসেম্বর সন্ধ্যায় অমৃতসর, শ্রীনগর ও কাশ্মীর উপত্যকায় পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর বোমাবর্ষণের পর ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপর প্রত্যাঘাত করে।এরপরই পাকিস্তানি সেনাদের পরাজয় ও আত্মসমর্পণ নিশ্চিত হয়ে পড়ে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরোধী প্রস্তাব উত্থাপন করে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দেয়।

১৪ই ডিসেম্বর ভারতীয় সৈন্য ও এগারো নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার টঙ্গীর কাছে পৌঁছায়।১৬ই ডিসেম্বর সাভারে আসেন। এখানে পাকিস্তানি মেজর জেনারেল জামশেদ ঢাকার কাছে ভারতীয় অধিনায়ক নগরাকে অভ্যর্থনা জানান। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বস্হলী কমান্ডের চিফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল জ্যাকব পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের খসড়া দলিল নিয়ে দুপুরে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেন ক্যাপ্টেন খন্দকার। পরাজিত পাকিস্তানি অধিনায়ক এ এ কে নিয়াজী লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরাকে আত্মসমর্পণ সূচক অভ্যর্থনা জানান।১৬ ই ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটা এক মিনিটে রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহাবওয়ার্দি উদ্যান) যৌথবাহিনীর পক্ষে অরোরা ও পাকিস্তানি কমান্ডার নিয়াজী পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন।

শেখ মুজিবুর রহমান হলেন বাংলাদেশের স্হপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি।

২০১৭ সালে ২৫ শে মার্চ কে " জাতীয় গণহত্যা দিবস" হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।