Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপনলক্ষ্যভেদডোনা সরকার সমাদ্দার২২/১২/২০২০
হরিশচন্দ্রপুরে চার মাথার মোড়ে একটা বাগান বাড়ি আছে। বহুকাল পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। ভেতরে জঙ্গলে ভর্তি। বাড়ির মালিকের ছেলে মেয়েরা কেউ বিদেশ,কেউ ভিনরাজ্যেও একজন কলকাতায় থ…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন

লক্ষ্যভেদ

ডোনা সরকার সমাদ্দার

২২/১২/২০২০


হরিশচন্দ্রপুরে চার মাথার মোড়ে একটা বাগান বাড়ি আছে। বহুকাল পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। ভেতরে জঙ্গলে ভর্তি। বাড়ির মালিকের ছেলে মেয়েরা কেউ বিদেশ,কেউ ভিনরাজ্যেও একজন কলকাতায় থাকেন।মালিক ভবেশ রায়চৌধুরী যতদিন বেঁচে ছিলেন বছরে এক আধবার সবাই আসত। বর্তমানে প্রায় ৩০ বছর আর কেউ আসে না। উত্তরসূরীরা বেচার অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু "ভুতুড়ে বাড়ি" বলে সবাই পিছিয়ে যায়।


সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল।এক যুবক ও এক যুবতী গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল। বাড়িটার কাছে এসে গাড়ি বিগড়ালো। আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানলো ধারেকাছে কোনো গাড়ি সারাবার দোকান নেই।বড় বিপদে পড়ল। অগত্যা ওদের ঐ বাড়িতেই আশ্রয় নিতে হলো। রাতের খাবার পাড়ার একটা দোকান থেকে কিনতে গেল। নতুন লোক দেখে দোকানদার কোন বাড়ির জিজ্ঞাসা করল।যুবক বলল যে পরিত্যক্ত বাড়িতে ওরা আশ্রয় নিয়েছে। দোকানদার বলল বাড়িটা ভুতুড়ে।যুবক হেসে উড়িয়ে দিল।পরিত্যক্ত বাড়িতে ফিরে রাতের খাবার খেয়ে একটা খাট পরিস্কার করে শুয়ে পড়ল। ইলেকট্রিসিটি কানেকশন বিচ্ছিন্ন। মোমবাতি ভরসা।টর্চ আছে। একটা ছোট লাঠিও রাখলো হাতের কাছে।

 

রাত গভীর হলো। ছেলেটির চোখে ঘুম নেই।সঙ্গিনী ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ বেশ কয়েকজনের পায়ের শব্দ যুবকের কানে এলো। ছাদে দৌড়াদৌড়ির শব্দ।ও কিন্তু ঘুমানোর ভান করে শুয়ে রইলো।খানিক পরে একটা মেয়ের গোঙানির শব্দ। তারপর চিৎকার। সঙ্গিনীর ঘুম ভেঙেছে। এরপর কোলাহলের শব্দ। যুবকটি উঠতে যাবে, সঙ্গিনী বাধা দিল।তারপর আবার সব চুপ। ওরা প্রহর গুনছে। আবার বুকফাটা চিৎকারে বাড়িটা কেঁপে উঠলো।কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা।অনেকেমিলে কাউকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।আর সে বাঁচার জন্য চিৎকার করছে। তারপর আবার শ্মশানের নিস্তব্ধতা।


ইতিমধ্যে পূব আকাশে রাঙা আলো দেখা দিচ্ছে। পাখিরা কলতানে সবাইকে জানাচ্ছে রাত শেষ।ওরাও আশ্বস্ত হল।যুবক ফ্রেশ হয়ে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখলো। যুবতী ফ্রেশ হলে ওরা গাড়ির মেকানিকের খোঁজে বেরোলো। দুপুরে খেয়ে ওরা ঐ বাড়িতে ফিরলো।আজও কোনো মেকানিক পাওয়া যায় নি।আজ রাতেও মনে হয় ঐ বাড়িতে থাকতে হবে।যুবক সন্ধ্যার আগে রাতের খাবার কিনতে গেল।দোকানী অবাক।দোকানে যারা ছিল যুবককে ফিরে যেতে বলল।দোকানী ওর বাড়ীতে থাকার অফার করল। একদিন প্রানে বেঁচেছে বলে রোজ এমন নাও হতে পারে। যুবকটি চায়না কাউকে বিরক্ত করতে। তাতে ওর যা হবার হবে।দোকানে উপস্থিত সকলে যুবকের  দীর্ঘায়ু কামনা করলো।যুবক জানালো ওর গাড়ি ঠিক হলেই ও চলে যাবে।


যথারীতি রাতের খাবার খেয়ে ওরা শুয়ে পড়ল।রাত গভীর হল।আজ যুবক একটু চিন্তিত। বিচ্ছিন্ন শব্দ হলো কিছুক্ষন। তারপর চিৎকার।আজ সঙ্গিনীর চোখে ঘুম নেই। কিছুক্ষণ পরে ওদের ঘরে বেশ কয়েকটি অশরীরী আত্মা ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। কোনো জীবন্ত মানুষ এই ঘরে থাকতে পারে না বলছে। তাই আজ ওরা এসেছে ওদের নিয়ে যেতে।যুবক কিছু ভাবতে পারছেনা কি করা উচিৎ।ও পকেট থেকে একটা বাঁশী নিয়ে পিপ পিপ করে উঠলো।অশরীরীরা একসাথে হেসে উঠলো।সারা বাড়ি কেঁপে উঠলো। অশরীরী ও ওদের মধ্যে যখন দূরত্ব মাত্র একহাত, হঠাৎ ঘরে আলোয় ভরে উঠলো।টর্চের আলো।প্রায় ৫০ টা টর্চ একসাথে জ্বলে উঠলো। পুলিশ।অশীরীরা এবার ভয় পেল। পুলিশ অফিসার বলছেন,"কেউ পালাবার চেষ্টা করবেন না। পুরো বাড়িটা পুলিশের হেফাজতে"। পুলিশ অশরীরীদের দিকে পিস্তল তাক করে আছে। সামনে যুবক ও যুবতীর হাতেও পিস্তল।অশরীরী দের মানুষ রূপে ফেরানো হলো। ওদের মধ্যে সেই দোকানদার ও আছে।যার দোকান থেকে ওরা রাতের খাবার কিনতো।মোট ১৭ জন অশরীরী ধরা পড়লো।


তারপরেও দু তিন ভ্যান পুলিশ এল।জানা গেল লোকাল এক ক্ষমতাশালী প্রোমোটারের চক্রান্তে এই ঘটনা ঘটতো। ভুতুড়ে বাড়ি বলে চালিয়ে দিলে রায়চৌধুরী দের থেকে অল্প দামে বা বিনামূল্যে বাড়িটা হাতিয়ে নেওয়া যাবে।এতে স্হানীয় কিছু মানুষকে লাগানো হয়েছিল,যারা ভুতুড়ে বলে একটা ভয়ের বাতাবরন বজায় রাখবে।এতে তারা মাসোহারা ও পেত।সবাই এখন শ্রীঘরে।


যুবকটি হল ভবেশ রায়চৌধুরীর একমাত্র নাতি।সে একজন সিবিআই অফিসার। দাদুর বাড়ি উদ্ধারে সে ব্রতী ছিল।।