Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য ‌যাপন
আত্মজা                    ছোট গল্প                    সুতপা ঘোষ রায়। আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মৃদুলা নিজেকে বড়ই অপরাধী মনে করছে। অথচ এই অপরাধ বোধ টুকু যদি আরও আগে ওর হতো তাহলে মামনের জীবন টা এমন থমকে   যেত…

 


সৃষ্টি সাহিত্য ‌যাপন


আত্মজা

                    ছোট গল্প 

                   সুতপা ঘোষ রায়। 

আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মৃদুলা নিজেকে বড়ই অপরাধী মনে করছে। অথচ এই অপরাধ বোধ টুকু যদি আরও আগে ওর হতো তাহলে মামনের জীবন টা এমন থমকে   যেত না। অথচ এই মামন কে কত কষ্ট করে মানুষ করেছে মৃদুলা। জন্মের পর থেকে আগলে রেখেছে ,কোনো আঁচ লাগতে দেয় নি ওর গায়ে।সারাক্ষণ চোখে হারাত। ওকে সবার সেরা  করে তোলার জন্য কি না করেছে,নাচ গান আঁকা লেখাপড়া সব একসঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে। মামন ও মায়ের আদেশ লক্ষ্মী মেয়ের মত শিরোধার্য করে একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি পেরিয়ে জীবনের প্রতি টি ক্ষেত্র কৃতকার্য হয়েছে। অহঙ্কারে মৃদুলা নিজেকে কতই না সার্থক মা বলে মাথা উচুঁ করে আজ ।বলে ,মামন কে আমি আমার মনের মত করে গড়ে তুলেছি। মা আর মেয়ের যেনো আলাদা এক জগৎ।সেখানে কেউ ঢুকতে পারতো না। মামনের চার পাশে এক অদ্ভুত স্নেহ আর শাসনের আবর্ত সৃষ্টি হয়েছিল। এমন কি মামনের বাবাও অনেক টা দূরে সরে গিয়েছিল। তেমন কোনো বন্ধু বান্ধব  ও হয় নি ওর । মায়ের স্নেহডোরে সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে যেতে আস্তে আস্তে ও যে  অসামাজিক হয়ে যাচ্ছিল দিনে দিনে তা  উপলব্ধি করতে পারে নি। মৃদুলার স্বামীর মৃত্যুর পর আরও বেশি যেনো আঁকড়ে ধরলো মামনকে ।এই আঁকড়ে ধরা আর মেয়ে কে চোখে হারানো কি ওর ভালোবাসা ?

আজ মৃদুলা ভাবে । হয় তো একদিন মেয়ের ওপর যে ভালোবাসা ছিল আজ সেটা নির্ভরতা । আজ  মনে হয় মামন কে যত না ভালোবাসতো তার থেকে বেশি অধিকার বোধ কাজ করতো । তাই তো নানা অছিলায় একটার পর একটা বিয়ের সম্বন্ধ নাকচ করেছে মৃদুলা।মামন ও কথা শুনেছে ।

আজকাল মামন  কে কেমন যেন বিষণ্ণ লাগে মৃদুলার ।মাঝে মাঝে রুক্ষ স্বরে জবাব দেয়। প্রথম প্রথম মৃদুলা ভেবেছে সারাদিন কলেজ  করে বোধ হয় পরিশ্রমে ক্লান্ত তাই এমন ভাব।কিন্তু আজ মৃদুলার বড় দেরি করে উপলব্ধি হয়েছে  যে মামন  কে ওর এই আঁকড়ে ধরা শুধু ভালোবাসা নয় , ওর নিরাপত্তাহীনতা।

একসময় যাকে  বুক দিয়ে আগলে রেখেছে আজ তাকে  আস্টেপৃস্টে বেঁধে রাখতে চেয়েছে  নিজের  স্বার্থে ।নিজের   প্রয়োজনে । 

এইসব ভাবতে ভাবতে কেমন যেন দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে মৃদুলার  । জানালা দিয়ে খোলা আকাশ দেখতে ইচ্ছা করছে। হাতের কাছে লাঠি টাও নেই। কোথায় যে রাখে মামন  ।আবার মনের আনাচে কানাচে সেই মামন ।লাঠি ছাড়াই জানালার কাছে চলে আসে মৃদুলা। অস্তমিত সূর্যকে আড়াল করে মামন কে দেখতে পায় এক  অপরিচিত পুরুষের সঙ্গে। হটাৎ

আবিষ্কার করে লাঠি ছাড়াই তো বেশ হাঁটতে পারে মৃদুলা। অস্তমিত সূর্য  যেন থমকে যায় আরো কিছুক্ষন।