Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#ইভেন্ট :সাপ্তাহিক গল্প#বিষয় :ছোট গল্প (জীবনের গল্প )#নাম :ম্যাজিক✍️পম্পা বন্দ্যোপাধ্যায় ✍️29.11.20শব্দ সংখ্যা :496
অফিস থেকে বেরোতে সোমবার দেরী হয়েছে সুমিতের। হঠাৎ কতগুলো জরুরি রিপোর্ট চেয়ে পাঠালো কর্পোরেট অফিস থেকে, সেই কম্পাই…

 


#ইভেন্ট :সাপ্তাহিক গল্প

#বিষয় :ছোট গল্প (জীবনের গল্প )

#নাম :ম্যাজিক

✍️পম্পা বন্দ্যোপাধ্যায় ✍️

29.11.20

শব্দ সংখ্যা :496


অফিস থেকে বেরোতে সোমবার দেরী হয়েছে সুমিতের। হঠাৎ কতগুলো জরুরি রিপোর্ট চেয়ে পাঠালো কর্পোরেট অফিস থেকে, সেই কম্পাইলেশন করে সেগুলো পাঠিয়ে যখন গাড়িতে উঠল সে তখন ঘড়িতে রাত সাড়ে আটটা বাজে । বাড়িতে ঢুকে সুমিত দেখল পাঁচ বছরের মেয়ে সৌমী মুখটা কেমন থমথমে, চোখের কোলে জল, অন্যদিনের মতো বাপি বাপি বলে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল না আজ, সুমিতও মেয়ে অন্তপ্রাণ । সাধারণত মেয়ে সৌমী বেশী হাসিখুশি, বরং ছেলে সৌভিক একটু চুপচাপ, শান্ত, আট বছরের ছেলে কিন্তু বেশ পরিণত । জুতো ছেড়ে তাদের ডুয়াল অ্যাপার্টমেন্টের দক্ষিণের বারান্দায় গিয়ে দেখে স্ত্রী প্রজ্ঞা বাইরের দিকে মুখ করে নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে ।সুমিত হতভম্ব । শেষে মা শীলা দেবীকে জিজ্ঞেস করে রহস্য উদ্ধার হল ।


বিকেলে প্রজ্ঞার সঙ্গে সৌমি আর সৌভিক গেছিল সামনের পার্কে বেড়াতে যেমন রোজই যায়, সেখানে গিয়ে সৌমি মহানন্দে পার্কের দোলনাতে দোল খাচ্ছিল । একটু ভীড় বাড়তেই অন্য বাচ্ছারা এসে যেতে তারাও দোলনাতে চড়বার জন্য জেদ করতে থাকে আর সৌমিও কিছুতেই নামবে না দোলনা ছেড়ে । শেষ রুকুনের মা বুঝি হাত ধরে নামিয়েছে সৌমীকে আর প্রজ্ঞা আটকাতে গেলে ওকে অনেক কথা বলেছে যেটা রীতিমতো অপমানজনক । পার্ক থেকে মা আর বোনকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়িতে এনেছে সৌভিক কিন্তু মা প্রজ্ঞা আর মেয়ে সৌমির কান্না আর বন্ধ হচ্ছে না ।প্রজ্ঞা ভুলতে পারছে না রুকুনের মায়ের বাক্যের হুল আর সৌমীর ওকে দোলনা থেকে নামিয়ে দেবার শোক আর যাচ্ছে না ।


সুমিত সব শুনে কিছুক্ষন গুম হয়ে রইল। মেয়েকে সৌমীকে নানান হাসি মজার কথা বলে সমে ফেরাতে পারলেও প্রজ্ঞাকে কিছুতেই স্বাভাবিকতায় ফেরাতে পারছে না । বেচারা কিছুতেই রুকুনের মায়ের অপমানটা মন থেকে মুছতে পারছে না ।বাড়িতে ঠিক যেন ছন্দে নেই সব । সুমিতের এটা একদম ভালো লাগছে না । দিনের শেষে এই বাড়ির লোকগুলোকে একটু আনন্দ দিতেই তো তার এতো পরিশ্রম করা, সেখানে তাল কাটলে জীবনটা কেমন আলুনি লাগে যেন!!!!


পরের শনিবার সুমিত সক্কালবেলায় বেরিয়ে গেল, ফিরল বেলা এগারোটায়, সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে রাজমিস্ত্রি রামপদকে । রামপদকে নিয়ে ওদের অ্যাপার্টমেন্টের দক্ষিণের বারান্দায় কি সব কাজ করাল, প্রজ্ঞা ছেলে মেয়ের সোমবারের উইকলি টেস্টের প্রিপারেশনে ব্যস্ত রয়েছে ভেতরের স্টাডিরুমে । মা শীলাদেবী রান্নার লোককে নিয়ে ব্যস্ত রান্নাঘরে । বেলা বারোটায় একটা বেল বাজল, প্রজ্ঞা দরজা খোলার জন্য আসার আগেই সুমিত দরজা খুলতে গেল, প্রজ্ঞা গিয়ে আবার ছেলেমেয়ের কাছে বসল তাদের পড়ার শেষভাগটা নিয়ে ।


বেলা দেড়টা নাগাদ সবাই খেতে বসবে, তার আগে সৌমী আর প্রজ্ঞা স্নান সেরে বেরোলে সুমিত দুজনকে বলল দক্ষিণের বারান্দায় যেতে । দুজনে গিয়েই ছুট্টে এসে ওকে দুদিক থেকে জড়িয়ে ধরল। শীলাদেবী ব্যাপারটা সরেজমিন দেখতে গিয়ে একমুখ হাসি নিয়ে এসে ছেলের গায়ে হাত বোলাতে লাগলেন । এবারে সৌভিকের টনক নড়ল, সে দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দেখে এসে বলল, "বাবা, দারুণ সারপ্রাইস দিলে যা হোক ", ছোট্ট সৌমী বুঝেই পাচ্ছে না কি করে বাবাকে 'থ্যাংক ইউ' বলবে। সুমিত সকালে গিয়ে দেখে শুনে একটা দোলনা কিনে এনে রাজমিস্ত্রি রামপদকে দিয়ে সেটা লাগিয়েছে ওই দক্ষিণের বারান্দায়, যখন ছেলেমেয়েকে নিয়ে প্রজ্ঞা পড়ানোয় ব্যস্ত ছিল আর মা শীলাদেবী ব্যস্ত ছিলেন রান্নাঘরে আর তার ম্যাজিকেই আজ আবার তার সাধের পরিবারের পুরোনো ছন্দ ফেরত এসেছে । রাত্রে শুতে এসে প্রজ্ঞা তো ওকে জড়িয়ে কেঁদে ভাসালো।সুমিত শুধু বলল,"তোমাদের সবার হাসিমুখটাই তো আমার দিনের শেষের প্রাপ্তি, সেটা যাতে না হারায় তাই এটুকু করতেই হল জানো, ওখানে কোনো কম্প্রোমাইস করতে পারলাম না "।