Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সব পাখি মাছ খায়, মাছ রাঙার নাম হয়

তরুন চট্টোপাধ্যায়পুলিশ তুমি যতই মারো ,মাইনে তোমার একশো বারো।1977 সালের আগে বাংলার দেওয়ালে দেওয়ালে নানা রঙে এই লেখাটি শোভা পেতো।ফলে পুলিশের মাইনে যে তখন কম ছিল তাতো বোঝাই যাচ্ছে ।তবুও সেই সময় পুলিশের চাকরির প্রতি আকর্ষণ ছিল না এমন…

 


তরুন চট্টোপাধ্যায়

পুলিশ তুমি যতই মারো ,মাইনে তোমার একশো বারো।1977 সালের আগে বাংলার দেওয়ালে দেওয়ালে নানা রঙে এই লেখাটি শোভা পেতো।ফলে পুলিশের মাইনে যে তখন কম ছিল তাতো বোঝাই যাচ্ছে ।তবুও সেই সময় পুলিশের চাকরির প্রতি আকর্ষণ ছিল না এমন কিন্তু নয়।একদিকে পুলিশ ছিল সে সময় ক্ষমতাশালী ।আর উৎকোচ ছিল না এমন কোন উদাহরণ আজও খুঁজে পাইনি।বাড়তি পাওনা তখনও ছিল আজও আছে।অনেক পেশাতে উৎকোচ গ্রহন করা থাকলেও পুলিশ ঘুষ নেয় না একথা কেউই বিশ্বাস করতে পারেন না।সব পুলিশ ঘুষ খায় একথা কখনোই বলা যাবে না।কিন্তু পুলিশ যে টাকা তোলাতে প্রথম তা নিয়ে তো সংশয় পুলিশ পরিবারের মানুষ দের ও নেই।ফলে অনেক পেশাতে ঘুষ বা উৎকোচ থাকলেও পুলিশের নামটিই আগে চলে আসে।সব পাখি মাছ খায়,মাছরাঙার নাম হয় গোছের।জানি সৎ পুলিশ কর্মী রা হয়তো এই প্রতিবেদনে দুঃখ পেতে পারেন।কিন্তু তাঁরা ও জানেন পুলিশের ঘুষ খাওয়া নিয়ে নানা গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।আর এই কাজে শুধু বাংলা কেন প্রায় সমগ্র রাজ্য ই কমবেশি একই দোষে দুষ্ট ।রক্ষক যেথা ভক্ষক সেতো বাঁচিয়া ও মরিয়াই।ফলে চেষ্টা চরিত্র করেও পুলিশের ঘাড় থেকে এই অপবাদ নামানোর চেষ্টা করেও লাভ হয় নি এতটুকুও ।উপরি পাওনা বিভিন্ন পেশা তে থাকলেও পুলিশের ক্ষেত্রে সেটি যেন রেজিস্টার্ড ট্রেড মার্ক ।ও পুলিশ ঘুষ তো নেবেই এই রকম একটি ধারনা জনমানসে সব সময় থেকেই গেছে।আর তা একাল সেকাল নয়,সব কালেই।নানা গল্প উপন্যাস নাটক নভেলেও দেখা গেছে পুলিশের ভূমিকা তে নানা উৎকোচের গল্প ।তবে ভালো পুলিশ ও আছে সেখানে।সিনেমার পর্দাতে রঞ্জিত মল্লিক পুলিশ অফিসার মানেই একজন সৎ পুলিশের ছবি।আসলে পুলিশ কে নায়ক বানিয়ে ছবি বক্স অফিস হিট করাতে গেলে তো এই রকম গল্প ই চাই।কিন্তু হল থেকে বেরিয়ে মানুষ হিসাবে বসেন।এমন অফিসার কি দেখেছেন কখনো।আর সেটাই ট্রাজেডি ।

আসলে কেউ তো আর চাকরির প্রথমদিন থেকে উৎকোচ নেন না।পরিবেশ পরিস্থিতির চাপ তাঁকে সেই পথে নিয়ে যায়।আর সেই সুযোগ সব থেকে বেশি এই উর্দি ধারী দের যে আজও আছে তাতো চোখ মেললেই দেখা যাবে।

স্যাকরা মায়ের সোনা ও চুরি করে।এ রকম একটি চলতি প্রবাদ আছে।আর বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা ,পুলিশ ছুঁলে উনিশ।সেতো হবেই।তাই চোর গুন্ডা বদমাশ থেকে আরো অনেকেই পুলিশ কে চটাতে চান না।ফলে অসামাজিক কার্যকলাপ যারাই করে থাকেন তাঁদের নজর থাকে পুলিশের দিকে।ফলে পুলিশ কে ম্যানেজ করার একটা প্রবনতা থেকেই যায় ।

এখন অবশ্য অনেক ভালো ছেলে মেয়েরা আসছেন এই পেশায় ।পুলিশের বড় অফিসারেরাও নানা ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই অপবাদ থেকে পুলিশ কে বার করে আনতে।কিন্তু সেই বিট্রিশ আমল থেকে তৈরি এই পুলিশের ভিতর থেকে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির উদয় আজও হয়নি তাতো বলার অপেক্ষা রাখেনা।

এখন অবশ্য পুলিশ তুমি যতই মারো মাইনে তোমার একশো বারো বলা যাবে না।বামফ্রন্টের আমলে পুলিশের মাইনে বেড়েছে বেশ ভালোই।পুলিশের রেশন ও ছিল।আর ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে পুলিশের বোঝাপড়া সেকালের মতো আজও আছে।এ নিয়ে কোন সংশয় আজও নেই।তবে হলফ করে বলা যাচ্ছে না পুলিশ ডিপারমেন্ট ধোয়া তুলসি পাতা হয়ে গেছে।

এক সতীর্থর কাছ থেকে কিছুদিন আগে শোনা একটি গল্প বলি।তিনি নিজের গাড়ি নিয়ে উওর কলকাতার এক ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলেন ডাক্তার দেখাতে।গাড়ি চালাচ্ছিলেন এক চালক।রাস্তায় ইউ টার্ন নেওয়ার সময় একটি অটোর পিছন পিছন টার্ন নিলেন।অটোটি বিনা বাধায় চলে গেলেও অন্য গাড়ির আড়াল থেকে দৃশ্য টি দেখে এগিয়ে আসেন পুলিশ অফিসার টি।বললেন ইউ টার্ন নিতে হবে আরো আগে গিয়ে ।গাড়ি থেকে নেমে সতীর্থ টি পুলিশ কে অনেক বোঝালেন।বললেন পাশেই ডাক্তার চেম্বার ।ওখানেই যাবেন।পুলিশ টিও ভদ্রভাবে জানান আপনি চলে যান।যাবার সময় চালকের হাতে দুশো টাকা দিয়ে যান।কি আর করবেন চালকের হাতে দুশো টাকা দিয়ে তিনি চালক কে বলে গেলেন রসিদ টি নিয়ে নেবেন।

এদিকে চালকের কাছ থেকে পুলিশ টি টাকা নিলেন।কিন্তু রসিদ দিলেন না।রসিদ চাইতে বললেন গাড়ির মালিকের মোবাইলে চলে যাবে।এদিকে চালক ফোন করে জানতে পারলেন মালিক রসিদ পাননি।চালক আবার পুলিশের কাছে গেলেন।বললেন মালিক রসিদ পায়নি।পুলিশ টি হেসে বললেন কতদিন গাড়ি চালাচ্ছিস।দুশো টাকা কি ফাইন হয়।পাঁচশো টাকা নিয়ে আয় রসিদ পাবি।এটি আমার পাওনা।

এটি একটি উদাহরণ ।কলকাতার রাস্তায় দূর পাল্লার বাস থেকে মালবাহী সব গাড়ি কেই মাসিক দিতে হয় পুলিশ কে।এমনকি তোলা না দিলে রাস্তায় যে চলা যাবে না সেকথা বুঝতে অসুবিধা হয় না কারো।

তবুও বলবো পুলিশ একা ঘুষ খায় না।ঘুষ এখন একটি ব্যাধি ।বিভিন্ন সংস্থা নানা ভাবে এই রোগের শিকার।কিন্তু পুলিশ কেই দায়ভার টি সব থেকে বেশি নিতে হয়।

অভিযোগ আছে বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধেই ।কিন্তু সেই এক কথা।সব পাখি মাছ খায়, মাছ রাঙার নাম হয়।আর এখানে মাছ রাঙা এই পুলিশ ই।

তবে ভালো মানুষ যত এই সব দপ্তরে কাজে যোগ দেবেন এই প্রবনতা ততই কমবে।আর আমরাও ঘুষ মুক্ত একটি সমাজ উপহার পাবো।

সঠিক কাজে সঠিক খরচ করতে রাজি সকলেই।কিন্তু এই উৎকোচ প্রথা প্রতিনিয়ত আমাদের ভবিষ্যত কে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে চলেছে।আর এ থেকে মুক্তি পেতে দরকার উৎকোচ মুক্ত সমাজ ।