Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

দৈনিক সাহিত্য কথা গল্পের নামঃ- পদ্মরাগকলমেঃ- তপন কুমার রায়তারিখঃ- ১৬/০১/২১
রনজয় ফ্রডুলেন্ট এক্সপোর্টের ফাইলটা নিয়ে প্রসেসিং আর কোয়ান্টিফিকেশন করতে বসে ছিলো।স্টেটমেন্টে যা এক্সপোর্টার বলেছে তাতে ফ্রড জাস্টিফাই  করতে একটু অসুবিধা হ…



 দৈনিক সাহিত্য কথা 

গল্পের নামঃ- পদ্মরাগ

কলমেঃ- তপন কুমার রায়

তারিখঃ- ১৬/০১/২১


রনজয় ফ্রডুলেন্ট এক্সপোর্টের ফাইলটা নিয়ে প্রসেসিং আর কোয়ান্টিফিকেশন করতে বসে ছিলো।স্টেটমেন্টে যা এক্সপোর্টার বলেছে তাতে ফ্রড জাস্টিফাই  করতে একটু অসুবিধা হবে। ম্যানুফাকচারারের একটা স্টেটমেন্ট হলে সুবিধা হতো। সিনিয়র ইন্টেলিজেন্স ( সুপারিন্টেন্ডেন্ট)   অফিসার  গৌর সেনের কাছে গেলো।  সেকসন ১০৮ এ একটা সামন ইস্যু করতে হবে। এমন সময় হেলা,ডিপার্ট্মেন্টের  সিপাহি,  এসে জানালো এক ভদ্রমহিলা রনজয় সাহেবের সাথে দেখা করতে এসেছেন।  "বসতে বলো"  বলে রুনু সামনের কপি গুলো  সেন সাহেবের কাছ থেকে  সই করিয়, ফাইলটা ডেসপ্যাচ সেকশানে দিয়ে  ভিজিটরস রুমে  এলো। ভিজিটরস রুমে পর্দা আছে তাও কিছু সিনিয়র  দরজার সামনে দিয়ে  অকারন এপাশ ওপাশ ঘোরাঘুরি  করছে। ভিজিটরস রুমে মধুমিতাদি মানে মেজদি বসে আছেন। সেই সোনাগাছিতে রেইডএ গিয়ে পরিচয় হয়েছিলো যে দিদির সাথে। মেজদির আগুনে  রূপের কাছে  ফিল্মে ইন্ডাস্ট্রির তাবড় হিরোইনরা দাঁড়াতে পারবে না। আর তার জন্যই ই ভিজিটরস রুমের সামনে দিয়ে এতো অকারণ  হাঁটাহাটি।  

   

    ঘরে ঢুকেই রুনু একগাল হেসে জিজ্ঞাসা  করলো ---- মেজদি! তুমি! তুমি এখানে? কি ব্যাপার গো? এদিকে কোন কাজে এসেছিলে?

--- কেন রে? আমি কি আমার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আসতে পারি না?

--- আলবাত  পারো। একশো বার পারো। 

--- না রে রুনু। আমি তো ভালো জীবন কাটাই না। তোদের অফিসারেরা সবাই আমাকে চেনে। তাই কেউ ভালো ভাবে নিতো না।  নেহাত তুই খুব বাচ্ছা ছেলে,  আমাকে দিদি ডাকিস তাই ওরা কিছু ভাববে না।

---- ছাড়োতো ওদের কথা। ডাকি আবার কি? দিদিই তো। আমি তো তাই মানি।

---- না রে। ছাড়ার নয়। তবু আমাকে ছাড়তেই হবে,কেননা এ পৃথিবীতে  তোকেই একমাত্র ভাই বলে মেনেছি। আর আমার নিজের বলতে  তো কেউ  নেই। তুই ই আমার সেই ভাই।তাই তোর কাছেও না এলো, কোথা যাবো বল!

---- আসবে তুমি, অবশ্যই আসবে। কে কি বললো  কিচ্ছু এসে যায় না আমার।

বলতে বলতে মেজদি  তার ব্যাগ থেকে  দুটো টিফিন বাক্স বার করে বললো খেযে নে। তোর জন্য বানিয়ে  এনেছি। আরে ব্যাস,  বলে বাক্স খুলে ফেলল  রুনু।একটাতে পায়েস আর একটাতে ফ্রুট কেক। দারুণ  গন্ধ বেরুচ্ছে।  এমন সময়  পিকে দা আর শিবাজীদা ঢুকে এলো। --- কিরে রুনু কি খাচ্ছিস?  কি ম্যাডাম কি এনেছেন ভাইয়ের জন্য। 

--- আরে আসুন আসুন। মেজদি বলে,  রুনুর জন্য কিছু খাবার এনেছিলাম। আসুন না, আপনারাও  খান।  অনেকটা আছে, হয়ে যাবে।

হয়ে যাবে মানে,  হয়ে বেশী হবে। মেজদি  প্রচুর খাবার এনেছে। পাঁচ ছজনেও খেয়ে শেষ করতে পারবে না। পিকে দা হাতের ওয়াকিটকিতে পঞ্চাদাকে ডাকলো আর কটা চামচ প্লেট আনতে বললো অফিস  ক্যান্টিন থেকে।  পঞ্চা দা বোধহয় আগে থেকেই জানতো, প্রায় সাথে সাথেই এসে হাজির হয়ে বলল --- সালাম হীরাজি, সেদিন  আপনি রুনুকে  না বাঁচালে যে কি হতো ছেলেটার!

--- এ কি বলছেন? একটা বাচ্ছা ছেলেকে বাঁচানো তো আমার ফরজ আছে। কিন্তু আমার এই  ভাইটাকে  আপনারা ওখানে একা ছাড়লেন ই বা  কি করে? মেজদি চেপে ধরে পঞ্চাদাকে। পঞ্চাদা  হেসে ম্যানেজ দেয়--- আরে এরকম অড পজিশনে কিভাবে বেরোতে হয় ওকে  শিখতে হবে তো নাকি।  ওকে তো ভালো অফিসার  হতে হবে । মেজদি হাসে, সবাই  কে প্লেটে প্লেটে খাবার ভাগ করে দেয়। সবাই  হাপুস হুপুস খেয়ে নেয়। তারপর যাওয়ার সময় বলে যায় --- রুনু আজ চারটের সময় একটা সারভাইল্যান্সে বেরোতে হবে,  তৈরী থাকিস। 


             ওরা চলে যেতেই,  মেজদি বলে ওরা এক একটা ঘাগু মাল, এখানকার বাস্তুঘুঘু। খুব সাবধানে কাজ করবি,  ওরা না পারে হেন কাজ নেই। নিজেরা অন্যায় করবে, আর বেগতিক দেখলেই তোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করবে। 

 ---- বলো কি গো! এদের সঙ্গে চাকরি করবো কি করে? সারাটা জীবন পড়ে আছ তো।

 মেজদি বলে-- আমি যতদিন  বেঁচে আছি, কেউ তোর চুলের একটা ডগাও ছু্ঁতে পারবে না।  আমি তোকে বুকে করে মানুষ করেছি রুনু। একবার পারিনি, আমিও নতুন ছিলাম। এখন আমার পায়ের তলার মাটি শক্ত, আবার যখন তোকে পেয়েছি, কাউকে তোর এতটুকু অনিষ্ট করতে দেবো না। মেজদির মুখে মাতৃসুলভ এক  সন্তানের জন্য লড়াকু বাঘিনীর  জেদ ফুটে ওঠে।  

রুনু জিজ্ঞাসা করে --মেজদি,  পঞ্চাদা তোমাক হীরাজি বলছিল কেন? আর তুমিই বা ওদের হিন্দি কথা বলছিলে কেন? ওহ্ ওরা আমাকে আগ্রাওয়ালী  মুসলিম বলে জানে। মেজদি জানায়। ---- আর শোন, তোর দিদি বাধ্য হয়েই এই একটা খারাপ জীবন কাটায় জানিস। তুই আমার কাছে বেশী  কিছু কথা জানতে চাইবি না। যা জানবার আমিই জানাবো। আমি তোর দিদি, তোর মায়ের মতো  জানবি। মেজদি কেঁদে ফ্যালে।  রুনু কি করবে বুঝে পারে  না। মেজদির চোখের জল হাত দিয়ে মুছিয়ে দিয়ে মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে।  একটু পরে মেজদি মাথা তুলে চোখ মোছে রুমাল দিয়ে,  আর বলে, তুই আমার একমাত্র সম্বল। আমার বুকে থাকিস চিরকাল। রুনু হুঁ বলে।


            মেজদি রুনুকে বলে চল্, একটু  এগিয়ে দিবি চল্। কথা আছে। রুনু মেজদির সাথে বেরোয়। মেজদি জানায় একটা বড় ইনফরমেশন  আছে।  বোধহয়  বড়ো কেস হবে, এটা নিয়ে লড়ে যা অনেক রিওয়ার্ড  পাবি। রুনু বলে তুমি ইনফরমেশন টা দাও আমি তোমার নামে ডি আর আই-১ দেবো,তুমি  রিওয়ার্ড  পাবে।। মেজদি বোঝায় দেখ রুনু, তুই আমার টাকার পরিমান চিন্তাও  করতে পারবি না। আমার আর টাকার কোন দরকার  নেই। টাকা আসছে, রেখে দিচ্ছি। সব তোর হবে একদিন। তুই ভালো কাজ করে যা। তুই  আমি যা বলছি লিখে  একটা ইন্টেলিজেন্স  জমা কর।


            মেজদি জানায় কোলকাতায় নাগরাজ  পদ্মরাগ মনি ঢুকেছে। বিশাল,অ বিশাল দামী। এখানে লেনদেন হবে। ঠিক  সময়ে স্ট্রাইক করতে হবে। স্মাগলার গুলোকে ধরে মনিটা উদ্ধার  করতে হবে।

রুনু অবাক হয়--- নাগরাজ পদ্মরাগ মনি কি মেজদি?

--- ঠিক  আমিও জানি না রে।  শুনেছি  লেকের গভীরে কিছু বিশাল সাপ থাকে। রাতের গভীরে তারা জল থেকে ডাঙায় উঠে আসে। তাদের  মাথায় বসানো থাকে বিশাল মনি,  তাতে লক্ষ হীরের দ্যুতি, চারিদিক দিনের আলোর মতো সাদা করে দেয় চারিদিক। ডাঙায় উঠে সেই মনিকে এক জায়গায় রেখে চারিকে ঘুরে ঘুরে সেই আলোয় সাপেরা গরু,শুয়োর,হরিন,ভেরা এসব ধরে খায়। আর  কিছু লোক তক্কে তক্কে থাকে,পিছন দিয়ে গিয়ে ওই মনির ওপর একতাল গোবর দিয়ে ঢেকে দেয়। ব্যস জলের গভীরে  থাকা সাপ তো কানা। সেই সাপকে মেরে মনি নিয়ে চলে আসে। কোটি কোটি টাকা দাম সেই নাগমনির।

--- বলো কি গো! সত্যি হয় এরকম?

--- দেখ্ ,  সত্যি মিথ্যে বলতে পারবো না। যা শুনেছি তাই বললাম। ধরতে পারলে  দেখে নিবি।

---- হ্যাঁ তোমাকেও দেখাবো।অফিসে ডাকবো তোমাকে,ডেকে দেখাবো।

 --- বাচ্ছাই রয়ে গেলি। তোর অফিসকে চেন একটু।

আমাকে দেখানোর জন্য ভাবতে  হবে না বোকা।  আমি ওখানেই থাকবো।  গায়ে জামাকাপড় না থাকলে আমারদিকে তাকাবি না। আর ওদের কাছে আর্মস থাকবে, নিজেকে বাঁচিয়ে  চলবি। ভাবিস না আমারও রিভলবার থাকে, তোকে কাউকে ছুঁতে দেবনা। ভয় খাবি না একদম।

----- মেজদি কখন কোথায় যেতে হবে?

---- লিখে নে। বাইপাশে হোটেল লীলাবতী। স্যান্ডাল উড ব্যাঙ্কোয়েট হল।সেকেন্ড ফ্লোর। রাত নটা। যা, তুই ফিরে যা এবার। অফিসে কাউকে বলবি না। সিলড কভারে জমা দিবি এডিজির কাছে। ও হ্যাঁ একটা কথা বলা হয় নি, এর মধ্যে তোদের অফিসের ইডির স্টাফ জড়িয়ে আছে। 

---- কি সে যাবে মেজদি একটা ট্যাক্সি ধরে দিই?

--- না রে, হাঁদু ছেলে। তোর দিদির গাড়ী, ফ্ল্যাট সবই আছে। থাকতে হয় ওখানে উপায় নেই তাই। তুই অফিস  যা। আর এটা টপ সিক্রেট, মনে রাখবি।


                রুনু মনে মনে বেশ উত্তেজিত।  অফিসে  ঢুকেই ইনফরমেশন টা ঝটপট লিখে ফেললো। তারপর ডি আার আই -১ রেডি করে এ ডি জি গোয়েল সাহেবের ঘরে ঢুকে গেলো। সাহেব  কিছু  একটা ফাইল দেখছিলো,  রুনু ঢুকতে একবার চোখ তুলে দেখেই "সিটডাউন" বলে  আবার ফাইলে মন দিলেন।   একটু পরে মুখ না তুলেই বললেন-- ক্যা হ্যায়? এনিথিং ইম্পর্ট্যান্ট?  

---- ইয়েস স্যার। ওয়ান ইনটেলিজেন্স স্যর।

---- রাখ কে যাও। দেখ লেঙ্গে।

---- নেহি স্যর, আরজেন্ট ওয়ান।

গোয়েল সাহের ফাইল থেকে মুখ তুলে বললেন -- দো, দেখ লেতে  হ্যায়।

 রুনু  এনভেলপটা বাড়িয়ে  দেয়। গোয়েল সাহেব মুখটা ছিঁড়ে  ইনফরমেশন টা পুরো পড়লেন।   পড়ে বললেন-- ফার্স। এ কভি হো সাকতা হ্যায়! নাগ কা মনি?  বাচ্চো কে লিয়ে স্টোরি টেলিং?   কৌন দিয়া হ্যায় তুমহারা ও সোনাগাছি বালা হীরাবাঈ?

----- ইয়েস স্যর।  লেকিন স্যর  ম্যায়নে যো ইসমে লিখা নেহি  হ্যায় স্যর,  ওয়ো স্যর,ইসমে  ক্যালকাটা ই ডি ঔর দিল্লী  ডি আর আই  বালা ভি জুরা হুয়া হ্যায় স্যর। ইয়ে নাম যো ভি হো, ইসকে পিছে জুরুর কুছ হ্যায় স্যর।

         টেবিলে পেনটা ঠুকতে ঠুকতে গোয়েল সাহেব বললেন-- দেয়ার্স এ পসিবিলিটি। ওকে লেটস সি। তারপর পি এস কে ডেকে ইনফরমেশনটা ডকেট করিয়ে দিতে বললেন।  কাম টুমরো। লেট মি কালটিভেট এ বীট। আই উইল সী। রুনু এডিজির ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। 

       ফ্লোরে আসতেই পঞ্চাদারা হৈ হৈ করে উঠলো।এই এসব বাচ্ছা ছেলে নিয়ে ডি আর আই অফিসের কাজ হয় না। সুন্দরী  মহিলা  দেখলো তো গলে গেলো। আরে, ভাই বলেছে বলে কি ভাই হয়ে গেলি? ওরা  হল জাত বেশ্যা।  তোর রক্ত রস সব নিংড়ে নিয়ে ছিবড়ে করে ফেলে দেবে। 

      রুনুর ইচ্ছা হচ্ছিলো পঞ্চাদার গালে ঠাটিয়ে এক চড় মারে।নেহাত সিনিয়র  লোক, আর এখানেই চাকরি করে খেতে হবে,তাই চুপ করে রইলো। 

 "কোথায় গেছিলি বাপ দিদির সাথে এতক্ষণ ? পার্কে বসে ছিলি?" বেঁকিয়ে বললো পঞ্চাদা। আসলে সুন্দরী  মহিলার সাহচর্য  না পেয়ে জেলাসি। রুনু বললো যে গোয়েল সাহেব ডেকেছিলেন।  "গোয়েল সাহেব", "তোকে"?  কেন? পঞ্চাদা জিজ্ঞেস  করে।

---- এমনি ই ,  কেস প্রসেসিং এ অসুবিধা  হচ্ছে কিনা? কতদূর  এগোলো, সিনিয়রদের হেল্প পাচ্ছি কিনা এসব আর কি?

--- কি বললি? বাদ দে।  বেরোতে হবে জয়েন্ট ডাইরেক্টরের এ্যাপ্রুভাল নিয়ে  আয়।  মুভমেন্ট রেজিস্ট্রার  বানিয়ে নিয়ে যাবি।  

জুনিয়র  বলে এসব ফেক খাটতে হবে রুনু জানে। কি আর করে,  রেজিস্টার  নিয়ে  জে ডি এর ঘরে গেলো। পারমিশন নিয়ে  দুটো গাড়ীতে বেরুলো খিদিরপুরের দিকে।  ব্রীজ পেরিয়ে গাড়ী রাস্তার ধারে পার্ক করে মাইল দুয়েক হেঁটে ওরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দুটো চা দোকানে বসলো। সামনের গোডাউন এ মাল লোড হচ্ছে। রুনুকে পাঠালো প্রসাদ সাহেবের লোক হিসাবে মাল দেখে আসতে?  রুনু ও গেলো, গোডাউন কিপারকে মাল দেখবো বলতেই কাস্টমস  ইন্সপেক্টর  এগিয়ে এসে বললো-- কি চাই। রুনু প্রসাদ সাহেবের কথা বলতে ই দেখতে দিলো। সব ফরেন কোম্পানির  দামী দামী গারমেন্টস।দুচারটের ট্যাগ, টোটাল ব্যাগস, টোটাল গারমেন্টস  সব একটা কাগজ চেয়ে নিয়ে টুকে নিয়ে ফিরে এলো।  সব শুনে শিবাজীদা ব্রিলিয়ান্ট  বয়।  ওয়েল ডান। পঞ্চাদা বললো, চলো আজকের  মতো হয়ে গেছে। দুদিন বাদে এসে দেখবে সব মাল পাল্টে গেছে।  রুনু জানতে চায় -- কি করে? আমাদের ইন্সপেক্টর  তো  ওয়ার হাউসের চার্জে আছে।

---- ও সব অফিসার  বিক্রি  হয়ে যায়। সুনীলদা বলে। পয়সা পেলে সব করে দেয় এরা। 

---- আমরা ও কি বিক্রি  হয়ে যাই তাহলে শিবাজীদা?

 সবাই একবার মুখ চাওয়া চাওয়ি করে হো হো করে হেসে উঠলো রুনুর কথায়। পঞ্চাদা বললো  - আছো তো ডিপার্টমেন্টে, সময়ে সব বুঝতে পারবে। সুনীলদা বললো দেখ ভাই, সময়ে সময়ে  আমাদেরও অল্প সল্প কম্প্রোমাইজ  করতে হয়। না হলে এই খরচ চলবে  কোথা থেকে?  রুনু কথা বাড়ায় না।


        পরের দিন সন্ধ্যে থেকেই কিছু লোককে বাইপাশের ধারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ওরা লক্ষ রাখছে  হোটেল লীলাবতীর ওপর। রাত আটটা নাগাদ এ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার  থেকে সুপারিন্টেন্ডেন্ট  আর ইন্সপেক্টর  মিলিয়ে বাইশ জন হোটেল টা ঘিরে ফেলল। সব কটা দরজায় লোক রেখে ওরা যে যার রিভলবার বার করে ঢুকে গেল ভিতরে। একজনকে রিসেপসনে দাঁড়করিয়ে দিল, যাতে কেউ কোথাও না যেতে পারে,  না কোন ফোন  করতে পারে কাউকে।  ঝটপট সব সেকেন্ড ফ্লোরে স্যান্ডাল উড ব্যাঙ্কোয়েটে রিভলবার উঁচিয়ে ঢুকে পড়লো। ভিতরে জোর মেহফিল চলছে,    ডি জে র উদ্দাম বাজনা। জনা চারেক মেয়ে উলঙ্গ হয়ে নাচছে। তার মধ্যে মেজদিও আছে। দুধ সাদা উদ্ধৃত যৌবন একটা ফিনফিনে সাদা সীথ্রু ওড়নায় ঢাকা। আরও  যেন মোহময়ী আরও আকর্ষণীয়  করে তুলেছে। পঞ্চাদা চেঁচিয়ে --ওঠে হ্যান্ডস আপ।  সঙ্গে সঙ্গে  একটা ফায়ারের আওয়াজ আর পঞ্চাদা 'বাবাগো' বলে হাত চেপে বসে পড়েল।  রুনু এক লাফে  রিভলবার ধারী ছেলে টির বুকে চেপে, কপালে নল ঠেকিয়ে ওর রিভলবার কেড়ে নিল। পঞ্চাদা  গর্জে উঠলো--" শালা  বরুন, তুই ডিপার্ট্মেন্টের  ছেলে হয়ে গুলি মারলি"। পঞ্চাদার হাতের বাইরের দিকে গুলিটা লেগেছে।উন্ড কিছু সিরিয়াস নয়।তাই হসপিটাল এখুনি যেতে রাজী নয়। রুমাল দিয়ে হাতটা টাইট করে বেঁধে রক্তটা বন্ধ করলো। মেয়েরা চলে গিয়ে পাশের একটা ঘরে আশ্রয়  নিয়েছে।  এ ডি,  ওয়াকিটকিতে সকল কে ডেকে নেয়। পাঞ্জাবী ক্রেতাদের সাথে  চারটে আফগানিস্থানি বসেছিলো,।  শিবাজীদা সুনীলদা  ওদের মাথায় বন্দুক  ঠেকিয়ে  পদ্মরাগ  মনি চায়।   ওরা বলে--" সাব ও পাত্থর বিক গিয়া"।  এ ডি বলে -- "ও চীজ আভি কাঁহা গিয়া?" ডিপার্ট্মেন্টের  সিপাহিরা ওদের একে একে দড়ি দিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধতে থাকে। এর মধ্যে একটি ছেলে এগিয়ে এসে এ ডি সেলভাকুমারের হাতে নিজের রিভলবার জমা করে বলে-- "স্যর, স্পেয়ার মি।  আাই ফ্রম দিল্লী ডি আর আই। লেট মি গো স্যর" বলে নিজের আই কার্ড দেখায়।

এ ডি, ওর আই কার্ড আর সার্ভিস  রিভলবার  নিজের পকেটে রেখে বলে ---" নাউ টেল মী,হোয়ার ইজ দ্য পডমোরাগ স্টোন?" 

--- আই ডোন্ট নো স্যর। কাইন্ডলি সেভ মী।

--- আনলেশ ইউ টেল এ্যবাউট দ্য স্টোন ইউ ক্যান্ট বি স্পেয়ারড। টেল মী ফার্স্ট। দেন আই মে থিঙ্ক।

---- আই ডোন্ট নো স্যর।

ঠাস করে এক চড় মারে এ ডি সেলভা কুমার।

বেঁধে ফেলতে বলে ওকে  আর ই ডির ইন্সপেক্টর  বরুন কে ও। সেলভা কুমার রুনুকে ডাকে,  বলে রুনু সার্চ এন্ড ফাইন্ড আউট দ্য পডমোরাগ। রুনু গিয়ে  মেয়েদের ঘরে টোকা দিয়ে নীচু স্বরে বলে মেজদি আমি রুনু।দরজা খোলো। মেয়েরা  দরজা খুলে দিতে রুনু জানতে চায় সেই নাগ মনি কই? মেজদি ওই ঘরে জমা করে রাখা প্রায় দু টন হেরোইন আর কোকেনের প্যাকেট দেখিয়ে দেয়। বলে আসলে এই ড্রাগ কনসাইনমেন্টার কোড নেম হলো পদ্মরাগ নাগমনি। কোন মনি টনি নেই। রুনু এ ডি সেলভা কুমারকে ডাকে এবং সবটা দেখিয়ে পুরোটা বলে দেয়। এডি একটু স্যাম্পেল টেষ্ট করে সিওর হয়।  তারপর এ ডি জি  কোলকাতা কে ডেকে পাঠায়। এডিজি সকলকে নিয়ে, সব ড্রাগ  প্যাকেট নিয়ে হোটেলের ম্যানেজারকে সামন ধরিয়ে নিজেদের অফিসে গিয়ে স্টেটমেন্ট আর আদার  ফরম্যালিটিজ কমপ্লিট করতে বলে। মেয়েদের হোটেলের গাড়ীতে বাড়ী ফিরিয়ে দেয়। শেষ হয় অপারশন নাগমনি পদ্মরাগ। এরপর অনেক ইনভেস্টিগেশন হয়। জেল কোর্ট সবই হয়। সে গল্প পরে হবে।


(আমার এই গল্প" নিষিদ্ধ পল্লী "গল্পের পরবর্তী  অংশ।)