Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#সৃষ্টি-সাহিত‍্য যাপন#অনুগল্প_সময়ের_মূল্য "#লেখিকা_মৌসুমী চ্যাটার্জী
এলার্ম ক্লকটা বেজে উঠল,,, ঘড়িতে তখন ঠিক আটটা বাজে । রজত তড়িঘড়ি করে করে রেডি হয়ে অফিস রওনা দিলো এবং ঠিক সময় মতো অফিসে পৌঁছে ও গেল। ওকে এইভাবে আজকাল সময়মতো অ…

 


#সৃষ্টি-সাহিত‍্য যাপন

#অনুগল্প_সময়ের_মূল্য "

#লেখিকা_মৌসুমী চ্যাটার্জী


এলার্ম ক্লকটা বেজে উঠল,,, ঘড়িতে তখন ঠিক আটটা বাজে । রজত তড়িঘড়ি করে করে রেডি হয়ে অফিস রওনা দিলো এবং ঠিক সময় মতো অফিসে পৌঁছে ও গেল। ওকে এইভাবে আজকাল সময়মতো অফিসে আসতে দেখে সহকর্মীরা বলে ওঠে -'কি ব্যাপার রজত আজকাল দেখছি তুমি খুব পাংচুয়াল হয়ে গেছো। শুনতে পেয়ে রজত মনে মনে ভাবে তাকে যে বিরহ সময়ানুবর্তী হতে শিখিয়েছে । কিছুক্ষণের জন্য ও যেন হারিয়ে গেলো পুরানো স্মৃতির মাঝে চোখের সামনে ভেসে উঠলো ওর আর তন্দ্রার দেখা করার     দিনটির কথা........

তুমি কিন্তু প্লিজ দেরী করে এসো না যেন । প্রতিবারের মতো । তোমাকে নিয়েই আমার যত চিন্তা, বাবাকে অনেক কষ্টে তোমার সাথে দেখা করার জন্য রাজি করিয়েছি। জানোই তো বাবা কর্নেল, সুতরাং  বুঝতেই পারছো সে কিন্তু ভীষণ পাংচুয়াল সময়ের ব্যাপারে। এক মিনিট এদিক ওদিক হবার উপায় নেই ,, এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামে তন্দ্রা ।

 শুনে রজত বলে -'         আরে বাবা চিন্তা করছ কেন?কথা দিচ্ছি তো তোমাদের আগেই আমি পৌঁছে যাব।'

শুনেই সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে তন্দ্রা -'দ্যাখো রজত তোমাকে আমি ভালো করেই চিনি,, আমাদের সম্পর্ক আজ সাত বছর হয়ে গেলো। হাতে গুনে বলতে পারি তুমি কদিন, আমার আগে এসেছ। প্রতিবারই কিছু না কিছু অজুহাত দেখিয়ে দাও তুমি,,, এইভাবে চলে বলো। একটু তো সিনসিয়ার হও তুমি । তোমার মধ্যে সবসময়ই একটা অলসতা ভাব। '

এতো ঠেস দিয়ে বলছে দেখে মৃদু রেগে বলে ওঠে রজত -'ওরে বাবা আজ কি এই ঝগড়া করেই কাটিয়ে দেবে বলো। কথা তো দিচ্ছি সেদিন তোমরা আসার আগেই আমি পৌঁছে যাবো তাহলেই তো হলো। এই তো সপ্তাহে একদিন করে দেখা করি ঘন্টা খানেকের জন্য তাও যদি এই অভিযোগ করেই কাটাও শুনতে ভালো লাগে বলো। কোথায় একটু ভালোবাসার কথা বলবে তা নয়।'

অমনি তন্দ্রা ও বলে ওঠে -'সাধে কি বলছি বলো? আমার ও কি তোমাকে কথা শোনাতে ভালো লাগছে । কিন্তু কেন জানি না খুব ভয় করছে।'

 তাই শুনে রজত বলে-      'আমি ও তো কলকাতা  থেকে এই বর্ধমানে আসি শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবেসে ভাবো একবার ।' 

'হুম সে আর জানি না । অবাক লাগে এখনও ভাবলে,, কি অদ্ভুত ভাবেই আমাদের সম্পর্ক টা শুরু হয়েছিলো ।' তন্দ্রার কথা শুনে  দুজনেই হাসতে থাকে। বাসের সিট নিয়ে তাও আবার ঝগড়া দিয়ে শুরু বলো । 

সত্যিই সেদিনটা কোনও দিন ভুলবো না । 

তন্দ্রা বর্ধমানের মেয়ে আর রজত কলকাতার শ্যামবাজারে থাকে । অফিসের কাজে মাঝে মধ্যেই রজত কে বর্ধমানে আসতে হয়। সাত বছর আগে ওদের পরিচয় হয় আর সেই থেকেই ওদের পথচলা।

তন্দ্রা ওর বাবাকে নিয়ে একটা দিন ঠিক করে রজতের সাথে দেখা করানোর। ওর বাবার কলকাতায় কিছু কাজ ছিলো, তাই তন্দ্রা ভাবে এই ভালোই হলো,,,, রথ দেখা কলা বেচা দুটোই হয়ে যাবে । কথানুযায়ী তন্দ্রা ওর বাবাকে নিয়ে ঠিক সময়ে চলে এসেছিলো। 

 কিন্তু না আমি সেদিনও কথা দিয়ে ও কথা রাখতে পারিনি আর তন্দ্রার সাথে চিরকালের মতো আমার বিচ্ছেদ হয়ে গেল । সেদিন ওর বাবা ওকে নিয়ে ফিরে গিয়েছিল । এর দুদিন পর তন্দ্রা একটা পার্সেল পাঠায় আমার জন্য, একটা এলার্ম ঘড়ি আর একটা চিঠি,  যাতে একটা কথাই লেখা ছিল-


রজত,

এই চিঠি তোমার হাতে যখন পৌঁছাবে তখন আমি তোমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। তোমাকে এতো করে বলেও  তুমি নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করলে না। সাতটা বছর অনেক চেষ্টা করেছিলাম তোমাকে বদলানোর কিন্তু পারিনি,, ওটাই আমার দুর্ভাগ্য জানো। জানি এখন আর এসব বলে কোনও লাভ নেই ।

আর বাবার বিরুদ্ধে যাওয়ার ক্ষমতা আমার নেই । শুধু এটুকুই বলতে চাই, 

যে জীবনে সময়ের মূল্য দিতে শেখো, না হলে কোনও দিন ও নিজেকে দাঁড় করাতে পারবে না । সময় কারুর জন্য বসে থাকে না । তোমার এই সময়ের জ্ঞান নেই বলেই  আজ আমাকে হারালে। তাই চাই না আগামী দিনেও এমনটাই থাকো তুমি । তাই তোমাকে আমার শেষ উপহার এই এলার্ম ঘড়ি।

                      ইতি

                      তন্দ্রা   

চিঠি টা পেয়ে আমার দুচোখ জলে ভরে এলো। গলার কাছটায় দলা পাকিয়ে উঠছে । আমার জীবনটাই যেন থমকে গেলো। কিন্তু আমাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হলো। এটুকু বুঝতে পারলাম জীবনে থেমে যাওয়া মানে হেরে যাওয়া ।

          সমাপ্ত