Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপনশিরোনাম #ফোবিয়াকলমে ✍️ #রূপালী_সামন্ত
   নিজের ঘরের বেডরুমের বিছানায় রাজন্যা চুপচাপ বসে আছে, ভয়ে মুখ রক্তশূন্য ফ্যকাসে। জানালা-দরজা টাইট করে বন্ধ তবুও ঘরের ভেতরে শব্দ আসছে। পুরো বাড়িটায় ও একা, বাইরে অঝোর ধ…

 


#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন

শিরোনাম #ফোবিয়া

কলমে ✍️ #রূপালী_সামন্ত


   নিজের ঘরের বেডরুমের বিছানায় রাজন্যা চুপচাপ বসে আছে, ভয়ে মুখ রক্তশূন্য ফ্যকাসে। জানালা-দরজা টাইট করে বন্ধ তবুও ঘরের ভেতরে শব্দ আসছে। পুরো বাড়িটায় ও একা, বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে, দোসর বজ্র-বিদ্যুৎ। কানে হেডফোন গুঁজে বালিশটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। পাশে টর্চ টা রাখা, একটু আগে মোবাইলে একটা ইংলিশ সিনেমা দেখছিলো, টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হতে উঠে জানলা দরজা বন্ধ করে দেয়, তখনই দেখতে পায় আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে আছে, মানে আজ জোর বৃষ্টি আসবে। তাড়াতাড়ি বাইরের কাজ সেরে চারিদিকের আলো জ্বেলে দিয়ে টর্চটা সঙ্গে নিয়ে ঘরের ভেতরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। রৌনককে একটা ফোন করে জানিয়ে দেয় যেন তাড়াতাড়ি বাড়ি আসে।


 এমন সময় হঠাৎ দূরে একটা বাজ পড়ে সঙ্গে সঙ্গে রাজন্যা ভয়ে চিৎকার করে ওঠে তখনই অযাচিতভাবে কারেন্ট ও চলে যায়। তাড়াতাড়ি টর্চ জ্বালাতে চাইলে হাতড়ে ওটা খুঁজে পায় না। এমন সময় বাইরে একটা ফ্যসফেসে ঘড়ঘড়ে আওয়াজে রাজন্যা কঁকিয়ে কেঁদে ওঠে। যেন কোন বেড়াল রাগে গড়গড়্ করছে। ইতিমধ্যে টর্চটা হাতে পেয়ে জেলে দেয়, এমনকি মোবাইলের টর্চটাও অন করে রাখে। একটু যেন মনে বল পায়। অন্ধকারে মনে হচ্ছিল ঘরে দুটো জ্বলজ্বলে চোখ ওকে দেখছে।


"তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার" মোবাইলে রিংটোন হতেই সঙ্গে সঙ্গে ফোন তোলে। শুধুমাত্র রৌনক ফোন করলেই এই গানটা বাজে।


"কি করছো রাজ?"


" তুমি কোথায় তাড়াতাড়ি বাড়ি এসো"বলেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে।


"এইতো বাড়ি যাচ্ছি একটু অপেক্ষা করো, এক্ষুনি এসে পড়ছি। কেঁদো না। "

তুমুল ঝড় বৃষ্টির মধ্যেই রৌনক গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছে। ওকে ফিরতেই হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কারণ রাজন্যা বাড়িতে একা, বজ্রবিদ্যুত এ ওর ভীষণ ভয়। 


"একটু গান শোনো, আমি এসে পড়বো"।


"শুনছিলাম মন দিতে পারছি না, কারেন্ট নেই রন্"


"সেকি! এমার্জেন্সি লাইট জ্বালাও" 


"না আমি খাট থেকে নাবতে পারবো না"


"ওঠো সাহস করে কিছু হবেনা এমার্জেন্সি টা চালু করো। টর্চ জেলেছো?


"হ্যাঁ। তুমি তাড়াতাড়ি এসো" তখনই ঘরের আলো জ্বলে ওঠে "লাইট এসে গেছে রন্"


" ঠিক আছে, মায়ের সঙ্গে কথা বলো। মাকে ফোন করো আমি আসছি"


রৌনকের ফোন কেটে ও মাকে ফোন করে, কিন্তু মায়ের ফোন এনগেজ আসছে, ভীষণ বিরক্ত হয়।


স্বগতোক্তি করে "জানে আমি ভয় পাই এই সময়ে কার সঙ্গে কথা বলছে কী জানি" বলে ফোনটা কেটে দেয়। কমবেশি 25 কিলোমিটারের মধ্যেই ওদের বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি দূরত্ব। তার কিছুক্ষণ পরে আবার ওর ফোনে রিং হতেই দেখে মা রিং ব্যাক করছে।


"কার সঙ্গে কথা বলছিলে এতক্ষণ, আমি ফোন করছি পাচ্ছিনা?"


" আরে তোকেই করছিলাম, তুই ও আমাকে করছিস তাই এনগেজ আসছিলো। কি করছিস?"


"ভয়ে মরছি, কি আর করব।"


" কেন ?"


"কেন কি! বৃষ্টি হচ্ছে এত জোরে, বাজ পড়ছে"


"আমাদের এখানে আকাশ কালো হয়ে আছে, টিপটিপ করে শুরু হল মনে হয়"


কড়কড়্ করে বাইরে আবার জোরে বাজ পরলো। রাজন্যা চিৎকার করে উঠলো "মাআআআআ--"


"ভয় পাস না সোনা, আমি কথা বলছি তো। বাড়ির আলো জ্বলছে চারদিকে? টর্চ টা সাথে আছে তো?"


"হ্যাঁ, আমার খুব ভয় করছে, রৌনক এখনো বাড়ী আসেনি"


"আচ্ছা আমি আছি সঙ্গে" 

তখনই বাইরে জোরে জোরে গাড়ির হর্নের আওয়াজ। তাও রাজন্যা শুনতে পাচ্ছে না।


"বাইরে গাড়ির হর্ন বাজছে, দেখ রৌণক ফিরেছে মনে হয়।"

এবার গাড়ির হর্ন শুনতে পায়, ছুটে গিয়ে দরজা খোলে "হ্যাঁ মা রৌনক ফিরেছে"


" ঠিক আছে রাখছি, পরে কথা হবে"।

রৌনক গাড়ি গ্যারেজে রেখে ঘরে আসে।


  বিয়ের পর প্রথম বছর বর্ষায় হঠাৎ এরকম বাজের আওয়াজ শুনে রৌনককে জড়িয়ে ধরেছিলো। তখন রৌনকের খুবই ভাল লেগেছিল, আরো ঘন হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেছিলো। তারপর আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়েছিলো। মজা করে বলেও ছিল রোজ এমন বৃষ্টি হোক আর জোরে জোরে বাজ পড়ুক তাহলে আমার রাজন্যা আমার বুকেই থাকবে। রাজন্যা ওর বুকে আলতো ঘুসি মেরে কপট রাগ দেখিয়ে ওর বুকেই মুখ গুঁজে বলেছিল একদম নয়, বাজ পড়লেই আমার ভীষণ ভয় লাগে। 


   পরে শ্বশুর শাশুড়ির কাছে শুনে ছিল ওর এই ফোবিয়ার কথা। সেদিনের ও তার পরের সব ঘটনা শুনে সত্যিই ও ভীষন অনুতপ্ত হয়েছিলো। আর কখনোই ওর এই ফোবিয়া নিয়ে মজা করত না উল্টে সেদিকে নজর রাখতো।


পূর্বকথা

-----------


    সরকারি চাকুরে সুবির বাবু ও গৃহবধূ অমিতা দেবীর একমাত্র সন্তান রাজন্যা দেখতেও ফুটফুটে সুন্দরী, লেখাপড়ায় ও চৌকস, গানের গলাও খুব সুন্দর। ও ছোট থেকেই বাজ পড়লে ভীষণ ভয়ে কুঁকড়ে থাকতো। আসলে একদম ছোট বেলায় এটা ছিলনা, তখন বৃষ্টি ভীষণ ভালোবাসতো। বৃষ্টি হলেই বাইরে ভিজতে চাইত মা বকে ঘরে নিয়ে আসত ঠান্ডা লেগে যাবে বলে। আরেকটু বড়ো হলে বৃষ্টি ওর কাছে ভীষন রোমান্টিক লাগতো, হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁতে চাইত। তখন সেভেন এইটে পড়ে বোধহয়, বাইরে ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। বৃষ্টির জলের ফোঁটা গাছপালার উপর পড়ে কেমন রিমিঝিমি সুর তুলেছে। ও মনের আনন্দে গান গাইছিল, দূরে কোথাও বাজ পড়ল মা ঘরে চলে আসতে বললো। রাজন্যা দাঁড়িয়েই ছিল, ওকে বাইরের প্রকৃতি ভীষণ টানছিল। হঠাৎই বিশাল জোরে বাজ পরলো ওদের বাগানের গাছটাতে। বাবা-মা দুজনেই আওয়াজ শুনে চমকে ছুটে বাইরে এলো। ওদের বাগানেই বাজটা পড়েছিল বলে এত জোরে আওয়াজ হয়েছে। রাজন্যা পুরো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গাছটা দাউদাউ করে জ্বলছে। ওকে বাবা মা ধরে ঘরে নিয়ে এসে বসালো। ওর মুখে কোন কথা নেই শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে দুজনের দিকে, তারপরই কেমন হয়ে চুপচাপ হয়ে গেছে।


    কারো সাথে কথা বলতো না। ওর বাবা ডাক্তার দেখালো কিছু হলো না, ই এন টি দেখালো সেখানেও কোন প্রবলেম নেই। ডাক্তার বললেন বাজের আওয়াজে অনেক সময় ভয়ে বাকশক্তি চলে যায়, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে। একজন ভালো বিশেষজ্ঞর অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হলো, তাঁর কাছে অনেকগুলো সিটিং এর পর আসল সত্য জানতে পারা গেল। সেই ঝড় বৃষ্টির রাতে বারান্দায় একটা বিড়াল উঠে আসছিল ও দেখেই একটু পায়ের আওয়াজ করাতে বেড়ালটা ভয় পেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো খানিকক্ষণ তারপর দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল ঐ গাছটায়। খানিক পরে ওই গাছটাতে বাজ পড়ে গাছটা পুরো পুড়ে যায়, বিড়ালটার কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তারপর থেকেই ও বিবেকের দংশনে ঐরকম বোবা হয়ে গেছে। শুধু ভাবে যদি আমি ভয় না দেখাতাম তাহলে তো বিড়ালটা বারান্দাতেই থাকতো, গাছ তলায় যেত না, আর ওকে অকালে মরতে ও হত না। ওকে যতই বোঝানো হয় ওটা বিড়ালটার ভবিতব্য ছিল তাই গাছের নিচে গেছিল। 


বাজের আওয়াজ শুনলেই পুরনো স্মৃতি মনে পড়তো আর বিবেকের তাড়নায় অস্থির হতো, এমনকি মনের গহীনে এটাও কল্পনা করতে থাকে ঐ বিড়ালটা অন্ধকারে ওকে সব সময় দেখতে থাকে আর ওকে নিশ্চই সুযোগ পেলে প্রতিশোধ নেবে বা কোন বড় অভিশাপ দেবে যেটা ওর জীবনকে পুরো তছনছ করে দেবে। পরে ধীরে ধীরে ঠিক হয়েছিলো কিন্তু আজও বাজের আওয়াজ শুনলে ওর সেই দিনের স্মৃতি মনে পড়ে আর ভয়ে কুঁকড়ে থাকে।