সৃষ্টি সাহিত্য যাপনঅপরাধডোনা সরকার সমাদ্দার২৯/০১/২০২১
ফর্সা ছিপছিপে অতনু দে। বেসরকারি আধিকারিক। দেদার অর্থ। আগাগোড়া আভিজাত্যের মোড়কে আঁটা। পাড়ায় যথেষ্ট সুনাম।স্বামী,স্ত্রী ও একটি মেয়ে,অদিতি। ইদানিং অদিতি বাবা মা কে ছেড়ে অন্য…
সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
অপরাধ
ডোনা সরকার সমাদ্দার
২৯/০১/২০২১
ফর্সা ছিপছিপে অতনু দে। বেসরকারি আধিকারিক। দেদার অর্থ। আগাগোড়া আভিজাত্যের মোড়কে আঁটা। পাড়ায় যথেষ্ট সুনাম।স্বামী,স্ত্রী ও একটি মেয়ে,অদিতি। ইদানিং অদিতি বাবা মা কে ছেড়ে অন্যত্র সেটেলড্ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।শান্ত শিষ্ট বাড়িতে প্রায়ই চিৎকার চেঁচামেচি হয়।শান্ত পাড়া।এই ঘটনায় অনেকেই অবাক। অদিতির বয়স ২৫ বছর।প্রতিষ্ঠার প্রায় দোড়গোড়ায়।তার ভালোবাসার স্বীকৃতি দিতে নারাজ বাবা, অতনু।ষাট ছুঁই ছুঁই অতনু আজ বড় হতাশ। মেয়ে পরিবার ছেড়ে একা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আপাদমস্তক ভদ্র শান্ত অতনুর জীবনে এতবড় ঝড় আসবে, একথা উনি নিজেই জানতেন না। প্রতিষ্ঠিত শান্ত অতনুর জীবন ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু জীবনের সায়াহ্নে এতবড় ঝড় ওনার সবকিছু এলোমেলো করে দিল।
অতনুর মেয়ে অদিতি গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর ব্যাঙ্গালোরে আসে এম.বি.এ করতে। ইনস্টিটিউটের একবছর সিনিয়র সিদ্ধান্ত রায়, ওরফে সিধুর সাথে পরিচয়।এই পরিচয় খুব তাড়াতাড়ি প্রেম পর্যায়ে পৌঁছায়। ওরা বিয়ে করবে সিদ্ধান্ত নেয়। দুপক্ষই বাড়িতে জানায়।দু বাড়িতেই খুশীর জোয়ার।একটা ক্যাফেতে সবাই মিট করবে ঠিক হল। সন্ধ্যা সাতটায়।সবাই এল।এরপরই পরিস্থিতি জটিল হতে থাকে।সিধু ও অদিতির পরিচয় পর্বের পর হঠাৎ অতনু বেসামাল হয়ে পড়েন। বিয়েতে ওনার সম্মতি নেই জানিয়ে বেরিয়ে যান।অদিতি বাবার এরকম ব্যবহারে কষ্ট পায়।পরে সিধুর মা জানান যে এই সম্পর্কে ওনার মত নেই। অদিতি ও সিধু সিদ্ধান্ত নেয়, ওরা এবার রেজিষ্ট্রি করে নেবে।সেইসব বাড়িতেও জানায়।এরপরই শুরু হয় চিৎকার চেঁচামেচি। অতনু ও শিল্পী ( সিধুর মা) এবার ওদের দুজনকে ডাকে নামকরা রেস্তোরাঁয়।অতনু জানায়, অদিতি ও সিধু দুই ভাই বোন। ওদের দুজনের বাবা অতনু।
অতনু ও শিল্পীর পরিচয় হয় এক হোটেলে। তখন অতনু অফিসের কাজে প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকতেন।এ রাজ্য ও রাজ্য ছুটে বেড়াতেন। শিল্পীর রূপে উনি মুগ্ধ হন। পরিচয় করে জানতে পারেন উনি মানসিক উৎকন্ঠায় আছেন। ওনার স্বামীর সমস্যা থাকার জন্য উনি কোনদিন মা হতে পারবেন না। অতনু শিল্পী কাছাকাছি আসেন। শিল্পী স্বামীর অজান্তেই অতনুর সাথে মেলামেশা করতে থাকেন। কয়েকমাসের মধ্যেই শিল্পী পেলেন মাতৃত্বের স্বাদ। এবার শিল্পীর স্বামীও নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে স্ত্রীর এই উশৃঙ্খলতাও মেনে নেন। শিল্পীর সন্তানকে নিজের সন্তান বলেই স্বীকৃতি দেন। এরপর অতনু ও শিল্পীর দেখা সাক্ষাৎ নিয়মিত চলতেই থাকে। অতনু তার ছেলের সবরকম দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।
ওদিকে অতনুর বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। সেখানে ওনার এক কন্যা সন্তান হয়। অতনু কিন্তু ওনার স্ত্রী ও কন্যার প্রতিও সব দায়িত্ব পালন করতেন। ইদানিংকালে ওনার স্ত্রী খুব অসুস্থ। অতনু কিন্তু স্ত্রীর প্রতি সবরকম দায়িত্ব পালন করছেন। ওনার স্ত্রী বা কন্যা কোনদিন জানতেন না, ওনার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক।
অদিতি ও সিধু সব শুনে কোনো কথা না বলে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে গেল। সিধু ব্যাঙ্গালোর ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিল। অদিতি পড়াশোনায় ইতি টানল।নিজে একটা এন জি ও তে জয়েন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
অতনুর বাড়ির সামনে একটা বড় গাড়ি এসেছে। সকাল থেকেই বড় বড় লাগেজ উঠছে। আজ অদিতি এন জি ও তে জয়েন করতে চলেছেন।এ বাড়িতে আর আসার ইচ্ছা নেই।মা জড়িয়ে ধরে খুব কান্নাকাটি করছেন। অদিতি মাকে কিছুই জানায়নি।সে চায় তার মা অন্তত তার বিশ্বাস ও ভালোবাসা নিয়ে ভালো থাকুন। অদিতি মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে বলে আশ্বস্ত করে।এরপর ধীরে ধীরে গাড়িতে উঠে চলে গেল।অতনু দোতলার ব্যালকনি থেকে মেয়ের চলে যাওয়াটা দেখলেন। মাঝে মাঝেই চশমা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আজ মেয়ের সামনে দাঁড়াবার মত সাহস তার নেই। নিজের বুদ্ধির উপর ওনার যথেষ্ট আস্হা ছিল। কিন্তু আজ সময়ের চাবুকে তিনি আজ সম্পূর্ণ নগ্ন।