Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#প্রথম_প্রেম#ছোটগল্প #শম্পাশম্পি_চক্রবর্তী  #একটি_পত্রিকা_তে_প্রকাশিত                                ১ --"দেবী আমি চিরকালের জন্য চলে যেতে চাই তোমার জীবন থেকে। তুমি আমার প্রেমিকা। একজন দৃষ্টিহীনের প্রেমিকা তাই হয়েই আমার অন্তর…



#প্রথম_প্রেম

#ছোটগল্প 

#শম্পাশম্পি_চক্রবর্তী  

#একটি_পত্রিকা_তে_প্রকাশিত 

                               ১

 --"দেবী আমি চিরকালের জন্য চলে যেতে চাই তোমার জীবন থেকে। তুমি আমার প্রেমিকা। একজন দৃষ্টিহীনের প্রেমিকা তাই হয়েই আমার অন্তরে তোমার অস্তিত্ব টুকু থাক দেবী। আমাকে বিয়ে করে তুমি কোনোদিন কোনো সুখ পাবে না। দৃষ্টিহীনকে করুণা করা যায় কিন্তু বিয়ে করে তার সঙ্গে সারাজীবন কাটানো হয়তো যায় না। একজন দৃষ্টিহীন তোমাকে কী সুখ দিতে পারবে বিয়ে করে তুমি বলো? তাঁর চাইতে তুমি অমূল্যবাবু কে বিয়ে করো। দেখবে সুখী হবে অনেক অনেক সুখী হবে। উনি নামেও অমূল্য দেখবে ভালোবাসা দিয়ে তোমার জীবন কে উনি ভরিয়ে  তুলবেন।" 

                                      ২        

আমি দেবযানী । শ্রাবণ মিত্র। শ্রাবণ দা। আমার প্রেমিক। কতো সহজে আমাকে কথাগুলি বলে সেদিন চলে গিয়েছিল । রেখে গিয়েছিল তাঁর আর আমার  ভালোবাসার ফ্রেমে বাঁধানো  স্মৃতিটুকু।

 শুধু আমার জন্য।  অন্ধত্বকে সঙ্গী করে আমাকে সঙ্গীহীন করে ট্রেনে উঠে পড়েছিল। জানলার ধারটিতে বসে আমার উদ্দেশ্যে আন্দাজে হাতটাও নেড়েছিল। অন্ধকারের বুক চিরে  হুইসল বাজিয়ে ট্রেনটা একটু একটু করে যখন প্লাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল সম্বিত ফিরেছিল আমার। চিৎকার করে  ডেকে উঠেছিলাম---" শ্রাবণ দা তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারোনা। আমি তোমার দেবযানী । আমি যে তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা।"শুনতে পায়নি শ্রাবণদা আমার কন্ঠস্বর। শুধু শব্দ টুকু স্টেশন চত্বরের দেওয়ালে আঘাত খেতে খেতে  অনুরণনের মতো আমার কাছেই ফিরে এসেছিল।

                                         ৩

 কেটে গিয়েছিল কয়েক মাসের মতো সময়। । এর মধ্যে অনেক চেষ্টা করেও শ্রাবণদার কোনো হদিসই  পাইনি। শুনেছিলাম বেনারসে কিছুদিন থাকার পর  শ্রাবণদা  দিল্লি চলে গিয়েছে । তারপর আর কোনো খবর নেই। বাবার প্রবল চাপে অগত্যা বিয়ে হয়ে গেল আমার অমূল্য সেনগুপ্তর সঙ্গে । বিজনেস ম্যান অমূল্য , সৎ চরিত্রবাণ, অর্থ ও প্রাচুর্য কোনো কিছুরই অভাব নেই। এ সবকিছু দেখেই বাবা অমূল্যর সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়ে দিলেন।  অগ্নিসাক্ষী করে আত্মীয় স্বজনদের উপস্থিতিতে বাবা আমাকে সম্প্রদান করে দিলেন। কিন্তু সম্প্রদান বা অগ্নিসাক্ষী করে বিয়ে দিলেই কী দুটি মনের মিলন সম্ভব ? না কী দুটি শরীরের । তা হয়তো নয় তাই আমি ফুলশয্যার রাতেই অমূল্যকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠেছিলাম--

 ------ "অমূল্য বাবু জানি, আমি আপনার স্ত্রী । আমার শরীর আমার মন প্রাণ এ সবের ওপর আপনার পূর্ণ অধিকার আছে। কিন্তু আমি আপনাকে আমার মন প্রাণ বা আমার শরীর এ সবের কিছুই পরিপূর্ণ ভাবে দিতে পারবোনা কারণ আমি ভালোবাসি আর একজন কে। হয়তো তাঁর কথা আপনাকে আমার বলা উচিত ছিল বিয়ের পূর্বেই। কিন্তু বলিনি। কারণ এই বিশ্বাসে যে আমার প্রেমিকের সঙ্গে আমার পুনরায় সম্পর্ক গড়ে তুলতে আপনি আমাকে সাহায্য করলেও করতে পারেন  যা আমার বাবা কোনোদিন করবেন না।" অমূল্য গভীর বিস্ময়ে  আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ছিলেন  কিছু সময়। হয়তো ভাবতেই পারেননি তাঁর নব পরিনীতা বধূ এমনতর আবদার করতে পারে। কিন্তু আমি তা দেখেও দেখলাম না।  বরং স্বার্থপরের মতো বলে চললাম আমার আর শ্রাবণদার প্রথম পরিচয় থেকে সবকথা। কিভাবে শ্রাবণদা কে  ভালোবেসে ফেলেছিলাম। যে ভালোবাসা নিখাদ ভালোবাসা । আর সেই ভালোবাসা কে সাক্ষী করে দিতে চেয়েছিলাম নিজের সবটুকু শ্রাবণদাকে। কিন্তু তা গ্রহণ না করেই শ্রাবণদা চলে গিয়েছে । শ্রাবণদা একজন বড় মাপের সেতার বাদক। ছোট বেলা থেকেই সঙ্গীত বিশেষ করে সেতার বাদ্যযন্ত্রটি শেখার প্রতি আমার আকর্ষণ ছিল অদম্য । সুযোগটা এসে গিয়েছিল আমার প্রিয় বান্ধবী পৌষালীর থেকে। পৌষালীদের আশ্রিত ছিল শ্রাবণদা। পিতৃ মাতৃহীন অনাথ জন্মান্ধ  শ্রাবণদা কে পৌষালীর বাবা মা নিজেদের সন্তানের মতোই দেখতেন। আমাকে পৌষালীই সেতারটা শ্রাবণদার কাছে শেখার প্রস্তাবটা দিয়ে ছিল কোন এক দিন। আমিও রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর শিখতে শুরু করলাম। একের পর এক রাগ রাগিণী । অপূর্ব সুরের মূর্ছনা জাগিয়ে শ্রাবণ দা আমাকে শেখাতে লাগল বাগেশ্রী, মধুবন্তী, মিঁয়া কী মল্লার, বসন্ত বাহার। আরো আরো কতো রাগ , রাগিণী। শিখতে আর শেখাতে গিয়ে গুরু আর শিষ্যার মধ্যে কখন যে কোথা থেকে গড়ে উঠেছিল এক নিবিড় প্রেমের সম্পর্ক তা দুজনার কেউই আমরা বুঝতে পারলাম  না। ভালোবেসে ফেলেছিলাম দুজন দুজনকে। কিন্তু একদিন বর্ষার রাতে বাইরে প্রবল শ্রাবণের ধারা । বিনা মেঘে বজ্রপাতের ন্যায় শ্রাবণদা বলেছিল---" দেবী তুমি আমাকে ভুলে যাও। আমি অন্ধ। তুমি ধনী পরিবারের একমাত্র মেয়ে । কোনো সুখ তুমি আমার মতো একজন অন্ধের কাছ থেকে পাবেনা। তুমি অমূল্য বাবু কে বিয়ে করে সুখী হও। আমি বেনারসে চলে যাচ্ছি । আমিও ধীরে ধীরে  চেষ্টা করবো তোমাকে বিয়ে করতে না পারার দুঃখ টুকু ভুলে যেতে।"   হঠাত্ করে শ্রাবণদা এমন কথা বললো কেন বুঝতে অসুবিধা হয়নি সেদিন। আমার বাবাই শ্রাবণদার থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন । আর হয়তো শ্রাবণদাকে  প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য করিয়ে ছিলেন যে আমাকে যেন সে ভুলে যায়। আমি শ্রাবণদা বা বাবা কারো কাছেই কোনো প্রতিবাদ করলাম না। জানি বাবার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কিছুই হবে না। আর শ্রাবণদা কে ছেড়ে দিলাম  সময়ের ওপর যদি শ্রাবণদা ফিরে আসে আর আমাকে নিজের বুকের মাঝে টেনে নিয়ে বলে ---" দেবী তুমি আমার। কোনো শক্তি নেই আমাকে তোমার থেকে আলাদা করে।" আশায় বুক বেঁধে নিজে গিয়ে শ্রাবণদাকে বেনারস যাওয়ার ট্রেনে তুলেও দিয়ে এলাম। কিন্তু সময় থেমে থাকলো না। এক প্রকার বাধ্য হয়ে বাবার ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে  বিয়ে করলাম আপনাকে অমূল্য বাবু। এ ছাড়া তো কোনো উপায় ও তো আমার ছিল না। কারণ ততদিনে আমি বুঝে গিয়েছিলাম বাবাকে রাজি না করিয়ে কখনোই শ্রাবণদা কে রাজী করানো যাবে না। আর বাবাকে রাজি করানো দুঃসাধ্য কাজ আমার পক্ষে । এক নিঃশ্বাসে সবটুকু বলে থামতেই লক্ষ্য করেছিলাম অমূল্যকে। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন অপলক দৃষ্টি মেলে। যে দৃষ্টিতে কোনো লোভ নেই ,নেই পাপ শুধুই  মুগ্ধতা ।

                                     ৫

বিয়ের চার মাসের মতো সময় কেটে গিয়েছিল । অমূল্য আমার সম্পর্কে সব জানা সত্ত্বেও আমাকে কোনো কষ্ট দিতেন না। আমার ইচ্ছে অনিচ্ছে গুলোকে যথাসম্ভব সম্মান দিতেন। স্বামীত্ব ফলানোর কোনো চেষ্টাই তাঁর মধ্যে ছিল না। আমার খুশিতেই যেন তার খুশি। কেন জানিনা ধীরে ধীরে আমার প্রতি মানুষটার নিঃস্বার্থ কর্তব্য  দেখে মনে মনে আমার ও মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধা জেগেছিল । আমার জন্য কোনো কষ্ট উনি পেয়ে থাকলে বুকের ভেতরটা নিজের অজান্তেই ছটফট করে উঠতো। জানিনা কেন এমন হতো ? 

প্রশ্ন জাগত মনে --"তবে কী আমি শ্রাবণ দা কে ভুলে যাচ্ছি?"

এমনি সময়ে একদিন আমার স্বামী টিকিট কেটে এনেছিলেন  কলকাতার বিখ্যাত এক সাংস্কৃতিক মঞ্চের সেতার বাদন অনুষ্ঠানের। যেখানে ভারত বিখ্যাত সেতার শিল্পীরা আসছেন সেতার বাজাতে।  এতোদিনের ধামা চাপা দেওয়া ভালোবাসা হঠাত্ করে আগুনের লেলিহান শিখার ন্যায়  লকলক করে জিভ বার করে বুকের ভেতরটা তোলপাড় করে তুললো আমার। বিবাহের পর সেই প্রথম অমূল্যর হাত দুটো ধরে নিজের অজান্তেই বলে উঠেছিলাম---"আমাকে একবারটি  নিয়ে চলুন অমূল্য বাবু । " ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আমার মুখের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে স্মিত হাসি হেসে অমূল্য বলে উঠেছিলেন ---" সে জন্যই তো টিকিট কেটে আনলাম। যদি উনি আসেন আর তোমার সাথে ওনার দেখা হয়ে যায় । কিন্তু তুমি তোমার শ্রাবণ দাকে চিনতে পারবে তো দেবী?

--- " আমি সহাস্য বদনে বলে উঠেছিলাম আমি শ্রাবণদা কে চিনতে পারবোনা হতে পারে ? আর আমাকে শ্রাবণ দা চিনতে পারবেনা তা ও হতে পারেনা। " উনি পুনরায় স্মিত হাসি হেসেছিলেন। 

সময় এগিয়ে চলতে থাকে । দুপুর থেকে বিকেল,বিকেল থেকে সন্ধ্যা হতে বেশী সময় লাগলোনা। অমূল্য  আমার সবচেয়ে প্রিয় গাড়ি বি এম ডব্লিউ গ্যারেজ থেকে বার করে নিজে ড্রাইভারের সিটে বসে আর আমি ওর পাশে। গাড়ি এগিয়ে চলল ক্রমশ সাংস্কৃতিক মঞ্চের দিকে। এক সময় গাড়ি থামলো। শ্রাবণদা কে দেখার জন্য  উত্তেজনায় থরথর করে শরীর আমার তখন কাঁপছে । মাঝে মাঝে এ ও মনে হচ্ছে শ্রাবণদা আমন্ত্রিত হবে তো বাজানোর জন্য। গাড়ি থেকে নাবলাম।  ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলাম  গ্রীন রুমের দিকে। অমূল্য আমাকে অনুসরণ করলেন। গ্রীন রুমের পর্দা সরাতেই অনেকগুলি অচেনা মুখের মধ্যে হঠাত্ চোখ চলে গিয়েছিল  পরম প্রিয় মুখটির দিকে। আনন্দে ছটফট করে উঠেছিল মনটা সেই চেনা হাসি দেখে। সেই মানুষটা আমার এতো কাছে। কতো কতো চেষ্টা করেছি খুঁজে পাওয়ার । কিন্তু পাইনি । এগিয়ে গেলাম শ্রাবণদা র দিকে। ও আমাকে দেখে উঠে দাঁড়াতেই আমি অবাক হলাম। কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠেছিলাম --" শ্রাবণ দা তুমি দেখতে পাচ্ছ । এ কী করে সম্ভব হল ? আমাকে তুমি কোনোদিন দেখনি। শুধু কন্ঠস্বর টুকু শুনে ভালোবেসেছিলে আজ প্রথম আমাকে দেখে চিনতে পারলে কেমন করে? দেখো দেখো শ্রাবণদা আমি তোমার দেবী। তুমি দেখতে পাচ্ছ শ্রাবণদা আমি যে ভাবতেই পারছি না । আমাকে বলো সবটুকু বলো শ্রাবণ দা । কেমন করে তোমার দৃষ্টি ফিরে এলো?" শ্রাবণদা আমার মুখের দিকে চেয়ে থেকেছিলো বেশ কিছু সময় । তারপর আমার ডান হাতখানি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে উঠেছিল---" দেবী তোমাকে না দেখলেও মনে মনে যে মানস প্রতিমার চিত্র এঁকে ছিলাম তার সঙ্গে যে তোমার হুবুহু মিল তা তুমি এই গ্রিনরুমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই মিলে গেছে।তাই তোমাকে চিনতে আমার তোমার কন্ঠস্বর শোনার প্রয়োজন পরেনি। তবে এ আমার পরম সৌভাগ্য যে আমার জন্য একজন দেবদূত পাঠিয়েছেন ঈশ্বর । যিনি আমাকে বিদেশ থেকে নামী ডাক্তার আনিয়ে কলকাতার বড় হসপিটালে আমার চোখে সার্জারি করিয়েছেন নিজের অর্থ ব্যয় করে। যার জন্য আমি দৃষ্টি ফিরে পেয়েছি। কেন আমার জন্য এতো করছেন তিনি জানতে চাইলে হেসেছেন মাত্র। উত্তর দেননি। আজ এই এতো বড়মাপের  শিল্পীদের মধ্যে  আমাকে বাজানোর সুযোগ ও করে দিয়েছেন তিনিই । তবে সেই ব্যক্তি আমার করা প্রশ্নের উত্তর না দিলেও আমি জেনেছি তিনি কেন আমার জন্য এতো করলেন। তোমাকে যে তিনি ভীষণ ভালোবাসেন দেবী। তাই শুধু  তোমাকে খুশি করার জন্য আমার দৃষ্টি তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। নিজের বুকের মধ্যে একটু একটু করে গড়ে ওঠা ভালোবাসার ওপর পাথর চাপা দিয়ে আমার হাতে তুলে দিতে চেয়েছেন নিজের ভালোবাসার মানুষকে । বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন ভালোবাসা শুধু নিতে নয় দিতেও শেখায় দেবী। ওই দেখ তোমার পিছনেই উনি দাঁড়িয়ে আছেন দেবী। কিন্তু দেবী আমি এটুকু এই কয়েকটা মাসে তোমাকে ছেড়ে থেকে বুঝেছি যে আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারলেও উনি পারবেন না। তুমি ওনার অগ্নিসাক্ষী করা স্ত্রী তোমাকে ছাড়া ওনার জীবন অপরিপূর্ণ। আমি এতোবড় অকৃতজ্ঞ হতে পারবোনা যে ওনার থেকে ওনার ভালোবাসা কেড়ে নেবো। তুমি ওনার কাছেই ফিরে যাও দেবী। এ জন্মে তোমাকে না পাওয়ার দুঃখটা নয় তোলাই থাক।" আমি শ্রাবণদার কথামতো  পিছন ফিরে তাকিয়ে ছিলাম। আমার চোখের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছিল অমূল্যর দৃষ্টিপথে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছিলাম সেই মুহূর্তে । কিছু সময় পার হয়ে গিয়েছিল কেমন করে তা জানানেই। সম্বিত ফিরেছিল শ্রাবণ দার কন্ঠস্বরে। মঞ্চে বাজানোর জন্য তার ডাক এসেছে। দ্রুত  শ্রাবণদার  চোখের দিকে তাকাতেই কেন জানিনা মনে হয়েছিল দৃষ্টিহীন শ্রাবণদার দুচোখ জুড়ে যে দেবযানী ছিল আজ আর তার চোখে সে দেবযানী কোথায়? এই কয়েক মাসে সে হারিয়ে গেছে। নিজেকে বারবার  খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করলাম।না পেলামনা সে দৃষ্টি পথে নিজেকে খুঁজে ।

 স্মিত হাসি হেসে বলে উঠেছিলাম---

 ---" ভালো থেকো শ্রাবণ দা।"

 শ্রাবণ দার ঠোঁটের প্রান্তে ফুটে উঠেছিল প্রশান্তির হাসি। ফিরে এসেছিলাম সেদিন অমূল্যর হাত ধরে।,,,,,,,,,,

                                    ৬    

পার হয়ে গিয়েছে বারোটি বছর। 

আমার আর অমূল্যর বৈবাহিক জীবন আজ ভালোবাসায় পরিপূর্ণ । ভালোবাসার প্রতিক স্বরূপ আমাদের একমাত্র ছেলে আবীর। আজ আমাদের আবীরের দশ বছরের জন্মদিন । তার আবদার তার জন্মদিনে একটি সেতার চাই। আবদার রাখবো। শুধু খুঁজে বেড়াচ্ছি তাকে।

আবীরের সেতারের তালিমের জন্য  যে তাকেই চাই। পেয়ে যাবো হয়তো কোনোদিন ।

#সমাপ্ত