Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#বিভাগ_গল্প#শিরোনাম_প্রাক্তন #কলমে_সীমা_রাহা 
মনিকার আজ সকাল থেকে মনটা ভালো নেই।ছেলেটা আজ তিনদিন হয়ে গেল একটাও ফোন করেনি,রনির আবার শরীরটা খারাপ করল নাকি ভেবে ভেবে মনিকার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই পঞ্চাশ বছর বয়সে এতো চিন্তা আর নেওয়…



#বিভাগ_গল্প

#শিরোনাম_প্রাক্তন 

#কলমে_সীমা_রাহা 


মনিকার আজ সকাল থেকে মনটা ভালো নেই।ছেলেটা আজ তিনদিন হয়ে গেল একটাও ফোন করেনি,রনির আবার শরীরটা খারাপ করল নাকি ভেবে ভেবে মনিকার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই পঞ্চাশ বছর বয়সে এতো চিন্তা আর নেওয়া যায় না।আর ছেলেটাও হয়েছে সেই রকম,কি তোর এতো ব্যস্ততা রে, যে বুড়ি মা ভেবে ভেবে আকাশ মাথায় করবে জেনেও একটা ফোন করতে পারিস না।অদ্ভুত ব্যাপার।আসুক আজকে ছেলের বাবা,তিনি আজ এর একটা বিহিত করে ছাড়বেন।যেমন ছেলে,তার তেমন বাবা------কারুর কোন চিন্তা নেই এই ঘরে পরে থাকা একলা মানুষটা কে নিয়ে। যে যার কাজে ব্যস্ত।একজন দেশ উদ্ধার করছেন,আর একজন কোম্পানির জন্য জীবন উৎসর্গ করে বসে আছেন।মনিকারই যতো দায়।কি করা যাবে তিনি যে বঙ্গললনা,জন্মাবধি শিখে এসেছেন "সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে "। বিরক্ত ধরে গেল বাপু,এই সংসারের ঘানি টানতে টানতে।এই সব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে তিনি তার প্রিয় বাগানের গাছগুলিতে জল দিচ্ছিলেন।শুধু এই একটি জায়গায় এলে তার সব দুঃখ কষ্ট তিনি ভুলে যান।তার বোগেনভিলিয়ার উজ্জ্বল রং,গোলাপের মিষ্টি গন্ধ, চামেলির কমনীয়তা, নয়নতারার হাওয়ার সাথে সাথে দুলে দুলে উচ্ছ্বলতার প্রকাশ তাকেও   যেন ষোড়শী করে তোলে।সে গুনগুন করে গান গায় আর তাদের গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে  বলে ---" "ওলো সই ওলো সই,আমার ইচ্ছে করে তোদের মতো মনের কথা কই"।

                   হঠাৎ গেট খোলার আওয়াজে তার বিহ্বলতা ভাঙে।চমকে তাকিয়ে দেখেন একজন ভদ্রলোক গেটে দাঁড়িয়ে আছেন,চোখে রোদচশমা। 

মনিকার বিরক্ত লাগে দেখে,ভাবেন এই ভর বিকেল বেলাতেও তার গৃহকর্তাটির খোঁজে তার কোন সাক্ষাৎপ্রার্থী এসে উপস্থিত হয়েছেন।পুলিশের ঘরনী হবার যে কি জ্বালা তা তিনি তার পঁচিশ বছরের বিবাহিত জীবনে খুব ভালো করে উপলব্ধি করেছেন।কর্তা মানুষটি কোন দিন টেরই পেলেন না কোথা দিয়ে তার সন্তানটি মানুষ হয়ে গেল।সংসারের সব দায়িত্ব থেকে চিরকাল তিনি মুখ ঘুরিয়েই থাকলেন।আর সারাজীবন মনিকা কে শুনিয়ে গেলেন তুমি না আমার যোগ্য অর্ধাঙ্গিনী, তুমি বিনা আমি যে গো মণিহারা ফণী।তোষামোদ আর কি------মনিকা যেন কিছুই বোঝে না!ধুর ধুর-----মনিকার ঘেণ্ণা ধরে গেল সংসারে। খালি জোয়াল টেনে যাও,নিজের মতো বাঁচা ভুলেই গেছে সে।তবে তার স্বামী মানুষটি কিন্তু ভীষণ সহজ সরল, গোবেচারা টাইপ। মনিকা রেগে গেলে বেচারার ভয়ে কাচুঁমাচুঁ হয়ে যাওয়া মুখটা ভাবলেই তার দম ফাটা হাসি বেরিয়ে আসে।ইসসসসস......কি আগড়ুম বাগড়ুম ভাবছে সে,সাক্ষাৎপ্রার্থীটি যে গেটেই দাঁড়িয়ে আছেন।মনিকা একটু এগিয়ে গিয়ে বলেন," আপনি কি সুহৃদ সরকারের সাথে দেখা করতে এসেছেন?

তিনি এখন বাড়িতে নেই।"ভদ্রলোকটি হেসে বলেন -----"না,আমি ওনার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে এসেছি।আমি ওনার বিশিষ্ট বন্ধু।" মনিকা বিস্ময়ান্বিত হয়ে ভদ্রলোককে ভালো করে লক্ষ্য করতে থাকেন,কিন্তু "বিশিষ্ট বন্ধু "-টিকে তিনি মোটেও চিনতে পারেন না,কোনদিন দেখেছেন বলেও মনে করতে পারেন না।ভদ্রলোকটি রোদচশমাটি খুলে তার প্রতি গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জিজ্ঞেস করেন....." দেখোতো মনি,এখনও অচেনা লাগছে?" 

"মনি"-------এ কি শুনছে সে,এই নামে তো তাকে একজনই ডাকত।তরুণদা।

তার ফিরে আসা, মনিকার সাথে আবার কোন ভাবে দেখা হওয়াও কি সম্ভব?না না,এ হতে পারে না,তাকে ভরবিকেলে কি নিশিতে পেয়েছে?ভদ্রলোক আবার বলেন......."মনি,এতোদূর,এতো মনোবল জোগাড় করে এলাম,তোমাকে দেখব বলে,কেমন আছ তুমি জানব বলে,আসতে বলবে না আমাকে তোমার বাড়ির অন্দরমহলে?" মনিকা বাকরহিত অবস্থা কাটিয়ে কোন রকমে বলে," এসো,ঘরে এসো।"

                        তরুনকে নিয়ে গিয়ে তিনি বসার ঘরের সোফাতে বসান।তার বুক এমন ধড়ফড় করতে থাকে যে তিনি নিজে বসতে ভুলে যান।তরুন বলেন "মনি,এক গ্লাস জল দাও,অনেক খুঁজে খুঁজে তবে তোমার বাড়ি পেলাম।সম্পূর্ণ অচেনা জায়গায় ঠিকানা খুঁজে বার করা কি সহজ কথা?এই বয়েসে এতো ধকল কি সয়?"..... বলে তিনি মিটি মিটি হাসতে লাগলেন।মনিকা খুব লজ্জা পেলেন এক গ্লাস জল অন্তত অতিথিকে দেওয়া যে তার কর্তব্য,এই সাধারণ কথাটা ভুলে যাবার জন্য।জল খেয়ে কাঁধের ব্যাগ থেকে একটি নিমন্ত্রণ পত্র বের করে তরুন বাবু মনিকার হাতে দিয়ে বললেন," মনি,আমার একমাত্র মেয়ে শ্রমণার বিবাহ ঠিক করেছি আগামী মাসের দশ তারিখে।তুমি তোমার স্বামী এবং ছেলেকে নিয়ে আমাদের ভবানীপুরের বাড়িতে এলে খুব খুশি হব।বিবাহ যদিও ভাড়া করা বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে,তদাপি একবার পারলে আমাদের বাড়িতেও এসো।মা শয্যাশায়ী, তিনি তোমাকে নিমন্ত্রণ করতে আসছি শুনে বার বার বলেছেন একবার যেন তুমি ওই বাড়ি যাও,তিনি একবার তোমায় দেখতে চান।" 

"কিন্তু কেন তরুনদা, এতোদিন পরে তিনি আমায় কেন দেখতে চান?আমাকে না দেখতে চাওয়াই তো তার ক্ষেত্রে  স্বাভাবিক। আমি তাকে দেওয়া কথা রাখতে পারিনি।না তরুনদা আমি মাসিমার মুখোমুখি হতে পারব না কোনদিন।আমায় তুমি ক্ষমা কোর।".... অদম্য মানসিক যন্ত্রনায় কঁকিয়ে ওঠে মনিকা।হাসি মুখে তরুন তাকে বলে " ধুর পাগলি,এই সব ভেবে মা আজও বসে আছেন ভেবেছ?মনে পরে ছোটবেলায় একটা জামা কিনলেও তুমি মাকে তা দেখাতে যেতে। মা এর হাতে রাধাঁ ইলিশ মাছ খেতে তুমি ভালবাসতে বলে মা ইলিশ মাছ কম থাকলে তার নিজের ভাগের মাছটাই তোমার জন্য পাঠিয়ে দিতেন।সে মৃত্যুর আগে তোমাকে একবার দেখতে চাইবে এটাই তো স্বাভাবিক।তুমি অবশ্যই এসো।মা ভীষণ খুশি হবেন।"

মনিকা নতমস্তকে দাঁড়িয়ে থাকে,কথা যেন তার খেই হারিয়ে ফেলেছে।সে তরুনকে বসিয়ে রেখে এক কাপ চা করতে রান্নাঘরে আসে।বহুদিন আগেকার বহু চাপা পরা স্মৃতি তার মানসপটে একে একে ভাসতে থাকে।তার তখন বারো বছর বয়স, তারা ভবানীপুরের বাড়িতে ভাড়া আসে।তাদের দুটো বাড়ি পরেই ছিল তরুনদাদের বাড়ি।মনিকার দাদা আর তরুনদা একই ক্লাসে ও একই স্কুলে পড়ার সুবাদে খুব ভালো বন্ধু ছিল।আর দুজনেই ছিল খুব মেধাবী। মনিকা তরুনদার কাছে গণিত শিখতে যেতো প্রত্যেক রবিবার সকালে।তরুনদার মা তাকে খুব ভালোবাসতেন।তার মায়ের সাথেও তরুনদার মায়ের খুব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।মনিকার মা আচার বানালে তা যেমন যেতো তরুনদাদের বাড়ি তেমনই তরুনের মা কচুর লতি,ইলিশ মাছ বানালে তা মনিকাদের না দিয়ে কোনদিন খাননি।মনিকার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল যেদিন বেরলো,সেদিনের কথা তার আজও প্রবল ভাবে মনে পরে।স্কুল থেকে ফেরার পথে সে ছুটে গেছে তরুনদাদের বাড়ি মাসিমাকে জানাবে বলে।মাসিমা তার অভাবনীয় ভালো ফলাফলের খবর শুনে বলেন "যা তরুন উপরে ওর ঘরে আছে,তোর অংকের মাষ্টারমশাইটিকে তোর এই অপূর্ব রেজাল্ট এর খবরটা তুই নিজ মুখে দে,খুব খুশি হবে।" মনিকা উপরের ঘরে গিয়ে তার মাধ্যমিকের ফল জানাতেই তরুনের আনন্দের যে স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল তা তার থেকে তিন বছরের ছোট এই ছাত্রীটির কাছে অচিন্তনীয় ছিল।সে তাকে আনন্দে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল "আমি জানতাম,তুই ভালো ফল করবিই।আমি যে কি খুশি হয়েছি তা বলে বোঝাতে পারব না।" মনিকা লজ্জায় মনে হচ্ছিল মাটিতে মিশে যাবে, এমন প্রতিক্রিয়া এবং তার এমন প্রতিফলন সে অবশ্যই আশা করেনি তরুনদার কাছে।তারপর যতো দিন যেতে থাকে তাদের পরস্পরের পরস্পরের  প্রতি আগ্রহ, আকর্ষণ,টানও বাড়তে থাকে।মনিকা যখন বাংলায় অনার্স নিয়ে কলেজে ভর্তি হয় তখন তার দাদা ও তরুনদা সবে কলেজের গন্ডী পেরিয়েছে।দাদা চাকরির পরীক্ষায় বসে একটি সরকারি কেরানীর চাকরীও জোগাড় করে ফেলে।কিন্তু তরুন দা  তখন প্রবল ভাবে জড়িয়ে পড়ে ছাত্র রাজনীতিতে।সে তখন সারাদিন রাজনীতি নিয়ে এতোখানি ব্যস্ত হয়ে পরে যে মনিকার দাদা কল্লোলের সাথেও তার যোগাযোগ প্রায় ক্ষীন হয়ে যায়। মনিকার সাথেও তার দেখাসাক্ষাৎ হতো খুব কদাচিৎ। মনিকার কলেজ শেষ হলে বাড়ি থেকে বিয়ের কথা উঠতে থাকে।ততদিনে মনিকার বাবা কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন।তিনি প্রবল ভাবে উঠে পরে লাগেন মেয়ের জন্য যোগ্য পাত্রের সন্ধানে । মনিকা বাধ্য হয়ে মাসিমার(তরুনের মা) কাছে গিয়ে সব খুলে বলে।তাকে এটাও জানায় যে তার দাদা কল্লোল তার ও তরুনের সম্পর্কের বিষয়ে সব জানে,কিন্তু তরুন যেহেতু ভবিষ্যতের উপার্জনের কথা না ভেবে খালি রাজনীতি নিয়ে পরে আছে তাতে সে চরম বিরক্ত। সে মনিকাকে বলেই দিয়েছে যে, সে হাত পা বেঁধে তার নিজের একমাত্র বোনকে কিছুতেই তরুনের সাথে বিয়ে দিয়ে জলে ফেলে দেবে না।আর বাবার বয়েস হয়েছে এবং তার নিজের যা রোজগার তাতে কোনরকমে সংসার চালিয়ে সে নেবে কিন্তু বোনের বয়েস বেড়ে গেলে সঠিক পাত্র জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।তার কান্না দেখে তরুনের মা তাকে কথা দেন তিনি তার ছেলেকে বোঝাবেন এবং অবশ্যই সে মনিকার দায়িত্ব নেবে,কিন্তু মনিকা যেন একটু অপেক্ষা করে।তিনি কথা নেন যে,মনিকা কোন ভাবেই যেন বাড়ির চাপে দুম করে কোন সিদ্ধান্ত না নেয়।মনিকা কথা দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।পরদিন সে তরুনের সাথেও দেখা করে সব জানায়,তরুন তাকে বলে "তুমি আমার,আমার জন্য অপেক্ষা করা তোমার কর্তব্য,আমি সব ঠিক করে দেব।শুধু তুমি কোনভাবেই বিয়েতে রাজী হয়ে যেও না।তারপর আমি সব দেখে নিচ্ছি"।কিন্তু বাড়িতে উত্তরোত্তর বিয়ের জন্য চাপ বাড়তে থাকে। আর তরুনেরও কোন কাজ খোঁজার ব্যাপারে বিশেষ হেলদোল আছে বলে মনিকা বুঝতে পারে না।এইভাবে কিছু মাস কাটার পর জামসেদপুর নিবাসী শরত সরকারের পুলিসে কর্মরত একমাত্র পুত্রের সাথে মনিকার বিবাহের পাকা কথা হয়ে যায় এবং মনিকাও তার অদৃষ্ট ভেবে তা মেনে নিতে বাধ্য হয়।

বিয়েতে তরুনদার মা এসে একটি কানের দুল দিয়ে তাকে আশীর্বাদ করে যান,কিন্তু তরুনদা আসেনি।তার বিয়ের দুই মাস পরেই দাদা নতুন ফ্ল্যাট কিনে মা,বাবা কে নিয়ে আলিপুরে চলে যায়। তাই তরুনদাদের কোন খবর আর মনিকা পায়নি। 

                  চা নিয়ে মনিকা ঘরে ঢুকে দেখে তরুন এক মনে সোকেসে সাজানো তাদের পারিবারিক ছবিগুলি দেখছে।সে ঢুকতেই জিজ্ঞেস করে "তোমার ছেলে কোথায় চাকরি করে?" "বেঙ্গালুরু,একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করে",মনিকা জানায়।চা খেয়ে তরুন ওঠার উপক্রম করলে মনিকা বলে " তরুনদা,পারলে আমায় ক্ষমা কোর,আমার কোন পথ ছিলনা সেদিন,বিশ্বাস করো।"

তরুন হেসে বলে," মনি.....আজ একটা সত্যি কথা জানিয়ে যাই তোমায়।ভাগ্যিস সেদিন তুমি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলে,তাই হয়ত আমি জীবনটা কে নতুন ভাবে আবিষ্কার করতে পেরেছি।মিথ্যে বলব না,প্রথমে প্রবল কষ্ট পেয়েছিলাম,মনে হয়েছিল এটা তুমি কি করে করলে?আমাদের একসাথে বহুদিন ধরে গড়ে তোলা স্বপ্ন গুলো এইভাবে ভেঙে দিতে পারলে?তাই হয়ত সাহিত্যে বলে মেয়েরা ছলনাময়ী। আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম মনি,আমি জীবনকে আমার মতো করে চালাতে চেয়েছি,ভেবেছি সব আমি যেমন চাইব,তেমনই হবে।তাই তোমাকেও আমি আমার সম্পত্তি ভেবে নিশ্চিন্তে বসে থেকেছি,ভেবেছি সঠিক সময় এলে সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু মনি সময়ের সাথে সাথে ঠোক্কর খেয়ে বুঝেছি সঠিক সময় আসবে বলে কিছু হয়না,প্রতিটা মানুষ সঠিক সময় নিজে তৈরি করে নেয়।নিজ প্রচেষ্টায়।তুমি হারিয়ে গিয়ে আমার জীবন থেকে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিলে যে সময়ে জিনিসের মূল্য না দিতে পারলে তা চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। তারপর আমিও চেষ্টাচরিত্তির করে একটা চলনসই চাকরি জোগাড় করে ফেলি।মনি আজ আমি একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক।মায়ের  জেদের কাছে নতিস্বীকার করে বিবাহও করি। আমার মেয়ে একটি সংবাদপত্রের  আপিসে নিউজ রিপোর্টারের চাকরি করে।ভাগ্যিস সেদিন তুমি আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিলে মনি,নাহলে হয়ত বিবাহ করে ভীষন সুন্দর ভালবাসার সম্পর্কটাকে আমরা কবর দিয়ে ফেলতাম।আমি সেদিন সত্যিই তোমার যোগ্য ছিলাম না,আর অযোগ্য মানুষকে বিয়ে করলে তুমি কোনোদিন সম্মান করতে পারতে না,আর খুব তাড়াতাড়ি সংসার নামক নাট্যমঞ্চে আমরা সং সেজে সারাটা জীবন ঝগড়া বিবাদে কাটিয়ে দিতে বাধ্য হতাম।তার থেকে এই ভালো মনি,আমাদের ভালোবাসার দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থনে কেটে যাবে বাকী জীবনটা। এ কি কম পাওয়া? জানবে জীবন কখনও কখনও মানুষকে হারিয়ে দেয় আসলে তাকে জিতিয়ে দিতে।আসি মনি,ভালো থেকো।আর অবশ্যই এসো আমার মেয়ের বিয়েতে।" বলে ধীর পায়ে তরুন বেরিয়ে গেলেন একাকী মনিকাকে আর একা করে দিয়ে।মনিকা তার জানালা দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে থাকলেন তার জীবনের প্রথম এবং একমাত্র ভালবাসার মানুষটির চলে যাওয়া। বাইরে হঠাৎ করে বৃষ্টি নামল অঝোর ধারায়। এই বৃষ্টির ছাট এসে মনিকার শরীরের অনেকটাই ভিজিয়ে দিল।কিন্তু মন?তার ভেতরে যে

বহুদিনের জমে থাকা মেঘ আজ শ্রাবণের ধারা হয়ে ঝরে পরছে , তা তার দুই নয়নের বারিধারা হয়ে কপোল ছুঁয়ে গড়িয়ে  এসে মিশছে  তার শরীরে সঞ্চিত বৃষ্টির ধারার সাথে।কিছু সম্পর্ক হয়ত জীবনের দেনা হয়েই রয়ে যায়, ইচ্ছে করলেও এই দেনা কোনদিন শোধ করা যায় না। 


বোবা কান্নারা আজ হাহাকার করে তুফান তুলেছে বুকে,

অশ্রু আজও বারিধারা হয়ে থামে এসে চিবুকে।