Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন#ডিসিপ্লিন#কলমে_অর্পিতা_ভট্টাচার্য্য 
মাম্মা তুমি এসে গেছো জানো আজ স্কুলে কি হয়েছে?
ঋক সোনা আমি এখন খুব টায়ার্ড এই অফিস থেকে এলাম তুমি বরং পাপার কাছে গিয়ে বলো কথাটা। আমি রাতে শুনবো।
ঋক পাপার কাছে গিয়ে বললো পাপা জ…

 


#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন

#ডিসিপ্লিন

#কলমে_অর্পিতা_ভট্টাচার্য্য 


মাম্মা তুমি এসে গেছো জানো আজ স্কুলে কি হয়েছে?


ঋক সোনা আমি এখন খুব টায়ার্ড এই অফিস থেকে এলাম তুমি বরং পাপার কাছে গিয়ে বলো কথাটা। আমি রাতে শুনবো।


ঋক পাপার কাছে গিয়ে বললো পাপা জানো আজ না স্কুলে ঋকের কথাটা শেষ হতে না দিয়েই ঋকের পাপা বললো ঋক খুব মাথা ধরেছে একটু মাথাটা টিপে দে তো। ঋক প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বলে তোমাদের কারোর আমার কথা শোনার সময় নেই। আমি থাকবো না এখানে বলে ঋক কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। ঋকের কান্নার আওয়াজ পেয়ে ঋকের মা মধুজা এসে ঋকের পাপা সৌরভকে জিজ্ঞেস করে ঋক কাঁদছে কেনো আমি তো তোমার কাছে পাঠালাম আমার খুব টায়ার্ড লাগছে বলে।


সৌরভ মধুজাকে বলে টায়ার্ড লাগছে মানে কী মধু আমার টায়ার্ড লাগছে না? প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা করছে। একটু ছেলেকে সামলিয়ে রাখতে পারো না। সারাদিন তো ওকে সময়ও দাও না।


"আমি সময় দিই না সৌরভ ঋককে আর তুমি খুব সময় দাও বলো। তুমি যা কাজ করে এসেছো আমিও সেই একই কাজ করে এসেছি" বলে মধুজা গজগজ করতে করতে বেড়িয়ে যায় ঋকের কাছে।


দেখি তো আমার বেটু সোনা কেনো কাঁদছে।


ঋক আরোও কাঁদতে কাঁদতে বলে "আমাকে কেউ ভালোবাসেনা"।


কে বলেছে মাম্মা তোমাকে কেউ ভালোবাসেনা। আমি পাপা দুজনেই তোমাকে খুব ভালোবাসি। আসলে পাপার খুব মাথা ব্যাথা করছে তো তাই তখন তোমার কথা শুনতে পারেনি। আচ্ছা তুমি আমার মোবাইলটা নিয়ে এখন গ্যাম খেলো আমি তোমার জন্য কাল বার্গার নিয়ে আসবো।


মোবাইল আর বার্গারের কথা শুনে ঋক শান্ত হয়। এইরকম ঘটনা চলতেই থাকে। ঋক বুঝে গেছে সে জেদ ধরলে মা বাবা তাকে মোবাইলে গেম খেলতে দেবে বাইরের খাবার খেতে চাইলেও দেবে। সৌরভ আর মধুজা যেহেতু ঋককে সময় দিতে পারেনা তাই ভাবে এইটুকু করে যদি তাদের অভাব পূরণ করা যায়। যে বয়সে বন্ধুদের সাথে খেলবে শারীরিক পরিশ্রম ব্যায়াম করবে সে বয়সে ঋক মোবাইলে বা কম্পিউটারে গেম খেলছে। ঋকের বাইরের খাবারের দিকেও ঝোঁক বেশি। বাড়ির খাবার খেতেও চায়না। যদিও বা বাড়ির খাবার অতি কষ্টে খাওয়ানো যায় তো তাতে বলবে মোবাইলে গেম খেলতে দেবে তো বা যদি পড়তে বসতে বলা হয় তখন বলবে আমাকে বার্গার, পিজ্জা এইগুলো এনে দিলে পড়তে বসবো। না দিলে আরোও জেদ বেড়ে যায়। ঋকের দিদা কয়েকদিনের জন্য মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এসে ঋকের এই কান্ড দেখে তো উনি অবাক। তিনি তাঁর মেয়েকে বললেন "এই কি অবস্থা মধু, ঋক এই বয়সে এতো জেদি তৈরি হয়েছে আর তোরা সেই জেদগুলো মেনে নিচ্ছিস? যখনই মোবাইল চাইছে দিয়ে দিচ্ছিস বাইরের খাবার খেতে চাইলে তাও দিয়ে দিচ্ছিস। একদিন দুদিন বাইরের খাবার খেলো ঠিকাছে কিন্তু প্রায়দিনই তো দেখছি এই অবস্থা। এতো বাইরের খাবার খাওয়া ঠিক হচ্ছে"।


কি করবো বলো মা ঋক এতো জেদ ধরে যে সারাদিন এতো অফিসের কাজ থাকে যে আর ভালো লাগে না তখন মনে হয় এতে যদি ও চুপ করে তাই করুক। আমি আর সৌরভ ও সারাদিন বাড়িতে থাকিনা মালতী দির কাছেই সারাদিন থাকে। তাই ও যা চায় সেটা দিয়ে দিই কিন্তু এখন যতো দিন যাচ্ছে ঋকের জেদও আরোও বেড়ে যাচ্ছে।


মধুজার মা শুক্লা দেবী বললেন "সময় দিতে পারোনা বলে জিনিস দিয়ে বা যা চাইছে তাই দিয়ে ওকে তোমাদের অভাব পূরণ করবে সেটা কখনো সম্ভব মধু? মা বাবার অভাব কোনো কিছুর বিনিময়ে পূরণ হয়না। আমিও চাকরি করেছি তোমার বাবা আর আমি সারাদিন বাড়িতে থাকতাম না সেই বিকেলে ফিরতাম। আমার তো খাতা দেখাও ছিল কিন্তু তার মধ্যে তোমাকে আমরা সময়ও দিয়েছি। তোমাকে খাইয়ে আমিও স্কুলে গেছি। বিকেলে তোমার বাবা তোমার সাথে খেলতেন আমিও তোমার সাথে পুতুল পর্যন্ত খেলেছি। যায় হোক আমি যখন এসেছি এই কয়েকদিনে আমাকে ঋককে ডিসিপ্লিন শেখাতে হবে"।


রাতে খাওয়ার জন্য সৌরভকে ডাকা হলে সৌরভ বললো "আজ এতো তাড়াতাড়ি ডিনার আর চারটে থালা কেনো মধু তুমি আমি আর মা খাবো তো"।


মধুজা বললো "মা বলেছেন আজ থেকে ঋকও আমাদের সাথে খাবে"।


ঋক এখনো খায়নি মধু?


 শুক্লা দেবী বললেন "সৌরভ আজ থেকে ঋক আমাদের সবার সাথে খাবে"।


সৌরভ বলললো "মা আপনি বুঝতে পারছেন না ঋকের খেতে সময় লাগে অনেক তারপর ওর সকালে স্কুল আছে উঠতে পারবে না"।


সেইজন্যই সৌরভ আমি একটু আগে খেতে বসতে বলেছি। সৌরভ ছেলেকে মানুষ করতে চাইলে একটু সময় দাও। কাজ থাকবে সবসময় কিন্তু ছেলের এই বড়ো হওয়ার সময়টা আর পাবে না। ঋকের বড়ো হতে হতে দেখবে ও তোমাদের থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। 


ঋক খেতে বসে দেখে থালাতে ভাত তার পাশে বাটি করে করে ডাল, আলুপোস্ত আর মাছের ঝোল। এইগুলো দেখে ঋক বলে "আমি ফিস খাবো না"।


শুক্লা দেবী বলেন "ঋক আমরা সবাই দেখো ফিস খাচ্ছি সেখানে তুমি যদি ফিস না খাও তাহলে তুমি আমাদের তিনজনের থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছো সেটা ভালো হবে বলো।


কিন্তু দিদুন ফিসে খুব কাটা।


এটা কোনো ব্যাপারই না দাদুভাই। কেমন করে কাটা ছাড়াতে হয় আমি শিখিয়ে দেবো। আগে তুমি আমাদের সাথে ডাল আর আলুপোস্তটা খাও।


আমি যদি ফিস খাই তুমি আমাকে কি দেবে দিদুন? কাল এগরোল খাওয়াবে তো?


এই যে তুমি মাছের কাটা কেমন করে ছাড়াতে হয় শিখছো সেটা একটা নতুন জিনিস শিখছো। যখন তুমি কোথাও বাইরে যাবে তোমার আর অসুবিধা হবে না কোনো সেটা কার উপকার হলো বলোতো ঋক? আর কে তোমাকে শেখালো বলতো?


আমার উপকার হলো দিদুন। আর তুমি তো বললে আমাকে শেখাবে।


তাহলে গিফ্ট কে পাবে?


তুমি দিদুন। আমি তোমাকে গিফ্ট দেবো দিদুন। কি গিফ্ট তুমি নেবে বলো?


আমার কোনো গিফ্ট চায়না দাদুভাই তুমি মা বাবার বড়োদের সব কথা শুনলে সেটাই আমার সবথেকে বড়ো গিফ্ট। এবার তুমি খেয়ে নাও। সৌরভ মধু আজ থেকে ঋক আমার সাথে ঘুমাবে।


কথাগুলো শুনে ঋক বললো "দিদুন তোমার কাছে তো মোবাইল নেই আমি গেম খেলবো কি করে"?


ঋক তুমি আজ গেম খেলবে না আজকে আমি তোমাকে রামচন্দ্রের গল্প বলবো।


"না না দিদুন আমি ওইসব গল্প শুনবো না। আমার গেম না খেললে ঘুম আসে না" বলে ঋক আবার জেদ শুরু করে।


"দেখলে মা তোমাকে বললাম না ঋক শুনবে না" মধুজা বললো।


শুক্লা দেবী হাত দেখিয়ে মধুজাকে থামিয়ে ঋককে বললো "দেখো না দাদুভাই আজ তোমার ঘুম আসে কিনা গল্প শুনে। আচ্ছা আজ তোমাকে আমি তোমার মায়ের ছোটবেলার গল্প শোনাবো"।


মাম্মার ছোটবেলার গল্প আমি শুনবো দিদুন।


রাতে ঋক তার মাম্মার ছোটবেলার গল্প শোনে।মাম্মা কি করতো ছোটবেলায় কি খেতো দুষ্টুমির গল্প। শুক্লা দেবী কথায় কথায় তার মাম্মার সাথে দাদু দিদুন দুজনেই খেলতেন সেটা বলে ফেলেন তখন ঋক বললো "আমার সাথে তো মাম্মা পাপা কেউ খেলে না দিদুন। সবসময় আমি একা থাকি আর ওই মালতী মাসী থাকে। মালতী মাসী সবসময় টিভি দেখে।


এবার থেকে খেলবে দাদুভাই মাম্মা পাপা দুজনেই তোমার সাথে। আর আমি তো এখন আছি আমিও খেলবো তোমার সাথে।


দিদুন তুমি না ঠিক বলেছো আমার গল্প শুনতে শুনতে ঘুম চলে এলো। কাল আমি আবার তোমার কাছে গল্প শুনবো।


আচ্ছা কাল আবার তোমাকে গল্প শোনাবো আমি। এখন ঘুমিয়ে পড়ো।


গুড নাইট দিদুন।


"গুড নাইট" বলে শুক্লা দেবী আদর করে দেয় ঋককে।


ঋকের একদিন রাতে ঘুম ভেঙে যায় তখন দেখে শুক্লা দেবী বই পড়ছেন। সেটা দেখে ঋক বললো "দিদুন তুমি এতো রাতে বই পড়ছো কেনো"?


শুক্লা দেবী বললেন "বই না পড়লে আমার ঘুম আসে না ঋক তাই প্রত্যেকদিন শোওয়ার আগে আমি গল্পের বই পড়ি"।


আমার তো কোনো গল্পের বই নেই দিদুন সব পড়ার বই।


আচ্ছা আমি তোমাকে কিনে দেবো অনেক গল্পের বই।


এরপর বেশ কয়েকমাস কেটে যায় সৌরভ আর মধুজা দেখে ঋকের মধ্যে এক অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে। বেশ ডিসিপ্লিন মেনে সব কাজ করছে। যা দিচ্ছে তাই খাচ্ছে। মোবাইল কম্পিউটার আর ধরেনা। বিকেলের দিকে দিদুনের সাথে ব্যাট বল নিয়ে খেলে। রাতে গল্পের বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ে। শুক্লা দেবী একদিন সৌরভ আর মধুজা দুজনকেই বললেন "এবার বাড়ি যেতে হবে অনেকদিন এখানে থাকলাম"।


সৌরভ কথাটা শুনে বললে "আপনি আছেন বলে ঋক আর জেদ করেনা কিছু। ওর মধ্যে অনেক চেঞ্জ এসেছে। আপনি চলে গেলে ঋক আবার যদি আগের মতো হয়ে যায়"।


মধুজাও বললো"মা তুমি আর কয়েকদিন থেকে যাও না"।


শুক্লা দেবী ওদের দুজনকেই বললেন "আমি থাকতেই পারি তাতে কোনো লাভ হবে? আমি শুধু তোমাদের বলবো বাচ্চারা যা দেখবে তাই শিখবে। ভালো দেখলে ভালো শিখবে খারাপ দেখলে খারাপ শিখবে। বাচ্চারা সবসময় অনুকরণ করে বড়োদের তাই বলছি ওকে একটু সময় দাও। আমি জানি তোমাদের অনেক কাজ আছে অফিস আছে তার মাঝে ঋককে সময় দাও। রাতের খাওয়াটা এক সাথে গল্প করতে করতে খাও। তোমরা ঘরের যে কাজ করছো তাতে ওকেও সাহায্য করতে বলো তাতেও ঋক তোমাদের কাছে পাবে। ওর সাথে ছুটির দিনে খেলো। কাজ যখন থাকবে ওকে বোঝাবে তোমাদের অনেক দায়িত্বের কাজ আছে সেগুলো না করলে তোমরা বকা খাবে দেখবে ও ঠিক বুঝবে। সন্তানদের সাথে সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হয় যাতে ওরা কোনো ভুল করলেও বাবা মা কে বলতে পারে। 


মধুজা বলে ঠিক বলেছো মা এবার থেকে আমরা ঋকের সাথে বন্ধু হয়েই মিশবো।


#সমাপ্ত