Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি_সাহিত‍্য_যাপনবিভাগ-গল্প    শিরোনাম-ভয়          কলমে- বন্দিতা পন্ডিত।
****** মাম্মা আমার কাছে একটু বসবে? কি হয়েছে সোনা তোমার,কাছে গিয়ে মিতা ছোট্ট তুলতুলিকে কোলে তুলে মাথায় হাত বোলাতে লাগলো কদিন ধরে মিতা লক্ষ্য করছে তুলতুলি ক…

 


সৃষ্টি_সাহিত‍্য_যাপন

বিভাগ-গল্প

    শিরোনাম-ভয়

          কলমে- বন্দিতা পন্ডিত।


****** মাম্মা আমার কাছে একটু বসবে? কি হয়েছে সোনা তোমার,কাছে গিয়ে মিতা ছোট্ট তুলতুলিকে কোলে তুলে মাথায় হাত বোলাতে লাগলো কদিন ধরে মিতা লক্ষ্য করছে তুলতুলি কেমন যেনো কারণ-অকারণে ভয় পাচ্ছে।


******** মিতা ও তন্ময় দত্তের মেয়ে তুলতুলি।এই তিন বছর পূর্ন হলো,খুব ধুমধাম করে জন্মদিন পালন করলো।তারপর থেকে যত বিপত্তি,তুলতুলি মাকে কিছুতেই ছাড়তে চায় না।


******** জানিনা কেন যে তুলি এত ভয় পাচ্ছে বুঝতে পারছি না বলে তন্ময়ের দিকে তাকায় মিতা।কি করা যায় বলোতো? আরে তুমি মিথ্যে ভয় পাচ্ছো।আসলে কি বলোতো ওর জ্বরের জন্য শরীরটা দুর্বল হয়ে পরেছে তাই ও ওরকম করছে।এক কাজ করলে হয় না,কাল যদি আমরা ডাক্তার সেনের কাছে তুলিকে নিয়ে যাই তবে কেমন হয়?ডাক্তার সেন একজন মনোচিকিৎসক।তাহলে তো খুব ভালো হয় উনি বুঝতে পারবেন কি হয়েছে আমাদের তুলি সোনার।ঠিক আছে তাই হবে বলতে বলতে মিতা একটু অন্যমনা হয়ে পরে।ভাবতে থাকে আমাদের দুজনের প্রভাব তুলির উপর পরে নিতো,,নানান চিন্তায় মিতা নাজেহাল।তুলির শরীর খারাপ হলে মিতার কিছুই ভালো লাগে না।


********* ব্যস্ত মিতা,,একটা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা সকাল ৮টার মধ্যে বেড়িয়ে যেতে হয় তাই সব কাজের ভার প্রতিমার উপর দিয়ে নিশ্চিত হয় মিতা।প্রতিমা মেয়েটি খুব ভালো সদা হাসিখুশি প্রতিমা তুলিকে নিজের মেয়ের মতন আগলে রাখে।তাই মিতা ও খুব খুশি।স্কুলে বেড়োবার আগে মিতা তুলিকে তৈরী করে দেয়।আড়াই বছর বয়সে তুলতুলিকে নামী ইংলিশ মিডিয়ামে স্কুলে ভর্তি করে দেয় তন্ময়।ঐটুকুন মেয়ে তুলি যা শুনতো চট করে ধরে নিতো।আর পাকা বুড়ির মতো মাথা ঝাঁকিয়ে সেটাই পুরণাবৃত্ত করতো।সকলেই বলতো খুব বুদ্ধিমতি হবে।আর মায়াবী চোখে সবার মন জয় করতো।


--------তিমা তিমা,,,দেখো দেখো আমার মেয়েকে কি সুন্দর সাজিয়েছি।

--------সত্যিতো তুলি সোনা মেয়েকে খুব সুন্দর লাগছে।আদর করে তুলিকে কোলে তুলে নেয় প্রতিমা।সে ও লক্ষ্য করেছে জন্মদিনের পর থেকে তুলি সোনা দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে।কারণ অকারণে ভয় পাচ্ছে।জ্বরটা ও ভীষণ ভাবে কাহিল করে দিয়েছে।দাদা বৌদির কালকের আলোচনা শুনেছে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার জন্য।


************ তুলি জন্মানোর আগে থেকেই--অসহায় প্রতিমা এই বাড়ীতে কাজে ঢুকেছে।তুলি জন্মানোর পর প্রতিমা নিজের মেয়ের মতন মানুষ করেছে তুলিকে।তাই তো তুলির উপর খুব টান।তুলি ও প্রতিমার খুব ন্যাউটা।প্রতিমা ও তুলির জন্য খুব চিন্তায় পরে।কাল তো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে,,দেখা যাক ডাক্তারবাবু কি বলেন।


*********** মিতা ও তন্ময় দুজনেই তুলিকে পরেরদিন ডাক্তার সেনের চেম্বারে নিয়ে এলো।ডাক্তার সেন নানান ভাবে তুলিকে পরীক্ষা করে,,,তুলির সাথে গল্প জুড়ে দেন--বলোতো তুলি সোনা,তুমি কাকে বেশী ভালবাসো মাম্মা না পাপাকে ?? আমি তো দুজনকেই ভালবাসি বলেই তুলি দুজনের হাত চেপে ধরেছে,ডাক্তার সেনের নজরটা এড়ালোনা।ডাক্তার সেন তন্ময় ও মিতাকে বললেন আপনাদের সমস্যা ছোট্ট তুলির মনে দাগ কেটেছে।সেই কারণে ও ভয় পায়।আপনারা চাইলেই শিশুটি আগের মত হয়ে যাবে।


************ তিন চার মাস ধরে তন্ময় ও মিতার মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি চলছিলো--মাঝরাতে দুজনের কথায় তুলি জেগে যেত আর চুপ করে ভয়ে চোখ বন্ধ করে থাকতো।ঐটুকুন শিশুতো মা-বাবার তর্ক-বিতর্কের ভাষা বুঝতো না।দিনের পর দিন চলাকালিন তার মধ্যে একটা ভয়ের পর্দা পরে যে মা,তাকে ফেলে চলে যাবে।আর জ্বরে শরীরটা দুর্বল হওয়ার দরুন ছোট্ট তুলির মনে ভয়টা চেপে বসেছে।


********** বাড়ী ফিরে তন্ময় ও মিতা চুপচাপ হয়ে যায়।দুজনের যে ''প্রাণ ভোমরা এই ছোট্ট তুলি,ওর কিছু হয়ে গেলে আমরা বাঁচবো কি করে? মিতা তন্ময়ের হাত ধরে কেঁদে ফেলে তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও আমি আর আজে বাজে কথা বলে ঝগড়া করবো না।আমরা দুজনে আবার আগের মতন হয়ে যেতে পারি না বলো?ঠিক বলেছো মিতা আমরা আগের মতন হয়ে তুলিকে আনন্দ দেবো।নিজেদের সমস্যা সমাধানের শপথ নিয়ে দুজনে হাতে হাত রাখলো।--ডাক্তার সেনের কথা তাদের মনে ভীষণ ভাবে রেখাপাত করে--"কিছু মনে করবেন না মিঃদত্ত,স্বামী ও স্ত্রীর সমস্যা বাচ্চাদের মধ্যে-ইনসিকিওরিটি সৃষ্টি করে,,এর ফলে বাচ্চাদের মন ও শরীরের ক্ষতি হয়।


***************** আজ তন্ময় ও মিতা খুব খুশি অনেকদিন বাদে তুলতুলির মুখ ভরা হাসিতে নিজেদের জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছে।ছোট্ট তুলি মা বাবার গলা জড়িয়ে বলতে থাকে--আমার মাম্মা খুব ভালো আমার পাপা খুব ভালো।।


                   **** সমাপ্ত ****