Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন#বিভাগ_অণুগল্প_কোলাজ#শিরোনাম_নানা_রঙের_দোল#কলমে_সমর্পিতা_হালদার
  (১)
#সাদা_আবির
হসপিটালের বেডে একা শুয়ে আছে ছোট্ট তিতাস। অতিমারী ছাড়েনি তাকেও। বাবা-মা কেউ নেই কাছে। চোখের সামনে শুধু নার্স আর ডাক্তার; তাও পিপিই…

 


#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন

#বিভাগ_অণুগল্প_কোলাজ

#শিরোনাম_নানা_রঙের_দোল

#কলমে_সমর্পিতা_হালদার


  (১)


#সাদা_আবির


হসপিটালের বেডে একা শুয়ে আছে ছোট্ট তিতাস। অতিমারী ছাড়েনি তাকেও। বাবা-মা কেউ নেই কাছে। চোখের সামনে শুধু নার্স আর ডাক্তার; তাও পিপিইর আড়ালে মুখ দেখা যায় না তাদের। এমতাবস্থায় যে নার্স আন্টি ওর দেখাশোনা করে, হঠাৎ একদিন আবরণের আড়াল থেকেই তার চোখদুটো দেখে ঠিক যেন মনে হলো মায়ের চোখ। একইসাথে যেন মমতা আর আশ্বাস ঝরে পড়ছে  তার দু'চোখ থেকে।


সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসার পর মা-বাবা-ভাইয়ের সঙ্গে দোল খেলতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় তিতাস। মনে পড়ে যায় নার্স আন্টির চোখদুটো। ওরা রং খেলছে; কিন্তু সে তো একইভাবে সেবা করে চলেছে কারোর, সব উৎসব-আনন্দ ছেড়ে! মাকে ডেকে জানতে চায় তিতাস "নার্স আন্টির পিপিইর মতো সাদা আবির হয় না মা?"


(২)


#দোল_খেলা


বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে দোল খেলা চলছে। মিষ্টিও এসেছে প্রচুর। বিলু এককোণে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে মায়ের জন্য। সবেমাত্র দুটো বাড়িতে কাজ পেয়েছে মা; তাই খাবারটুকু কোনমতে জুটছে দু'বেলা। মিষ্টি তো স্বপ্ন! আবিরও জোটেনি এতোটুকু।


রিল্টু বলে "আর খেতে পারছি না মাম্মা!" মা বলল "ফেলে দে।" ঘাসের উপরেই বাক্সসুদ্ধ মিষ্টিটা রেখে দৌড়ে আবার রং খেলতে চলে গেল রিল্টু। বিলু গুটিগুটি পায়ে এসে মিষ্টির বাক্সটা তুলে নিল হাতে। মায়ের জন্য অর্ধেকটা মিষ্টি রেখে বাকি অর্ধেকটা মুখে দিল। আহা! অমৃতের স্বাদ বুঝি এমনই হয়। মা এলে বাক্সের গায়ে লেগে থাকা আবিরটুকু নিয়ে লাগিয়ে দিল মায়ের গালে, মাও চোখের জলে সে আবির ছোঁয়ালো ছেলের কপালে। ওরাও দোল খেললো ওদের মতো করে।


                                (৩)


#পবিত্রতার_রং


"ছুঁয়ে দিল রে! সব অপবিত্র করে দিল। এখন এই আবির আমার রাধামাধবের পায়ে দেবো কীভাবে? কোন অজাত কুজাতের মেয়ে! বাপেরও তো ঠিক নেই কোনো! একে ছাড়া আর কোনো কাজের লোক পেলি না মৌ?" দত্তদিদার চিৎকারে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে থাকে মিলি।


কিছুক্ষণ পরে বাইরে হইচই শুনে দত্তগিন্নি পুজোর আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালে মিলি হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলে "দাদু বাগানে তোমার রাধামাধবের পুজোর জন্য ফুল তুলছিল। হঠাৎ পায়ের কাছে একটা সাপ! তবে কিছু হয়নি, আমি মেরে দিয়েছি সাপটাকে।" মিলির মাথায় হাত বুলিয়ে মৌ মাকে বলে "ওর বাপের ঠিক না থাকলেও, আমার বাবার প্রাণটা কিন্তু ওই বাঁচালো আজ!" দত্তগিন্নি হাতে ঠাকুরের আবির নিয়ে মিলির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন নিষ্পলক।


                             (৪)


#ফাগুনে_শ্রাবণ


সব ফাল্গুন বসন্ত আনে না,

শ্রাবনের মেঘ দু'চোখ ঢেকে রাখে।

বর্ষাদিনেই আসবে হয়তো প্রিয়,

ফাগুনের রঙ অপেক্ষাতে থাকে।


                              (৫)


#পলাশের_রঙে


এমন পলাশের দিনেই তো মৈনাকের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল ঐশীর! তবে কেন আজ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সামনের গাছের পলাশগুলোকে এমন বর্ণহীন মনে হয় তার? কোথায় হারালো মৈনাক? চাতকের মতো অপেক্ষা করে থেকেও বেশ কিছুদিন হলো মৈনাকের কাছ থেকে সে না পেয়েছে কোন ফোন, না কোন মেসেজ।


হঠাৎ ফোনে মেসেজ ঢোকার শব্দে চোখ মুছে ঐশী দেখে মৈনাক লিখেছে -"বর্ডারে ডিউটি পড়েছিল। তুমি চিন্তা করবে, তাই জানাইনি। কাল বাড়ি ফিরে রং মাখাতে যাব তোমায়। আর সঙ্গে নিয়ে যাব কয়েকটা পলাশ ফুল। লাগিয়ে দেবো তোমার চুলে। 


দু'চোখে খুশির অশ্রু নিয়ে মোবাইলটাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে ঐশী। অভিমান ভেসে যায় চোখের জলে। মনে মনে গর্ববোধ করে মৈনাকের জন্য। তার প্রেমিক যে সবার থেকে আলাদা! দেশকে রক্ষা করে সে। একছুটে ঘরে গিয়ে কালকের জন্য পলাশ রঙের শাড়িটা বের করে রাখে আলমারি থেকে।


                             (৬)


#রাঙিয়ে_দিয়ে_যাও


দোলের দিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই শুভশ্রীর মনে পড়ে যায় দু'বছর আগের এই দিনটার কথা। সেবারেও শান্তিনিকেতনে এসেছিল ওরা। খোলা চুলে প্রভাতী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল সে। আর এবছর! শরীরটা এখন একটু ভালো হলেও কেমো চলছে এখনও। মাথায় আজ আর চুল নেই একটাও।


ভারাক্রান্ত মনে উইগটা হাতে তুলতেই দীপক এসে ওর হাত চেপে ধরে বলে "রেখে দাও। এতেই তুমি সবচাইতে সুন্দরী। এটাই তো আমার শ্রী; যার হৃদয়ের সৌন্দর্য্য মুখে প্রকাশ পায় সারাক্ষণ। শুধু শুধু নকল জিনিস দিয়ে তোমার নিজস্বতাকে ঢাকতে যাবে কেন?" দু'চোখে আনন্দাশ্রু আর মুখে হাসি নিয়ে উইগটা ছুঁড়ে ফেলে দেয় শুভশ্রী। ভালোবাসার রঙে ওরা রাঙিয়ে দেয় একে অপরের অন্তর।


সবার জন্য রইল দোল উৎসবের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। দোলের নানা রঙের ছোঁয়ায় রঙিন হয়ে উঠুক সবার জীবন, সবার অন্তর।

©চুপকথা-কলমে সমর্পিতা হালদার