#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন 'হঠাৎ করে আজ ভোরে'অর্পিতা কামিল্যা।
আমি চমকে উঠলাম!দর দর করে ঘামছি! ভয়ে ভয়ে বিছানার পাশে চেয়ে চেয়ে দেখছি। জিজ্ঞেস করলাম-- "আ আ আ আপনি কে এ এ?""কেন রে মেয়ে! এই ঢিলেঢালা আলখাল্লা, সাদা সা…
#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন
'হঠাৎ করে আজ ভোরে'
অর্পিতা কামিল্যা।
আমি চমকে উঠলাম!দর দর করে ঘামছি!
ভয়ে ভয়ে বিছানার পাশে চেয়ে চেয়ে দেখছি।
জিজ্ঞেস করলাম-- "আ আ আ আপনি কে এ এ?"
"কেন রে মেয়ে!
এই ঢিলেঢালা আলখাল্লা, সাদা সাদা গোঁফ দাঁড়ি, দেখেও যে চিনতে পারলি না তুই ভারী?"
ঢোঁক গিলে বললাম--"তু তু তুমি?"
"হ্যাঁ রে মেয়ে, এই তো আমি,
তোদের শহরেই তো তোরা কত জায়গায়
মোড়ের মাথায়, পার্কের ভিতরে।
আমার স্ট্যাচু বানিয়ে রেখেছিস কত কান্ড করে।
বছরে একদিন গিয়ে ঢং করে,
সং সেজে সব রাবীন্দ্রিক হয়ে,
আমাকে মালা পরিয়ে,
গাঁক গাঁক করে চিৎকার করে
বলিস-'তুমি রবে নীরবে এ এ এ এ'--
কেন ?আমি সরবে কেন নয় রে মেয়ে?"
আমি থতমত খেয়ে আছি তখনও,
কিছু যে বলবো তার মতো অবস্থায় নেই তখনও।
"সারা বছর আমার গায়ে ধুলো পড়ে।
যত কাক ,বক এসে নোংরা করে।
আর তোরা যে যার মতো
সাহিত্যিক হয়েছিস যতো?
আবার কাল দোলের সারাদিন হলো- 'ওরে গৃহবাসী'!
--যত সব পচা বাসি।
মনে রঙ নেই,শুধু কে গেরুয়া আবীর মাখছে,
কে সবুজ আবীর, কে লাল আবীর,
খালি সেই চিন্তা মাথায় তোদের ঘুরছে! "
" তুমি! রবিঠাকুর!"আমি একটু সাহস নিয়ে বললাম,
আমার আবারও একটু মনের মধ্যে
বল ভরসা এলো,তাই বলেই ফেললাম--
"আমি তো খুব সাধারণ, গৃহবধূ, আমি একা ।
কিছু উদ্যোগ নিতে গেলেই- হয় লোকজন আমাকে পাগল বলবে -না হয় বলবে বোকা।
আমাকে পা দিয়ে ঠেসে ঠুসে
মাটিতে পুঁতে দেবে শেষে।"
"তা বলে নিজের ইচ্ছা মতো ভালো কিছু করবি না!এটা কিন্তু ঠিক না ?"
ততক্ষণে আমি একটু ধাতস্থ--
"হ্যাঁ তা ও ঠিক,কিন্তু-- তুমি তো এ্যাতো,
ভালো ভালো কাজ করলে,
নোবেল পুরস্কার পেলে,
তবুও ঐ যে হচ্ছে অবমাননা!
তার বেলা তো কিছু করাই যাচ্ছে না ?"
সবে শুরু হয়েছে কথোপকথন।
দেখি রবি ঠাকুরের পাশেই তখন,
আর একটি ছায়ামূর্তি!
ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠলো আর একজন।
গায়ে তার মিলিটারী পোষাক আশাক,
মাথায় টুপি,চোখে চশমা, টুপির নীচে টাক!
আমি মনে ভরসা করে বলেই ফেললাম--
"রবি ঠাকুর? তোমার পাশের জন?উনি বুঝি নেতাজী? ঠিক যেন চিনতে পারলাম।"
"হ্যাঁ ,তুমি ঠিক চিনেছো,
অবমাননার কথা আলোচনা করছো,
শুনে ভাবলাম টাইম মেশিনে
একটু ওয়ার্ল্ড ভিজিট করি,
তোমার সাথে, আমি ও মিট করি।"
-- মিলিটারী পোষাক পরিহিত ভদ্রলোক যিনি ,
নিজেকে নেতাজী বলে পরিচয় দিলেন তিনি।
"এ্যাঁ! আ আ আ আপনারা,
টাইম ট্রাভেল করতে পারেন?-
তাহলে দিকে দিকে এ্যাতো প্রবলেম,
এগুলো সল্ভ করে দিলেই তো পারেন!"
"কেন? তোমাদের জন্যে নিজের প্রান দিয়েছি,
আর এর চেয়ে বেশী কি করবো ?
স্বাধীনতার মূল্য বোঝার ক্ষমতা তোমাদের আছে,
আমি আর নতুন করে কি বোঝাবো?
এই রকম টা হবে আমিও যে ভাবি নি।
আজ আমার কাছে
পাওয়ার পোজিশন আছে।
তখন ছিলো না।
তাই ভবিষ্যত ছিলো অজানা।
তুমি! তোমরা!
হাত পা নেই তোমাদের?
করে কম্মে খাওনা তোমরা?
এইতো দেখছো, অপারগ,আমরা।
শুধুমাত্র টাইম ট্রাভেল করে,
এ্যাজ আ প্রোজেক্ট ইমেজ কমিউনিকেট করে
আসতে পারি আমরা।
এর চেয়ে বেশী কিছু এখন পারিনা আমরা।
আমাদের ও আছেন সিনিয়র
উনার সৃষ্টির নিয়ম মেনে সবাই কে চলতে হয়
মেজর থেকে মাইনর।"
"কেন?তোমরা ,
তাহলে কি করবে মানুষ রা?
মান' হুঁশ নেই!"---
ঐ দুই প্রোজেক্ট ইমেজর মতো মানুষ দুটির পাশে ,
আর একটা অস্পষ্ট ইমেজ!ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে আসে! গেরুয়া পোষাক ধারণকারী এক সুদর্শন ব্যাক্তি!
তাঁর মুখেই শুনলাম আচমকাই এই উক্তি।
"এ্যাঁ,আপনি কি আমাদের নরেনদাদা!"
--কৌতূহলী আমি,তখন চোখে দেখছি ধাঁধা।
হ্যাঁ, তুমি ঠিক ধরেছো,
এই যে জেগে উঠেছো।
আমি তো সবাই কেই
বলেছি জাগতেই।
রঙ নিয়ে রঙ খেলা সেতো পরম আনন্দের।
সেখানে গেরুয়া, সবুজ, লাল সব আবীরের মাখামাখি হবে।
অশুভ হোলিকা দহনের পরে
শুভ সূর্যের আলোর চতুর্দিক রঙিন হবে।
আলোকিত হবে।
মনটা সূর্যের আলোর মতো সাদা হয় যেন।
ঐ সাদা রঙেই সব রঙ মেশানো থাকে, জেনো।
"তোমাদের কথাগুলো এক্কেরে খাঁটি বটে ,
কিন্তু আমি একা যে, কি করে পারি
সংসারের সাত কাজে
সামান্য সাহিত্য চর্চা,তাতেই হাজার ব্যাঘাত ঘটে!
তার উপর আবার।
পাবলিক কাউন্সিলিং!
নৈব নৈব চ! অসম্ভব ব্যাপার।
এই এ্যাতো কিছুর পরে
পরের উপকার করার চেষ্টা, সেটাও লড়াই করে!
আর রাত বিরেতে তোমরাও!
বিহ্যাভ লাইক জ্ঞ্যানোদা পিসেমশাই!হাউ স্ট্রেন্জ!"
কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই খুব কাশি!
সর্দিগর্মি, কজ অফ সিজিন চেন্জ।
আমার শরীরটাও নেই খুব একটা ভালো।
কাশতে কাশতে তারপর হঠাৎ
আমার ঘুম টা ভেঙে গেলো!
দেখলাম-সকালের সূর্যের আলোয় আমার ঘরটা! ভরে গেছে! সূর্যের আলোয় রাঙিয়ে নিলাম মনটা।
----------------সমাপ্ত।