Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন #গল্প_কবিতা#শিরোনাম_মন_কথা_বলে#কবির_নাম_সমর্পিতা_হালদার#তারিখ_১৬_০৩_২০২১
কখনও কখনও ঠোঁট দুটো শব্দ হারায়, তখন মন কথা বলে।
প্রিয় মানুষটার সঙ্গে অনেক অনেকদিন পর দেখা।দুজনেই নিশ্চুপ। নিছক 'কেমন আছো', '…

 


#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন 

#গল্প_কবিতা

#শিরোনাম_মন_কথা_বলে

#কবির_নাম_সমর্পিতা_হালদার

#তারিখ_১৬_০৩_২০২১

   


কখনও কখনও ঠোঁট দুটো শব্দ হারায়, তখন মন কথা বলে।


প্রিয় মানুষটার সঙ্গে অনেক অনেকদিন পর দেখা।দুজনেই নিশ্চুপ। নিছক 'কেমন আছো', 'ভালো আছি' গুলো বড্ড ফিকে শোনায় সেই মুহূর্তে। দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে নিষ্পলক; আর মন কথা বলে।


বাবা রোগশয্যায়। মেয়ে দূরে থেকে ছটফট করলেও অনেকদিন আসতে পারেনি বাবাকে দেখতে। এতদিন পর প্রথম যখন কাছে এসে দাঁড়ায়, দুজনেরই চোখগুলো চিকচিক করে ওঠে। বাবার মুখে স্নেহমাখা হাসি, আর বাবাকে ঐ অবস্থায় দেখে মেয়ের চোখে যন্ত্রণা আড়াল করার চেষ্টা প্রাণপণ। কারোর মুখেই নেই কোন শব্দ। শুধু, মন কথা বলে।


সদ্যোজাত সন্তানকে প্রথমবার কোলে নিয়ে মা যেন হাতে স্বর্গ পায়। নিজের সমস্ত সত্তা দিয়ে অনুভব করতে চায় সন্তানের স্পর্শটাকে। চারিদিকে প্রচুর কোলাহল। চলেছে অভিনন্দন বিনিময়ের পালা। শুধু মা আর শিশুটির মাঝে মুহূর্তেরা সব থমকে দাঁড়ায়। মুখে নেই কোন ভাষা। তবু, মন কথা বলে।


দুই বন্ধুর মধ্যে খুব ঝগড়া হয়েছে কাল। দুজনেই প্রমিস করেছে কেউ কারো সঙ্গে কথা বলবে না। টিফিন টাইমে ক্লাসরুমের সবাই যখন এলোমেলো কথায় একে অপরের সঙ্গে টিফিন ভাগ করে নিতে ব্যস্ত, দুজোড়া চোখ তখন আড়চোখে দৃষ্টি বিনিময় করে। নিজের সুস্বাদু টিফিনটা বড় বিস্বাদ লাগে সেদিন। জোর করে প্রমিস রাখতে ঠোঁট বাক্যহারা। কিন্তু, মন কথা বলে।


ঠাম্মিকে দেখতে বৃদ্ধাশ্রমে হঠাৎই হাজির হয় নাতনি। বৃদ্ধা এখন আর আশাও করেন না যে কেউ তাঁকে দেখতে আসবে কখনও। তাই আদরের নাতনির এই অপ্রত্যাশিত আগমনে ঠাম্মি আনন্দে আত্মহারা। ভেবে পান না কী করবেন নাতনিকে নিয়ে, কোথায় বসতে দেবেন তাঁর এই ছোট্ট ঘরটাতে। নাতনি মুচকি হেসে ঠাম্মির বিছানায় তাঁর কোল ঘেঁষে বসে দুহাত দিয়ে ঠাম্মিকে জড়িয়ে ধরে চুমু এঁকে দেয় তাঁর কোঁচকানো গালে। ভিজে যায় ঠাম্মির দু'চোখ। ভেজে নাতনির চোখদুটোও। কারোর মুখেই নেই কোন কথা। শুধু, মন কথা বলে।


চিতার আগুনে দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছরের সঙ্গিনীকে একটু একটু করে পুড়ে ছাই হতে দেখে শরীরটা কেমন যেন দুলে ওঠে বৃদ্ধ ভদ্রলোকটির। কোনরকমে টাল সামলে বসে পড়েন শ্মশানেরই একপাশে কোথাও। ছেলেমেয়েরা আসতে পারেনি কেউই। তিনি একাই তাই চিরবিদায় জানাতে এসেছেন চিরদিনের সঙ্গিনীটিকে। একজন চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন চিতার ওপরে। আর একজন দূরে বসে অসহায়ভাবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গভীর বেদনায় বন্ধ করেন দু'চোখের পাতা। মানুষ দুটোর মধ্যে আর কোনদিন হবে না কোন বাক্য বিনিময়। কিন্তু কথারা কী হারায়? না, কক্ষনো না। কারণ, মন কথা বলে।

©চুপকথা-কলমে সমর্পিতা হালদার