Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#চৈত্রসেল#কেয়া_মুখার্জী
--বলছি তাড়াতাড়ি বাজারটা করে আনো, রান্না করতে হবে।
নমস্কার! আমি রজতাভ সেন।এতক্ষন যাঁর হাঁকডাক শুনলেন তিনি আর কেউ নন, আমার হোম মিনিস্টার থুড়ি গিন্নি।অবাক কান্ড! রবিবার তো মহারানী বারোটার আগে রান্না বসান না, তা…

 


#চৈত্রসেল

#কেয়া_মুখার্জী


--বলছি তাড়াতাড়ি বাজারটা করে আনো, রান্না করতে হবে।


নমস্কার! আমি রজতাভ সেন।এতক্ষন যাঁর হাঁকডাক শুনলেন তিনি আর কেউ নন, আমার হোম মিনিস্টার থুড়ি গিন্নি।অবাক কান্ড! রবিবার তো মহারানী বারোটার আগে রান্না বসান না, তাহলে আজ এত তারা কিসের?আসলে নিয়মের একটু এদিক-ওদিক হলেই বুকের ভেতরটা কেমন যেন ধড়াস-ধড়াস করে।রান্নাঘর থেকে আবার চিৎকার...

    --কি গো কি হলো তোমার?

--এই যাচ্ছি যাচ্ছি।

--দেখো বাজার করতে গিয়ে আবার কারোর সাথে আড্ডা জুড়ে বোসোনা।

দেরি না করে বাজারের ব্যাগ হাতে বেরিয়ে পড়লুম।ওদিকে গিন্নি রান্নার জোগারে ব্যস্ত।কিছুই বোধগম্য হলনা।

 সেদিন অন্য দিনের তুলনায় একটু আগেই ভোজনপর্ব মিটলো।যাক ভালোই হয়েছে।গরম ও পড়েছে।কচি পাঁঠার ঝোল আর ভাত খেয়ে এসি টা চালিয়ে একটা জম্পেস ভাতঘুম দেব ভাবছিলুম,কিন্ত কপালে কি এত সুখ সয়?গিন্নির সুমধুর কন্ঠের আওয়াজ.....

--ঘুমোতে যাচ্ছো কি, নাও নাও তৈরি হয়ে নাও, বেরোতে হবে তো...

--বেরোতে হবে? কোথায়?

--সামনে পয়লা বৈশাখ, সে খেয়াল আছে?তারপর চৈত্রসেল, কিছু কেনাকাটা করব তো নাকি?

হয়ে গেল, মাসের শেষে কন্জুসের মতো ক্যাব না নিয়ে বাদুরঝোলা হয়ে ঝুলতে ঝুলতে এসে যে কটি টাকা বাঁচিয়ে ছিলুম সেটাও গেল।মনে মনে সেই বিখ্যাত কবিতার লাইনটি আওড়াচ্ছি...."সেদিন চৈত্রমাস,তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ..."

 অগত্যা, একগ্লাস জল খেয়ে শেষ বসন্তের দ্বিপ্রহরিক সূর্যের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে গিন্নির বগলদাবা হয়ে বেরিয়ে পড়লুম নিজের প্রাণাধিক প্রিয় ওয়ালেটের সৎকার করতে থুড়ি বউএর আবদার রক্ষার্থে।

   প্রথমেই প্রবেশ একটি ঝাঁ চকচকে শপিং মলে।সেখানে নাকি 50%ডিসকাউন্ট চলছে।ঢুকতেই কেমন যেন বুকের রক্তটা শুকিয়ে গেল।অসহ্য মনবেদনা নিয়ে ওয়ালেটটায় একবার হাত বুলিয়ে নিলাম।মাথায় তখন সেই গানটা ঘুরঘুর করছে যদিও লিরিক্সটা একটু বদলেছে..."টাকা তুই থাকবি কতক্ষন এখুনি যাবি বিসর্জন"। 

    এইবার শুরু হল গিন্নির কেনাকাটা।ঢাকাই দিয়ে শুরু কুর্তি তে শেষ...না শেষ না, বেডশিট থেকে পর্দা, বাসন কিছুই বাদ রাখলেন না, না আমাকেও বঞ্চিত করেন নি পাঞ্জাবি আর একটি টিশার্ট কিনে দিলেন।চৈত্রসেল বলে কথা।50%ডিসকাউন্টের চক্করে যে আরেকজন আধমরা হতে চলেছে সেদিকে ওনার হুঁশ নেই।উনি শুধু কিনছেন আর আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছেন।জিনিসের ভারে আমার নড়াচড়া করাই দায় হয়ে উঠেছে। পাক্কা সাড়ে তিনঘন্টা প্রদক্ষিন করার পর উনি ক্ষান্ত হলেন।

    এইবার শুরু আমার।ওই লটবহর নিয়ে আমাকে দাঁড় করিয়ে দিলেন বিল পেমেন্টের লাইনে।পাক্কা ত্রিশ মিনিট দাঁড়ানোর পর নিজের ওয়ালেট টি উজাড় করার সুযোগ এলো।নোট তো নয় যেন এক-একটি বুকের পাঁজর।নোটগুলো কাউন্টারে দিতে যাবো ঠিক ওইসময় গিন্নি এসে খপ করে হাত টা ধরে ফেললেন।তারপর নিজের হ্যান্ডব্যাগ থেকে একগোছা নোট বার করে আমার হাতে দিয়ে বললেন,এই টাকাটা দিয়ে বিল মেটাও।আমি তো 'থ'।কি হলো ব্যাপার টা? যাই হোক কথা না বাড়িয়ে বিল মিটিয়ে গিয়ে বসলাম একটা রেস্তরাঁয়।খুশিমনে চাউমিন সাঁটিয়ে ফিরে এলাম বাড়ি।মনের সন্দেহটা তখনও যায়নি।এত টাকা পেল কোথায় গিন্নি জানতেই হচ্ছে।জিগেস করলাম....

 --কেসটা কি হল বলতো?কোন লটারি পেয়েছ নাকি?

--হুম তা বলতে পারো।

--মানে?একটু বুঝিয়ে বলবে প্লীজ...

--মানে একবছর ধরে সংসার-খরচের টাকা থেকে বেশ কিছু টাকা বাঁচিয়েছিলাম আর একটু-আধটু তোমার পকেট থেকেও...এই দিয়েই তো কিনলাম এত কিছু।এবার পুজোতে একটু কম দিলেও চলবে।

---বলছো?

---বলছি।

 গিন্নিকে কাছে টেনে চকাস করে একটা চুমু খেয়ে চিবুকটা নেড়ে দিয়ে বললাম,"আমার বউটা এত সঞ্চয়ী আগে জানতাম না তো।এবার থেকে ভাবছি পকেটে একটু না হয় বেশি করেই টাকা রাখবো।"😀