Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

"সমুদ্র জানে জল ছুঁয়ে কি কাব্য লিখেছি,শুনেছি সমুদ্রের নাকি ঋণ রাখতে নেই,সময়ের অসীমে তলিয়ে যাবার আগে ,চলো আরো একবার সমুদ্র ছুঁয়ে শপথ করি ভালোবাসার......."
আপন মনেই বিড়বিড় করছিলো ঋতু।বালিতে তার হিলজোড়া চিহ্ন এঁকে চল…

 


"সমুদ্র জানে জল ছুঁয়ে কি কাব্য লিখেছি,

শুনেছি সমুদ্রের নাকি ঋণ রাখতে নেই,সময়ের অসীমে তলিয়ে যাবার আগে ,

চলো আরো একবার সমুদ্র ছুঁয়ে শপথ করি ভালোবাসার......."


আপন মনেই বিড়বিড় করছিলো ঋতু।বালিতে তার হিলজোড়া চিহ্ন এঁকে চলেছে ঠিক সমুদ্রের জল ঘেঁসে। একবার করে একটা ঢেউ এসে মুছে যাচ্ছে সেসব, আবার চিহ্নক্ষরণ।যেন জেদি মেয়েটা স্লেটে আঁকিবুঁকি কাটছে,আর কেউ তা পরম যত্নে মুছে যাচ্ছে।

- " আবার তোর শাড়ি ভিজলো ঋতু" বলে উঠে বাবিন।"যা নিয়ে এসেছিস সব ভেজালে, এবার হোটেলে গিয়ে আমার টি-শার্ট পরতে হবে তোকে" ।হাসতে থাকে বাবিন।

- "বাড়ির থেকে কেউ ফোন করেছিলো"?সচেতন প্রশ্ন ঋতুর।

- "এতোক্ষণে তারা বুঝে গেছে ,যে বাড়ির মেয়ে পালিয়েছে, অবশ্য কিডন্যাপ হয়েছে এটাও ভাবতে পারে" দাঁত বার করে হাসতে থাকে বাবিন।

- "হোটেল বুকিং হয়ে গেছে তোর?নাকি সারারাত সী বীচ এ কাটাতে হবে? অবশ্য ঐ তো দৌড় তোর,কেন যে মরতে তোর সাথে আসলাম।সব তো ঠিক চলছিলো ,তোর আর ফেরার সময় হলো না !!!"

- "এতোটাও ইরেসপন্সেবল ভাবিস না বুঝলি তো, হ্যাঁ জানি যে প্রচুর রাফ বাইকিং করে তোকে এখানে নিয়ে এসেছি।আসলে তোর যদি মত বদলায় এই ভয়ে বুঝলি তো পাগলি" একদমে বলে একটা সিগারেট ধরায় বাবিন।

- "আচ্ছা শোন তুই ফিরলি কেন বল তো? দিব্যি তো চলছিলো সবকিছু"

- কোথায় চলছিলো!!! আমি গাধার মতো খেটে টাকা জমাচ্ছিলাম,আর তুই চোখের কোনে কালি।মাঝে থেকে দুজনের বয়সটা বাড়ছিলো।"

- "তুই ভাবতেও পারছিস না কি একটা যা তা পরিস্থিতি তৈরি করেছিস তুই"

- "মোটেই না ,দু জন তৈরি করেছি" আবারো হাসে বাবিন।

- "লজ্জায় মাথা কাটা যাবে রে"

- "মাই লাভ ,এখনো আমার সাথে রুমে যাসনি,এখনি সব লজ্জা শেষ করে দিস না প্লিজ"

- তুই একদম পাল্টাসনি,এখনো সে রকম ই ফাজিল"

- পাল্টে গেলে খুশি হতিস তুই!!"

- "সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখ এখনো সে ও পাল্টায়নি, অবশ্য পাল্টে গেছে আশেপাশে।উন্নত, আধুনিক হয়েছে সবকিছু।"

- আমাদের ই মতো,দেখ শুধু খোলসটাই পাল্টেছে,মন সেই একই" আরো একটা সিগারেট ধরায় বাবিন।

- "উফ্ এতো সিগারেট খাস না তো, অসহ্য একেবারে" বাবিনের মুখ থেকে সিগারেট টা টান মেরে ফেলে দেয় ঋতু।

- "দিলি তো সাতটাকা শেষ করে!!"কপট রাগে বাবিন।

- "তোর মনে আছে বাবিন,কলেজ থেকে দল বেঁধে এসেছিলাম এই দীঘাতে"...

- "মনে আবার থাকবে না, মদ খেয়ে আমার গায়ে বমি করেছিলিস" 

- "ইস্ বলিস না ওসব" খুব হাসতে থাকে ঋতু।

- "বিশ্বাস কর তোকে চুমু খেতে গেছিলাম, ওভাবে বমি মাখতে নয়," হাহা করে হেসে উঠে বাবিন।


ঈষৎ রক্তিম আভা নারী অধরে ছড়িয়ে পরে,রাতের অন্ধকারে তা চোখে পরে না বাবিনের। হঠাৎ বাবিনের হাতের স্পর্শে চমক ফেরে ঋতুর....

- "সমুদ্র কে সাক্ষী করে একটা চুমু খেতে দিবি?"

জড়োসড়ো হয়ে পরে ঋতু।

- এখানে?এখন?

- "হ্যাঁ এখানে,এখন"

রাত দশটার দীঘা বীচ যতটা না শুনশান থাকে, ইদানিং লকডাউনে আরো ফাঁকা চারিপাশ। কানে শুধু ভরা পূর্ণিমার সমুদ্রের গর্জন,দু একজন দোকানি জিনিসপত্র গোছাচ্ছে নিজেদের মনে।এই দুই নর-নারীকে তারা পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না।

কপালে আলতো করে একটা ঠোঁট ছুঁয়ে গেলো নারীটির, পুরুষটির ধুকপুকানি সমুদ্র ছাপিয়ে কানে আসে নারীটির।

- "কথা রাখলাম ঋতু, শুধু কিছু টা সময় বয়ে গেলো"

- "একদম চুমু খাবার চেষ্টা করবি না" এক উনিশ বছরের মেয়ে প্রথমবার নেশার ঝোঁকে শাসিয়ে ছিলো তার প্রেমিককে। "চুমু খেতে হলে ভরা পূর্ণিমায় সমুদ্রের ধারে খাবি,নয়তো নয়"

- "চল হোটেলে চল,আর শোন জোরে বাইক চালাবি না,এমনিতেই ডানহাঁটুতে বাতের সমস্যা দেখা দিয়েছে, তুই ও তো প্রেশারের ঔষুধ খাস....."

- "শোন যে যাই বলুক তুই কিন্তু লাল বেনারসি পরবি"

- ধ্যাত এই বয়সে এ সব মানায় না। তোকে কিন্তু আকাশি রঙে ভালো মানায় ,ঐ রঙের পাজ্ঞাবি পরিস"


দুটো অবয়ব হেঁটে চলেছে আচমকা খুঁজে পাওয়া ভবিষ্যত গোছাতে গোছাতে। দীর্ঘ কুড়ি বছর পরে ও কেউ কেউ কথা রাখে.......