Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন বিভাগ -গল্প শিরোনাম-ভেঙে গেল জুটি কলমে - কাকলি মুখার্জী(কলি)তারিখ - ২/৩/২০২১
প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে অনন্যা গ্রামের স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে যখন কলকাতার কলেজে পড়তে এলো, প্রথম প্রথম খুব একা একা লাগতো। পরি…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন 

বিভাগ -গল্প 

শিরোনাম-ভেঙে গেল জুটি 

কলমে - কাকলি মুখার্জী(কলি)

তারিখ - ২/৩/২০২১


প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে অনন্যা গ্রামের স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে যখন কলকাতার কলেজে পড়তে এলো, প্রথম প্রথম খুব একা একা লাগতো। পরিচিত কোন বন্ধু নেই, সবাই অচেনা আর ভীষণ রকম মেকি। সে মনের মতো একটাও বন্ধু পেলনা। তাই ক্লাস না থাকলে অর্থাৎ অফ পিরিয়ডে লাইব্রেরী কিংবা কমনরুমে একা একা বসে বই পড়তো। এভাবেই প্রথম পনেরো টা দিন কেটে গেল।


 তারপর একদিন ইতিহাস ক্লাস অফ করে কমন রুমে এসে বসেছে এমন সময়ে তিনটি মেয়ে ওর কাছে এসে বসলো, তারপর ওর নাম কি? ওর বিষয় কি? জিজ্ঞেস করলো। অনন্যাও একে একে ওদের সকলের পরিচয় জানত চাইল এবং তারপর থেকে ওদের সাথে খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেল। বন্ধুত্ব মানে এমন বন্ধুত্ব হলো যে ওরা কেউ কাউকে বাদ দিয়ে কিছু খায়না, কলেজ থেকে এমনকি বাড়ির থেকে কোথাও গেলেও ওরা চারজনে প্ল্যান করে একসাথে যেতো। এককথায় যাকে বলে গলায় গলায় বন্ধুত্ব।এক গলায় জল ঢাললে চারগলাতেই জল পৌঁছে যেতো। 

 

এভাবেই পড়াশোনা আর বন্ধুদের সাথে মজা করতে করতে ওরা ফাইনাল ইযারে পৌঁছে গেল। ফাইনাল পরীক্ষার ঠিক তিনমাস আগে নাজমার বিয়ে ঠিক হলো। ওহ্ হো... কথায় কথায় অনন্যার তিনজন প্রিয়বন্ধুর নাম গুলোই তো বলা হয়নি! ওদের মধ্যে একজন হলো নাজমা,যার বিয়ের কথা বলছিলাম সে,বাকি দুজনের মধ্যে একজন হলো মল্লিকা আর একজন মন্দিরা। যাইহোক নাজমার বিয়েতে ওরা সবাই মিলে খুব হইচই আনন্দ করলো।তারপর দেখতে দেখতে ফাইনাল পরীক্ষার দিন এগিয়ে এলো, কলেজ যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল আর ওদের মধ্যেও দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ হয়ে গেল। তবুও মাঝেমধ্যে কোচিং ক্লাসে দেখা হতো কিন্তু পরীক্ষার পরে সেটাও একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে তাই শেষ পরীক্ষার দিন ওরা চারজন খুব আনন্দ করতে করতে বাড়ি ফিরলেও সকলেরই মনের মধ্যে কষ্ট হচ্ছিল এই ভেবে যে, যতদিন না রেজাল্ট বেরোচ্ছে, তাদের আর দেখা হবে না। কিন্তু কি আর করা যাবে? তখন তো আর এখনকার মতো মোবাইল ফোনের ব্যবস্থা ছিল না.... ইচ্ছে হলেই কথা বলবে কিংবা ভিডিও কল করে একে অপরেকে দেখে জরিপ করে নেবে যে, বাড়িতে বসে বসে কে কতটা মোটা হয়েছে? পরে অবশ্য দুএকবার ওরা একে অপরের বাড়িতে গিয়ে দেখা করে গল্প খাওয়া দাওয়া সব করেছিল কিন্তু তাতে ওদের মন ভরতো না।


দেখতে দেখতে রেজাল্ট আউট হয়ে গেল। সবাই খুব ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করে গেল। ঠিক করলো ওরা আবার একসাথে একই ইউনিভার্সিটিতে পড়বে।কিন্তু বাধ সাধলো অনন্যার দাদা বৌদি আর দিদি। অনন্যার বিয়ে দিতে তারা উঠে পড়ে লাগলো। ওর অনেক আপত্তি থাকা সত্বেও একমাসের মধ্যে দেখাশোনা করে বিয়েও দিয়ে দিল। বললো পড়াশোনা যদি করতেই হয় তবে বিয়ের পরে করবে। হুট করে বিয়ে ঠিক হওয়ার জন্য অনন্যার বিয়েতে নাজমা আসতে পারল না। কারণ ও তখন ওর স্বামী, নিজামের কাছে দিল্লিতে গেছিল। মল্লিকা আর মন্দিরা এসেছিল।অনেক আনন্দ করেছিল। কিন্তু নাজমাকে খুব মিস করেছিল ওরা। অনন্যার বিদাইয়ের সময় ওরা তিনবন্ধু একে অপরকে জড়িয়ে ধরে এতো কেঁদেছিল যে ওদের কান্না দেখে অন্যরা নিজেদের কষ্ট ভুলে ওদের কান্না থামাতে ব্যস্ত হয়েছিল। সবাই বলাবলি করেছিল এমন বন্ধুত্ব সত্যি দেখা যায় না। 


বিয়ের পর অনন্যার আর পড়াশোনা করা হয়ে উঠলো না। তাই বন্ধুদের সাথে দেখাসাক্ষাৎও বন্ধ হয়ে গেল। নাজমাও দিল্লিতে ওর স্বামীর কাছেই পাকাপাকি ভাবে থেকে গেল আর ওখানকার ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স এর জন্য ভর্তি হয়ে গেল। ফোনে যোগাযোগ টা প্রায়ই হতো। কতো গল্প করতো ওরা। তারপর ইউনিভার্সিটিতে পড়তে পড়তে মল্লিকার বিয়ে হয়ে গেল।ও বিয়ের পর মাস্টার্স কমপ্লিট করেছিল। একমাত্র মন্দিরা জেদ ধরেছিল মাস্টার্স কমপ্লিট না করে এবং স্বনির্ভর না হয়ে সে কিছুতেই বিয়ে করবে না। সত্যি কথা বলতে ওর এই অদম্য ইচ্ছেশক্তির কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছিল ওর বাড়ির লোক। দেখা হতনা তাই সবকথা ফোনেই হতো। যাইহোক, পড়াশোনা শেষে একটা স্কুলের বাংলার শিক্ষিকা হিসেবে জয়েন করার পরপরই মন্দিরা বিয়ে করে নিয়েছিল। বলেছিল, দ্যাখ বাবা-মা কেউ নেই, দাদা বৌদি র সংসারে আর কতদিন থাকবো? এবার বিয়েটা আমাকে করেই নিই।


সবাই যে যার সংসারজীবন কর্মজীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।খুব স্বাভাবিক ভাবেই ওদের আগের মতো আর যোগাযোগ রইল না। কখনো সখনো ফোনে দুএক মিনিট কথা হতো। কিন্তু তবুও ওদের একে অপরের মনের মধ্যে বন্ধুত্বটাকে যত্নে লালন করে চলতো। দূরত্ব কিংবা যোগাযোগহীনতা ওদের বন্ধুত্বে এতটুকু ফাঁক তৈরি করতে পারে নি। 


মাঝে বেশ কয়েকটা বছর কেটে গেল। ওরা সবাই তখন স্বামী সন্তান শ্বশুর বাড়ির সকলকে নিয়ে ব্যস্ত। তাই বেশ কিছুদিন ওদের যোগাযোগ হয়নি। এমন সময় একদিন দুপুরে অনন্যাকে নাজমা ফোন করে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকলো। অনন্যা নাজমাকে ওর কান্না থামিয়ে কি হয়েছে সেটা বলতে বললো, নাজমা তখন যা বললো তা শুনে অনন্যার হাত থেকে রিসিভার টা পরে গেল। সে ধপ করে মেঝেতে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকলো, 


----" এ তুই কি করলি মন্দিরা? কেন তুই এভাবে আমাদের সকলকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেলি?" ওর কান্না শুনে ওর হাজব্যান্ড মনোজ কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো কার কি হয়েছে? কেন সে এভাবে কান্নাকাটি করছে? অনন্যা স্বামীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে মন্দিরার মৃত্যুর কথা বললো যে, ওর শাশুড়ী মা এর সাথে কিছু একটা বিষয়ে একটু মতানৈক্য হয়েছিল আর তাতেই ওর শাশুড়ী মা ওকে বেশ কটু কথা শুনিয়েছিলেন, তাই ও এমন একটা চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অনন্যা কাঁদতে কাঁদতে আরও বললো, 


 ----" মন্দিরা চিরতরে হারিয়ে গেল .....আর, আমাদের জুটি টাও ভেঙে গেল " 


পরে অবশ্য ওরা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছিল মন্দিরাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ওর জা আর শাশুড়ী মিলে পুড়িয়ে মেরেছিল। 


                             (কলি)