Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

নন্দীগ্রামে সব দল চাইছে জিততে,কিন্তু জিতবে কে !

তরুন চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা
কি হবে ফলাফল নন্দীগ্রামের ভোটে।রাজ্যের সব কেন্দ্রে এখনো ভোট হয়নি।তাই ফলাফল ও প্রকাশিত হবার কথা নয়।সব ভোট শেষ হলে 2 মে ভোট গননা শুরু।একটু বেলা হলেই শুরু হয়ে যাবে জয় পরাজয়ের ছবি।কিন্তু নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে দ…

 

তরুন চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা


কি হবে ফলাফল নন্দীগ্রামের ভোটে।রাজ্যের সব কেন্দ্রে এখনো ভোট হয়নি।তাই ফলাফল ও প্রকাশিত হবার কথা নয়।সব ভোট শেষ হলে 2 মে ভোট গননা শুরু।একটু বেলা হলেই শুরু হয়ে যাবে জয় পরাজয়ের ছবি।কিন্তু নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে দ্বিতীয় দফার ভোট শেষ হওয়ার পরে পরেই শুরু হয়ে গেছে নানা অঙ্ক ।কে জিতবেন নন্দীগ্রাম ।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তৃনমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায় এই কেন্দ্রের প্রার্থী এবার।নিজের ইচ্ছায় ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামে এসেছিলেন ভোট লড়তে।আবার অন্য দিকে তাঁর দল ছেড়ে গতবারের বিজয়ী শুভেন্দু অধিকারী তার সঙ্গে বিজেপি দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী এখানেই।ফলে ভোটের আসর জমজমাট ।মুখ্যমন্ত্রীর ভোট কেন্দ্র বলে কথা।বাড়তি একটা উত্তেজনা তো থাকছেই নন্দীগ্রাম নিয়ে ।যেই জিতুক ।লড়াই প্রেস্টিজের।মুখ্যমন্ত্রী বলছেন তিনিই জিতছেন।অপর দিকে শুভেন্দু অধিকারী ও জয়ের দাবি থেকে এক পা ও পিছাতে রাজী নয়।ফলে ভোট বাক্সে বন্দী জনতার রায় নিয়ে চাপান উতোর চলছেই।আর তা চলবে 2 মে পর্যন্ত ই।

এই ফাঁকে আমরাও নন্দীগ্রামের ভোট নিয়ে একটা চুলচেরা বিশ্লেষন করতেই পারি।মমতার শক্তি ও শুভেন্দুর শক্তি এখানে উনিশ বিশ।যেই জিতুক মার্জিন যে খুব একটা বেশি হবে না তাতো বলা যেতেই পারে।তবুও অঙ্কের হিসাব।মেলা না মেলা সেটি অবশ্যই অঙ্ক টি কেমন করে কষা হলো তার ওপরেই নির্ভর করবে।

রাজনৈতিক মেরুকরণ এখানে প্রথম দিন থেকেই সরব।জাতপাতের রাজনীতির তাস এখানে ভোটের প্রথম থেকেই।তবে হিসাব যাই হোক সব অঙ্ক গুলিয়ে দিতে পারে নন্দীগ্রাম ।এমন আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাই।

মমতা বন্দোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ।তাই এলাকার অনেকেই বলছেন মুখ্যমন্ত্রী কে জেতাতে পারলে নন্দীগ্রাম পাবে মুখ্যমন্ত্রী ।উন্নয়নের চোখ হয়ে উঠবে বঞ্চিত নন্দীগ্রাম ।আলোর ঝকমকির থেকেও এখানে আলোচনার ঝকমকি এখন তুঙ্গে ।ফলে তৃনমূল সুপ্রিমো থেকে শুরু করে এলাকার সকল তৃনমূলের সমর্থক ই নাকি বুঝেছেন নন্দীগ্রাম মমতার।

কিন্তু বিরোধী পক্ষের প্রার্থী যখন শুভেন্দু অধিকারী তখন তো চোখ বুঝে একথাও বলা যাবে না।কারন এক সময়ের তৃনমূল দলের ভোট মাস্টার তিনিই ছিলেন।আর বাড়তি সুবিধা হলো নন্দীগ্রাম কে তিনি চেনেন হাতের তালুর মতোই ।সব বুথ ই তার পুরানো পরাচিত।

তবে একথা পরিষ্কার ভোট করেন এলাকার নেতারা।শুভেন্দুর দল বদল করে চলে যাবার পরেও তার কাছের অনেক মানুষ ই থেকে গেছেন তৃনমূল দলে।ফলে কাজটা যে খুব সহজ হবে না,তা বুঝেছেন শুভেন্দু নিজেও।তবুও যুদ্ধ তো করেছেন মন প্রাণ ঢেলেই।এবার জনতাই জানেন কি রায় দিয়ে রেখেছেন ইভিএম মেসিনে।

তাই প্রথম দিন থেকেই হরে কৃষ্ণ হরে হরে ,বিজেপি ঘরে ঘরে বলেই ভোট বৈতরনী পেরুতে চেষ্টা করেছেন শুভেন্দু ।অন্য দিকে উন্নয়নের বন্যা বহে যাবে মমতা ক্ষমতায় এলে।এই মন্ত নিয়ে তৃনমূল এগিয়ে গেছেন ভোট যুদ্ধে ।

জাত পাত ও ধর্ম নিয়ে ভোট যুদ্ধ করতে নেমেছিলেন দু দলই।এরি ফাঁকে বামফ্রন্টের মীনাক্ষী মুখার্জি কেও দেখা গেছে ভোট ময়দানে ।যদিও তিনি এখানে জয়ী হবার স্বপ্ন দেখেন নি।তবে বামের ভোট রামে না যায় সে কাজটি সঠিকভাবে ই করেছেন।ফলে কিছুটা হলেও শুভেন্দু ও তাঁর বিজেপি দল কিছুটা কোন ঠাসা হয়েছেন।

শুভেন্দু অধিকারীর কথাতেই পরিস্কার এখানে মুসলিম ভোট 62 হাজার।আর হিন্দু ভোট 2 লক্ষ্য 13 হাজার।ফলে হিন্দুত্বের তাস ও মুসলিম তাস এই ভোটে কাজ করবে।

আরো হিসাব হলো জয় শ্রী রাম কারা বলেন আর কারা বলেন না এই নিয়ে ও যুক্তি তর্ক ।কিন্তু যেটি পরিস্কার সেটি হলো সব মুসলিম ভোট যেমন মমতা বন্দোপাধ্যায় পাবেন না,ঠিক তেমন ভাবেই সব হিন্দুভোট ও শুভেন্দু অধিকারী ও পাবেন না।ফলে অঙ্ক আরো জটিল হবে।জয় পরাজয় আসবে নানা ফ্যাক্টর ।আর সেটি অবশ্যই ঘটবে নন্দীগ্রামের ভোটেও।

নন্দীগ্রাম 1 এ মুসলিম ভোট শতকরা 35 ভাগ।আর নন্দীগ্রাম 2 এ শতকরা 13 ভাগ।ফলে এখানে জয় পরাজয়ে মুসলিম ভোটের একটা আধিপত্য থেকেই যাচ্ছে ।কিন্তু হিন্দু ভোট ও এখানে শতকরা হিসাবে ভালোই ।ফলে সেই ভোট ও একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে ।

মুসলিম ভোটের সিংহভাগই যাবে মমতার পক্ষে একথা বলাই যায় ।সামান্য অংশ পেতে পারেন শুভেন্দু অধিকারীর ব্যাক্তিগত ক্যারিশমা ।আর বামফ্রন্ট,কংগ্রেস ও আব্বাস সিদ্দিকীর সেকুলার দল ও কিছু ভোট কাটবেন।ফলে শেষমেষ অঙ্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলা কঠিন তো বটেই।

মুসলিম ভোটের একটা বড় অংশ ও হিন্দুদের ভোট নিয়ে ফেবারিট মমতাই।এনিয়ে আপত্তি নেই কারো।

কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী ও সব ভোটেই থাবা যে বসাবেন একথা ও হেলাফেলা নয়।ভোটের আগে থেকেই চষে বেরিয়েছেন এলাকা।ভোটার দের নানা ভাবে পদ্ম শিবিরে ভোট দিতে রাজি করিয়েছেন ।তবে তা ইভিএম মেসিনে কতটা কাজ দিয়েছে সেটাই দেখার।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিভিন্ন সভা তে বলে যাচ্ছেন মমতা দিদি হারছেন।যদিও মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রথম থেকেই নানা অভিযোগ করলেও জেতার ব্যাপারে তিনি একশো ভাগ নিশ্চিত ।আবার অন্য দিকে শুভেন্দু অধিকারীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলছে তিনি ফল প্রকাশের আগেই জিতে গেছেন।

আসলে দ্বিতীয় দফার এই ভোটে লুকিয়ে রয়েছে বাকি ভোটের নানা কৌশল।কারন দলকে উজ্জীবিত করতে দুজনকেই বলতে হচ্ছে জয়ের কথা।কারন সমগ্র রাজ্য এই কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে ।মমতা ও শুভেন্দু এবারের ভোটে দুজনেই হেভিওয়েট প্রার্থী ।কে আর চান হেভিওয়েট পরাজিত হোক।ফলে বুকের গভীরে দুঃখ কে চাপা রেখেই সকলেই বলছেন আমিই জিতছি।এছাড়া উপায় ও নেই।

2019 সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে এই কেন্দ্রে তৃনমূল দল ই এগিয়ে ছিলেন।প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা 130659 ।অন্য দিকে বিজেপি দলের ভোট ছিল 62268 ।যা তৃনমূলের তুলনায় অর্ধেকের ও কম।আর সিপিআই 9353 ।তখন অবশ্য অধিকারী পরিবারের মেজ ছেলে শুভেন্দু অধিকারী ছিলেন তৃনমূল দলে।

নন্দীগ্রামে একসময় যে বামফ্রন্ট রাজ করতো সেই ভোট সুইং করতে করতে তৃনমূলের দিকেই সরেছে।ফলে লক্ষন শেঠের হাত থেকে শুভেন্দু সেখানে রাজ করেছে।অবশ্যই সৌজন্যে মমতার তৃনমূল দল।

শুভেন্দু অধিকারী দলত্যাগ করার পরে তৃনমূলের নন্দীগ্রামের সংগঠনে যে একেবারেই ভাঙন ধরেনি তা সত্য নয়।তৃনমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল সহ বেশ কিছু নেতা এখন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেই ।

কেন্দাবাড়ি , দাদপুর, সামসাবাদের মতো মুসলিম অধ্যুষিত জায়গায় ও শুভেন্দু সংগঠন গড়তে সক্ষম হয়েছেন।কিছুদিন আগে মমতা বন্দোপাধ্যায় যে প্রলয় পালকে ফোন করেছিলেন বলে রটনা সেই প্রলয় পাল পরিস্কার জানান মুসলিম মানুষেরাও দাদার সঙ্গে আছেন।যদিও একথা বিশ্বাস করছেন না এলাকার তৃনমূল নেতৃত্ব ।তাদের বক্তব্য হিন্দু মুসলিম সব ভোটের ই দাবিদার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ।বিশেষ করে মহিলারা উজাড় করে ভোট দিয়ে ছেন মমতা কেই।

      শেখ সুফিয়ান, আবু তাহের পরিস্কার জানান এখানে জাত পাতের তাস শুভেন্দু খেললেও তা কাজ দেয় নি।এখানে হিন্দু ও মুসলিম দের কোন বিভাজন নেই।ভূমি আন্দোলনের সময় থেকেই এখানে অধিকাংশ মানুষ মমতার সঙ্গে ।আজকের ছবিও তাই।

কে জিতবেন ।মমতা না শুভেন্দু ।লাখ টাকার প্রশ্ন ।এক কথায় জবাব নেই।

ফল প্রকাশের আগে জোতিষীও একথা বলার সাহস পাচ্ছেন না।

সব গননা ওলট পালট হতেই পারে।কারন এটি যে নন্দীগ্রাম ।বিট্রিশ আমল থেকে যুদ্ধ করতে করতে আজ নন্দীগ্রাম যোদ্ধা ।ভূমি আন্দোলনের যুদ্ধ বামফ্রন্টের শক্ত ভিত কেও নাড়িয়ে দিয়েছিল ।ফলে সস্তার রাজনৈতিক মেরুকরণের ওপর ভিত্তি করে নন্দীগ্রামের ভোট বিশ্লেষন হয়তো ভুল হতে পারে।

2 মে তো জবাব মিলবে নন্দীগ্রাম কোন দিকে।মমতার ঘাসফুল না শুভেন্দুর পদ্ম ।

তবে ঘাস ফুল বা পদ্ম যাই ফুটুক নন্দীগ্রাম থাকবে নন্দীগ্রামেই।

নন্দীগ্রামের আন্দোলনের মাটি এতটুকু ও পরিবর্তন হবে না।

কারন আন্দোলনের আর এক নাম নন্দীগ্রাম ।