Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

ছোট গল্প:- মন🖋ইন্দ্রনীল কর তারিখ:- ০৮\০৪\২১চুচুঁড়া  
❤💜💙💛💚🧡 ☆'মন'☆ 🧡💚💛💙💜❤       💞🌿💞🌿💞ইন্দ্রনীল💞🌿💞🌿💞 
          ছেলেটাকে ঠিক গাঁজাখোরদের মতোই লাগতো। না, কারা গাঁজা খায় এটা আমি জানি না। কিম্বা গাঁজা খেলে…

 


ছোট গল্প:- মন

🖋ইন্দ্রনীল কর 

তারিখ:- ০৮\০৪\২১

চুচুঁড়া  


❤💜💙💛💚🧡 ☆'মন'☆ 🧡💚💛💙💜❤

       💞🌿💞🌿💞ইন্দ্রনীল💞🌿💞🌿💞 


          ছেলেটাকে ঠিক গাঁজাখোরদের মতোই লাগতো। না, কারা গাঁজা খায় এটা আমি জানি না। কিম্বা গাঁজা খেলে চেহারাটা আসলে কেমন হয় সেটাও আমার জানা নেই। কিন্তু পাতলা, রোগা, হ্যাংলা ধরণের কোনো ছেলে দেখলেই আমার মনে হয় এ গাঁজাখোর। হয়তো হতে পারে এটা আমার মানসিক সমস্যা।


সঞ্জয় নামের ছেলেটাকেও আমার তেমনই লাগতো। তার ওপর ছেলেটা ফর্সাও নয়। অর্থাৎ, খারাপ লাগার ষোলকলা পূর্ণ হতে যা যা দরকার সবই এই ছেলেটার মধ্যে ছিল। এই অদ্ভুত ছেলেটাই আমাকে জীবনের প্রথম প্রেমপত্র দিয়েছিল।

(অদ্ভুত বলতে আমি বিশ্রী চেহারাটাকে বোঝাচ্ছি)

আমি সারা রাত ধরে চিঠিটা পড়লাম। বারবার পড়ি, আবার ভাঁজ করে বালিশের নিচে রেখে দিই।

আশ্চর্য! চিঠিটার সহজ-সরল ভাষা আর অকপট স্বীকারোক্তি আমার সারাটা রাতের ঘুমই কেড়ে নিল!


“ পৌলমী ,


           জানি, আমি তোমার প্রেমের যোগ্য নই। তবুও খুব ভালবেসে ফেলেছি। কতটা ভালবেসেছি সে ঐ রাতের আকাশই জানে। ওরা জানে কত রাত আমি দু’চোখের ওপর দিয়ে পার করে দিই শুধু তোমার কথা ভেবে। আমি গ্রামের ছেলে পৌলমী। তোমাদের মত অত স্মার্ট নই। হয়ত আমার মতো ছেলেদের ভালবাসা যায় না, করুণা করা যায়। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তোমার করুণাটুকুই মনে প্রাণে পেতে চাই। এটুকু দয়া আমায় করবে না?”


পরদিন সোজা প্রনব স্যারের হাতে চিঠিটা দিলাম। (প্রনব স্যার আমাদের কোচিং সেন্টারের পরিচালক যেখানে আমরা বি এর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। ওহ, বলতে ভুলে গেছি – সঞ্জয়  ছেলেটাও কোনো একটা গ্রাম থেকে এসেছিল কোচিং করতে। পারফর্মেন্স ভালোই ছিল। ক্লাসে কখনোই খারাপ করতো না। বলা যায়, এটাই ছিল ওর একমাত্র গুণ)

প্রনব স্যার সবার সামনে ওকে দাঁড় করালেন। কড়া ভাষায় অপমান করলেন। মুহূর্তেই ছেলেটার চোখ টকটকে লাল হয়ে গেল। আমি সে চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। কি যে খারাপ লাগছিল আমার!


তারপর আরও ক্লাস করলাম এক সাথে। সঞ্জয়  আর কখনোই আমার সাথে কথা বলেনি। আমাকে দেখলেই এমন ভাব করতো যেন পৌলমী বলে কেউ ওর চোখে পড়েইনি কোনোদিন। ব্যাপারটা আমায় খুব জ্বালা দিচ্ছিল।

বেশ কিছুদিন যেতেই সবাই অবাক হয়ে গেলাম আমরা। একদম সব্বাইকে টপকে গেল সঞ্জয়। সব পরীক্ষাতেই ভালো করতে লাগলো। এরপর এল ফাইনাল পরীক্ষা । আমাদের হতাশ করে দিয়ে সঞ্জয়ই ফার্স্ট হলো। কোনরকমে টপ টেনে জায়গা হলো আমার।


সংবর্ধনার আগের রাতে অপটু হাতে সঞ্জয়ের জন্য চিঠি লিখলাম আমি।


“সঞ্জয় ,


        জানি আমার ওপর রেগে আছো। সেটাই স্বাভাবিক। আমি তোমাকে অপমান করলাম আর তুমি আমায় দেবী ভেবে পূজো করবে এটা ভাবা বোকামি। এটা আমি ভাবছিও না।

তবে আমি কিন্তু তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য স্যারকে বলে দিইনি।

তুমি আমার জন্য সারা রাত জাগতে এটা আমার ভালো লাগেনি। বি এ ফাইনাল পরীক্ষার আগে অকারণে এতো রাত জাগা মানে এক মাস পিছিয়ে যাওয়া। আমার জন্য তোমার খারাপ হবে এটা আবার কেমন কথা? তোমার খারাপ হলে তোমার নিজের জন্য হবে।

দেখো, তোমায় আমি বুঝিয়ে বললে তুমি হয়তো বুঝতে। কিন্তু তোমার মনে কিঞ্চিৎ আশা থাকতো। সেই আশা তোমার আরও ক্ষতি করতো।

তাই তোমাকে একটা ধাক্কা দেওয়া দরকার ছিল যে ধাক্কায় তোমার লক্ষ্যপূরণ হবে। আমি সেটাই করেছি। তুমি গ্রামকে ছেড়ে, কাছের মানুষদের ছেড়ে এত দূরে যে আশায় এসেছো সেটা পূরণ হোক – এটাই চাই।

আর হ্যাঁ, তোমার মতো ব্রিলিয়ান্ট একটা ছেলে অন্যের করুণা প্রার্থনা করবে এটা ঠিক না।

তোমাকে করুণা করার যোগ্যতা আমার নেই। তোমার ফোন নাম্বারটা দিয়ো। কোনোদিন তোমার ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য হলে জানাবো।”


সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষ। সঞ্জয়কে একটা মোবাইল  গিফ্ট করা হয়েছে। আমি ধীরে ধীরে সঞ্জয়ের খুব কাছে গেলাম। আস্তে করে বললাম,

-- “সঞ্জয় , তোমার জন্য একটা চিঠি এনেছি।”

সঞ্জয় চড়া গলায় বললো,

-- “ওটা তোমার কাছেই রেখে দাও। মানুষের মন পরিবর্তনশীল।”


আমার চোখে জল এসে গেল। এই রকম জল সঞ্জয়ের চোখেও এসেছিল একদিন। সত্যিই তো, সময় দ্রুত বদলায়। তার চেয়েও দ্রুত বদলায় মানুষের মন।


                                            🍁ইন্দ্রনীল🍁 


💛💙💜❤🧡💚💛💙💜❤🧡💚💛💙💜

       ♨️☘♨️☘♨️ইন্দ্রনীল♨️☘♨️☘♨️