। তরুন চট্টোপাধ্যায় ।কলকাতা । এ প্রতিবেদন যখন লিখছি তখন করোনার ঢেউ আছড়ে পড়েছে দেশ জুড়ে ।আট টির মধ্যে বঙ্গের ছটি ভোট শেষ হয়েছে।দুর্ভোগে ভুগছেন রোগীর পরিজন।হাসপাতালে বেড নেই।চারিদিকে হাহাকার।অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরছে মান…
। তরুন চট্টোপাধ্যায় ।কলকাতা ।
এ প্রতিবেদন যখন লিখছি তখন করোনার ঢেউ আছড়ে পড়েছে দেশ জুড়ে ।আট টির মধ্যে বঙ্গের ছটি ভোট শেষ হয়েছে।দুর্ভোগে ভুগছেন রোগীর পরিজন।হাসপাতালে বেড নেই।চারিদিকে হাহাকার।অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরছে মানুষ ।ভ্যাকসিনের আকাল।যেখানে যে টুকু ভ্যাকসিন এখনো আছে সেখানে লম্বা লাইন।ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই,ভরিয়াছে তরী।এক চরম অস্থিরতা গ্রাস করেছে।করোনার প্রথম ঢেউ কে ছাপিয়ে দ্বিতীয় ঢেউ আগের সব রেকর্ড কে ধুয়ে মুছে গেছে।নির্বাচনের এখনো দু দফা বাকি।সময় মতো সে নির্বাচন হবে।তবে মন্দের ভালো নির্বাচন কমিশনের ইঙ্গিতে রোড শো বন্ধ হয়েছে। বড় মিছিল মিটিং ও বন্ধ ।যে সব সভা চলছে তাতে পাঁচশো জনের বেশি অনুমতি নেই।যদিও বাধ্য হয়ে রাজনৈতিক দল এসব মেনেছেন।উচিত ছিল আগেই এসব করা।কিন্তু তা হয়নি।আর যা হয়নি তা নিয়ে আলোচনা বৃথা।বরং যা হয়েছে সে দিকেই নজর দেওয়া ই ভালো।
অনেকেই বলছেন বঙ্গে না হয় ভোট হচ্ছে ।কিন্তু যে সব রাজ্যের মানচিত্রে এবার ভোট নেই সেখানেও করোনার এই দাপাদাপি কেন।আর যদি তাই হয় তবে মিছিমিছি ভোটের দিকেই বা আঙুল তোলা হচ্ছে কেন।
আসল কারন হলো করোনা যখন একটু কম তখন কিন্তু আমরা সমস্ত রকম সতর্কতা থেকে বেরিয়ে এসেছি।মুখে মাস্ক পড়িনি।রোড শোয়ে ভিড় করেছি।কোন রকম পরিকল্পনা গ্রহন করিনি।আর তার ই ফলশ্রুতি করোনা ভাইরাসের আবার মুখ ঘুরিয়ে চলে আসা।কেউ কেউ বলেছেন ভিন রাজ্য থেকে করোনা এসেছে ভোট প্রচার কে সঙ্গী করেই।আর এতেই খালাস।করোনা আটকাতে কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হয় নি।
অথচ পাশের রাজ্য উড়িষ্যা প্রথম দিন থেকেই সজাগ ।নানা ভাবে আটকে চলেছেন করোনার উর্ধমুখী গ্রাফ কে।বর্তমানে উড়িষ্যা ই একমাত্র রাজ্য যেখানে করোনা নেগেটিভ নিয়ে ও ঢুকলে হোটেলে পনের দিনের করেন্টাইন শেষ করে তবে রাজপথে নামা যাবে।ফলে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ যাঁরা পেশার দায়ে উড়িষ্যা তে থাকেন তাঁরা আটকে পড়েছেন বিভিন্ন রাজ্য তে।করোনা নেগেটিভ নিয়ে ও ঢুকতে পারছেন না উড়িষ্যা সরকারের এই বাড়াবাড়ির জন্য ।কিন্তু অনড় সরকার কোন ভাবেই নেগেটিভ দের নিজের জায়গায় ফিরতে দিচ্ছেন না।এক গোঁ হোটেলে থাকতে হবে।আর তা নিজের খরচেই।
কেন্দ্রীয় সরকার যেখানে লকডাউন এর মতো পরিকল্পনা কে নস্যাত্ করে জানিয়েছেন, সাবধানে থাকুন।সেখানে উড়িষ্যা সরকারের এ হেন মনোভাবের কড়া সমালোচনা চলছে।নেগেটিভ হয়েও কাজে যোগদান করতে পারছেন না ভিন রাজ্যের মানুষেরা ।
সমগ্র ভারত জুড়ে ই একটি আইন এখন আর নেই।রাজ্য সরকার গুলি যে যার মতো আইন আনছেন।ফলে কেন্দ্রীয় লাইন বারে বারে ধাক্কা খাচ্ছে ।কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত সমস্ত দিক বিবেচনা করে একটি বিধি তৈরি করা।কিন্তু বঙ্গের ভোট কে পাখির চোখ করে চলছেন এখন কেন্দ্রীয় সরকার ।অন্য কোথাও কি হচ্ছে তা তাদের নজরে নেই।
করোনার ঢেউ যে ভাবে আছড়ে পড়েছে তাতে করে জনগন কে সজাগ হতে হবে।কিন্তু সজাগ না হলেও দেশময় চলছে নানা প্যানিক এর স্রোত।ফলে কাজের থেকেও উল্টো কাজটিই বেশি হচ্ছে ।ঘরে থেকে সম্পূর্ণ করোনা মুক্ত হওয়া এখন আর কোন কঠিন কাজ নয়।কারন সব ঘরেই করোনার উপসর্গ চোখে পড়ছে।আর আমরা ভয়ে ত্রায়ী ত্রায়ী রব তুলেই ক্ষান্ত হচ্ছি।অথচ সচেতনভাবে যদি পরিস্থিতি কে সামাল দেওয়া যেতো তাহলে এতো কিছু ভাবার কারন থাকতো না।
এই মরসুমে জ্বর ও কাশি নিত্য ঘটনা।গরমে পেটের গন্ডগোল ও হামেশাই ই হয়।কিন্তু সব কিছুর মধ্যেই দেখতে পাচ্ছি করোনার ভূত।ফলে মানুষ বৃথাই ছুটে মরছেন।
করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে তো অভিযোগ আছেই।এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা টেস্ট নিয়ে ও নানা অভিযোগ ।কোথাও কোথাও তা নিয়ে নানা বাকবিতণ্ডা চলছেই।
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদে দেখা গেল মানুষ নিজেরাই নিজেদের সোয়াব কালেকশান করে টেবিলে রাখছেন।সেখানে নাম ধামের কোন বালাই নেই।অথচ এটি সরকারী হাসপাতাল ।কোন স্বাস্থ্য কর্মী এগিয়ে আসেন নি সেটি সংগ্রহ করতে।ফলে রামের করোনা শ্যামের ঘাড়ে পড়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা তো থেকেই যাচ্ছে ।ফলে সেই রিপোর্ট অনুযায়ী চললে ভুল চিকিৎসা তো হতেই পারে।
এছাড়া প্রথম ডোজ নেওয়ার ছয় সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ নিতে গিয়ে ও হায়রানীর স্বীকার হচ্ছেন মানুষ জন।কোথায় নেবেন, কি ভাবে নেবেন তা নিয়ে ও নাভিশ্বাস ।আর তার কারন ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা ।সময় মতো সব কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিনের যোগান থাকলে এ ঘটনা ঘটতো না।
করোনা ছিল, আছে, থাকবেও।কিন্তু সেই পরিস্থিতি কে শক্ত হাতে সামাল দিতে হবে প্রশাসন কেই।
ডাক্তার নার্স রা প্রথম ঢেউ কে আটকে দিলেও দ্বিতীয় ঢেউ এসে কেমন যেন সব কিছু লাগামছাড়া ।কোথাও কোন সঠিক পরিকল্পনা চোখে পড়ছে না।সে ভ্যাকসিনের লাইন হোক কিংবা করোনা টেস্ট ।ধরে আনতে বললে বেঁধে আনার মতো কাজ চলছে কোথাও কোথাও ।
করোনার সঙ্গে লড়াই এ জিততে গেলে চাই সঠিক পরিকল্পনা ।আর সেই পরিকল্পনার বাস্তব রুপায়ন।যার অভাব চোখে পড়ছে অনবরত ।
কড়াকড়ি তে কাজ যে হয়না তাতো প্রমানিত সত্য ।মানুষ কে সচেতনতার পাঠ দেওয়া টিই হলো আসল কাজ।
বঙ্গ জুড়ে এখনো ভোটের হাওয়া ।তবে কি 2 রা মে নবান্নের নীল বাড়িতে বসবে করোনা সরকার ।
এখনো সব কিছু শেষ হয়নি।মানুষ নিজেই মাঠে নেমে লড়াই করতে পারবেন করোনা মোকাবিলায় ।শুধু দরকার করোনা নিয়ে সচেতনতার পাঠ।না হলে বিশৃঙ্খল ভাবে বাঁচতে গিয়ে আরো অনেক জীবন কেই আমাদের হারাতে হবে।
মনে রাখতে হবে করোনা আরো অনেক ব্যাধির মতোই একটি অসুখ।আর এটি অপ্রতিরোধ্য নয়।
তাই দরকার মনের সাহস ও সঠিক পরিকল্পনা ।সে ঘরে হোক কিংবা হাসপাতালে ।
অযথা গুজব ছড়াবেন না।গুজবে কান দিবেন না।
তরুন চট্টোপাধ্যায় ।