#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন#বিভাগ_গদ্যকবিতা #শিরোনাম_তুলনা_করা_যায়_কী#কলমে_সমর্পিতা_হালদার
শরতের শিউলি ফোটা একটা ভোরের সঙ্গে, দোলনচাঁপার সুগন্ধে চারিদিক মাতাল করা একটা শ্রাবণী পূর্ণিমার রাতের তুলনা করতে পারবেন খুব সহজেই? জানি উত্তর আসবে…
#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন
#বিভাগ_গদ্যকবিতা
#শিরোনাম_তুলনা_করা_যায়_কী
#কলমে_সমর্পিতা_হালদার
শরতের শিউলি ফোটা একটা ভোরের সঙ্গে, দোলনচাঁপার সুগন্ধে চারিদিক মাতাল করা একটা শ্রাবণী পূর্ণিমার রাতের তুলনা করতে পারবেন খুব সহজেই?
জানি উত্তর আসবে, 'দুটো দুরকমের সুন্দর। এদের তুলনা করা চলে না কোনমতেই।'
তবে মানুষের বেলায় এ নিয়ম খাটে না কেন? ভাবুন তো একবার! একজন মানুষের সঙ্গে অন্য একজন মানুষের সত্যিই তুলনা করা যায় কী?
ছেলেটি পরীক্ষায় বেশ ভালো নম্বর পাওয়ার পরেও প্রতিবেশীকে বলতে শোনা যায় -"ভালো হলেও দাদার মতো অতোটা ভালো হয়নি ও পড়াশোনায়।"
কেন তিনি একবারও ভাবেন না ছেলেটি আর তার দাদা দুজনে আলাদা দুটো মানুষ?
একজন পড়াশোনায় একটু বেশি ভালো, তো আরেকজন হয়তো খেলাধূলায়। যে যার নিজের মতো করে ভালো ওরা। দু'জনের মধ্যে তুলনা করা যায় কী?
মেয়েটি বেশ সুশ্রী। বন্ধু-বান্ধবীরা সবাই সুন্দরীই বলে তাকে।
তবুও নিজের পিসি কখনও অকপটে বলে ওঠেন 'দেখতে ভালো হলেও গায়ের রঙটা তো বোনের মতো অমন টুকটুকে নয় বড়জনের! তাই পাশাপাশি দেখলে ছুটকিকেই বেশি সুন্দরী লাগে।"
কেন দেখবেন বলুন তো ওদেরকে পাশাপাশি মিলিয়ে? ওরা দুজন তো আলাদা দুটো মানুষ! যে যার নিজের মতো সুন্দর। কারো গাত্রবর্ণ বেশি উজ্জ্বল, তো কেউ বেশি লাবণ্যময়ী।
একজনের সঙ্গে আরেকজনের তুলনা করা যায় কী?
অমুকদের বাড়ির দুই বউমারই স্বভাব বেশ ভালো। বেশ ভদ্র, শিক্ষিতা দুজনেই।
কিন্তু হলে কী হবে, কাকীশাশুড়ি এসে তাঁর বড়জাকে বললেন "দিদি তোমার বড় বউমা কতো কাজের। কী সুন্দর রান্না করে! ছোটজন বোধহয় তেমন একটা পারে না, তাই না গো?"
শাশুড়ি মাও কিছুটা অপ্রসন্ন দৃষ্টিতে তাকালেন ছোট বউমার মুখের দিকে।
কেন বলুন তো তিনি বলতে পারলেন না "রান্না না পারলেও ও ভীষণ সুন্দর গান গাইতে পারে!"
ওরা দুজনে তো এক নয়! আলাদা দুটো মানুষ। দুজনেই যে যার নিজের মতো করে গুণী। সত্যিই এভাবে ওদের গুণের তুলনা করা যায় কী?
দুই বান্ধবীর মধ্যে স্বভাবের কোনো মিল নেই। তবুও তারা একে অপরের ভীষণ ভালো বন্ধু। কারণ, মনের মিলের অভাব নেই কোনো।
কিন্তু তাদের মধ্যে মনের মিল থাকলে কী হবে? বাকিদের চোখে যে ধরা পড়ে কেবল বাইরেটাই!
একজনের মা মেয়েকে শাসন করতে গিয়ে বলেন "এতো তো প্রাণের বন্ধু দুজনে। তা ওকে দেখে কিছু শিখতেও তো পারিস! এই দস্যিপনা ছেড়ে ওর মতো শান্তশিষ্ট লক্ষ্মী হতে পারিস না?"
মেয়েটির নীরব চাহনি বোঝাতে পারে না মাকে, যে বন্ধু হলেও তারা দু'জনে আলাদা দুটো মানুষ।
তাদের নিজের নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেই তাদের স্বতন্ত্রতা।
তারা যে যার নিজের মতো। কেউ কারোর থেকে ভালোও নয়, আবার কেউ খারাপও নয়।
সত্যিই তাদের মধ্যে তুলনা করা যায় কী?
ওরা দুজনে একইসঙ্গে শুরু করেছিল পথচলা। তারপর একজন উন্নতি করেছে অনেকটা। আর একজনও চেষ্টা করছে নিজের মতো করে।
কী প্রয়োজন তাকে ডেকে একথা বলার, যে -"তোরা তো একসঙ্গেই জয়েন করেছিলি না চাকরিটাতে? ও এখন তোর বস! ঠিক কোন জায়গায় তোর খামতিটা রয়ে গেল বল তো?"
কী বলবে সে? এরমধ্যে খামতির আছেটাই বা কী?
যে যার নিজের মতো করে এগোচ্ছে ওরা। গতি যে সবার একই হতে হবে, তার তো কোন মানে নেই! তাছাড়া, পথটা দেখতে একরকম হলেও চলাটা যে প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই আলাদা।
ক্ষতি কী এই সহজ সত্যিটা মেনে নিতে? সত্যিই ঐদুটো মানুষের উন্নতির তুলনা করা যায় কী?
জীবনের অনেকটা পথ অতিক্রম করার পর অন্য কাউকে দেখে হঠাৎ নিজের মনের মধ্যেই দুঃখ-সাগরের ঢেউ গুনতে বসি আমরা।
ও কতো সুখী; আর আমি?
একবারও কী ভাবা যায় না দুজনের জীবন আলাদা? পরিবেশ, পরিস্থিতি সব আলাদা। তাই সুখটাও তো আলাদাই হবে!
একজন একদিক থেকে সুখী হলে আরেকজন হয়তো সুখী হয়েছে অন্যদিক থেকে!
কারো জীবনে সুখের ঘরটা সত্যিই কী পুরোটাই ফাঁকা থেকে যায় কখনও?
জীবন আলাদা, তাই সুখও আসবে ভিন্ন ভিন্ন পথে। এটাই তো স্বাভাবিক! কার কম, কার বেশি, সে তুলনা আদৌ করা যায় কী?
নাহ্! তুলনা করা যায় না। তুলনা করলে শুধু ক্ষোভটুকুই বাড়ে, শান্তিটা পালিয়ে যায়। এই পৃথিবীতে সবাই সুন্দর। নিজের নিজের মতো করে। কারো জীবনের অংকটাই পুরোপুরি বিয়োগের অংক নয়। কোথাও না কোথাও কিছু না কিছু যোগ হয়েছে সবারই। হয়তো বা নিজের অজান্তেই! প্রতিটি মানুষকে, প্রতিটি জীবনকে স্বতন্ত্র ভাবে সুন্দর বলতে কী পারি না আমরা? কারোর সঙ্গে কারোর তুলনা না করে? নাম, যশ, অর্থ, প্রতিপত্তি বা অন্য কোনো নামের মোড়কে সুখগুলোকে দাঁড়িপাল্লায় বসিয়ে চুলচেরা কমবেশির হিসেব না করে? তাহলে বোধহয় অনেক সহজে সামনের মানুষটাকে বলতে পারবো 'তুমি সুন্দর।' আর দিনের শেষে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিবিম্বের চোখে চোখ রেখে বলতে পারবো 'তুমি অতুলনীয়।'
©চুপকথা-কলমে সমর্পিতা হালদার