Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন#বিভাগ_গল্প#শিরোনাম_প্রবেশদ্বার #কলমে_মৃন্ময়_সমাদ্দার#তারিখ_১৬/০৪/২০২১
খুবই সাধারণ ঘরের ছেলে সুভাষ। ওর বাবা সামান্য মাইনের একটা কারখানার কর্মচারী। কোনরকমে টেনেটুনে সংসারটাকে চালিয়ে নিয়ে যান। তবে এক্ষেত্রে সুভ…

 


#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন

#বিভাগ_গল্প

#শিরোনাম_প্রবেশদ্বার 

#কলমে_মৃন্ময়_সমাদ্দার

#তারিখ_১৬/০৪/২০২১


খুবই সাধারণ ঘরের ছেলে সুভাষ। ওর বাবা সামান্য মাইনের একটা কারখানার কর্মচারী। কোনরকমে টেনেটুনে সংসারটাকে চালিয়ে নিয়ে যান। তবে এক্ষেত্রে সুভাষের মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। এত কম মাইনেতে সুভাষকে মানুষ করে সংসার চালিয়ে নিয়ে যাবার কৃতিত্ব পুরোটাই সুভাষের মায়ের। সুভাষ ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করত। ওর সবচাইতে পছন্দের খেলা ছিল ফুটবল। বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনার অন্ধ ভক্ত। নিজেকেও সেভাবেই তুলে তুলে ধরার চেষ্টা করছে ও। ডান পায়ের থেকে বাঁ পায়ে ছিল অনবদ্য দখল। যা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। ওর বাঁ পায়ের খেলা দেখতে লোক দাঁড়িয়ে যেত। পড়াশোনার মাঝেমাঝে ও এদিক ওদিক ভাড়ায় খেলতে যেত। যেখানেই যেত বেশিরভাগ জায়গা থেকেই ও সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি নিয়ে আসতো। 

এরকমই একবার ও খেলতে গেল চন্দননগরে। খেলা হচ্ছে রেলের মাঠে। রেল কোয়ার্টারে সবাই মাঠ ভরিয়ে দিয়েছে। খেলা শুরু হল। দুমিনিটের মাথায় সুভাষের পায়ে বল পড়ল একেবারে সেন্টার সার্কেলের সামনে। ও বলটাকে ধরল। ধরে একবার এদিক ওদিক দেখে নিল,ওর দলের কাউকেই দেখতে পেল না। বাধ্য হয়ে ও বলটাকে নিয়ে এগোতে থাকলো। একজন,দুজন, তিনজন বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে কাটিয়ে একেবারে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ঢুকে গেল। ঠিক তখনই বিপক্ষের গোলরক্ষক গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসে সোজা সুভাষের পায়ে নিজের শরীরটাকে ছুঁড়ে দিল। সুভাষ বুঝতে পেরে বলটাকে একটা ছোট্ট টোকায় সরিয়ে নিয়ে নিজেও সরতে গেল। কিন্তু গোলরক্ষক নিজের হাতটাকে ব্যবহার করে সুভাষকে টেনে ফেলে দিল। নিশ্চিত পেনাল্টি। পেনাল্টি নিতে সুভাষই এল। এবং গোল। মাঠ হাততালিতে ভরে গেল। কিন্তু এই একটা মুভ সুভাষের জীবনও বদলে দিল। 

সেদিন ওই খেলা দেখছিলেন পূর্ব রেলের ফুটবল দলের কোচ। উনি সুভাষের জাত চিনে গেলেন। খেলা শেষ হল। কোচ নিজে এসে পরিচয় করলেন সুভাষের সাথে এবং সরাসরি রেলে খেলবার প্রস্তাব দিলেন। সুভাষ ওর বাবা মায়ের অনুমতি নিয়ে জানাবে বলল। কোচ অর্থাৎ বিকাশবাবু ওনার ফোন নম্বর দিয়ে দিলেন। সুভাষ বাড়ি ফিরে সেদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বাবা মাকে বলল। ওর বাবা খুবই উৎসাহিত হয়ে পড়লেন ছেলের এই কীর্তি শুনে। মায়েরও আনন্দের সীমা পরিসীমা নেই কিন্তু উনি একটু রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে চাইলেন। 

           বাবার থেকে অনুমতি নিয়ে পরদিন সুভাষ ফোন করল বিকাশবাবুকে। বিকাশবাবু বললেন "আমি জানতাম তুমি ফোন করবে। তুমি কাল এগারোটার দিকে আমাদের অফিসে চলে এসো। সব কথা ওখানেই হবে।" 

            পরেরদিন বিকাশবাবুর দেওয়া ঠিকানায় সুভাষ পৌঁছে গেল। বিকাশবাবু ওকে সঙ্গে নিয়ে রেলের উচ্চপদস্থ একজন কর্তার ঘরে গেলেন। কর্তা বিকাশ বাবুর সাথে ওকে দেখেই বললেন "ওকে নিয়ে এসেছেন? কিন্তু ও তো একদম বাচ্চা ছেলে ও কি পারবে?" বিকাশবাবু বললেন "আমি নিশ্চিত ওকে কিছুদিন একটু ঘসামাজা করলে আমরা কলকাতা ময়দানের আরেকজন কৃষানু দে পেতে চলেছি।" এইসব কথা হবার পর কর্তাব্যক্তিটি সুভাষকে সরাসরি বললেন "রেলের হয়ে খেলতে চাও। এক বছর যদি ভালো খেলো তাহলে রেলের চাকরি তোমার জন্য পাকা। এছাড়া তোমাকে প্রথম বছর খেলার জন্য দশ লাখ টাকা দেওয়া হবে। 

ও যারপরনাই খুশি হয়ে উঠল। যার খুবই সাধারণ জীবনযাত্রা তার কাছে দশ লাখ টাকা বিরাট অংকের। ও রাজী হয়ে গেল। তখন কর্তাব্যক্তি টি দশ হাজারের একটি চেক ওর হাতে দিলেন এবং সব কাগজপত্রে সইসাবুদ করিয়ে নিলেন। খেলার ব্যাপারে বিকাশ বাবুর সাথে কথা বলে নিতে বললেন। বিকাশ বাবুর সাথে কথা বলবার পর ও যথারীতি প্র্যাকটিস শুরু করে দিল। সেই বছরটা রেল খুব ভালো ফল করল কলকাতা লীগে। সৌজন্যে সুভাষ। সে বছর বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হল ও । পরের বছর ওর রেলওয়ে খেলা পাকা। এছাড়া রেলে চাকরিও প্রায় দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। রেল সেই বছরের দশ লাখ টাকার চেক টা দিলেই সাথে আরো দশ লাখ টাকার আরেকটি চেক উৎসাহ বোনাস হিসেবে মোট কুড়ি লাখ টাকা সুভাষকে দিল।

           এই টাকা দিয়ে ওর পৈত্রিক ভিটাতে সুভাষ বাড়ি তৈরি করল। তিনতলা বাড়ি। ওর বাবামাও খুব খুশি ছেলের এই কৃতিত্ব। ওর বাবামা খুশিতে চোখের জল আর ধরে রাখতে পারছেন না। 

আজ সেই বাড়িতে গৃহপ্রবেশ চলছে। বাবা-মায়ের পরিচিত আত্মীয়-স্বজনরা আছেনই তার সাথে ওর পাড়াপড়শিরাও। কিন্তু সুভাষের চোখ রাস্তার দিকে পড়ে রয়েছে। পুরোহিত যাগযজ্ঞ করছেন। ওর বাবা সব নিয়মকানুন পালন করছেন। এমন সময় বিকাশবাবু এলেন সাথে রেলের সেই কর্তাব্যক্তিটি। ওনাদের দেখেই সুভাষের চোখ চকচক করে উঠলো। এদিকে পুজোপাঠ শেষ। সুভাষ ওর বাবাকে বললো "বাবা একটা নারকেল দাও তো।" ওর বাবা হাতে একটা নারকেল দিতেই বিকাশ বাবুর দিকে বাড়িয়ে বলল "স্যার আপনার হাতেই আমার খেলোয়াড় জীবনের সূত্রপাত আর আপনার হাতেই আমাদের এই বাড়ির সূত্রপাতও হোক।" বিকাশবাবু আনন্দিত হয়ে নারকেলটি ভাঙলেন এবং বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলেন। আর এদিকে কর্তা ব্যক্তিও চুপ করে বসে নেই উনি ঘরে ঢুকে সবার সামনে সুভাষকে কাজে যোগদানের চিঠিটি দিলেন এবং আগামী মরশুমে এক কোটি টাকায় সুভাষকে খেলার জন্য মনোনীত করলেন।